আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

সাব-জুডিস ম্যাটার আদালত অবমাননা

মাসকাওয়াথ আহসান  

একটি মামলার শুনানি চলাকালে মামলার রায় নিয়ে যে কোন আলোচনা আদালত অবমাননা। আইনের পরিভাষায় একে বলা হয় সাব-জুডিস ম্যাটার।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান একটি দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে বিএনপি নেতা ও সমর্থকদের নানারকম আলোচনা শোনা গেলো; মামলার রায়ে খালেদার জেল হলে তারা কী করবে সে সম্পর্কে।

আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থকরা খালেদা জিয়ার জেল হয়ে গেছে; এমন বিজয় উদযাপনের ছলে বিএনপিকে কীভাবে প্রতিহত করবে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করলো।

প্রতিহতের জন্য সরকারের পুলিশ বিএনপি কর্মীদের গণগ্রেপ্তার শুরু করলো। জনমনে 'এগুলো গ্রেপ্তার বাণিজ্য কীনা' এ নিয়ে সন্দেহের উঁকিঝুঁকি শুরু হলো।

মিডিয়া রীতিমত কীভাবে জেলখানা প্রস্তুত হচ্ছে তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখিয়ে দিলো। টকশোতে খালেদা জিয়ার মামলার এই সাবজুডিস ম্যাটার নিয়ে রীতিমত বিচার-বিশ্লেষণ শুরু করলো।

টান টান উত্তেজনা নেমে এলো ছা-পোষা মানুষের জীবনে। ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ে খালেদার জেল হবার পর কী হয় কী হয় তা নিয়ে শুরু হলো কানাকানি, ফেসবুকাবুকি।

সরকার ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে র‍্যাপিড একশান ব্যাটালিয়ন জড়ো করলো; কেউ খালেদা জিয়ার জেল হবার পর "ঢাকা এটাক" করতে আসছে কীনা তা ঢাকাগতদের ভ্যানিটি ব্যাগে খুঁজে দেখতে।

মিডিয়া ঢাকার সবকয়টি প্রবেশপথ থেকে সরাসরি টিভির চারটি উইন্ডোতে দেখিয়ে দিতে থাকলো র‍্যাবের তল্লাশি অভিযান।

খালেদার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় প্রদানকে ঘিরে ঘটা প্রতিটি পদক্ষেপই আদালত অবমাননা। আদালতের রায়কে প্রভাবিত করতে পারে এমন যে কোন বক্তব্য; ঘটনাই আদালত অবমাননা। এই অবমাননা বিএনপির নেতা-সমর্থক, আওয়ামী লীগের নেতা সমর্থক, মিডিয়া, সরকার সবাই করে চলেছে। আদালতের এখতিয়ারকে কীভাবে পায়ে মাড়িয়ে গেলো সবাই।

পেশাদার মিডিয়া হলে, ৮ তারিখ সামনে রেখে, জনমনে ভীতিসঞ্চারী কাভারেজ একেবারেই করতো না। কেবল এ বিষয়টিকে অন্যতম শীর্ষ সংবাদ হিসেবে একটি করে প্রতিবেদন প্রচার করতো প্রধান বুলেটিনগুলোতে।

কারণ চলমান রাজনীতির প্রধান মূলধন ভীতিসঞ্চার। এই জুজুর ভয় দলীয় পিকেটাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখিয়ে সাধারণ মানুষের অবজ্ঞাই পেয়ে আসছে। মূলধারার মিডিয়ায় ভীতিসঞ্চারী কাভারেজ প্রকারান্তরে ভীতিসঞ্চারী দলীয় ক্যাডার, পুলিশ, র‍্যাবদেরই উপকৃত করে।

দক্ষিণ এশীয় ফ্যাসিস্ট ও ক্ষমতামুখী রাজনীতিতে মামলা, জেল, জামিন খুব স্বাভাবিক ঘটনা। আর দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ যার হাতে জিম্মি হয় তার আনুগত্যে ভালোবাসায় নিপতিত হয়। দলীয় লোকের বাইরের মানুষকেই জিম্মি করে ক্ষমতার কুস্তি লড়ছে রাজনৈতিক দলগুলো। দীর্ঘদিন এদের হাতে জিম্মি থাকতে থাকতে এদের প্রতি ভীতিজনিত আনুগত্য সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। জিম্মিকারীর প্রতি জিম্মি হওয়া মানুষের আজগুবি এই ভালোবাসাকে স্টকহোম সিনড্রোম বলে।

ফলে কোন শীর্ষনেতা জেলে গেলে বা নির্যাতিত হলে স্টকহোম সিন্ড্রোমে আক্রান্ত মানুষ তার প্রতি প্রেমময় হয়ে ওঠে। আবার কোন শীর্ষ নেতা ক্ষমতায় থাকলে জনগণের মধ্যে তার প্রতি ভালোবাসা লোপ পায়। কারণ তিনি তখন সরকারের দায়িত্বে; ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিনের অনাচারের দায় তার। ফলে কারাগারগামী বা নির্যাতিত প্রতিপক্ষের শীর্ষ নেতার প্রতি সহানুভূতির পারদ চড়তে থাকে। এই কারণে এতদঞ্চলে যে সব রাজনৈতিক নেতা কালেভদ্রে জেলে যান; তারা এতে লাভবানই হন।

কাজেই এইসব পুনরাবৃত্তিকর দৃশ্যপটের প্রতিটি পর্বে উতলা হওয়া যে নেহাত সময়ের অপচয়; তা এরমাঝে জিম্মি জনতার বুঝে ফেলার কথা ছিলো। শিক্ষা-ব্যবস্থায় শিশুদের অর্বাচীন প্রজা করে রাখার সমস্ত অপকৌশল অপরাধীরা প্রয়োগ করে চলেছে; জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ কীভাবে ব্যাংক থেকে লুণ্ঠন করছে দুর্নীতিবাজরা; দেশের বাইরে এতো মুদ্রা পাচার হয়ে গেলো; ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ২০০৮ সালের ব্যক্তিগত সম্পদ, লাইফ স্টাইল আর ২০১৮ সালের ব্যক্তিগত সম্পদ, লাইফ স্টাইলের পার্থক্যটা দেখে বুঝতে হবে; কোন রাষ্ট্র-বাস্তবতায় বসবাস করছে জনগণ।

সর্বদলীয় জিম্মিকারীরা সুকৌশলে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার ও ক্ষমতায় যাবার কুস্তিতে জিম্মি-জনতাকে ব্যস্ত রেখে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। অথচ জিম্মি-জনতা রয়ে যায় স্টকহোম সিন্ড্রোমে। জিম্মিকারীদের প্রতি এমন অপার সহানুভূতি আর প্রেমের উপাখ্যান যেন লাইলী-মজনুর প্রেমগাথাকেও ছাড়িয়ে গেছে। মজলুম জনতাকে তাই মজনু জনতা বলাই শ্রেয়। মজনু জনতা জীবন দিয়ে বুঝতে পারছে এ প্রেম আত্মঘাতী; তবু নিজেকে রুখতে পারছে না।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ