আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

সংখ্যাতাত্ত্বিক তুষ্টির বৃত্তে আটকে পড়া নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন

মুনীর উদ্দীন শামীম  

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন সপ্তম। এটা বাংলাদেশ সরকারের তথ্য নয়; তথ্যটি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের। আরও চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে-দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ জেন্ডার-সমতা তৈরির সামগ্রিক সূচকে শীর্ষে। ভারতের অবস্থান দ্বিতীয় (বৈশ্বিক ৮৭তম)। পাকিস্তান সবার নিচে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদেশগুলি বাংলাদেশের অনেক পেছনে।২০০৬ থেকে প্রতিবছর বৈশ্বিক জেন্ডার ব্যবধান বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম। এতে একটি দেশের জেন্ডার বৈষম্য ও তার গতিপ্রকৃতি, অগ্রগতির মাত্রা মূল্যায়ন করা হয়। চারটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের আপেক্ষিক ব্যবধান দেখা হয়। বিষয়গুলি হচ্ছে-স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি ও রাজনীতি (গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৬)।

এর সর্বশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়২০১৬ সালে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী সামগ্রিক সূচকে১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭২তম। বাংলাদেশের এ শীর্ষে অবস্থানের অন্যতম কারণটি হচ্ছে- নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। আগেই বলা হয়েছে, এ প্রতিবেদন অনুযায়ী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান ৭ম। তবে ৭ম হলেও লেখচিত্রের মাধ্যমে যে জেন্ডার ব্যবধান রেখাটি অংকিত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান অগ্রগতির প্রত্যাশিত রেখা থেকে এখনও বেশ দূরে। এ প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যবহৃত রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রধান তিনটি সূচক হচ্ছে-জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যায় নারী ও পুরুষের আনুপাতিক হার, মন্ত্রীপরিষদে নারী-পুরুষের আনুপাতিক হার এবং বিগত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে কত বছর ধরে নারী রাষ্ট্রপ্রধান/সরকার প্রধান রয়েছেন।

এ তিনটি সূচকের প্রথম দু’টিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও শেষ সূচকে বাজিমাত করে সামগ্রিক গড় সূচকে বাংলাদেশ সপ্তম স্থান অধিকার করেছে। এখানে আরও উল্লেখ করা দরকার,২০০৬ সালে প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদন-এ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম। ২০১৬ সালে এসে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়ায় ৭২তম। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সূচকে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭তম, যা ২০১৬ সালে ৭ম স্থানে উন্নিত হয়। যার অর্থ হচ্ছে-নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ দশ ধাপ এগিয়েছে। খবরটি নি:সন্দেহে আনন্দের। সরকার, নাগরিক সমাজ, রাজনীতিক, নারী আন্দোলনের কর্মী, উন্নয়ন কর্মী- মোটাদাগে আমাদের সবার জন্য।

সংখ্যার বিচারে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের অগ্রগতির আরও কয়েকটি দিক দেখা যাক। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদের সাধারণ আসনে কোন নির্বাচিত নারী সাংসদ ছিলেন না। তবে সংরক্ষিত আসনে ছিলেন ১৫জন। ১৯৮০ সালে সাধারণ আসনে প্রথমবারের মতো নারী সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ সংসদে সাধারণ আসনে নির্বাচিত নারী সাংসদের সংখ্যা ২০, এবং সংরক্ষিত আসনসহ মোট ৬৯জন (বিবিএস)। সংখ্যাতাত্ত্বিক ব্যাকরণে এ অগ্রগতির পরিমাণ ৩৬০%। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদে নারীর শতকরা হার ছিল ৪.৮। সর্বশেষ সংসদে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২০% (বিবিএস)।

২০১১-১২ সালে ইউনিয়ন পরিষদ এর নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে নারী ২২জন ও মেম্বারদের মধ্যে নারী ১২২৩৬জন। একই সময়ে উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত নারী চেয়ারম্যান ৩জন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নারী কর্মকর্তার শতকরা হার ২০০৮ সালে ছিল ১৫%, ২০১০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০% এ দাঁড়ায়। এসব পরিসংখ্যানই বলে দেয়, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সংখ্যাতাত্ত্বিক চিত্রে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান হারে এগুচ্ছে।

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রশ্নে বাংলাদেশের অগ্রগতি বর্ণনায় দৃশ্যমান আরও কতগুলি সূচকের কথা বলা হয়। এ সূচকগুলি সাধারণ-অসাধারণ সবার মুখে শোনা যায়। যেমন বলা হয়ে থাকে,আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নারী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নারী। আমাদের বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, এমনকি সাবেক সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রীও নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী। প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী। অতএব নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের এ রকম উদাহরণ বিরল।এটা স্পষ্ট যে, সরকারি- বেসরকারি, বিদ্যাজাগতিক, আধাবিদ্যাজাগতিক, সংবাদপত্র ও সাধারণ আলোচনায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত একটি দৃশ্যমান-সংখ্যা নির্ভর তুষ্টির জায়গা তৈরি হয়েছে। শুধু তৈরিই হয়নি, এটি ক্রমাগত জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে।সংখ্যাভিত্তিক অগ্রগতি যে, একটি তুষ্টির জায়গা- সেটি ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও ফুটে উঠেছে। এতে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অগ্রগতির পর্যালোচনা অংশে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে নারীর জন্য আসন বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে জোরদার করা হয়েছে। তার স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জেন্ডার ব্যবধান প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ৭ম স্থান দখল করেছে (৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা)।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সংখ্যাভিত্তিক দৃশ্যমানতা নি:সন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। বিশেষ করে জেন্ডার উন্নয়ন প্রশ্নে। নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে। কিন্তু একই সাথে এ প্রশ্ন তোলাও জরুরি যে, নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিকসমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শুধু সংখ্যাভিত্তিক অগ্রগতি কি যথেষ্ট? সংখ্যার উন্নয়নই কি একমাত্র সমাধান; নাকি প্রাথমিক সমাধান মাত্র? সমাধানের প্রবেশপথ মাত্র? কিছু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সে প্রবেশ পথেই আটকে আছে। কতগুলি সংখ্যার বৃত্তে বন্দী হয়ে আছে। সংখ্যার ভেতরেই ঘুরপাক খাচ্ছে।শুরু থেকে জেনে-না জেনে, সচেতন-অচেতন ও অবচেতনভাবে একটি সংখ্যাভিত্তিক তুষ্টির বৃত্ত তৈরি করা হয়েছে। ফলে আমরা জেন্ডার উন্নয়নের অগ্রগতিকে সংখ্যার ব্যাকরণেই বিচার করছি। এর একটি কারণ সম্ভবত জেন্ডার ব্যালেন্স বা জেন্ডার ভারসাম্য সম্পর্কিত একটি বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় ধারণা।

বাংলাদেশের বিদ্যাজাগতিক, আধাবিদ্যাজাগতিক পরিসর ও উন্নয়ন খাতে জেন্ডার ভারসাম্য বিপুল উচ্চারিত একটি প্রত্যয়। ব্যক্তিখাতেও এর ব্যবহার কম নয়; বরং ক্রমবর্ধমান। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনে করা হয়, জেন্ডার ভারসাম্য মানে নারী-পুরুষ সংখ্যার ভারসাম্য। জেন্ডার ভারসাম্য বিশ্লেষণের বিদ্যমান প্রধান প্রবণতাটি হচ্ছে- একটি সংগঠন, সংস্থা, দল বা বিশেষ কাজে কতজন নারী-পুরুষ আছেন, কতজন উপকারভূগী আছেন-তার সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসেব-নিকেশ। অথচ জেন্ডার ভারসাম্য অগ্রগতি পরিমাপের জন্য সংখ্যাভিত্তিক সূচক যেমন দরকার তেমনি গুণভিত্তিক সূচক থাকাও জরুরি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের লিঙ্গবিভাজিত তথ্য, জেন্ডার সংবেদনশীল সূচক এবং সামাজিক জেন্ডার সূচকগুলির মৌলিক পার্থক্যগুলি সম্পর্কে ধারণা এবং এগুলির প্রায়োগিক জ্ঞান থাকতে হবে। একই সাথে এগুলি বিবেচনায় নেয়ার ক্রমাগত আগ্রহ থাকতে হবে।

এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন- নারীর সামাজিক গতিশীলতা ও সিদ্ধান্তগ্রহণ ক্ষমতার সাথে যুক্ত।এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রকৃত চিত্রটি কী- সেটি বুঝার জন্য বিবিএস কর্তৃক প্রকাশিত জেন্ডার পরিসংখ্যান ২০১২ থেকে উল্লেখ করা যেতে পারে। এ প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘরের খাবারের জন্য কত খরচ করা হবে, কী খাবার আনা হবে, এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন- এমন নারীর সংখ্যা ৬% এরও কম। যদিও শহর এলাকায় এ হার ৬ এর চেয়ে সামান্য বেশি। গতিশীলতার প্রশ্নে একই প্রতিবেদনে দেখা যায়, শহর এলাকায় ৪৪.৬% এবং গ্রাম এলাকায় ৫৭.৮% নারী একা নিজ গ্রাম বা মহল্লার বাইরে এখনও যেতে পারেন না।। এ ছোট্ট তথ্যটি থেকেই স্পষ্ট যে, নারীর সামগ্রিক সামাজিক গতিশীলতার প্রশ্নে এখনও বড় একটি সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। পাশাপাশি বেড়েছে নারীর নিরাপত্তাহীনতাজনিত ভীতির মাত্রা ও ব্যাপ্তি। কি শহর কি গ্রাম-সর্বত্র সব বয়সের নারীর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন প্রকট।

সমাজের একটি জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা জিইয়ে রেখে তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি যদি অবচেতনভাবেও পুরুষতান্ত্রিক হয় তবে সংখ্যাতাত্ত্বিক বিপুল অগ্রগতিও কোন ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে না। বরং নতুন নীতি ও আইনি কাঠামোয় পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন ঘটে। এর বড় উদাহরণ- সদ্য পাশ হওয়া বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন। এ আইনে যেবিশেষ পরিস্থিতিতে বাল্যবিবাহ অনুমোদিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- তা মূলত; পুরুষতন্ত্র উৎসারিত দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। এ সময় আমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নীতিনির্ধারকদের যেসব বক্তৃতা-বিবৃতি শুনেছি, তা পুরুষতান্ত্রিক ব্যাকরণের মধ্যেই পড়ে।

একটি বাস্তব ঘটনা ও প্রাসঙ্গিকতা
২০১০ সালের কথা। সে সময় সদ্য নির্বাচিত উপজেলা নারী ভাইস-চেয়ারম্যানদের জন্য আয়োজিত জেন্ডার, উন্নয়ন ও নারীর আইনি অধিকার বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকার সুযোগ হয়েছিল। সে সুবাদে উপজেলা পরিষদে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত ৪৮১জন নারী ভাইস-চেয়ারের প্রায় সবার সাথে দেখা হয়েছিল। কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। সেসব আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তাঁদের বেড়ে ওঠা, পড়ালেখা, রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া, তাঁদের প্রতি রাজনৈতিক-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, নির্বাচিত পুরুষ সহকর্মীদের মনোভাব, পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি সহ নানা সামাজিক-ব্যক্তিগত বিষয় উঠে এসেছিল। সেসব আলোচনা এখনও খুব মনে পড়ে। এর কারণ, আমার কাছে মনে হয়েছে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রশ্নে সেসব ব্যক্তিগত, সামাজিক গল্পগুলি খুবই প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। সেসময় নবনির্বাচিত নারী ভাইস-চেয়ারম্যানদের মধ্যে যে বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছিলাম, সেটি আজও দৃশ্যমান, চোখের সামনে। প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত এসব নারীদের বেশির ভাগই ছিলেন তরুণ, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত। চোখেমুখে ছিল রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন। স্থানীয় সরকারে একসাথে এত বিপুল সংখ্যক নারী প্রতিনিধিত্ব দেখে যারা জেন্ডার সমতা ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন, তাঁরাও বোধকরি একটা নতুন পুলকের মধ্যে ছিলেন।

এখনও খুব মনে পড়ে একজন এসেছিলেন বরগুনার কোনো একটি উপজেলা থেকে। সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করা। ক্যাম্পাসের তারুণ্য তখনও দৃশ্যমান তাঁর আচরণে। খাবার টেবিলে বসে তাঁর সাথে কথা হচ্ছিল। জিজ্ঞেস করেছিলাম-আপনি ছাত্ররাজনীতি করতেন কি না? তিনি বলেছিলেন, হ্যাঁ। আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, ছাত্রজীবনে যে দল করতেন, সে দলের সাথে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল থেকেই কি নির্বাচন করেছেন? তার ’না’ জবাব শুনে আমি কিছুটা বিস্মিত হই, আবার আমার সে বিস্ময় বেশিক্ষণ থাকেও না। কারণ আমাদের রাজনীতিতে দলবদলের সংস্কৃতি তো খুবই প্রকট এবং একটি প্রধান প্রবণতা। তারপরও জানতে চেয়েছিলাম- তিনি দলবদল করেছেন কি না। আমার শেষ প্রশ্নে তিনি যে দীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন সেটি আজকের আলোচনায় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে দল বদল করেন নি। কিন্তু সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে দলবদল করেছেন। আসলে নিজে দলবদল করেন নি। দলবদলে বাধ্য হয়েছেন। তাও বৈবাহিক সূত্রে। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর বিয়ে হয়েছে একটি রাজনৈতিক পরিবারে। শশুর সক্রিয় রাজনীতি করেন। স্বামীও সক্রিয় রাজনীতি করেন। উচ্চশিক্ষিত চৌকস বউ পেয়ে রাজনীতিক শশুর খুশি হয়েছিলেন। রাজনীতির জন্য যোগ্য মনে করেছেন। উৎসাহ দিয়েছেন। বড় দলের সাথে সম্পর্ক ও প্রভাবের সুবাদে মনোনয়নের ব্যবস্থা করেছেন। শশুরের সিদ্ধান্ত ও উৎসাহে নির্বাচন করেছেন। শশুরবাড়ির প্রভাবে জিতে এসেছেন।

তিনি আরও জানিয়েছিলেন যে, প্রথমে তাঁর স্বামী চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু পান নি। তখন রাজনৈতিক পরিবারের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে তাঁর জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। তাতে শ্বশুরবাড়ির লোক সফল হয়েছেন। সে প্রক্রিয়ায় অপছন্দের রাজনৈতিক দলের হয়ে তাঁকে নির্বাচনে আসতে হয়েছে। জিজ্ঞেস করেছিলাম, ছাত্রজীবনে যে রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করতেন, যে দলের আদর্শে উজ্জীবিত ছিলেন, তার বিপরীত মতাদর্শের, তার প্রতিদ্বন্দ্বি দলে গিয়ে নির্বাচন করেছেন, সে দলের সাথে আছেন, সে জন্য খারাপ লাগে কি না। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, শুধু খারাপ যে লাগে তা নয়, মাঝেমাঝে শ্লোগানও ভুল করে ফেলেন। বলেছিলেন, তখন খুব অস্বস্তিতে থাকেন।

এ বাস্তব ঘটনার দু’টি বিপরীত চিত্র রয়েছে। একটি দৃশ্যমান। ইতিবাচক এবং সংখ্যাগত। এ দৃশ্যে আমরা দেখতে পাই একজন ক্ষমতাবান নারী। যিনি অন্য অনেক নারী থেকে আলাদা, রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে যার প্রবেশাধিকার রয়েছে। যিনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সংখ্যাতাত্ত্বিক অগ্রগতির হিসেবে তিনিও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা। কিন্তু দ্বিতীয় চিত্রে, যেটি আপাত দৃশ্যমান নয়, আপাতত চোখে পড়ে না, দেখার জন্য আলাদা দৃষ্টি দিতে হয়, সেখানে আমরা দেখতে পাই- একজন ক্ষমতাহীন নারী, যিনি শুধু বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের কারণেই নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শিক বিশ্বাসকে ত্যাগ করেছেন। বৈবাহিক সূত্রে প্রাপ্ত রাজনৈতিক আদর্শের পক্ষে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। যিনি নিজের রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভোট দিতেও অপারগ। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত সংখ্যাতাত্ত্বিক অগ্রগতির প্রসঙ্গ এলে আমার সবসময় এ ঘটনাটির কথা মনে পড়ে। আমার নিজের মধ্যে প্রশ্ন জাগে-রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নে এ ব্যক্তি মানুষটির অবস্থা তাঁর জন্য অগ্রগতি নাকি অধোগতি। আমার আরও প্রশ্ন জাগে যে,রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের অন্য সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জরুরি প্রসঙ্গগুলিকে বিবেচনায় না নিয়ে শুধু সংখ্যার ভারসাম্যের অগ্রগতির উপর তুষ্ট থাকার সুযোগ আছে কি না?

আমার এটিও মনে হয় যে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে খুব ব্যতিক্রম ছাড়া এখন পর্যন্ত নারীর অবস্থান উপগ্রহমূলক। নিজের আলো নেই, অন্যের আলোয় আলোকিত, মানে আলোকিত হতে বাধ্য। এ অন্য আলোর উৎস হচ্ছে আবশ্যিকভাবে পুরুষ। পুরুষ যে রাজনীতির আলোয় আলোকিত নারীও সে আলোয় আলোকিত। হয় কন্যা হিসেবে অথবা স্ত্রী হিসেবে। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবারের পুরুষ রাজনীতিকের মৃত্যুর পর নারী সদস্যকে সংশ্লিষ্ট দল থেকে মনোনয়ন দেয়ার উদাহরণ এখন বিস্তর। মৃত পুরুষের ইমেজ ব্যবহারের আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়াসই এখানে প্রধান লক্ষ্য। রাজনীতিক পরিবারের একজন নারীকে রাজনীতিতে আসতে হলে সাধারণত পুরুষ সদস্যের মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এবং এটাও বলে রাখা দরকার যে, এ উপগ্রহমূলক ক্ষমতাকাঠামো নারীর নিজস্ব দুর্বলতা নয়। এটি সমাজব্যবস্থার দুর্বলতা। পুরুষতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিও রাষ্ট্রব্যবস্থার দুর্বলতা।

সম্প্রতি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নারী কাউন্সিলররা একটি বিবৃতি দিয়েছেন। কেবল সংখ্যার ভারসাম্য তৈরি হলে কিংবা সংখ্যাভিত্তিক অংশগ্রহণ বাড়লেই যে ক্ষমতায়ন হয় না, ক্ষমতায়নের অন্য শর্তগুলি পূরণ করতে হয়- তার বড় প্রমাণ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নারী কাউন্সিলরদের সে বিবৃতি।বিবৃতিতে ১০জন কাউন্সিলর অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সাথে ধারাবাহিকভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। এ বৈষম্য ক্ষমতার, এ বৈষম্য মর্যাদার এবং এ বৈষম্য স্বীকৃতির। এমনকি অভিযোগ করার সময় তাঁরা নিজের নাম পর্যন্ত প্রকাশ করতে রাজী হননি। এ আশংকায় যে, তাতে তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে(৩ মার্চ, দৈনিক প্রথম আলো, সম্পাদকীয়)। একই কথা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস-চেয়ারম্যানদের ক্ষেত্রেও সত্য। ইউনিয়ন পরিষদের নারী কাউন্সিলদের ক্ষেত্রেও সত্য। সংখ্যার হিসেবে তাঁদের অংশগ্রহণ থাকলেও বাস্তবে প্রতিটি স্থানীয় সরকার পরিষদে নারীরা’দ্বিতীয় শ্রেণি’র জনপ্রতিনিধি। নারী সাংসদরাও একই অভিযোগ তুলেন।নারী সালিসকারদের অবস্থাও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও নারী নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে সালিসের ব্যবহারের বদনাম আছে তথাপি অনানুষ্ঠানিক বিচারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সালিস খুব শক্তিশালী ও জনপ্রিয়। একসময় সালিস ছিল শতভাগ পুরুষের দখলে। উন্নয়ন সংস্থাগুলির উদ্যোগ ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারী কোটা প্রচলিত হওয়ার পর বিপুল সংখ্যক নারী সালিসকার তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ নারী সালিসকাররাও কোণঠাসা অবস্থায় থাকেন, থাকতে বাধ্য হন। একবার মাদারীপুরের এক নারী সালিসকার, একজন ভালো সালিসকার হিসেবে যার বেশ সুনাম আছে, তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি সালিস সভায় কখনও প্রধান সালিসকার ছিলেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, তিনি ঐ এলাকার বউ। তাঁর পক্ষে প্রধান সালিসকার হওয়া সামাজিক রীতিবিরুদ্ধ। এখানেও দেখা যাচ্ছে, নারীর ক্ষেত্রে সালিসকার হিসেবে যোগ্যতা নয়; বৈবাহিক পরিচিতি ও বৈবাহিক মর্যাদাই প্রধান। এটা স্পষ্ট যে,সংখ্যাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব গুণগত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারছে না।

তবু আশা রাখি
তবে সম্ভাবনার জায়গা শেষ হয়ে যায় নি। বরং বিকশিত হচ্ছে প্রতিদিন। নারীর ক্ষমতায়নের সাংবিধানিক অঙ্গীকার তো রয়েছেই। পাশাপাশি নানা নীতিকাঠামোও সংযুক্ত হচ্ছে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১- এ বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে। ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণকে উন্নয়নের অন্যতম কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এ নীতিমালার রূপকল্পে এমন একটি সমাজ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে, যেখানে নারী ও পুরুষ সমান সুযোগ ভোগ করবে।জাতিসংঘের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)’র পঞ্চম লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে-সকল নারী ও মেয়ে-শিশু-কিশোরীদের ক্ষমতায়ন। এর ৫.৫-এ বলা হয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনীতিক ও জনজীবনের সকল সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে নারীর পরিপূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ৫.গ-তে বলা হয়েছে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যথাযথ আইন ও নীতি-গ্রহণ এবং তা শক্তিশালী করা।

বাংলাদেশ ৭ম পঞ্চবার্ষিকী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ উন্নয়ন পরিকল্পনায় এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সে আলোকেই ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে সুপারিশকৃত কৌশল-এ পাঁচটি কৌশলগত উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম দু’টি হচ্ছে-নারীর কথাবলার পরিসর বৃদ্ধি করা এবং নারী সংগঠনসমূহের যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা দূর করা, একই সাথে জেন্ডার সমতা অর্জনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা। আর এ জন্য যেসব উদ্যোগের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-মানবসম্পদ উন্নয়ন সুবিধায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, উৎপাদনশীল সম্পদে প্রবেশাধিকার ও নিয়ন্ত্রণ, অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণ, সহায়ক আইনি কাঠামো তৈরি, অগ্রগতির পরিবীক্ষণ ও জবাবদিহিতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি, এবং ইতিবাচক সামাজিক মূল্যবোধ তৈরি। যার অর্থ হচ্ছে জেন্ডার উন্নয়নে শুধু সংখ্যার ভারসাম্য নয়; গুণগত পরিবর্তন চাই। পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে। চাই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। চাই গোটা ব্যবস্থার বদল। এটি যতদিন না হবে তত দিন তথাকথিত সংখ্যাতাত্ত্বিক জেন্ডার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মধ্যেই নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বৃত্তবন্দি হয়ে থাকবে। অতএব সে বৃত্তটা ভাঙ্গা খুবই জরুরি।

যত তাড়াতাড়ি ভাঙবে ততই মঙ্গল- ব্যক্তির জন্য, সমাজের জন্য এবং রাষ্ট্রের জন্য।

মুনীর উদ্দীন শামীম, গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী; সুশাসন বিষয়ক একটি কারিগরি প্রকল্পে কর্মরত।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ