প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ০৪ জুন, ২০১৭
বছর দেড়েক আগে জাপানের কেন্দ্রিয় ব্যাংক (বিওজে) একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেটা হলো, যেসব ব্যাংক কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কাছে অর্থ গচ্ছিত করতো তাদের সেই গচ্ছিত অর্থ থেকে শতকরা ০.১ ভাগ ঋণাত্মক সুদ কেটে রাখার হতো। এর কারণ হিসেবে কেন্দ্রিয় ব্যাংক বলছিল, ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্যে হলো বিনিয়োগ করা। যার মধ্য দিয়ে দেশে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। আর সেটা না করে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকের টাকা কেবলমাত্র গচ্ছিত করে আসছিল, যা অর্থনীতির বারোটা বেজে যায়। আর ভুল শোধরাতে স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে তাদের গচ্ছিত অর্থ ব্যবসায় বিনিয়োগে উৎসাহ দিতেই বিওজে নেগেটিভ চার্জ কাটার সিদ্ধান্ত নেয়। এখন আর স্থানীয় ব্যাংকগুলো আর কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কাছে টাকা না রেখে ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণ দিচ্ছে, ফলে দেশে ‘অলস টাকায়’ রাজস্ব ফিরেছে।
আমি জানি না, জাপানকে অনুকরণ করতে গিয়ে এবারের বাজেটে সরকার কেন এই ‘অপরিপক্ব’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রাহকদের ‘লাখ’ টাকা ব্যাংকে রাখার ‘কর’ আদায়ের যে নিয়ম এসেছে, তা সত্যিই হতাশাজনক।
আমার মনে হয়, যে টাকা এই লাখপতির কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে, কোটিপতিদের ডাকসাইটের ‘কর’ না পাওয়া অর্থগুলোর যদি সন্ধান করতে পারতো তাহলে দেশের রাজস্ব আয় এমন পর্যায়ে যেত যা আমাদের দেশের উন্নয়নে যথেষ্ট ছিল। ওরা ব্যাংকগুলো ছিদ্র করে যে অর্থ বের করে, সেই অর্থগুলো যদি এনবিআর মর্যাদা দিতে পারতো, তাহলে আমাদের ‘কর’ কয়েকগুণে বৃদ্ধি পেত।
ধরুন, সারা দেশে ৪০ লাখ মানুষ লাখপতি। আর কোটিপতি ৫শ জন। এই চল্লিশ লাখ ব্যক্তির কাছে গড় পড়তা যদি দুই লাখ টাকা থাকে তাহলে এদের কাছে আট হাজার কোটি কর সরকার পাবে। আর ওই পাঁচশজনের কাছে দেশের তিন ভাগ অর্থ নড়াচড়া করে। কয়েক লাখ কোটি করের মুখ দেখে না। এই তিন ভাগের মাত্র অর্ধেকও করও যদি সরকার পেতো তাহলে ‘দেশের চেহারা পরিবর্তন করতে আর সময় লাগতো না।
ব্যাংকগুলোতে গিয়ে খোঁজ নেন, তাদের কাছে কতগুলো ঋণখেলাপি আছে। বছরের পর বছর বিনে সুদে এরা অর্থ ঢেলে আঙুল ফুলে করা গাছ করে দেয়। আগে গোড়ায় হাত দেন, তারপর নয় শাখা-প্রশাখায়। গোড়ায় খেদমত না করলে গাছে ফল যেমন দেয় না তেমনি শাখা-প্রশাখায় দৌড়ে বেড়ালে কাজ হয় না।
আমি বিশ্বাস করি, দেশে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কেন্দ্রিয় ব্যাংক কেবলমাত্র নেগেটিভ চার্জ আদায় শুরু করে, তাহলে বুঝবেন দেশটা পরিবর্তনের গীত শুরু হয়ে গেছে। ওরা বছরের পর বছর টাকা গচ্ছিত করে, বিনিয়োগের চেয়ে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কাছ থেকে সুদ পেতেই বেশি উৎসাহী। কাজেই এইগুলোকে আগে থামান।
তারপরও যদি দেখেন আপনাদের এনবিআর পরিপক্ব হচ্ছে না, তাহলে এই মধ্যবিত্তদের ধরেন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য