প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
গত দুই বছর ধরে উত্তর কোরিয়া থেমে থেমে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ জাপানকে উত্তেজিত করছিল। জাপানও বিষয়টি কূটনৈতিক ও জাতিসংঘের আওতায় ফেলে উ. কোরিয়ার বিরুদ্ধে বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিকভাবে নিষেধাজ্ঞার খড়গ তুলে আসছিল। যদিও ঘাড়ত্যাড়া উত্তর কোরিয়া আঁতেলের মতো বিষয়টিকে কখনো গুরুত্ব দেয়নি। কারণ এই ভয়ানক ক্ষ্যাপাটে রাষ্ট্রটির ফুয়েল যোগাচ্ছে চীন ও রাশিয়া। কৌশলগতভাবে উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক পারমাণবিক শক্তি প্রকাশে ছায়া হিসেবে কাজ করছে চীন। যে দেশটির সাথে উত্তরের ৯৫ ভাগ বাণিজ্য বিকিকিনি হয়। তাই বলা যেতে পারেই, চীন তার আধিপত্য বিস্তার আর যুক্তরাষ্ট্রকে নাকানিচুবানি দেয়ার জন্য উত্তর কোরিয়াকে হস্তগত করে নিজেদেরই অবস্থান জানান দিয়ে চলছে।
অন্যদিকে, রাশিয়াও বিশ্বনেতৃত্ব দেয়ার বিভোর থেকে উ. কোরিয়ার প্রোপাগান্ডাকে উসকে দিয়ে চলছে। এই চলার মধ্যেই গত ৩ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়া হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালানোর পর থেকে বিশ্বনেতারা সম্ভবত এই বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। দফায় দফায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিলছে নেতারা। আলোচনায় স্থান পেয়েছে কিভাবে এক ঘরোয়া করা যায়। ঠিক যেন গ্রামে কোন দুষ্টু মানুষকে মোড়লরা শালিসের মাধ্যমে এক ঘরোয়া করার চেষ্টা করে। তেমনি বিশ্ব মোড়লরা উত্তর কোরিয়ার লাগাম টেনে ধরার চেষ্টায় রয়েছে।
কিন্তু চীন ও রাশিয়ার শক্তিশালী ভূমিকার কারণে দফায় দফায় উত্তর কোরিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বস্তুত ভেস্তে গেছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে জাপান নতুন একটি কৌশল নিয়েছে। সেটা হলো দেশটি তাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে এক ধরনের বার্তা পাঠিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে। উত্তর থেকে যেন কোন কর্মী বা পণ্য না নেয়া হয় সেই ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে।
জাপানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গতকাল পেরু তাদের দেশ থেকে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার করেছে। গত বৃহস্পতিবার মেক্সিকো, গত ৩১ অগাস্ট স্পেন উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে সেই দেশটির সাথে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনও গত সপ্তাহ থেকে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছে। এরই মধ্যে কাতারে দেখা করে সেখানে উত্তর কোরিয়া কোন কর্মী নেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কাজাকিস্তান ও মিশর সফর করেও তিনি সেই দেশ থেকে একই ধরনের প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ভারত সফরে গেছেন। মোদীকেও উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার অনুরোধ জানাবেন।
যে দেশটির মানুষ খেতে পারে না, যে দেশটি একনায়কত্বের ছোবলে নাগরিকরা অতিষ্ঠ, সেই দেশটি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পারমাণবিক শক্তি কিংবা সামরিক শক্তি বৃদ্ধির কাজে লাগাচ্ছে। এমন দেশকে দমন করার জন্য কূটনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করা ছাড়া কোন উপায় আছে বলে আমার মনে হয় না। এই ক্ষেত্রে জাপান সফলতার রশি টানছে।
মিয়ানমারের সহিংসতায় যখন বিশ্ব বিবেক নাড়া দিয়ে চলছে, তখন মোড়লরা কানে তুলা আর চোখে দৃষ্টিহীনতার ছাপ নিয়ে চুপচাপ মানবিক বিপর্যয় দেখছে। লাখ লাখ মানুষ যখন খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছে, তখন চীন ও ভারত মিয়ানমারের ডেরায় রসদের যোগান দিয়ে চলছে। আঞ্চলিক রাজনীতির কবলে হিউম্যানিটি যে আজ বিপন্ন হওয়ার পথে সেই খবর বরাবরই অজানা নয়। বাংলাদেশের মতো একটি ছোট দেশ যে সাহস দেখিয়েছে তা মূর্ছা হওয়ার মতো। এমন দেশ এই সংকট মোকাবেলায় করণীয় ঠিক করতে হয়তো ধারনা দিতে হবে বিশ্বনেতাদের কাছে।
উত্তর কোরিয়ার মতো একটি উন্মাদ রাষ্ট্রনেতাকে শায়েস্তা করতে জাপান যখন কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে সেই দেশটাকে বিশ্ব কমিউনিটি থেকে আইসোলেট করার চেষ্টা করছে সেখানে আমরাই বা কেন বসে থাকবো? যে দেশটি হাজার হাজার কোন কারণ ছাড়ায় মরছে সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান সু চি-ইউনূসের শান্তির নোবেলকে হারিয়ে দিয়েছে।
আমি সম্পর্ক ভাঙনের পক্ষে নই, তবে বিরূপ পরিবেশে স্রোতের বিপরীতে না গেলেও খড়কুটা ধরে বেঁচে থাকার পক্ষের লোক। যে দেশটি নির্বিচারে হাজার হাজার শিশুর মুখে বিষাদের ছাপ লেগে দিয়েছে সেই দেশটাকে মানবিক শিক্ষা দিতে আমাদের উচিত জাপানের কৌশলটাকে ফলো করা।
যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ঘরে ফিরে না নেই ততোক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে তাদের উপর কূটনৈতিক চাপ শুরু হোক। মালদ্বীপের মতো একটি ছোট দেশ যেখানে শুরু করেছে, সেখানে বাংলাদেশ ভুক্তভোগী হওয়ার পরও কেন চুপ থাকবে? কেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চাপা প্রয়োগ করবে না?
বাংলাদেশ যেহেতু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে রাষ্ট্রের মহত্বকে উন্মুক্ত করেছে সেহেতু সাময়িক কূটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদ করে বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিক, আমরা মানবিকতার পক্ষে। আমরা সহিংসতা কিংবা ক্ষমতালোভী নয়। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কথা বলতে তৎপরতা শুরু হোক। জাতিসংঘও আরও বেশি বেশি সু চির কঠোর সমালোচনা করে ‘রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি’ আদায়ে এগিয়ে আসুক।
সবার পরিচয় হোক মানুষ, অমানুষের মুখোশ পরে শত নোবেল পদদলিত হোক। রোহিঙ্গাদের কান্না থামাতে বিশ্ববাসী ঐক্য গড়ুক।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য