আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

দায়িত্বটা নারীদের, অন্য কারো নয়!

খুরশীদ শাম্মী  

বিশ্বের প্রাণীকুলের মধ্যে মানুষ হচ্ছে একমাত্র সভ্য এবং সামাজিক প্রাণী। জন্ম থেকে জেনে এসেছি সভ্যতার অংশ হিসেবে মানুষ পোশাক পরিধান করে। স্থানীয় আবহাওয়া এবং পারিপার্শ্বিক সকল অবস্থা বিবেচনা করেই মানুষ তাদের পোশাকের ধরণ এবং গড়ন নির্ধারণ করে আসছে যুগ যুগ ধরে।

যেমন মধ্যপ্রাচ্যের লু-হাওয়া এবং মরুভূমির তপ্ত বালুতে শরীর রক্ষা করতেই মানুষ লম্বা পোশাক পরিধান করে এবং ঠাণ্ডা মৌসুমের দেশগুলোতে জ্যাকেট, সোয়েটার আর গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে মানুষ পাতলা কাপড়ের টপস এবং প্যান্ট ব্যবহার হয়ে আসছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পোশাক একটি দেশের সংস্কৃতির অংশ হয়ে যায়। যেহেতু আমি বাংলাদেশে বড় হয়েছি তাই দেশ এবং দেশের সংস্কৃতি নিয়েই আমার ভাবনাগুলো এবং সেগুলো দিনদিন মনের ক্যানভাসে নানান রঙে প্রস্ফুটিত হয়।

জন্ম থেকে বাংলাদেশে দেখে এসেছি সকল ধর্মের মেয়েরা এবং মহিলারা সাধারণত সালোয়ার কামিজ কিংবা শাড়ী পরে এবং তাদের সবাই প্রার্থনার সময়ে শাড়ীর আঁচল কিংবা ওড়না টেনে মাথায় দিয়ে থাকে। তবে মুরুব্বিদের অনেকেই প্রার্থনার পাশাপাশি অন্যান্য সময়েও মাথায় কাপড় টেনে রাখে। তাদেরকে আলাদা করে হিজাব অথবা নিকাবে আবৃত করে নিজেদের অদৃশ্য করে রাখতে দেখিনি। তখনও কিন্তু নারীদের কাপড় পরিধানে শালীনতার কোন অভাব ছিলোনা। কিন্তু কিছু মৌলবাদী, একরোখা, স্বার্থযুক্ত মানুষেরা মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় পোশাককে ইসলামী শরিয়তের পোশাক হিসেবে প্রচার করে আসছে অনেক দিন থেকে। ধীরে ধীরে তারা ধর্মভীরু মানুষদের মধ্যে এই বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে এবং ঐ সকল কাপড় পরতে বাধ্য করতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশের নারীদের হিজাব এবং নিকাব ব্যবহার তার একটি বড় উদাহরণ। এখন বাংলাদেশের পথে, ঘাটে, রেস্তোরায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মস্থানে এমনকি বাড়িতেও নিজের বাবা, ভাই, সন্তানের মতো আপন মানুষদের সামনে মেয়েদের হিজাব, নিকাব এর মতো বস্তু পরে থাকতে দেখা যায়। দিন দিন বিষয়টি খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

পুরুষ শাসিত সমাজ কাপড়ে আবৃত মেয়েদের খুব আগ্রহের সাথে গ্রহণ করলেও মুক্তমনের মানুষেরা মেনে নিতে পারে না কাপড়ে ঢেকে মানুষে মানুষে বিভাজন। কারণ তাঁরা বিশ্বাস করে মেয়েদের প্রয়োজনের অধিক কাপড়ে আবৃত করা মানে শুধু তাদের সমান অধিকার থেকে বঞ্চিত করাই নয়। বরং তাদের সৌন্দর্য, কর্মদক্ষতা সহ সকল কিছুই অতিরিক্ত কাপড়ে আবৃত করে রাখা যাহা নারীদের স্বাভাবিক চলাচলেও বিঘ্ন ঘটায় কখনো কখনো।

তাই নারীদের জন্য বলছি। একবার ভেবে দেখুন, নারী এবং পুরুষ উভয়েই যদি বিধাতার সৃষ্টি হয়। তবে নারীকে কেন হিজাব-নিকাব পরে সর্বদা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে থাকতে হবে? পুরুষদেরকে কেন নয়? মানব প্রজাতি সৃষ্টির সময় কোন কাপড় ছিলো না। পোশাক যখন মানুষেরই সৃষ্টি এবং মানব সভ্যতার অংশ, তবে তা পরিধানে কেন নারী এবং পুরুষদের জন্য ভিন্ন নিয়ম?

আসলে নারীদের ঢেকে রাখার বিষয়টি কিন্তু নারীখেকো পুরুষ দ্বারাই উৎপত্তি। ঐ সকল পুরুষেরা নারীদের ভোগের পণ্য ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না। তাই মানুষ হিসেবে নয়, বস্তু হিসেবে ভোগের পর প্যাকেটবন্ধী করে রাখতে চায় নারীদের। আবার মাঝে মাঝে তারা তাদের সন্ত্রাসী কাজে কাপড়ে আবৃত নারীদের অথবা তাদের ভেশ ব্যবহার করতেও দ্বিধাবোধ করে না। আসলে তারা নারীদের কর্মক্ষমতাকে ভয় পায়। নারীরা সন্তান জন্ম দিতে পারে, যা পুরুষেরা পারে না। নারীরা ধৈর্য নিয়ে সন্তান লালনপালন করতে পারে। পাশাপাশি সমান্তরালভাবে নারীরা পুরুষদের মতো অফিস, খেত-খামার, কল-কারখানায় সমান কাজ করতে পারে। নারী শিক্ষার  হার প্রতিদিন বেড়েই চলছে। পাছে নারীরা পুরুষদের থেকে এক ধাপ উপরে উঠে যায় তাই নারীদের দমিয়ে রাখতে সর্বদা প্যাকেটে পুরে রাখার পদ্ধতি সর্বস্তরে চালু করা হচ্ছে খুব কৌশলে।

যেখানে ইসলামের নামে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে মুসলমান পুরুষেরা তাদের হিজাব নিকাবে ঢাকা মহিলা সহযোদ্ধাদের কুমারিত্ব পরীক্ষা করার জন্য ধর্ষণ করে। আর অন্যদিকে নিজের চোখে দেখছি, সমুদ্র সৈকতে শত শত পুরুষদের মাঝে মেয়েরা বিকিনি পরে পানিতে নামে কিন্তু কোন পুরুষকে দেখিনি কোন মেয়ের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে।

এই বিষয় দু’টো কেবল উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা। এর ব্যতিক্রমও আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই হিজাব বা নিকাব কি মহিলাদের রক্ষা করতে পারে? মোটেও না, আসলে পর্দা দরকার মানুষের মনের চোখের এবং চিন্তা ভাবনায়। বিষয়টি প্রতিটি সচেতন নারীর গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

এই বিষয়ে পুরুষ নয়, নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। রক্ষা করতে হবে নারীর মর্যাদা। নিজেদেরকে অপ্রয়োজনীয় মিথ্যা খোলস থেকে বের করে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নারীদের, অন্য কারো নয়।

খুরশীদ শাম্মী, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ