প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
তপু সৌমেন | ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
রোহিঙ্গা সৃষ্ট মানবিক ইস্যুটি এতোই বিশাল যার কোন কুলকিনারা নাই। জীবন বাঁচানোর জন্য রোহিঙ্গারা ছুটে আসছে বাংলাদেশের দিকে। আসলে এদের ছুটে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। বা বলা যায় অনেকেই চাচ্ছিল চলে আসতে।
আরাকান হচ্ছে মিয়ানমারের একেবারে উপকূলীয় জনপদ, যাতে চীন ও ভারত বিশাল অংকের টাকা বিনিয়োগ করে রেখেছে সেখানে বাণিজ্যিক বিভিন্ন প্ল্যান্ট ও প্রকল্প করার জন্য। আর তাদের সেই বিশাল বিনিয়োগের লোভে পড়ে মিয়ানমার এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
যেহেতু বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এই আরাকান রাজ্য তাই স্বাভাবিকভাবেই এদের একটা বড় অংশ মুসলিম এবং বাংলা (টেকনাফের স্থানীয় + আরাকান + মিয়ানমারের নিজস্ব শব্দের ব্যবহারে) ভাষায় কথা বলে, আর উপকূলীয় মানুষরা হয় সাধারণত দরিদ্র, এরাও ঠিক তেমন, যা মিয়ানমারের কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে। কারণ সারা বিশ্ব জুড়ে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার চলে আসছে সেই বহুকাল আগে থেকেই। এই ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাপারটা "একেতো ঢোলের বারি তার উপর নাচুনে বুড়ি" এর মত ব্যাপার। মিয়ানমার চাচ্ছিলই এদের বিতাড়িত করতে যেকোনো ভাবে। কেবল সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।
গত ২৫ আগস্ট তারিখে বহুদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে আরাকানের বাসিন্দারা আক্রমণ করে বসে বেশ কিছু পুলিশ ফাঁড়িতে যার প্রেক্ষিতে শুরু হয় নতুন করে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার যা বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় বহুগুণ বেশী, যা মূলত মানবতা বিরোধী অপরাধ। মিয়ানমার সরকারের যৌথ সাঁড়াশি অভিযানে বহু মানুষ হতাহত হয়। বহু মানুষ ভিটে মাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। ব্যাপারটা এমন তারা চার পাশ থেকে ঘিরে ধরে শুধু বাংলাদেশ সীমান্তের দিকটা উন্মুক্ত করে রেখেছে যাতে করে সেদিকেই এরা পালাতে পারে। যা আসলে তাদের এজেন্ডারই অংশ, যেকোনো মূল্যে এই দরিদ্র মুসলিম রোহিঙ্গাদের সাথে অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরও বাংলাদেশে ঠেলে ঢুকিয়ে দিতে হবে যার ফলাফল আমরা দেখছি আগস্ট ২৫ থেকে আজ অবধি ২লক্ষ ৯০ হাজার (অফিসিয়ালি, বিভিন্ন সংস্থার হিসেব মতে) তারও অনেক বেশী রোহিঙ্গা এদেশে চলে এসেছে। যা মূলত আমাদের জনগোষ্ঠী না, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত এরা এসে পড়েছে আমাদের উপর। এখন এদের না পারছি ফেলে দিতে না পারছি গিলতে। কিন্তু যতদিন না কোন সমাধান হয় ততদিন তো আমাদেরকেই টানতে হবে এই বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে।
সোজা কথায়; যেহেতু এ সংকট আমাদের তৈরি না অতএব এর দায়ভারও আমাদের না। মানবতা দিয়ে রাষ্ট্র চলে না। রাষ্ট্র চলে সঠিক কাঠামোর উপর, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মোতাবেক। আমাদের নিজেদের জনসংখ্যা অনুপাতে আমাদের দেশের একটা পরিকল্পনা থাকে তার উপর হুট করে এতোগুলো মানুষের চাপ আমাদের জন্য অবশ্যই সমস্যার কারণ। তবুও আমরা তাদের ফেলে দেই নি বরং আমাদের ভেতরে জায়গা করে দিয়েছি। আসলে আবেগে তাড়িত না হয়ে এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে যেতে হবে। কেউ একজন বিপদে পড়ে আপনার বাড়িতে আসতেই পারে সাহায্য চেয়ে, তার মানে এইনা তার সকল কিছুর ভার আমার এবং তাকে আমার সম্পত্তির অংশও ভাগ করে দিতে হবে।
এই মানুষগুলো এখন অসহায় কিন্তু এরা বেশী দিন অসহায় থাকবে না কারণ তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে অনেক আগেই, অনেক আগেই তারা হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনদেরকে, হারিয়েছে সর্বস্ব, তাদের আর হারানোর কিছুই নেই। তাই এই মানুষগুলোকে যে কেউ চাইলে যেকোনো দিকে ডাইভার্ট করে ফেলতে পারে। অবাক হবার মত কিছু হবে না যদি এই বিশাল সংখ্যক মানুষ একদিন দাবী করে বসে তাদের আলাদা জায়গা করে দিয়ে নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করে দিতে হবে এই দেশে। যা আমাদের জন্য বিশাল হুমকির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এদের যেহেতু কোন নাগরিকত্ব এই মুহূর্তে নেই, তাই এখানে কোন কাজও পাবে না, তাই আপনি আমি চাইলে এদের দিয়ে সস্তায় যেকোনো অপরাধ ঘটিয়ে নিতে পারবো। আর জঙ্গি সংগঠনগুলো তো ওঁত পেতেই থাকে এইসব সুযোগের জন্য।
এরই মধ্যে বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে এই মানুষগুলোকে ভরনপোষণের জন্য এখনি দরকার সাড়ে সাত কোটি ডলার যা টাকার অংকে ছয়শত কোটি টাকা বা তার বেশি। যার যোগান দিতে হবে এই সরকারকেই যদি কোথাও থেকে যোগাড় করা সম্ভব না হয়।
রোহিঙ্গা সমস্যা যতটা না মানবিক তার চেয়েও বেশী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সামাজিক, তথা সকল ক্ষেত্রে হুমকি স্বরূপ। তারমানে এই না এই মানুষগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। এদেরকে সঠিকভাবে ফেরত পাঠাতে হবে, কিন্তু সেখানেও ফ্যাঁকড়া এরা নাকি আবার ফিরে যেতে চায় না। তাইলে কি তাদের ভেতরেও গুপ্ত উদ্দেশ্যই ছিল বাংলাদেশে চলে আসা? বিশ্বের তাবৎ ইসলামী রাষ্ট্রগুলো যেখানে নির্বিকার সেখানে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করেছেন মানবতার খাতিরে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। নিজের গোলার ধান দিয়ে অতিথি ভোজন কয়জনই বা পারেন? যা হয়ত কখনো এও মনে করিয়ে দিতে পারে শান্তিতে নোবেল বিজয়ীরা যেখানে হাত পা গুটিয়ে বসে সেখানে কেন তবে এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী নোবেল পুরস্কারে পুরস্কৃত হবেন না?
আমরা চাই বৈশ্বিকভাবে এই সমস্যার সমাধান হউক, বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃঢ় পদক্ষেপ আমাদের এই কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। আর একটি মানুষও যেন মারা না যায়, আর একজনও যেন হামলার শিকার না হয়, আর কোন বাচ্চা যেন মুখ থুবড়ে পড়ে না থাকে। সঠিক সময়ে এরা যেন ফেরত যায় তাদের নিজের দেশে।
আমাদের কাছে তারা অতিথি, আর অতিথির মতই হয়ে থাকবে। এমন কোন কাজে যেন তারা লিপ্ত না হয় যা তাদের উপর আমাদের মনকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য