আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

সুন্দরবনের মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন

আতাহার টিটো  

মেহনতি মানুষের মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন। প্রতিনিয়ত আমরা যুদ্ধ করে চলেছি জীবনের সাথে, জীবন ধারণের-মৌলিক চাহিদা পূরণের ও অধিকারের। জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করে নিঃশ্বাস নিয়ে অন্তত বাঁচতে মহাপ্রাণ সুন্দরবনের বিকল্প নেই। সুন্দরবন'ই জীবন। তাই জীবন বাঁচাতে সুন্দরবনের মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন। অবশ্যই আমরা উন্নয়ন চাই এবং বিদ্যুৎ চাই। জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস না করে, জীবনের মৃত্যু না ঘটিয়ে। কোনভাবেই সুন্দরবন বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প হতে পারেনা। মনে রাখবার আছে, প্রকৃতি বাঁচলেই বাঁচবে সর্বপ্রাণ। নিঃশ্বাস বাধাগ্রস্ত করে উন্নয়ন নয়। উন্নয়ন হতে হবে সর্বপ্রাণের মঙ্গলের।

বিশ্বের প্রধান প্রধান ১০ টি বনের পাশে কোন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নাই।
১) Taiga, Asia-Europe-North America
২) আমাজন বন: অবস্থান ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম।
৩) কঙ্গো রেইন ফরেস্ট: আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় বন।
৪) Valdivian Temperate Rainforest, SouthAmerica, অবস্থান: চিলি,আর্জেন্টিনা।
৫) Tongass, North America: আমেরিকার আলাস্কা।
৬) সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, বাংলাদেশ।

এখন প্রশ্ন হলো ভারতের নিজ অংশে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কোন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নেই, তবে বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা রামপাল তাও আবার ১০ কি:মি: এর মধ্যে সেই জীবন বিধ্বংসী কয়লা বিদ্যুতপ্রকল্প কেন এবং কার স্বার্থে? প্রতিটি মানুষের অবশ্যই তা ভাববার আছে।
সূত্র: http://listsurge.com/top-10-largest-forests-in-the-world/

বর্তমানে যে ভারত আমাদের সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করছে, সেই ভারত তার নিজের দেশেই কয়লা বিদ্যুতের কারণে সে কতটা পরিবেশ বিপর্যয়রে মধ্যে আছে এবং কয়লা বিদ্যুৎ সংলগ্ন এলাকার মানুষ কতটা ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখিন, তা একটি ডকুমেন্টারি সহ তথ্য তুলে ধরছি:-

কর্ণাটকের নন্দিকুরে ল্যাংকো নামের একটি কোম্পানি ৬০০ মেগাওয়াট করে দুইটি প্রকল্প মোট ১২০০ মেগাওয়াটের উদুপি (Udupi) কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণ করে ২০১০ সালে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হয় ২০১২  সালে।খুব বেশি দিন হয়নি অথচ এর মধ্যেই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভয়াবহ দূষণে আক্রান্ত হচ্ছে স্থানীয় জনগণ, কৃষি, পানি, জীবন-জীবিকা। এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই নির্মিত হয়েছে একটি ডকুমেন্টারি।

ডকুমেন্টারির লিংক সংযুক্ত করা হলো। রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মিত হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের গা লাগোয়া পশুর নদী (যা সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে) ও জলাভূমিতে কি পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা প্রত্যক্ষভাবে বোঝা যাবে এই ডকুমেন্টারি টি দেখলে।    

ডকুমেন্টারিটি থেকে দেখা যাচ্ছে, ফ্লাই অ্যাশের কারণে আশপাশে কৃষি উৎপাদন কমে গেছে, ছাই পড়ে ছোট গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে গেছে, সুপারির ফলন ৭ কুইন্টালের বদলে হচ্ছে মাত্র ১ কুইন্টাল, গোলমরিচ এর গাছ মরে গেছে, ফ্লাই অ্যাশে ঢাকা ঘাস খাওয়ার পর গরু অসুস্থ হয়ে যায়, দূষিত পানি ও ঘাস খেয়ে বহু পশু মারা গেছে, সবুজ শস্য শ্যামলা অঞ্চল অনুর্বর ওয়েস্ট ল্যান্ডে পরিণত হয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের পানির পাইপ লাইন ভেঙে সাগর থেকে নেয়া লোনা পানি প্লাবিত হয়ে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে, বড় গাছের মধ্যে কাঁঠাল গাছ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নারিকেল এবং ধান উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পেয়েছে।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো, বিদ্যুতকেন্দ্র হতে নির্গত দূষিত পানি স্থানীয় পানির উৎসগুলোকে দূষিত করে ফেলেছে- পানি লবণাক্ত হয়েছে, পানিতে ছাই ভেসে থাকে, কুয়ার পানি হলুদ/সবুজ রং ধারণ করেছে, গোসল করলে গায়ে চুলকানি হয়, পানি পানে বমি ভাব হয় ও জ্বরজারিতে আক্রান্ত হতে হয়,  বিদ্যুতকেন্দ্র নির্গত গরম পানিতে মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়, শিশুদেরকে দেখা গেল নাক-মুখ ঢেকে চলাচল করছে। এবং যে বিদ্যুতের কথা বলে স্থানীয় জনগণকে এই দুর্ভোগের মধ্যে ফেলা হয়েছে, সেই বিদ্যুৎও তারা পাচ্ছেনা, বিদ্যুৎ যাচ্ছে ব্যাঙ্গালোরে! আশা করি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র কেন কৃষিজমি, জলাভূমি, বনাঞ্চল ও লোকালয়ের আশপাশে থাকা উচিত নয় তা সবার কাছে আরো পরিষ্কার হবে এই ভিডিও টি দেখলে।
সূত্র: A Documentary on UPCL Thermal Power Plant, Nandik…: http://youtu.be/sCITQ8AO0f8

ভারতের বিশাল অংশ জুড়ে আছে সুন্দরবন। কিন্তু তারা তাদের সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করেনি এবং করবেওনা কখনও।কারণ বাধার প্রাচীর তুলে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের আইন। ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের গাইড লাইন ২০১০ অনুসারে নগর, জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী, অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকা অর্থাৎ ভারতের জীব-বৈচিত্র্য সম্পন্ন কোন অঞ্চলের ২৫ কি:মি: সীমার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এড়িয়ে চলতে হবে।

সূত্র: http://envfor.nic.in/sites/default/files/TGM_Thermal%20Power%20Plants_010910_NK.pdf

রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প মূলত ভারতের নিজেদেরই একটি বাতিলকৃত প্রকল্প। তার নিজ দেশেই সে এই প্রকল্প চালু করতে পারেনি পরিবেশের ভয়ানক ক্ষতি এবং জনসাধারণের তোপের মুখে। ভাবতেই অবাক হই, সেই বাতিলকৃত প্রজেক্ট চালু হচ্ছে বাংলাদেশে এবং তাও আবার সুন্দরবনের মত স্পর্শকাতর যায়গায় যা ১০ কিলোমিটারের মধ্যে...!!!
প্রশ্ন হলো, কয়লা যদি এতই ভাল হয়, প্রযুক্তি দিয়ে দূষণ বন্ধ করা যদি সম্ভবই হয়, তবে ভারত কেন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ থেকে সরে এসে ২০২২ সালের মধ্যেই ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানী থেকে উৎপাদন করার উদ্যোগ নিয়েছে..?? যুক্তরাজ্য কেনো ২০২৫ সালের মধ্যেই সকল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে...?? ভারত কিংবা যুক্তরাজ্যে কী কোন প্রযুক্তিবিদ নাই...?? ভারত এবং যুক্তরাজ্যের লিংক টি নিম্নে সংযুক্ত করা হলো।
সূত্র:১) ভারত http://www.mnre.gov.in

সূত্র:২) যুক্তরাজ্য https://www.gov.uk/government/news/government-announces-plans-to-close-coal-power-stations-by-2025

এছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের সকল দেশ যেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা সৌর, পানি ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এবং ২০২৩ থেকে কিছু কিছু দেশ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে সেখান থেকে সরে আসবে, সেখানে আমাদের দেশ উন্নত বিশ্বের ছুঁড়ে ফেলে দেয়া বাতিল প্রযুক্তি গ্রহণ করে ভারতীয় কোম্পানির ক্ষতিকারক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করছে...!!! অবশ্যই তা বুঝিয়ে দেয়, কাউকে খুশি করতেই দাসত্বের অনুন্নত উন্নয়ন...!!!

কয়লা বিদ্যুতের ভয়াবহতার কারণে জীব বৈচিত্র্য রক্ষার্থে শ্রীলংকায় ভারতীয় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল; এলএনজি ভিত্তিক বিকল্প প্রস্তাব ১৮ মে ২০১৬, রয়টার্স পূর্বাঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগর ত্রিঙ্কোমালিতে ৫০০ মেগাওয়াটের একটি ভারতীয় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে আসা এবং বিকল্প হিসেবে এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেয়ার কথা জানিয়েছেন গত মঙ্গলবার শ্রীলংকার একজন কেবিনেট মন্ত্রী। শ্রীলংকার জ্বালানি মন্ত্রী চান্দিমা ভীরাক্কোরি বলেছেন, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনা তার সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময়ে গত শনিবার(১৪ মে), ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে এক সাক্ষাতে এক কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

আমরা ভারতকে আহত করতে চাই না। তাই প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা তার সফরের সময় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকল্প হিসেবে এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন, বলে ভিরাক্কোলি রয়টার্সকে জানান। সর্বোচ্চ পর্যায়েই এই আলোচনা হয়েছে, এবং এতে উভয় পক্ষের সম্মতি রয়েছে।” সম্প্রতি গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে শ্রীলংকা বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছে, জানিয়েছেন শ্রীলংকার সরকারি কর্মকর্তারা।

ভারত এবং চায়না গত কয়েকবছর ধরে মূলত অবকাঠামো খাতে শ্রীলংকাকে একের পর এক ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে শ্রীলংকার গৃহযুদ্ধের অবসানের পর থেকে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুনিয়ার অন্যতম ব্যস্ত নৌপথের সন্নিকটের দেশ শ্রীলংকায় প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।
সূত্র: http://in.reuters.com/article/sri-lanka-india-coal-idINKCN0Y90R8

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে ক্যান্সার ঝুঁকিতে আছে চীন। WHO এর নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ২০ গুন বেশি ক্ষতিকারক পদার্থ পাওয়া গেছে চীনের বাতাসে। প্রতিনিয়ত মাস্ক পরে, বাতাস কিনে বাঁচতে হয় তাদের। চীনের মতো বাতাস কিনে বাঁচবার ক্ষমতা, বাংলার মেহনতি মানুষের নেই। এমতাবস্থায় চীন তার পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে, কয়লা তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরে এসে বিশাল অংশ জুড়ে সোলার বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে যাচ্ছে যার স্ক্রিনশট নিম্নে সংযুক্ত করা হলো।


আমাদের দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ, সংবাদ কর্মীর ভারতের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র দেখার সুযোগ হয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, পরিবেশ দূষণ বিষয়ে যা এই লেখায় বলা হলো, তার সবই সেসব কেন্দ্র থেকে হয়। জার্মানির কোলনের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রটি অনেকবার আলোচনায় এসেছে। প্রশ্ন রাখা হয়েছে, পরিবেশের ক্ষতি হলে জার্মানি কী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করত..?? যেখানে বিদ্যুতকেন্দ্র তার আশপাশে বিশাল এলাকায় কোনও জনবসতি নেই। যারা ছিলেন তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই এলাকায় জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ঠিকমতো বৃষ্টি হয় না, ফসল হয় না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লিকে কেন্দ্র করে বিশাল এলাকা নিয়ে স্থায়ী সাদা মেঘের মতো ধোঁয়ার আস্তরণ তৈরি হয়েছে। এই ক্ষতি মেনে নিয়ে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করেছে জার্মান, কারণ এর আশপাশে সুন্দরবনের মতো বিশেষ কোনও বন নেই। সংরক্ষিত কোনও অঞ্চল নেই। জনবসতিও নেই। এই এলাকায় ফসল না হলেও তাদের কোনও সমস্যা হয় না। বহু অনাবাদী জমি এখনও তাদের পড়ে আছে। জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও তুলনা চলে না। তুলনা চলে না ভারতের সঙ্গেও। ভারত শুধু সুন্দরবন না যেকোনো বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করতে পারে না। অথচ বাংলাদেশে এসে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করছে।

পরিবেশ এবং জনজীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে ও ভয়ঙ্কর ক্ষতি হবে এই কয়লা বিদ্যুতের দ্বারা, তা আগে থেকেই বুঝতে পেরে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় নানা শ্রেণীপেশার মানুষ কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এবং তার খবর:-
১) জানুয়ারি ২০১১ বিহারের নবীনগর থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে আন্দোলনে ১ জন নিহত ও অনেক আহত।
২) জানুয়ারি ২০১১ ছত্তিসগড়ে কে,এস,কে মহানদী পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে আন্দোলন ২০ জন আহত ও ১০০ জন আটক হয়।
৩) জানুয়ারি ২০১১ অন্ধপ্রদেশ এ ইস্ট কোস্ট এনার্জি নামের কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে আন্দোলনে ২ জন নিহত আর ২৫ জন আহত।
৪) এপ্রিল ২০১১ ঝাড়খণ্ড এ ৬ জন নিহত, আর ২১ জন আহত হয় ভারত কোকিং কয়েল লিমিটেডের বিপক্ষে।
৫) আগস্ট ২০১১ পাঞ্জাবের গোবিন্দপুর পাওয়ার স্টেশন এ নিহত হয় একজন ও আহত একজন।
৬) নভেম্বর ২০০১ এ ঝাডখন্ডে একজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা হয় কয়লা কেন্দ্রের জন্য।
৭) মার্চ ২০১৪ মেগা থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট নিয়ে উত্তর প্রদেশের আলহাবাদ এ কৃষক আন্দোলন হয়।
৮) ২০১৩ জুলাই, তিলাইয়া আল্ট্রা মেগা পাওয়ার প্রজেক্ট এর আন্দোলন হয় ঝাডখন্ডে, এতে ১ জন নিহত। আর বহুজন আহত হয়।
৯) গোদ্ধা প্রজেক্ট ঝাড়খন্ডে ২০১৩ সালে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিরোধী আদিবাসী আন্দোলন হয়।
১০) নভেম্বর ২০১২, কাটনি পাওয়ার স্টেশন, মধ্যপ্রদেশ এ কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টের বিপক্ষে আন্দোলন করে সুনিয়া বাই নামে একজন, নিজ শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং একদিন পরে মারা যায়। এছাড়া আরো বিভিন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়ে আন্দোলনের খবর নিচের লিংক এ।
সূত্র: http://www.sourcewatch.org/index.php/Opposition_to_coal_in_India

এরই ধারাবাহিকতায় মনুষ্যত্বের দায়বদ্ধতায় জীব বৈচিত্র্য রক্ষার্থে, আজ বাংলাদেশেও ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত আন্দোলন হচ্ছে স্বত:স্ফুর্তভাবে। এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছেন কোলকাতার বন্ধুরা এবং বাংলাদেশের নানা শ্রেণীপেশার সকল স্তরের আপামর জনগণ সহ প্রবাসী জনগণ। এখন কথা হলো, ভারত সরকার যদি তার জনগণের আন্দোলনের ন্যায্য দাবী তখন মেনে নিতো, তাহলে এত হতাহত হতোনা, প্রাণ যেতনা এবং পরিবেশ বিপর্যয় সহ মানুষের চরম ক্ষতি সাধিত হতোনা। এই ভারত তার জনগণের কথা উপেক্ষা করে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করবার পর পরিবেশ সহ সর্বপ্রাণের ক্ষতি হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরে এসে ২০২২ সালের মধ্যেই ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানী থেকে উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ নিয়েছে। তো ভারত যেখানে তার ভুল বুঝতে পেরে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে সরে আসছে সেহেতু বাংলাদেশ সরকারের উচিত পরিবেশ বিপর্যয় ও সর্বপ্রাণের ক্ষতি আমলে নিয়ে জনগণের ভাষা বোঝা এবং সকল মানুষের যুক্তিসঙ্গত প্রাণের দাবী, রামপাল কয়লা তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করা।

•আমি প্রকৃতির কথা বলি যে কারণ, প্রকৃতি বাঁচলেই বাঁচবে প্রাণীকুল। এ যে নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ঋণ এবং মনুষ্যত্বের ও শিল্পের দায়বদ্ধতা।
•শিশুদের কথা বলি, জন্মমাত্রই যেন পায় সবুজে ঘেরা, প্রেমময় একটি শান্তির পৃথিবী।
•আমি নদীটির কথা বলি, স্রোতধারায় সে নদীর জল নাচবে ছন্দে ছন্দে, বাঁচবে ঢেউয়ে ঢেউয়ে সর্বোচ্চ অধিকারে।
•বাগানের চারাগাছ হতে শুরু করে ঘাসের কথা বলি, তারাও যেন বেড়ে ওঠে সর্বোচ্চ অধিকারে।
•আমি ভালবাসা ও মানবতার কথা বলি, সর্বপ্রাণ যেন বাঁচে প্রেম-ভালবাসা-মানবতা-সত্য ও সুন্দরে, সর্বোচ্চ অধিকারে।
•প্রতিটি মানুষ, আমরা জীব বৈচিত্র্যের কথা বলি কারণ, সর্বপ্রাণ নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচবার একমাত্র অবলম্বন সুন্দরবন। মহাপ্রাণ সুন্দরবন, সুন্দরবন'ই জীবন। সুন্দরবনের মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন।

প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে ভালবাসা দিতে এসেছি, পেতে এসেছি। মনুষ্যত্ব এবং শিল্পের দায়বদ্ধতার যায়গায়, মানুষ-মানবতা-প্রকৃতি-সর্বপ্রাণের কথা আমি বলবোই। দেশ-মানুষ-মানবতা-প্রকৃতি-সর্বপ্রাণ'ই আসল। বুক টান টান করে শিরদাঁড়া উঁচিয়ে, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবার আছে। দেশ, বর্ণমালা ও সর্বপ্রাণ ভালবাসবার এবং আদর করবার আছে। মহাপ্রাণ সুন্দরবন, সুন্দরবন'ই জীবন। সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চাইনা। সর্বপ্রাণের মঙ্গল হোক।

তথ্যঋণ : 'সম্পাদক, সাপ্তাহিক' 'সাংবাদিক ও আলোচক গোলাম মোর্তজা', লেখক কল্লোল মুস্তাফা ও তারিকুর রহমান শ্যামল।

আতাহার টিটো, সঙ্গীত শিল্পী

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ