প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এনামুল হক এনাম | ২০ জানুয়ারী, ২০১৮
অমরত্ব লাভ কি সম্ভব? বিজ্ঞান কি পারে মানুষকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা দিতে?
উত্তর: এখন পর্যন্ত না। মৃত্যুকে বিজ্ঞান ঠেকাতে পারে না, কিন্তু বিলম্ব করতে পারে।
গত শতকের শুরুতেও যেসব দেশে গড় আয়ু ছিল ২৫-৩০ বছর, সেইসব দেশেই এখন গড় আয়ু ৭০ বছরের উপরে। ২৫-৩০ বছর গড় আয়ু-কাল ঝাড়ফুঁক বা পানি পড়াতে ৭০ বছরে আসেনি, বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনের ফলেই হয়েছে।
বিজ্ঞানে যে শাখায় স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা হয় তা হলো চিকিৎসা বিজ্ঞান, যা এখনো একটি অসম্পূর্ণ বিজ্ঞান শাখা। তাই এই মুহূর্তেই বলা যাচ্ছে না কখন মানুষ ভবিষ্যতে মৃত্যুকে জয় করতে পারবে কি না, তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান গত একশ বছরে যে পরিমাণ উন্নতি লাভ করেছে, আগামী একশ বছর পর তা কোথায় আমাদের নিয়ে যাবে, কিংবা এক হাজার বছর পর তা কি হবে এসবই কল্পনাতীত।
মানুষের অমরত্ব লাভের প্রধান অন্তরায় শরীরের কোষগুলো বিভাজন হতে হতে এক সময়ে বিভাজনের ক্ষমতা হারানো। মানুষ একটি বহু কোষী প্রাণি, মানুষের দেশের প্রত্যেকটি কোষই স্বাধীনভাবে বিভাজিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের শারীরিক সক্ষমতা প্রদানে সহায়তা করে। পুরনো কোষ মরে গিয়ে নতুন কোষকে জায়গা করে দেয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এক সময় যে মেটাবলিক প্রসেসে এই কোষ বিভাজিত হয়ে কাজ করে তা ব্যাহত হয়, প্যাথলজিক্যাল ডেট ঘটে। এছাড়াও ডিএনএ ক্ষয় বা ক্ষতিগ্রস্ত, ক্যান্সার, মেটাবলিক ডিজিজ, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হারানো এসবই মৃত্যুর অন্যতম কারণ সমূহের মধ্যে পড়ে। অর্থ শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কার্য ক্ষমতা হারালে আপনাকে এক সময় মরতেই হবে।
তারপরও মানুষ যদি শারীরিক অমরত্ব লাভ করে তবে সেই অমরত্ব লাভ কখনোই সুখকর হবে না। ৮০-৯০ বছরেই যেখানে অসুস্থতা না থাকলেও জীবন একঘেয়ে হয়ে যায়, সেখানে অমরত্ব লাভ করে হাজার বছর বেঁচে থাকা মৃত্যুর মেনে নেয়া থেকেও বেশি কঠিন হবে। তারপর প্রযুক্তি, বিজ্ঞান যেভাবে দ্রুত এগুচ্ছে, অমরত্ব লাভ করা ব্যক্তি যুগের সাথে তাল মেলাতে না পেরে খুব দ্রুতই সেকেলে হয়ে যাবেন। তার জন্য জীবন দুঃসহ যন্ত্রণার হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়ে যাবে।
তবে বিজ্ঞান যদি ভবিষ্যতে মানুষের মস্তিষ্ককে স্ক্যান সফট-কপি বা সফটওয়্যারে রূপান্তর করতে পারে তবে মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারবে।
দেখা গেল আপনার মৃত্যুর পর বা পূর্বে আপনার মস্তিষ্কের সকল স্মৃতি একটি পেনড্রাইভে বা ইন্টারনেট স্পেসে আপলোড করে দেয়া হল, ভার্চুয়ালি বেঁচে রইলেন আজীবন, নাতিপুতিদের সাথে আজীবন কথা বলতে পারলেন। এটা খুবই সম্ভব একটি প্রক্রিয়া, শুধু মানুষের মস্তিষ্ক বায়োলজিক্যাল এক্সেস প্রয়োজন হবে।
কোন যুবকের মস্তিষ্কে যদি সেই স্ক্যান করা কপি আপলোড করে দেয়া হয়, তখন সেই অমরত্ব চাওয়া ব্যক্তি অন্যের দেহে বেঁচে থাকারও সুযোগ পেয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে দেখা যাবে, ল্যাবরেটরিতে ক্লোনিং করে শরীর সর্বস্ব মানুষ বানানো হচ্ছে, বৃদ্ধ ব্যক্তি তাগড়া জোয়ান দেহে ঢুকে যাচ্ছেন।
গাঁজাখোরে গল্প মনে হচ্ছে? মনে রাখবেন, মাত্র একশ বছর আগেও কুষ্ঠ রোগকে ঈশ্বরের অভিশাপ মনে করা হত, আর মিউজিয়ামে ঠাই নেয়া রেডিও-ও ছিলো গাঁজাখোরে গল্পের মত কল্পকাহিনী।
কী হবে একশ বছর পর... আর একহাজার বছর পর?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য