আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

পাবনা ও উন্নয়ন

রণেশ মৈত্র  

আমার মাতৃভূমি পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভুলবাড়িয়া গ্রামে। সেখান থেকে বাবা পরিবার পরিজনসহ চলে আসেন পাবনা শহরে। সেই ১৯৪৭ সালে। আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে। সেই পাবনা শহরে নিজস্ব কোন জমি-জিরাত বাড়ী ঘর নেই। করতে পারিনি আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে। আবার গ্রামের বাড়ী জমি-জিরাত ও নেই-১৯৫৪ সালে বাবার মৃত্যুর পর আমরা পাঁচটি নাবালক ভাই-বোনকে মানুষ করতে মা সেগুলি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। তাই পৈত্রিক ভিটাও নেই গ্রামে।

এত কিছু স্বত্বেও পাবনাতেই আমার আজীবনের বসবাস। পাবনা আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে-সাংস্কৃতিক সংগঠন ২/৩টি করতে শিখিয়েছে-ভাষা-আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত করেছে, বামপন্থী রাজনীতি করতে উৎসাহিত করেছে। তাই পাবনার কাছে আমার ঋণের কোন সীমা পরিসীমা নেই। সে ঋণ শুধবার ক্ষমতাও নেই।

এই সত্তর বছরে পাবনার উন্নয়নের দিকে যদি আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ফিরে তাকাই তবে যে দৃশ্য ভেসে ওঠে তা তেমন একটা সুখকর নয়। পাবনার প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি পাবনা বাসীর মত আমাকেও উদ্বেগাকুল করে কিন্তু হতাশায় নিমজ্জিত করে না। আশাবাদী মনটি আমার দৃঢ়ভাবে মনে করে, যদি পাবনা বাসী ঐক্যবদ্ধ থাকা যায়, যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাবনায় ন্যায় সঙ্গত দাবীগুলি যথার্থভাবে উত্থাপন করা যায়, যদি সেই দাবীতে সংগঠিত সংগঠিত হয়ে সোচ্চার থাকা যায়-তবে অবশ্যই পাবনাকে আমরা যথেষ্ট পরিমাণে উন্নত পাবনায় আজ হোকে কাল হোক পরিণত করতে পারব। কাজটা আমাদের দাবী করতেও হবে আমাদেরকেই। সমগ্র উত্তরবঙ্গের চেহারা পাবনার চাইতে কোনভাবেই ব্যতিক্রমী নয়-তাই তাও বিবেচনায় রাখছি।

এর জন্য যেমন প্রয়োজন ঐক্যের, তেমনই প্রয়োজন আত্মবিশ্বাসের। এই দুটি থাকলে মানুষ অসাধারণ শক্তি অর্জন করতে পারে এবং বিশ্বাস রাখতে চাই, পাবনা ও উত্তবঙ্গবাসী এই দুটিকে পুঁজি করে দৃঢ়তা-নমনীয়তার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করবেন।

এবারে সমস্যাগুলির কথায় আসি। পাবনা জেলার নয়টি উপজেলা শহরেই পৌরসভা প্রশাসন চালু হয়েছে। নতুন পৌরসভাগুলি হলো, সাঁথিয়া, আটঘরিয়া, সুজানগর, চাটমোহর, ভাঙ্গুরা ও ফরিদপুর। আগে থেকেই পৌরসভা ছিল পাবনা, ঈশ্বরদী ও বেড়াতে। তন্মধ্যে পাবনা ও ঈশ্বরদী পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত করা হয়েছে অনেকদিন হলো।

এই তিনটির মধ্যে সবচাইতে পুরাতন পাবনা পৌরসভা। এবারে পাবনা পৌর নাগরিক সুবিধাদির কথা ভাবা যাক। প্রথমেই যোগাযোগ ব্যবস্থা। একমাত্র সড়ক যোগাযোগের কথাই প্রযোজ্য কারণ পাবনাতে কোন রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠে নি (তবে আশা করা যায় বছর খানেকের মধ্যে নির্মীয়মাণ রেলপথের নির্মাণকাজ ঈশ্বরদী থেকে পাবনা পর্যন্ত সমাপ্ত হবে) এবং নৌ যোগাযোগের কোন সুযোগই নেই।

পৌর এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা যা আছে তাকে সচল ও নিরাপদ রাখতে হলে অবিলম্বে তার ৮০ ভাগ রাস্তাকে ব্যাপক সংস্কার ও মেরামত কাজ করতে হবে। যার তার জন্য একদিকে সরকার এবং অপরদিকে নিয়মিত কর প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে।

পাবনার, ঈশ্বরদী ও বেড়ার পৌর এলাকায় কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই যা আছে তা কাঁচা এবং রাস্তার এক পাশ দিয়ে। কখনই দুই পাশে ড্রেন না হলে এক পাশে ড্রেন থাকলে তার দ্বারা পানি নি:সরণ হতে পারে না। পাবনাতে আরও হয় না এ কারণে যে কোথায় গিয়ে ময়লা পানি পৌঁছাবে তার কোন নিশানা নেই। ইছামতি নদী প্রায় পুরাপুরি বেদখল হয়ে যাওয়ায় এবং ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে বর্তমানে যে পাগাড় দেখা যায় কোন কোন ড্রেন থেকে সেখানে ময়লা আবর্জনা ও কাদাজল এসে জমা হয় এবং মরা জীবজন্তুর ভাগাড়ে পরিণত হওয়ায় ঐ ইছামতী পাবনাবাসীর স্বাস্থ্যের হানি ঘটাচ্ছে মারাত্মকভাবে। তাই দ্রুত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে শহরের উত্তর দক্ষিণে প্রবাহিত ইছামতি নদীর খনন কাজ এবং পদ্মার সাথে তার কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা জনস্বাস্থ্য, ইছামতীর প্রবহমানতা পুনরুদ্ধার ও নৌ-যোগাযোগ পুনরায় চালু করা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রয়োজন পৌর এলাকাগুলিতে জরুরী ভিত্তিতে ন্যুনতম ৫০টি করে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা।

পৌরসভা একটি স্বায়ত্ত শাসিত সংস্থা কাগজে কলমে হলেও কার্যত: প্রতিপদে পদে তাকে আমলাদের উপর নির্ভর করতে হয়। তদুপরি সরকারগুলিও আমাদের দেশ দলবাজি রোগের দ্বারা প্রবলভাবে আক্রান্ত হওয়ায় একদিকে যেমন বিরোধী দল প্রভাবিত পৌরসভাগুলি উপযুক্ত আর্থিক সহায়তা থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত অপরদিকে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণাধীন পৌরসভাগুলির বেশ কয়েকটায় ব্যাপক দুর্নীতি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ায় কার্যকরভাবে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে পারে না। অবশ্য এ জাতীয় ভোগান্তি সারা দেশেই। তারপরও তো দেশ এগুচ্ছে যদিও যতটা এগুতে পারতো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতিমুক্তি প্রশাসন, দলপ্রীতি দলবাজিহীন রাজনীতি থাকলে। তবে এগুলি সহসাই পাওয়ার আশা নেই এবং সে কারণে সব কিছু স্বত্বেও পাবনাকে এগুতে হবে।

পূর্বোল্লিখিত তিনটি পৌরসভার কথা বাদ দিলে বাদবাকি ছয় পৌরসভার নাগরিক সুবিধাদির কোন কিছুই পৌরবাসীরা পাননি। শুধু কর বৃদ্ধি হয়েছে মাত্র। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত পৌরসভাগুলির মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা এবং অন্তত: দশ বছর মেয়াদে সেগুলি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। অগ্রাধিকার দিতে হবে নদীগুলির সংস্কার, খাবার জল পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ, রাস্তাঘাটের আধুনিকায়ন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলার বিষয়গুলিকে।

নির্মাণাধীন রেলপথটি পাবনা সুজানগর হয়ে পদ্মা পাড়ে দিয়ে বেড়া হয়ে চলে যাবে। এর সাথে পাবনা আতাইকুলা-সাঁথিয়া-বেড়া এবং আতাইকুলা থেকে দুলাই হয়ে কাশীনাথপুর হয়ে নগরবাড়ি ঘাটে সংযোগসাধন অপরিহার্য।

পাবনকে প্রাণবন্ত ও গতিশীল করতে ঈশ্বরদী থেকে আটঘরিয়া হয়ে চাটমোহর পর্যন্ত রেলপথ সংযোগের বিষয়টিও ভেবে দেখা উচিত। মনে রাখা প্রয়োজন, পণ্য ও যাত্রী চলাচলের জন্য রেলওয়ে সর্বাধিক সস্তা-বিশেষত: যখন নৌ-পরিবহনের সুযোগ ক্রমশ:ই সংকুচিত হয়ে আসছে।

উপরোল্লিখিত যোগাযোগ পরিকল্পনার অনুল্লেখিত উদ্দেশ্য হলো পাবনায় বেকার যুবক-যুবতীদের (উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত) বেকারত্ব দূরীকরণের সুযোগ সৃষ্টি। এ ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে-শিল্পায়নেও অন্তত: উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন। এ দিকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

স্বাস্থ্যের ও চিকিৎসার ব্যাপারে পাবনা অত্যন্ত পশ্চাৎপদ অবস্থানে রয়েছে। যদিও পাবনাতে একটি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ, একটি ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল ও একটি ১০০০ শয্যার মানসিক হাসপাতাল পাবনাতে রয়েছে। বস্তুত: পাবনার মেডিক্যাল কলেজটিতে যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষজ্ঞ এবং অপরাপর পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ২৫০ শয্যার বদলে জেনারেল হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ১০০০ এ উন্নীত করে সেখানেও নানা বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করা হয় এবং মানসিক হাসপাতালটিও ২০০০ শয্যায় উন্নীত করা হয় তবে চিত্রটা অনেকাংশেই পাল্টে যাবে।

তদুপরি উপজেলা পর্যায়ে ঈশ্বরদীতে একটি ১০০ শয্যার আধুনিক সরকারি হাসপাতাল ও অন্যান্য উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত নার্সের নিয়োগ দিলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা অনেকাংশে সুলভ হবে। ঢাকার হাসপাতালগুলির উপর ক্রমবর্ধমান চাপও খানিকটা কমবে। তবে বেসরকারি উদ্যোগে একটি ৫০০ শয্যার বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলে সরকারি হাসপাতালে স্বল্প ব্যয়ে গরীব রোগীরা চিকিৎসা সেবা নেওয়ার সুযোগ পাবেন যা এখন পর্যন্ত অনেকটাই দুর্লভ। এই প্রসঙ্গে পাবনা মেডিক্যাল কলেজটির নাম “পাবনা শহীদ ফজলে রাব্বী সরকারি মেডিক্যাল কলেজ” রাখার প্রস্তাব করছি।

শিক্ষাক্ষেত্রে বলা চলে, সবগুলি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজকে জাতীয়করণ করা প্রয়োজন। এটা দুঃসাধ্য নয় কারণ এখন শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন তো প্রায় পুরোটাই সরকার বহন করেন। বরং জাতীয়করণ হলে শিক্ষক নিয়োগ যদি পি.এস.সি’র মাধ্যমে হয় তবে হয়তো উন্নততর শিক্ষাদান সম্ভব হবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত। আর এখন তো হাই স্কুলগুলোতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত নয়-দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত চালু করা প্রয়োজন। তা সম্ভবও। এতে এইচ এস সি তে কলেজে ভর্তির চাপ বহুলাংশে হ্রাস পাবে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের নাম “পাবনা গোপাল লাহিড়ী কলেজ” রাখার প্রস্তাব করছি।

পাবনা জেলার উন্নয়নে অবিলম্বে বন্ধ হওয়া টেক্সটাইল মিলগুলি সরকারি উদ্যোগে চালু হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া নতুন নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলে তাতে বস্ত্রশিল্পের নতুন নতুন আধুনিক কারখানা গড়ে তুললে একদিকে বেকারদের কাজের ব্যবস্থা হতে পারে অপরদিকে গার্মেন্টস খাতে রফতানির পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে পারে। গার্মেন্টস শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ হলে এই শিল্পের উৎপাদন ব্যয় ও কিছুটা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়ে কুটির শিল্প হিসেবে তাঁত শিল্প, মৃত্তিকা শিল্প, বেত-শিল্প, সূচী শিল্প, বাঁশ শিল্প, পাট শিল্প প্রভৃতির বহুমুখীকরণ ও আধুনিকায়ন করলে (কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে) বিস্তর পণ্য উৎপাদন করে দেশ-বিদেশের বাজারে নতুন ছোঁয়া লাগানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যাংক ঋণ সহজ ও দীর্ঘমেয়াদী সুদে দেওয়ার ব্যবস্থা করলে গরীব ঘরের উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসতে পারবেন।

সকল সরকারি বেসরকারি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যুনতম ৩০ ভাগ মহিলা নিয়োগ কড়াকড়িভাবে বাধ্যতামূলক করাও প্রয়োজন তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে এই হার ন্যুনতম ৪০ ভাগ বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। আর সরকারের তরফ থেকে যে কাজটির দাবী দীর্ঘদিনের পাবনা বাসীর পক্ষ থেকে তা আমি এখানে পুনরুল্লেখ করছি। এ নিয়ে অতীতেও বহুবার লিখেছি। যমুনা নদীর মত একটি বিশাল নদীতে এ পর্যন্ত একটি মাত্র সেতু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রায় দুই দশক হলো তা নিয়ে প্রত্যহ অসংখ্য যানবাহন দিবারাত্র চলাচল করছে। গোটা উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণ বঙ্গের ৭/৮ কোটি মানুষের ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের সময় যমুনা পার হতে এই একটি মাত্র সেতু কিন্তু তা ক্রমবর্ধমান যানবাহন- যথা রেল, বাস, ট্রাক, কার, মিনিবাসসহ সকল প্রকার ইঞ্জিন বাহিত যান বাহনের ভারে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে- ফাটল দেখা দিয়েছে এই সেতুতে।

সেখানে এই যান বাহনের চাপ কমাতে অবিলম্বে নগরবাড়ি-পাটুরিয়া রেল ও যানবাহন চলাচলের জন্য প্রশস্ত একটি সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি নির্মিত হলে একদিকে যেমন টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ যমুনা সেতুর উপর চাপ কমবে- তেমনি আবার পাবনা, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, শাহজাদপুর, কুষ্টিয়া এলাকার মানুষের ঢাকা যাতায়াতের সময় ও ব্যয় বহুলাংশে হ্রাস পাবে-হ্রাস পাবে পণ্য চলাচল ব্যয় ও সময়ও।

এখন পাবনার মানুষকে ঢাকা যেতে মোটামুটি ছয় ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়- কিন্তু প্রস্তাবিত স্থানে সেতু নির্মিত হলে সেই সময় সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা লাগবে। বর্ণিত এলাকাগুলির মানুষ ভোরে রওনা হয়ে কাজকর্ম সেরে ঢাকা থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ী ফিরতে পারবে। যানবাহনের তেল খরচও কমে যাবে অন্তত: এক তৃতীয়াংশ। সমগ্র মানিকগঞ্জ জেলাও এর ফলে প্রচুর পরিমাণে উপকৃত হবে। কারণ ঈশ্বরদী থেকে এই সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলও ঢাকা পর্যন্ত চালু করা যাবে ফলে তাদেরও ব্যবসা বাণিজ্য, ঢাকা যাতায়াত সব কিছু অনেক দ্রুত গতি সম্পন্ন হওয়ার সুযোগ পারে।

রেলপথ নদীপথ না থাকায় পাবনা জেলাবাসীর বেসরকারি বাসের উপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতা কাটাতে এই পথে রেললাইন চালু করা ছাড়াও বিআরটিসি বাস ডিপো, যেটা পাবনাতে গড়ে তোলা হয়েছিল এবং নজর পড়তেই এরশাদ যেটা বন্ধ করে দিয়েছিল সেটি নতুন উদ্যমে কমপক্ষে ৫০টি বাস-ট্রাক দিয়ে চালু করে বি.আর.টি.সির পরিবহন সেবা নতুন উদ্যমে নতুন গাড়ী দিয়ে চালু করার দাবী দলমত নির্বিশেষে উত্তরাঞ্চলের সকলেরই শুধুমাত্র পাবনাবাসীর নয়। বস্তুত: বি.আর.টি.সি সম্পর্কে সরকারকে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তাঁরা সকল শক্তি দিয়ে বি.আর.টিসির সেবা দেশের জনগণের কাছে পৌঁছে দেবেন নাকি তাঁরা তাকে নাম মাত্র রাখবেন। জনগণের দাবী, জনগণের কাছে এই সেবা পৌঁছে দেওয়া হোক এবং তার জন্য দেশব্যাপী যতগুলি টার্মিনাল অতিতে গড়ে তোলা হয়েছিল সেগুলি চালু করা হোক অবিলম্বে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক নতুন বাস ও ট্রাক সরবরাহ করে ঐ টার্মিনালগুলোকে সমৃদ্ধ করা হোক বি.আর.টি.সিকে জনগণের চাহিদা মেটানোর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী বেসরকারি পরিবহণ মালিকের হুমকিতে পাততাড়ি গুটানো বা তার কাছে নতিস্বীকার করার জন্য নয়। গণপরিবহন সেক্টরকে বিকেন্দ্রীকরণ করার জরুরী প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে এবং তার জন্য, বিশেষ করে সমগ্র উত্তর বাংলায় ও দক্ষিণ বাংলায় রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে হবে- বন্ধ করা সবগুলি ষ্টেশনকে চালু করা, তার আধুনিকায়ন করা, গেটম্যান তেকে সুরু করে সকল পদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী ও কর্মকর্তা নিয়োগ করা, ইঞ্জিন ও বগির সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় কমপক্ষে চারগুণ করা, সবগুলি টয়লেট, বেঞ্চ, পাখা, আলো, ইত্যাদি তাবৎ যাত্রী সুবিধার আধুনিকায়ন ও নতুন নতুন রেল লাইন স্থাপনের মাধ্যমে সদা-.....রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী। তেমনি জরুরী নদীগুলিকে দখলদার মুক্ত করা খনন করা এবং প্রবহমান করা।

রণেশ মৈত্র, লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ