আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

স্বপ্নপূরণের বাজেট ২০১৮-১৯ : রূপরেখা ও প্রস্তাবনা

ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন  

বাজেট যদিও একটি বছরের আয়-ব্যয়ের দিক নির্দেশনা এবং কোন কোন খাতে কত ব্যয় করা হবে এবং কোন কোন খাত থেকে কত টাকা আয় সংগ্রহ করা যাবে বা বাড়াতে হবে তার এক হালখাতা। তবে যেহেতু বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সবগুলো দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তাই তাদের বার্ষিক বাজেট আর শুধুমাত্র বার্ষিক বাজেট নয়, এর লক্ষ্য হচ্ছে এটাকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের জন্যে অধিকতর সম্পদ ও প্রযুক্তিবিদ্যা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব একটু বেশি কারণ, আমরা তিন তিনটি লক্ষ্য অর্জনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এগুলো হচ্ছে প্রথমত: ২০২১ সালের মধ্যে “উচ্চ মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন যার অর্থ হচ্ছে বর্তমানের জনপ্রতি ১৭৬৫ ডলারের বার্ষিক মাথাপিছু আয়কে ৩৯৫৬ ডলারে উন্নীত করা। দ্বিতীয়ত: ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ১৬৯টি টার্গেট (দেশ-বিশেষে এর সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে) অর্জন করার জন্যে যথোপযুক্ত সম্পদ আয়োজন ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

এটা কিন্তু সহজ ব্যাপার নয় এবং এর জন্যে নতুন নতুন সৃষ্টিশীল আয় সংগ্রহের পন্থা গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয়ত: ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন “সোনার বাংলা” অর্জন যার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত, সমৃদ্ধশালী, স্থিতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক অর্থনীতি যেখানে ধনী-দরিদ্রের আকাশসম ফারাক থাকবে না, যেখানে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে, যেখানে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সকল নাগরিকের জন্যে নিশ্চিত হবে- এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গঠন করা চাট্টিখানি কথা নয় এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্যে যেখানে প্রতিকুল পরিবেশ এবং ঘনবসতিপূর্ণ লোকের হলহলা। সুতরাং বাংলাদেশ যদিও বর্তমানে যুক্তরাজ্যের প্রাইস-ওয়াটার হাউস গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে বিশ্বের “দ্বিতীয়” মোস্ট ইমপ্রেসিভ বা সম্ভাবনাময় অর্থনীতি তবুও উল্লিখিত লক্ষ্যসমূহ বা ভিশনগুলো অর্জন করা জাতির জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অভাবনীয়
বর্তমানে আমাদের অর্থনীতি খুবই ভাল অবস্থানে আছে। বস্তুত: পৃথিবীর অন্যতম সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ যার লক্ষণীয় সম্পদ বলতে “মানুষ” ও “পানি” ছাড়া অন্য কিছু নেই; না আছে তৈল সম্পদ, জ্বালানি বা অন্যবিধ খনিজ সম্পদের পাহাড়, না আছে উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানব সম্পদ বা নব নব প্রযুক্তিবিদ্যার অঢেল সরবরাহ ও জ্ঞান। তা সত্ত্বেও গেল নয় বছর এর অগ্রযাত্রা ও উন্নয়ন অবাক হওয়ার মত। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের তুলনায় বাংলাদেশ বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেমন; শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এনরলমেন্ট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অথবা জীবনের গড় আয়ু বৃদ্ধিতে এবং বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, দারিদ্র নিরসনে বাংলাদেশর অর্জন প্রশংসনীয়।

তাছাড়া গেল ৯ বছরে এর জাতীয় জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি একনাগাড়ে ৬.৫% এর অধিক এবং এ বছর এর প্রবৃদ্ধি ৭.২৮% এবং আগামী বছরে ৭.৬৫% হবার সম্ভাবনা সত্যিই প্রশংসার। এসব উন্নয়ন যে কত বেশি তা উপলব্ধির জন্যে এটুকু তুলনা করলেই যথেষ্ট যে, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল--- এই দীর্ঘ ১৫ বছরের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩.২% এবং বর্তমানে তা দ্বিগুণের বেশি। এটা সম্ভব হয়েছে প্রথমত: এ দেশের খেটে খাওয়া জনগণের জন্যে, বিশেষ করে কৃষক, জেলে, গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যে যারা হাড় খাটুনী খেটে স্বদেশের রিজার্ভকে চাঙা রাখছেন।

দ্বিতীয়ত: বর্তমান সরকাররে বলিষ্ঠ ও পরিপক্ব নেতৃত্বের জন্যে যাদের ধ্যান-ধারনায় দেশের উন্নয়ন হচ্ছে মূল লক্ষ্য। তাদরে প্রচেষ্টার ফলে দেশে আজ “মঙ্গা” নেই। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান গার্মেন্ট বা তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ এবং বিশেষ করে জাতিসংঘের মহাসচিব একে “উন্নয়নের রোল মডেল” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং আমেরিকার প্রভাবশালী পত্রিকা “ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল” একে ÒSatandard bearer of the South Asia” বা দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের স্ট্যান্ডার্ড বহনকারী দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে।

বস্তুত: বাংলাদেশের অর্জন অভাবনীয়। এটা আর “তলাবিহীন ঝুড়ি নয়”। সম্প্রতি জাতিসংঘ চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দিয়েছে যে, “বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে” এবং আগামী বছরগুলোতে আমরা যদি আমাদের উন্নয়নের গতি প্রবাহ ধরে রাখতে পারি তাহলে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা অর্জন করবো। “স্বল্প আয়ের বা দরিদ্রতম দেশগুলোর অন্যতম” সে বদনাম আমরা উতরে উঠেছি। শুধু তাই নয়, বিশ্বের ২১৪টি দেশ বা অঞ্চলগুলোর মধ্যে (১৯৩ টি দেশ জাতিসংঘের সদস্যভূক্ত দেশ) মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট “বঙ্গবন্ধু-১” উৎক্ষেপণ করে বাংলাদেশ ৫৭তম অবস্থান অর্জন করেছে। এবছরে দরিদ্র দেশ থেকে উত্তরণ এবং স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মান-সম্মান, ইজ্জত ও ভাবমূর্তি যে কত উপরে উঠেছে তা টাকার পরিমাণে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। আজ বাঙালই জাতি একটি গর্বিত জাতি, আত্মমর্যাদাপূর্ণ সম্ভাবনাময় দেশ।

মূলত চারটি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের অর্জন অভাবনীয়। উদাহরণ স্বরূপ ১) বিদ্যুৎ উৎপাদন ২) কৃষি বিপ্লব ৩) দারিদ্র বিমোচন এবং ৪) ডিজিটালাইজেশন। যেখানে ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৩,২০০ মেগাওয়াট তা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ১৬,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। যদিও জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে তা সত্ত্বেও খাদ্য-শস্যের উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে তিনগুণেরও অধিক যা ১১ লক্ষ টন থেকে প্রায় ৩৮ লক্ষ টন হয়েছে। দারিদ্র বিমোচনে এ সরকারের অর্জন দেশকে অন্য মার্গে নিয়ে গেছে। ১৯৯১ সালে যেখানে ৫৭.৮% ভাগ জনগণ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করতো আর বর্তমানে তা কমে গিয়ে ২২.৩% এ নেমে এসেছে। পৃথিবীর মধ্যে দুইটা দেশ গণচীন এবং বাংলাদেশের অর্জন এক্ষেত্রে অনুকরণীয়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৩ কোটি মানুষ আজ ডিজিটাল ফোন ব্যবহার করছে। আরেকটি অর্জন লক্ষণীয় আর তা হচ্ছে নারী জাগরণ। আগে যেখানে মাত্র ৬% নারী কর্মজীবী ছিলেন তা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৩৮% এ পৌঁছেছে। দেশের উন্নয়নে এ এক বিশাল অর্জন।

আমাদের উন্নয়ন “মানবীয় উন্নয়ন”ও বটে
যখন কোনো দেশে উন্নয়ন দ্রুত গতিতে হয়, তখন সেদেশে মুদ্রাস্ফীতি যেমন বাড়ে তেমনি ধনি-দরিদ্রের ফারাকও লক্ষণীয়ভাবে বাড়ে। তবে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে অধিকতর খরচ করছেন। লোকজনের বেতন ও ভাতা বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে যেমন একটি ‘বিরাট বাজার’ তৈরই হয়েছে যারফলে বিনিয়োগের আকর্ষণ বেড়েছে এবং একই সাথে মুদ্রাস্ফীতি নাগালের মধ্যে আছে এবং ধনী-দরিদ্রের ফারাক প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ যেমন; শ্রীলংকা, ভারত, ভুটান, পাকিস্তান ইত্যাদি থেকে এখনো কম এবং সেজন্য একে “মানবীয় উন্নয়ন” বলা যেতে পারে। তবে এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে করে ফারাকটি খুব বেশি না হয়।

ভিশনগুলো অর্জনের জন্যে অনেক সম্পদ দরকার
তবে যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম তা হচ্ছে, আমাদের সামনে অনেকগুলো ‘ভিশন’ ও রূপরেখা রয়েছে, তার অর্থ হচ্ছে অনেক অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্যে সর্বাগ্রে প্রয়োজন অধিকতর সম্পদ ও প্রযুক্তি অর্জন।

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আমাদের দৃশ্যমান (tangible) ও অদৃশ্যমান (intangible) অবকাঠামোর উন্নয়ন অতীব প্রয়োজন। দৃশ্যমান অবকাঠামো হচ্ছে; রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর, নদীবন্দর, রেললাইন, জ্বালানি, আইটি টেকনোলজি বা ডিজিটালাইজেশন, সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট ইত্যাদি। টাকা থাকলে এগুলো করা সম্ভব এবং সরকার একাধিক মেগা প্রজেক্ট শুরু করেছেন। ঢাকা-সিলেট ৪+২ লেন বা ঢাকা-চট্টগ্রাম ডেডিকেটেড ৮ লেন এখনো শুরু হয়নি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট সবার জানা আছে। এই মহাসড়ক দিয়ে বছরে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার বা ৬ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকার মালামাল পরিবহন হয়। ঢাকা শহররে যানজটও অসহনীয় অবস্থায় রয়েছে; সুতরাং এগুলোকে চলাচলের আরও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্যে আরও অধিক সম্পদ দরকার।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার জন্যে আগামী ১৩ বছরে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ৭৫ লক্ষ ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বা ৯২৮ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিবছর অতিরিক্ত ৫ কোটি ৭৮ লক্ষ ২১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বা ৬৬ বিলিয়ন ডলার যোগান দিতে হবে। আমাদের প্রস্তাবিত বাজেট হচ্ছে ৪ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকা বা ৫৮ বিলিয়ন ডলার যা দেশের জিডিপির তুলনায় এবং দেশের চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

মোদ্দাকথা আমাদের আরও অধিকতর সম্পদ দরকার। সম্পদ সংগ্রহ করার জন্য প্রধানত তিনটি দরজা খোলা আছে। প্রথমত: অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, দ্বিতীয়ত: বৈদেশিক সাহায্য, এবং তৃতীয়ত: ব্যবসায়ীদের অধিকতর বিনিয়োগ।

বৈদেশিক সাহায্য তুলনামূলকভাবে দিন দিন কমে এসেছে এবং তাছাড়া আমাদের উন্নয়নের পার্টনার বা অংশীদার দেশগুলো যে পরিমাণ সাহায্য দিয়ে থাকে তা হচ্ছে চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম। উন্নয়নশীল দেশের জন্য পার্টনার দেশগুলো গেল এক দশকে গড়ে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছে যা টেকসই উন্নয়নের চাহিদা যদি ফিবছর ৫.৩ ট্রিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে তাহলে ২.৯% ভাগ এবং যদি অতিরিক্ত ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে, তাহলে ৪.৪% ভাগ মাত্র অর্থাৎ ৫% এরও কম। এর অর্থ হচ্ছে চাহিদার ৯৫% ভাগ সম্পদ দেশকে অন্যভাবে সংগ্রহ করতে হবে। সুতরাং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ানোর জন্য নব নব সৃষ্টিশীল উদ্যোগ নিতে হবে।

আয়কর বাড়ানোর জন্যে এনআইডি ব্যবহার করা যেতে পারে
সুখের কথা যে, বর্তমান বছরে আয়কর দানকারীর সংখ্যা ১১লক্ষ থেকে বেড়ে ৩৩ লক্ষে গিয়ে পৌঁছেছে। তবে সাড়ে ১৬ কোটির দেশে এখনও কম। এক্ষেত্রে আমাদের একটি প্রস্তাব আছে। প্রস্তাবটি হচ্ছে, দেশের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয় পত্রের বিপরীতে কে কত আয়কর দিয়েছে তা নির্ধারণ করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড” এর বিপরীতে প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর দাখিল করতে হয়। আমাদের দেশে ব্যক্তি বিশেষের জন্য টিন নম্বরের (TIN) পরিবর্তে এনআইডি ব্যবহার করলে এর সংখ্যা সহজেই বাড়তে পারে। তবে কর্পোরেশন বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্যে টিন নম্বর রাখা যেতে পারে। বস্তুত যাদেরই এনআইডি আছে, তাদের প্রত্যেককে আগামীতে তাদের বার্ষিক আয়ের হিসাব দাখিল করার জন্য বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা দেয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত প্রত্যেক লেনদেনে এনআইডি নম্বর যদি ব্যবহার করা হয় তাহলে কে কত আয় করছেন এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে তা নির্ণয় করা অসম্ভব নয়।

সরকারের রিজার্ভ ফাণ্ডের বিপরীতে সভারিন বণ্ড চালু প্রয়োজন
আমরা জানি ব্যক্তি বিশেষের জন্যে সঞ্চয় হচ্ছে আশীর্বাদ। তবে দেশের জন্যে তা হচ্ছে অভিশাপ। অর্থনীতিতে একটি থিওরি আছে যা “গ্রিফিন পেরাডক্স” নামে সমধিক প্রসিদ্ধ। এই থিওরির মতে সরকারের জন্যে সঞ্চয় হচ্ছে কার্স বা অভিশাপ। স্থায়ী সঞ্চয়কে যদি বিনিয়োগ না করা হয় তাহলে নতুন প্রোডাকটিভি আসবে না। অর্থাৎ “অলস সম্পদ” দেশের জন্য ভাল নয়। যারা ব্যবসা করেন তা তারা জানেন। ইনভেনটরি বা মজুদ মাল যদি বিক্রি না হয়, তাহলে বেজায় মুশকিল, তাতে ব্যবসার রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট দুর্বল হবে। সুতরাং যত বেশি ও যত দ্রুত ইনভেন্টরি ব্যবহৃত হবে ততই ব্যবসার জন্য ভাল। বেশি মজুদ রাখা যেমন ক্ষতিকর, এক্কেবারে কম রাখাও ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের ৩২ বিলিয়ন ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ আছে বলে আমরা গর্ববোধ করি। গর্ববোধ করার যথেষ্ট কারণও আছে। তবে রিজার্ভ অলস সম্পদ, একে কাজে লাগাতে না পারলে দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। প্রশ্ন হচ্ছে "What should be the optimal level of reserve” কতটুকু রিজার্ভ রাখা দেশের জন্য মঙ্গলকর তা নির্ণয় করতে হবে। আর এর অধিক রিজার্ভের একটি অংশ সোভারনি বণ্ড ইস্যুর মাধ্যমে বিনিয়োগ করা দরকার বোধ করি। তাতে প্রথমত: ঋণ নিতে হবে না এবং দ্বিতীয়ত সম্প্রতিকালে যেহেতু অন্য দশেরে রিজার্ভ-বণ্ডের রেটও অনেক কমে গেছে। আসন্ন বাজেটে এব্যাপারে দিক নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে বৈকি। বাংলাদেশ ব্যাংক এব্যাপারে নিশ্চয়ই তাদের সুচিন্তিত অভিমত সরকারকে জানিয়েছেন।

সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ এবং সম্পদের অপচয় বন্ধ প্রয়োজন
সরকার প্রতিটি প্রজেক্ট বা প্রোগ্রামে অনেক অনেক টাকা বরাদ্দ করছেন এবং বহুবিধ উন্নয়ন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। তবে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কাজ বড় ধীরগতি হয় এবং তারফলে ব্যয়ভার বাড়ে এবং সম্পদের অপচয় হয়। সম্পদের অপচয় সাম্প্রতিককালে বিরাট আকার ধারণ করেছে। দুর্নীতিও লাগামহীন হারে বেড়েছে। তাছাড়া বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে ছোটখাটো কাজের জন্যেও জনগণকে এবং সরকারি কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বারবার ধর্না দিতে হয় যারফলে উন্নয়ন কাজগুলো ধীরগতি বা স্থবির হয়ে পড়ে থাকে। অনেক সময় ছোট একটি কাজ যেমন ধরুন রাস্তাঘাটের মেরামতের কাজ যথাসময়ে না হওয়ায় সমস্যাটা কয়েকগুণ বাড়ে আর তাতে খরচও বাড়ে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যে বিশেষ করে মানুষের হয়রানি বন্ধকরণ এবং জনগণের বহুমুখী প্রতিভা ও সৃষ্টিশীল স্পিরিটের পরিস্ফুটনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্যে প্রয়োজন সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ এবং জেলায় জেলায় “জেলা সরকার” ব্যবস্থা প্রবর্তন যারা নিজ দায়িত্বে দৈনন্দিন বহুবিধ কাজ সমাধা করবেন এবং উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হবেন। জেলায় জেলায় জেলা সরকার প্রবর্তনের আগে এ ব্যাপারে জনগণকে বুঝাতে হবে, এর ভাল-মন্দ বিশ্লেষণ করতে হবে এবং এজন্য আসন্ন বাজেটে নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন বৈকি।

ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি আজ সর্বজনবিদিত, তবে প্রতিকার দরকার
ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি আজ সর্বজনবিদিত। হাজার হাজার কোটি টাকা এর ফলে বেহাত হচ্ছে এবং ব্যাংক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা এখনও জনগণ জানে না। আর কেউ কেউ কোন কোনো ব্যক্তি বিশেষকে শাস্তি দিলেই মনে করেন ব্যাংক কেলেঙ্কারি বন্ধ হয়ে যাবে। পত্রপত্রিকায় খবর বের হয়েছে যে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদালতে বছরের পর বছর আটকে আছে (দৈনিক প্রতিদিন, ২৪ মে, ২০১৮)। কেলেঙ্কারি হবার পর ঋণ ফেরত না পেলে তখন আদালতে যাওয়া হয়। বরং কেলেঙ্কারি যাতে না হয় তার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। বস্তুত ব্যাংক কেলেঙ্কারি বন্ধের জন্যে “কয়েকজন উদ্যোগী” (যারা ১৯৭১ সালে নিহত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান) সুপারিশ করেছিলেন যে, “ডিজিটাল পোর্টাল” তৈরি করে কোন কোন বাবদে বা কলাটোরেলের বিপক্ষে কোন কোন ব্যাংক থেকে কত পরিমাণ ঋণ নেওয়া হয়েছে তা যদি তুলে ধরা যায় এবং সেই সাথে ঐ কোম্পানির ঋণের পরিমাণ সর্বমোট কত আছে বা হবে এবং এর এসেট কত আছে তা লিপিবদ্ধ করা যায়, তাহলে বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদ যখন ঋণ দেওয়ার কথা বিবেচনা করবেন, তখন সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাবেন এবং এর ফলে সুপারিশকারীদের ধারনা ব্যাংক কেলেঙ্কারি কমবে। তারা বিনা পয়সায় এ কাজটি করে কেলেঙ্কারি বন্ধে সাহায্য করতে চান। এ প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে গেল ২ বছর থেকে পড়ে আছে এবং এদের এ দায়িত্ব দিলে ব্যাংক কেলেঙ্কারি বন্ধের ন্যুনতম একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জনমনে আস্থার সংকট কমবে। বস্তুত ব্যাংক কেলেঙ্কারি সরকারের বহু অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। আসন্ন বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংক কেলেঙ্কারি বন্ধের জন্য সরকার কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন বা নিবেন তার বিবরণী থাকলে জনমনে আস্থা বাড়তে পারে।

অধিকতর চাকরি বা এনট্রিপিনিয়ার তৈরির জন্যে বিশেষ বরাদ্দ দরকার
দেশে বেকার শিক্ষিত যুবক-যুবতীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ জনগণ হচ্ছে ১৮ থেকে ৩৩ বছরের মধ্যে এবং এদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৯% ভাগ হচ্ছে ২৫ বছরের নিচে । অশিক্ষিত লোকের মধ্যে বেকারত্ব ৪-৫% এর বেশি নয় বলে বিভিন্ন তথ্যে প্রকাশ। তবে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাংলাদেশে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও তা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যে বাজেটে স্কিল ডিভালাপমেণ্ট ও এনট্রিপিনিয়ার বা উদ্যোগী তৈরির জন্যে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের বরাদ্দ “সীডমানি” হিসাবে কাজ করতে পারে। উল্লেখ্য যে এই বিরাট সংখ্যক উঠতি জনগোষ্ঠীকে যদি উপযুক্ত কাজে না লাগানো যায়, তাহলে যেমন ডিমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পাওয়া যাবে না এবং একই সময়ে এরা সমাজের বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে । সুতরাং এব্যাপারে বাজেটে জোর দেয়া প্রয়োজন বোধ করি।

পুঁজিবাজার তুলনামূলকভাবে দুর্বল
আমাদের দেশে পুঁজি বাজার তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত দুর্বল এবং জাতীয় বাজেটে বা জিডিপিতে এর অবদান অত্যন্ত কম, শতকরা ২১ ভাগ মাত্র। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে এ অবদান ৮৬% ভাগেরও বেশি এবং থাইল্যান্ডে প্রায় ১১৭% ভাগ, যুক্তরাষ্ট্রে এর অবদান ১৪০% ভাগ এবং সুইজারল্যান্ডে ২২৯% ভাগ। এ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ প্রয়োজন।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের গভীরতা খুব কম যারফলে মেনিপুলেশন সহজ হয় এবং তালিকাভুক্ত বা লিস্টেড ভালো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। এসংখ্যা বাড়ানো উচিত। আসন্ন বাজেটে যে সমস্ত কোম্পানি নতুনভাবে তালিকাভুক্ত হবে, তাদের আগামী ২ বছরের জন্য আয়কর মুক্ত করা হলে অনেকে হয়তো তালিকাভুক্ত হতে পারে। ন্যূনপক্ষে কোম্পানিগুলো লিস্টেড হলে শতকরা ১৫ ভাগ আয়কর যদি ছাড় দেয়া যায় তাহলে কিছু কোম্পানি লিস্টেড হতে পারে। তৃতীয়ত সরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ও বিদেশী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে তালিকাভুক্ত করার জন্যে অনেকেই সুপারিশ করছেন। তাছাড়া ব্যাংকের সুদরে হার ও ঋণ দেবার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা সমন্বয় প্রয়োজন।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য যে সমস্ত বণ্ড বাজারে ছাড়া হবে সেগুলোকে আয়কর মুক্ত রাখার বিধান অনেক দেশেই আছে। সাম্প্রতিককালে চীনের সেনজেন-সাংহাই প্রতিষ্ঠানের সাথে স্টেটেজিক পার্টনারশিপ হওয়ায় অনেকে Gain Tax মওকুফের প্রস্তাব দিয়েছেন। Gain Tax মওকুফ প্রস্তাবটি গ্রহণ করা যেতে পারে তবে শর্ত থাকে যে, এই অতিরিক্ত পুঁজি যেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। এই টাকাগুলো বিদেশে পাচার বা Spurious খরচে যাতে না ব্যয় হয় তার জন্যে শর্ত জুড়ে দিতে হবে।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে আইন আছে যে, যদি বাড়ি বিক্রি করে লাভ হয় তাহলে তার উপর Gain Tax ধার্য হয়। তবে দুবছরের মধ্যে ঐ টাকাটা নতুন বাড়ি কেনার জন্যে খরচ করলে Gain Tax দিতে হয় না।

বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করার উদ্যোগ প্রয়োজন
পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই অভিযোগ দেখা যায় যে, বাংলাদেশিরা বিদেশে বেআইনিভাবে টাকা পাচার করছেন। বিভিন্ন দেশে যেমন দুবাই, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ইত্যাদিতে "বেগম পাড়া" তৈরি হয়েছে। এই illegal money transfer যাতে না হয় তার জন্যে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া অতীব প্রয়োজন। illegal money transfer এর প্রকৃত তথ্য দিতে পারলে যে বা যারা এ তথ্য দিয়েছেন তাদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেয়া যেতে পারে। তথ্য প্রদানকারী স্বদেশী বিদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান হতে পারে। তাছাড়া ঐ সমস্ত দেশের সাথে পার্টনারশিপ এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যে, ঐ সমস্ত দেশে যে সব বাংলাদেশি বিনিয়োগ করেছেন তার হিসাব নিকাশ প্রদান করার জন্যে ঐ সব সরকারকে জোর দেয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য যে, কোনো মার্কিন নাগরিক বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বা ব্যাংকে টাকা রাখলে তাকে তা মার্কিন আয়কর বিভাগকে জানাতে হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও ওদের তথ্য সরবরাহ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

বাজেট ব্যবসা-বান্ধব হওয়া প্রয়োজন
বাজেট ব্যবসা-বান্ধব হওয়া প্রয়োজন এজন্যে যে, ব্যবসায়ীদের অধিকতর বিনিয়োগ ছাড়া আমাদের ভিশনগুলো অর্জন সম্ভব নয়। দুঃখের বিষয় যে, এখনো পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ তূলনামূলকভাবে কম, মাত্র ২৩% ভাগ। একে দুই/তিন গুণ বাড়াতে হবে এবং তা সম্ভব। দৃশ্যমান এবং বিশেষ করে অদৃশ্যমান অবকাঠামোগুলো যেমন আইন-কানুন, রীতি-নীতি, প্রসেস-প্রসিডিওর অর্থাৎ আমলাতন্ত্রের জটিলতা যদি দূর করা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অহেতুক হয়রানি বন্ধ করা যায়, বিনিয়োগের নিশ্চয়তা প্রদান করা যায় এবং জমি অধিগ্রহণের দীর্ঘসূত্রিতা লাঘব করা যায় তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগ অবশ্যই বাড়বে। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী ১৭৬ দিন লাগে যেখানে মালয়েশিয়ায় ১৯ দিন লাগে। আমাদের সরকারি কর্মচারীরা কি মালয়েশিয়ার কর্মচারী থেকে বিদ্যাবুদ্ধিতে দুর্বল? নিশ্চয়ই না, তবে এমন অবস্থা কেন? তাছাড়া ব্যবসার সিকিউরিটি অবশ্যই নিশ্চিত করা চাই। এর সাথে বিদেশে টাকা পাচার এবং ব্যাংক ব্যবস্থার সমন্বয়ও প্রয়োজন।

এপ্রিল মাসের মধ্যেই বাজেটের টাকা বিলিবণ্টন সম্পূর্ণ করা প্রয়োজন
সম্পদের অপচয় ও দুর্নীতি কমানোর জন্যে বাজেটে কিছু দিক নির্দেশনা থাকলে জনগণ খুশি হবে এবং দেশও উপকৃত হবে। দেশে বৃষ্টিঝড় শুরু হলেই রাস্তাঘাট খুড়োখুড়ি এবং ড্রেনের কাজ শুরু হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে মে-জুনের শেষে বাজেট বৎসর শেষ হয় এবং সেজন্যে বাজেটের টাকা শেষ করার জন্যে এই তাড়াহুড়ো। এর ফলে কাজ নিম্নমানের হয় এবং টাকাটা বিফলে যায়। বিভিন্ন তথ্য মতে এতে প্রজেক্টের শতকরা ৩০% থেকে ৬০% ভাগের মতো অপচয় হয় এবং জনগণের করের টাকা এভাবে যথেচ্ছভাবে অপচয় যাতে না হয় তার জন্যে ডায়নামিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বস্তুত এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যে প্রয়োজন সরকারের বাজেটে বরাদ্দকৃত টাকা ১ বৈশাখ বা এপ্রিল মাসের মধ্যেই বিলিবণ্টন সম্পূর্ণ করা।

সম্পদ আদায়ের নব নব উদ্যোগ
দেশে প্রতিদিন শত শত অনুষ্ঠান হয়। অধিকতর সম্পদ আহরণের জন্যে Event Tax আরোপ করা যেতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ব্যবস্থা চালু আছে। যারা বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন, তারা এ থেকে কিছুটা আয়কর রেহাই পেলে নিশ্চয়ই খুশি হবেন। সুতরাং সরকার প্রত্যেক এনআইডিওয়ালাকে যারা বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন, তারা কত টাকা বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন তার হিসাব আয়কর বিভাগকে জানালে তারা এর শতকরা ২৫ ভাগ মওকুফ পাবেন বলে আদেশ জারি হলে নিজ উদ্যোগে ভাড়াটিয়ারা তা সরকারকে জানাবেন। এমতাবস্থায় যারা বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন তারা যেমন মওকুফ পাবেন এবং যারা বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন তাদের আয়ের খবরটাও আয়কর বিভাগ অতি সহজে জানতে পারবে। এতে নতুন আয়ের সংস্থান সম্ভব। তাছাড়া বাড়িঘর ও জমির রেজিস্ট্রেশন বাবদ কর ‘মার্কেট রেটে’ করলে কয়কে হাজার কোটি সহজেই আয় সম্ভব এবং কালোটাকার ঝকমারিও কমবে বৈকি।

বস্তুত বাজেট প্রণয়নে দেশের ভিশনগুলো ভুললে চলবে না। বাজেট যদিও এক বছরের হালখাতা, তবে দেশের রূপকল্প অর্জনে এ এক বড় হাতিয়ার। তবে একথাও মনে রাখতে হবে বাজেটের সাথে দেশের অন্যসব নীতিমালা যদি সমন্বিতভাবে কাজ করে বা সেভাবে ঢেলে সাজানো হয় তাহলে এর কার্যকারিতা ও অর্জন অনেক শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ হবে, আর অন্যসব নীতিমালা পরস্পর বিরোধী বা সমন্বয়হীন হয় তাহলে এর কার্যকারিতা দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। সুতরাং সরকারকে এ বিষয়ে সর্তক থাকা প্রয়োজন।
২৪ মে, ২০১৮

ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, মন্ত্রী, পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ