প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
সাইফুর মিশু | ২১ নভেম্বর, ২০১৬
প্রতিদিন নিরুদ্দেশ হচ্ছে ৬৩২ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী। এই খবরে যারা অবাক হচ্ছেন তাদের দেখে আমি অবাক হচ্ছি। প্রতিদিন এই দেশে নিরুদ্দেশ হচ্ছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হাজার হাজার মানুষ। তাদের বেশীরভাগই নিরপরাধ, নিরীহ মানুষ। বনের মাঝে বাঘের এলাকায় হরিণ গেলে তাকে তো বাঘের পেটে যেতেই হবে, আবার সাপের ডিম পেলে বেজি নিশ্চয়ই ছেড়ে দিবে না!
জঙ্গলের কতিপয় প্রাণীর কর্মকাণ্ড দিয়ে দেশের দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচারের পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছি না। বরং এই কথাগুলোর ন্যায্যতা প্রমাণিত হয় ফেসবুকের কতিপয় মানুষ নামক দ্বিপদী প্রাণীর মন্তব্য এবং কর্মকাণ্ড থেকে।
প্রথমত: নাসিরনগরের ঘটনাবলীতে আমাদের সরকার দলের (সবাইকে নয়) অনেককেই দেখেছি একেবারেই চুপ থাকতে। আবার অনেককে নানা রকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে হাজির হতে। ব্যাপারটি এমন নয় যে প্রথমবার ঘটেছে। প্রায় সময় দেখা যায়, কোন রকম অন্যায় কিংবা অপরাধের সাথে সরকারি দলের কারো সম্পৃক্ততার সংবাদ প্রকাশ হলেই অনেকেই হাজির হন এমন তত্ত্ব নিয়ে। তারা হয়তো জানেন না, অন্ধের জন্য প্রলয় বন্ধ থাকে না!
দ্বিতীয়ত: বিগত বছরগুলোতে যেভাবে মহাসমারোহে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে তাতে প্রতিবাদ কিছুটা হলেও কার্যকরী পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি সেভাবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল মিলে যথাক্রমে পাহাড় এবং মহাসাগর যখন হয়ে গেছে তখন আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। খুব সম্ভবত নাসিরনগরের ঘটনায় সবচেয়ে বেশী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সনাতন ধর্মের বন্ধুরা। এবং এই প্রতিক্রিয়া দেখানো অবশ্যই যৌক্তিক। অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি, প্রগতিশীলতার দাবিদার অনেকেই তাদের এই প্রতিক্রিয়ার কারণে তাদেরকেই উল্টো সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিচ্ছেন।
তৃতীয়ত: দেশের ভেতরে একাধিক ঘটনায় নাড়া দেয়নি যাদের তাদেরকেও প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখছি মায়ানমারের ঘটনায়। এর মধ্যে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত একাধিকজনকেও দেখেছি। নাসিরনগর কিংবা সাঁওতালপল্লির ঘটনায় তাদের বিবেক জাগেনি; জেগেছে মায়ানমারের ঘটনায়।
চতুর্থত: সাঁওতালরা আমাদের দেশে উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। হতে পারে তাদের সরলতাকে কাজে লাগিয়েছে কতিপয় ভূমিদস্যু। তাই বলে তীর ধনুকের বিপরীতে যখন গুলি ছোঁড়া হয়, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই যখন আগুন দেয়া হয় তাদের ঘর বাড়িতে তখনও ঐ সকল অপরাধকে উপেক্ষা করেই বরং এই ঘটনাতেও সাঁওতালদের ষড়যন্ত্র এবং তারা আগে কোথায় ছিল, কেন পূর্বপুরুষের সরকারী অধিকৃত জমিতে এসে ঘর বাড়ি তৈরি করলো তাতেই গুরু অপরাধ খুঁজে পেয়েছেন লোকজন। অবাক হয়েছি, সবকিছুকেই হাস্যকরভাবে ন্যায্যতা দানের কি চমৎকার অভিপ্রায়।
পঞ্চমত: ফেসবুকে নাসিরনগরের ঘটনা এবং মায়ানমারের ঘটনায় লোকজনের প্রতিক্রিয়ার তুলনামূলক চিত্র দেখলে বুঝা যায় মানবিকতা বলতে কিছু নেই, সবার উপর ধর্ম সত্য তাহার উপরে নেই।
উপসংহারে কয়েকটি কথা বলে যাই। শুধুমাত্র নাসিরনগর নয়, শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেই নয়; যে কোন অপরাধকে বৈধতা দেয়া মানে বর্তমান সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাবকে কৌশলে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
যারা নির্যাতিত হয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন না কিংবা অভিমান করে চলে যেতে চাইছেন তারা বরং তাদেরকেই জয়ী করছেন যারা এমনটাই চেয়েছে।
আজ তারা সংখ্যায় অধিক, ভোটের রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব হয়তো কারো কারো কাছে বেশী, তাই বলে কি এভাবে নিজ পিতৃভূমিকে ছেড়ে যাবেন? এভাবেই মেদিনী বিসর্জন দেয়ার মাঝে এসবের প্রতিকারের এমন কোন রাস্তা তৈরি করছে কী না একটু ভেবে দেখা জরুরী। নতুবা বাঘের থাবায় হরিণ শিকারের বিরুদ্ধে কথা বলে কোন লাভ নেই।
মায়ানমারের ঘটনায় যদি আসি, কেউ বলছে না মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা। কেউ বলছে না মেরুদণ্ড সোজা করার কথা; বেশীরভাগই তথাকথিত মানবিকতার দোহাই দিয়ে রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে আশ্রয়ের নামে চিরতরে বসবাসের সুযোগ দেয়ার পক্ষেই। কেউ কেউ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের শরণার্থীদের কথা তুলছেন; তাদের কাছে প্রশ্ন রোহিঙ্গারা কি স্বাধীনতা ঘোষণা করে তার জন্য আমাদের কাছে কোন সহায়তা চেয়েছে?
কেনই বা আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ সেদেশের কর্তৃপক্ষকে কোন রকম চাপ না দিয়ে আমাদেরকেই বার বার অনুরোধ করবে ভিন দেশের কোন সমস্যাকে ঘাড়ে তুলে নিতে!
রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমস্যা এবারই প্রথমবার নয়। বার বার নানা সময়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে। মানবেতর জীবন যাপন করছে আশ্রিতরা শরণার্থী শিবিরে। সেই সুযোগ ব্যবহার করে নানা রকম অর্থের লোভ দেখিয়ে জড়ানো হচ্ছে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। এমনকি তাদের ভেতরেই বৃহৎ একটি অংশ উল্টো কক্সবাজারসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম পুরোটাকে স্বাধীন বাংলাদেশ হতে আলাদা করে নেয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে জড়িয়ে পড়ছে সশস্ত্র জঙ্গিবাদের সাথে। যা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাদের বরং উচিত নিজ পিতৃভূমিতে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানো। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিহার করে সে দেশের সরকারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে সহাবস্থানে যাওয়া।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য