আজ মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

পুরুষবাদ আর নারীবাদ

আজম খান  

পুরুষবাদ খারাপ কারণ সে নারীর প্রতি বৈষম্য করে, নারীর উপরে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সকল প্রকারের দমন নিপীড়ন চালায়। একটা সিস্টেম যখন খারাপ প্রতীয়মান হয় তখন তার চাইতে ভালো সিস্টেমের আগমন ঘটে। নতুন সিস্টেম বলতে নারীবাদ বলি আর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা বলি কাজ তার এক।

এখন আমি যদি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে বলি পুরুষ পরকীয়া করে তার বৌকে কষ্ট দেয় তাই নারীও একই কাজ করবে তাহলে আমার মতবাদ পুরনোটা থেকে কোনদিক দিয়ে অধিকতর উত্তম? এই প্রশ্নটা আমার না। প্রশ্নটা নৈতিকতার।

নারীবাদ নৈতিকতার ঠ্যাকা নিয়ে বসছে কিনা সেটা আবার বলবেন না! সম অধিকারের প্রতিষ্ঠা বিষয়টাই তো একটা নৈতিক বিষয়। মানুষ সভ্যতার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রজাতি হিসেবে টিকে আছে এর কারণ তার ক্ষুরধার মস্তিষ্ক এবং দলবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা। দলবদ্ধ হতে গিয়ে মানুষ আবিষ্কার করেছে তাকে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে, সহমর্মী হতে হবে। নাহলে সমাজ, রাষ্ট্র দূরে থাক, প্রজাতি হিসেবেই আমরা বিলুপ্ত হয়ে যাবো।

এই সহানুভূতি, সহমর্মিতা মানুষ তার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রত্যাশা করে। সে তার ভাই, বন্ধু, স্ত্রী, স্বামী, অফিসের বস, পাশের সিটের বাসযাত্রী, বাবা, মা আত্মীয়স্বজন সবার কাছ থেকে এগুলো চায়। এটা পাওয়া এবং দেওয়া প্রতি মানুষের অধিকার এবং কর্তব্যের পর্যায়ে পড়ে।

পুরুষতন্ত্রকে আমরা সম অধিকার বলি আর নারীবাদ বলি যেভাবে বলি না কেন তা দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে চাই। কারণ এটা খারাপ। পুরুষতন্ত্রের জোরে পুরুষ তার সঙ্গিনীর আবেগের মূল্য না দিয়ে বাইরে একাধিক সম্পর্ক স্থাপন করে। আমরা সবাই জানি এটা খারাপ। কিন্তু কেন খারাপ? কারণ এখানে একজন নারীকে সে কষ্ট দিচ্ছে, তার প্রতি সহমর্মিতা পুরুষের মাঝে এখানে অনুপস্থিত। এখন যদি কেউ বলে নারীও একই কাজ করবে তাইলে জীর্ণ পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে আপনার ফারাকটা কই থাকে।

সহমর্মিতা তো এখানে পুরাপুরি অনুপস্থিত। তাইলে সাধারণ মানুষ কেন পুরনো সিস্টেমকে ফেলে দিয়ে আপনার মতবাদকে গ্রহণ করবে। তাদেরকে তো আপনার কারণটা বুঝিয়ে আপনার মতামত কেন উত্তম তা বুঝাতে হবে।

২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের পরপর ৪ জন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের গ্রেপ্তার পরবর্তী একটা ছবি ছিল তখনকার সময়ের প্রতীক, ব্লগারদের নিরাপত্তাহীনতা, হেফাজতের দাবির মুখে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রতীক। সেই ছবি নিয়ে ছাগুরা কম নোংরামি করে নাই, সিপি গ্যাং নামক সরকারি লোকজন তো আরও এককাঠি বেড়ে ব্লগারদের গোপনাঙ্গ দিয়ে অনেক কিছু প্রবেশ করানোর সরকারি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। সেই একই ছবি দিয়ে একজন ব্লগারের মতামত, কথাবার্তাকে হেয় করার জন্য ট্রল করলেন কতিপয় নারীবাদী। আপনারা যা বুঝলেন না সেই ছবিটা দিয়ে আদতে সেই সময়ে প্রতিটা ব্লগারের মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ব্যক্তিগত জীবনের যাতনাগুলোকে অপমান করলেন।

কারও মতামত, কথা সমালোচনা করার অনেক রাস্তা আছে। কিন্তু কুৎসিত, কদর্য রাস্তাটাই আপনাদের বেছে নিতে হলো?

বাংলাদেশে নারীবাদী আন্দোলন সীমাবদ্ধ কতিপয় এলিট লোকজন, সামান্য কিছু উচ্চ মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুম এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের সভা, সেমিনারে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন বিত্ত, দরিদ্র শ্রেণির নারীদের এসবে কিছুই আসে যায় না। আপনি সমাজে সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহলে এটা একটা মতাদর্শিক লড়াই।

যদি লড়াইয়ে জেতার ইচ্ছা থাকে, আগ্রহ থাকে তাহলে আপনি বিচক্ষণ হবেন, হঠকারিতা এড়িয়ে চলবেন।

মোল্লামনারা তো বসেই আছে কখন মুখ দিয়ে একটা ভুল কথা বের হবে আর তা প্রচার করে তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবে। তাইলে এ সুযোগ তাদের দেয়া হবে কেন। কেউ যদি এই সুযোগ একের পর এক দিয়ে যেতে থাকে তাহলে এই প্রশ্ন চলে আসা একদম অমূলক নয় যে আসলে এই লড়াইটা জিততে সে কতটুকু আন্তরিক।

আজম খান, ব্লগার, অনলাইন এক্টিভিস্ট ও সংগঠক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৪ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ