প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ২৩ জানুয়ারী, ২০১৮
বিষয়টি সত্যিই আমাদের জন্য অনেক কষ্টের। সকালে ল্যাবে গিয়ে এই খবরটি অনেক পীড়া দিয়েছে। যার হাত ধরে বিশ্বে বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে সেই ব্যক্তির ঘরে এবার অভিযোগের তীর লেগেছে। প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল বা আইপিএস কোষ তৈরি করে যিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সেই জাপানি অধ্যাপক শিনিয়া ইয়ামানাকার অধীনে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধ কেলেঙ্কারিতে তার নাম জড়িয়েছে।
আইপিএস কোষ হলো মানবদেহের এমন এক ধরনের কোষ, যাকে মানবদেহের যেকোনো কোষে রূপান্তর করা যায়। এর ফলে কোনো দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হলে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করে তা সংযোজন করা সম্ভব হচ্ছে। আর এই বিশেষ ধরনের কোষ আবিষ্কারের জন্য অধ্যাপক শিনিয়া ইয়ামানাকা ২০১২ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান।
গত বছর বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সেল’ এর সহযোগী জার্নাল ‘স্টেম সেল রিপোর্ট’ এ প্রকাশিত প্রবন্ধ নিয়ে গবেষক কোহেই ইয়ামামিজুর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের তদন্ত শেষ হওয়ার পর নোবেল জয়ী শিনিয়া ইয়ামানাকা নিজেই এ তথ্য জানান। যা নিয়ে পুরো জাপান জুড়ে আলোচনার ঝড় চলছে।
কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টাল ফর আইপিএস সেল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনের(সিরা) পরিচালক পদে থাকায় তার তত্ত্বাবধানে ওই প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয় বলে জানান ইয়ামানাকা। প্রবন্ধটিতে তার নাম না থাকলেও কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ায় কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তিনি।
গত বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি সিরার বিশেষ সহকারি অধ্যাপক কোহেই ইয়ামামিজুর গবেষণা প্রবন্ধ ‘ইন-ভিট্রো মডেলিং অব ব্লাড ব্রেইন ব্যারিয়ার উইথ হিউম্যান আইপিএস ড্রাইভড ইন্ডোথেলিয়াল সেলস, পেরিসাইটস, নিউরন অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোসাইটস নচ সিগন্যালিং’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ওই গবেষণা প্রবন্ধে ব্যবহৃত ছয়টি চিত্র এবং অতিরিক্ত ছয়টি চিত্রের তথ্যে কৃত্রিমভাবে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়।
সিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গেল বছর ৩ জুলাই ওই প্রবন্ধের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর ১১ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি চলতি মাসের ৯ তারিখে তদন্ত শেষ করে।
তবে নোবেল জয়ী এই অধ্যাপক জোর গলায় বলছেন “আমি সত্যিই লজ্জিত যে আমার অধীনে একটি মিথ্যা গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। যা অসততার নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। আমরা দেখেছি যে প্রধান গবেষক কোহেই ইয়ামামিজু প্রবন্ধের আকর্ষণ বাড়াতে মিথ্যা তথ্য জুড়ে দিয়েছেন, যা পরবর্তীতে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।”
একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে এই দায়ভার এড়িয়ে যাননি তিনি। প্রবন্ধে নিজের নাম না থাকলেও কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তার শাস্তি অবধারিত বলে তিনি মনে করছেন। অন্যের অপরাধে নিজের বিন্দু পরিমাণ সংশ্লিষ্টতা থাকলে এরা তা স্বীকার করতে ভুল করেন না। নিজ বিশ্ববিদ্যালয় তদন্তে একজন গবেষকের গবেষণার ফাব্রিকেশন ধরা কিন্তু কম সাহসের কথা নয়।
আর আমরা কী করছি? এরা তো কাজ করে নিজেদের ডেটা ম্যানুপুলেশন ধরা খেল আর আমাদের দেশে আস্ত গবেষণা মেরে দিয়েও কিছু হয় না।
একজন নোবেল জয়ী যখন অপরাধী না হয়েও শাস্তি পান তখন আমাদের দেশে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা ধরা পড়ার পরও শাস্তি তো দূরে থাক কিছু হয় না বরং তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়।
ইয়ামানাকা নিজেই দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, তিনি হয়তো অধ্যাপক পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবেন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য