আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

নারী ও অভিমত প্রকাশের স্বাধীনতা

মাসকাওয়াথ আহসান  

অভিমত প্রকাশ মানুষের মৌলিক অধিকার। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন ধর্ষণ-নিপীড়নের কুরুক্ষেত্রে বসবাসকারী নারী সমাজের অভিমত প্রকাশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের মৌলিক অধিকার। একজন নারী কোন বিষয়ে লিখবেন; কোন বিষয়ে প্রতিবাদী হবেন; তা তার ইচ্ছার স্বাধীনতা।

সামগ্রিক বিচারে পুরুষ সমাজ নারীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। সে ক্ষেত্রে কোন পুরুষ ব্যক্তিগতভাবে এ রকম অপরাধ সংগঠিত না করলেও পুরুষ সমাজের অংশ হিসেবে এ অপরাধের দায় তো তাকে নিতেই হবে। আর নারীর অভিমত প্রকাশ বা প্রতিবাদে বাধা দেয়া নারীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সমর্থক হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করা।

তাহলে কী হেফাজত যে নারীকে নীরবে সব অন্যায় সহ্য করে নেওয়া দাস হিসেবে দেখতে চায়; তা কোন না কোন ভাবে কথিত প্রগতিশীল সেজে বসে থাকা কিছু পুরুষের মাঝেও রয়েছে। কোন পুরুষ যদি নারীর বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ না করে থাকে; বা এর সমর্থক না হয়; তাহলে নারীর কোন অভিমত প্রকাশেই তার ক্রুদ্ধ হবার কোন কারণ নেই।

কোন পুরুষ যখন নারীর সমালোচনা করে লেখে, তখন হাতে গোণা চিন্তার জগতে পিছিয়ে থাকা নারী ছাড়া কেউ-ই হিংস্রতা প্রকাশ করে না; রাস্তায় ধরে পেটানোর ধমক দেয়না; সম্ভব হলে লিখে প্রতিবাদ জানায়। তাহলে কোন নারী পুরুষ সমাজের সমালোচনা করে লিখলে পুরুষ সমাজের একটি বড় অংশ কেন ফুঁসে ওঠে; ভাবখানা এমন; এ যেন গোবরডাঙা গ্রাম, সেখানে হুরমতির চুলের মুঠি ধরে কপালে ছাঁকা দিয়ে দেবে কিছু পঞ্চায়েতের লোক। এ কী সেই জীনগত আলোড়ন; বাপ-চাচাকে নারী সম্পর্কে যত্রতত্র খিস্তি করতে শুনে বড় হওয়া; এরকম একটা ধারণা মনের মধ্যে লালন করা, তুই মাইয়া মানুষ; এতো কথা কবু কা; এত্তো বড় সাহস! এ যে ভীষণ আদিম চিন্তা; সমসাময়িক সমাজ ও বিশ্ববাস্তবতায় একেবারেই অচল চিন্তা।

চিন্তার জগতে পরিণত মানুষেরা নারী-পুরুষকে মানুষ হিসেবে দেখে। কখনোই নারীকে অধীনস্থ মনে করে না। সম্পর্ক হয় সমান্তরাল; এখানে নারীকে অধীনস্থ হিসেবে দেখতে চাওয়া অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রত্যাশা।

আর সমাজকে কখনো কেবল নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে দেখতে নেই। "আমার স্ত্রী তো অনেক ভালো; সে কখনো এইসব নারীবাদীর মতো কথা বলে না"-এটা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল যুক্তি।

সামষ্টিক বাস্তবতা হচ্ছে নারী এই বর্বর পুরুষ সমাজে আজো সারাক্ষণ ধর্ষণের ঝুঁকি নিয়ে ঘুরছে। সেরকম একটি ক্রান্তিকালে পুরুষ সমাজের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন অজুহাতই খাটেনা; তাদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য বরং ধর্ষণের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদ করা জরুরি।

এর মাঝেও প্রান্তিক নারী ও ক্ষমতায়িত নারীর বাস্তবতা কিছুটা পৃথক। আবহমান কাল ধরে নারী কতৃক নির্যাতিত পুরুষের সংখ্যাও কম নয়। পুরুষের হৃদয় নিয়ে ফুটবল খেলার নজিরও অনেক; কত বিনিদ্র রাত পুরুষ কাটায় নারী কর্তৃক প্রবঞ্চিত হয়ে। স্ত্রীর কথা শুনতে গিয়ে অনেক পুরুষকেই তার বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে হয়। কিছু কিছু নারীর সন্তানকে রিভলভার হিসেবে ব্যবহার করে পুরুষকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানোর বাস্তবতাও দৃশ্যমান হয়। সে বিষয়গুলো নিয়ে পুরুষেরা অবশ্যই প্রতিবাদ জানাতে পারেন। এও তাদের মৌলিক অধিকার। সমান অধিকারের দাবিতে উচ্চকিত নারীদের পুরুষের প্রতিবাদ জানানোর সমান অধিকারকে স্বীকৃতি দিতেও শিখতে হবে।

কিন্তু নারী প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুরুষের কী সমালোচনা করবে বা করবে না, কোন কথা বলবে না বলবে না; সে বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোন অধিকার পুরুষ সমাজের নেই। লেখালেখির ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ যেই গ্রহণযোগ্য যুক্তি-তর্ক ও ভাষারীতি দিয়ে মত প্রকাশ করবে; নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই তা গ্রহণ করবে ও তাকে সাধুবাদ জানাবে। এটি চর্চার বিষয়; হঠাত একদিন কী-বোর্ডে ঝড় তুললেই লেখক হিসেবে পাঠকের স্বীকৃতি পাওয়া যায়না; এটা প্রত্যেকেই জানেন। আর উত্তেজনা বিক্রি করে পনেরো মিনিটের খ্যাতি কর্পুরের মতো উড়ে যায় এও সবার জানা।

তাই শেষ পর্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্যেরই জয় হয় এটা নারী-পুরুষ উভয় লেখকদের সক্রিয় বিবেচনার দাবি রাখে। সবচেয়ে বড় কথা হলো লেখক লেখকই; লেখকের কোন নারী-পুরুষ বিভাজন নেই। লেখক আসলে একজন মানুষ। তাই মানুষ আত্মপরিচয় উদঘাটনের মাধ্যমে সভ্যতার স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব বলে মনে হয়। কেউ কারো দিকে আঙুল দেখিয়ে হুংকার দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জঙ্গল তো এটা নয়; এটা লোকালয়; এখানে থাকতে হলে মানুষের মতো আচরণ করতে শিখতে হবে আমাদের।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ