আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মন্ত্রীরাও বিমানকে মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিতে চান না!

এখলাসুর রহমান  

বাস, টেম্পো, মোটরসাইকেল, রিকশা ও ট্রেন স্থলপথে চলে। নৌকা, লঞ্চ, জাহাজ ও স্পিডবোট চলে জলপথে। স্থল ও জলপথ উভয়ের জন্যই রয়েছে মন্ত্রণালয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও নৌমন্ত্রণালয় বিমানের মত নামকাওয়াস্তে ক্ষমতাহীন মন্ত্রণালয় নয়। সড়ক ও নৌবিভাগ কোন লিমিটেড কোম্পানি নয়। উভয় বিভাগেই লোকবল নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু আকাশ যানের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের লোকবল মন্ত্রণালয় নিয়োগ দেয় না। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়টির মন্ত্রীর এতে কোন নির্বাহী ক্ষমতা নেই।

২০০৭ সালে ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দীনের সেনাশাসিত সরকার বিমানকে লিমিটেড কোম্পানি বানিয়ে গেছে। বিমানের পরিচালনা পর্ষদই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। প্রযুক্তি প্রভাবিত এই আধুনিক যুগে বিমানে এখনও চালু রয়েছে মধ্যযুগীয় দাসপ্রথার মতো অনিশ্চিত রোজ-ঠিকে দিনমজুরী। অনেক শিক্ষিত তরুণ তরুণী দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে এখানে বছরের পর বছর ধরে দিনমজুরী করে চলেছে। এসব লোকবল নিয়োগে নেই কোন যোগ্যতা, দক্ষতা ও নৈতিকতার মানদণ্ডের বিচার। বিমানকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছে এক প্রবল ক্ষমতাধর সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করে বিমানের নিয়োগ, চাকরিচ্যুতি ও বিমান বন্দরকেন্দ্রিক সকল ব্যবসাবাণিজ্য। মন্ত্রীর রদবদল হলেও এ সিন্ডিকেটের কোন যায় আসে না। এ সিন্ডিকেট ভাঙার ক্ষমতা যেন খোদ মন্ত্রীরও নেই!

রাশেদ খান মেনন বিমান মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বিমানকে মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়ার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিমানকে ঢেলে সাজাতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এর সুফলের কোন আলো ফোটেনি। বিমান ঢেলে সাজানো হলো না। মন্ত্রণালয়ের অধীনও করা হলনা। করা হল মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পরিবর্তন। কিন্তু এতে কী উপকার হবে বিমানের? বরং উপকারের চেয়ে অপকারীদের দল ভারীর প্রক্রিয়া নয় কি? নতুন মন্ত্রীকে ঘিরে থাকা কতিপয় ব্যক্তিও তখন যোগ দেয় সিন্ডিকেটে। বাড়ে সিন্ডিকেটের লোকবল ও ক্ষমতাবল। বিমানের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে তারা মিশে গিয়ে শুরু করে অনৈতিক আয় রোজগারের পথ। ৭ দিন ভিত্তিক, ১০ দিন ভিত্তিক ও ৮৯ দিন ভিত্তিক অস্থায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করে তারা হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। আর বিমানে নিয়োগ পেয়ে যায় অনেক অসৎ,অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যক্তি। যার দরুন কিছুদিন পরপর বিমানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে চলছে। চলছে যাত্রীর লাগেজ কাটা, যাত্রী হয়রানি, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ইচ্ছাকৃত যান্ত্রিক গোলযোগ প্রভৃতি। বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি, অনিয়ম, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি প্রতিনিয়ত সংবাদ পত্রের শিরোনাম হয়ে চলেছে।

মদ্যপায়ী ক্রুর সংবাদ শেষ হতে না হতেই এবার এলো: যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সঠিক সময়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর ছাড়তে পারেনি ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইট। শুক্রবার বেলা পৌনে ২টায় ফ্লাইট ছাড়ার কথা থাকলেও মেরামত শেষে নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পর বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার বিমানবন্দর ত্যাগ করেছে। এরআগে দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে ইউএস-বাংলার এই এসটু-এজেডি ফ্লাইট। এরপরই ফ্লাইটটির যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার একেএম সাইদুজ্জামান জানান, ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইট দেড়টার দিকে কক্সবাজার বিমান বন্দরে পৌঁছে। এরপর দুপুর ২টায় ফ্লাইটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় আর যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যেতে পারেনি। পরে ঢাকা থেকে একদল ইঞ্জিনিয়ার গিয়ে বিমানটি মেরামত করে। তারপর বিকেল সোয়া ৫টার দিকে যাত্রী নিয়ে পুনরায় বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বেসরকারি খাতে থাকায় বিমান হয়ে উঠছে একটি অনিরাপদ ও লোকসানি প্রতিষ্ঠানে। এর সেবা ও শৃঙ্খলার মানও খুবই দুর্বল।

অথচ অনেক দূর এগিয়ে গেছে রেল। একসময় রেলের চরম দৈন্যদশা ছিল। ছিল অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও সময়ের সিডিউলহীনতা। আস্থাহীনতার অভাবে তখন মানুষ ট্রেনে না চড়ে বাসে চড়ত। ট্রেনে চড়লেও অধিকাংশই চড়তো বিনা টিকিটে। আরও ছিল এসব ট্রেনে চুরি ডাকাতির উপদ্রব। তখন রেলের কোন আলাদা মন্ত্রণালয় ছিল না। এখন রেল মন্ত্রণালয় হয়েছে, এসেছে শৃঙ্খলা। বেড়েছে যাত্রী নিরাপত্তা। রেল, রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এখন কেউ যদি পরামর্শ দেয় রেলকে লিমিটেড কোম্পানি করা হোক। এমন প্রস্তাব কি সঙ্গত হবে? বিমানকে যখন লিমিটেড কোম্পানি করা হয় তখন মানুষ কেন প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠল না? হয়তো ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সেনা শাসনের ভয়ে। তাই নয় কি?

বিমানে মন্ত্রী আসে মন্ত্রী যায়। কেবল ব্যক্তি বদল হয় আর সবই একই থাকে। আশ্চর্যের ব্যাপার হল মন্ত্রীরাও একে তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিতে এতটুকু তৎপরতা প্রদর্শন করেন না। মন্ত্রীর পদবীটা নিয়েই তারা সন্তুষ্ট থাকে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা যদি এতে অসন্তোষ প্রকাশ করতো। বলতো আমাদের নির্বাহী ক্ষমতা দিতে হবে। যদি লিমিটেড কোম্পানিই থাকে তাহলে মন্ত্রী থাকার মানে কী? মন্ত্রণালয়েরই বা কী দরকার? বাংলাদেশে ব্যাংক, বীমার কি আলাদা কোন মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন হয়? বিমানও তো কি সেরকম হতে পারে না? ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স দুর্ঘটনায় শোকের মাতম পড়ল। ঝরে গেল অনেক তরতাজা প্রাণ ও মেধা। এটা কি স্রেফ দুর্ঘটনা? কেন ঘটল এই দুর্ঘটনা? আকাশ পথে পরিচালনার বাহনটি কি বেসরকারি রাখা ঠিক? ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে রিকশা, সিএনজির ব্যবসা করা যেতে পারে বিমানের নয়।

বিষয়টা ভাববার ও ভাবা অনুযায়ী বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া আজকের জরুরি দাবি নয় কি?

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ