আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন প্রসঙ্গ কথা

রণেশ মৈত্র  

আমরা সবাই জানি, ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইউবের আমলে কাশ্মির নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মাত্র ১৭ দিনের যুদ্ধ ছিল। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো এই যুদ্ধে পাকিস্তান ও ভারতের। দু’দেশেরই অনেক মানুষের জীবন গিয়েছিলো। ভারত বিজয়ী অবস্থায় চলে গিয়েছিলো। কিন্তু বিশ্ব শান্তিকামী তদানীন্তন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের নেতা সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে। তাসখন্দে তদানীন্তন ভারতের প্রধান মন্ত্রী ও পাক-প্রধানমন্ত্রীর মুক্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মধ্যস্থতার ভূমিকা শাসন করেন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত সরকার। সোভিয়েতের এই প্রচেষ্টা সফল হয়। পাকিস্তান ও ভারত এক যৌথ শান্তি চুক্তিগত স্বাক্ষর করেন নাম দেওয়া হয় ‘তাসখন্দ চুক্তি’। সমগ্র বিশ্ব এই চুক্তিকে অভিনন্দন জানায়। তখন পাকিস্তানের জেলখানায় বসেই (রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে) আমরা খবরগুলি পাচ্ছিলাম। আমরাও যতদূর মনে পড়ে, রাজশাহী জেলের তৎকালীন রাজবন্দীরা উভয় সরকারকে এই শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে মানব-বিধ্বংসী যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য অভিনন্দন জানিয়ে তারবার্তা পাঠিয়েছিলাম। যা হোক, যুদ্ধটা ১৭ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো-মাত্র ১৭ দিন।

কিন্তু এই ১৭ দিনের যুদ্ধ এই উপমহাদেশে বহু দগদগে ক্ষতের সৃষ্টি করেছিলো-সেই ক্ষত বহু কোটি মানুষের জীবনে গ্যাংরিনের মত আজও অবস্থান করছে-তাদের জীবন ও সম্পদকে আজও অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতায় মারাত্মকভাবে ভোগাচ্ছে। কি ভাবে? ঐ যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার সমগ্র পাকিস্তানে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছিলো সকল মৌলিক অধিকার স্থগিতের নামে হরণ করেছিলো। যুদ্ধটি ঘটেছিলো পশ্চিম পাকিস্তানে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আদৌ নয়।

জয়-পরাজয়, ক্ষয় ক্ষতি- যা কিছু ঐ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ঘটেছিলো তা সবই ঐ তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে। তবুও সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে (আজকের বাংলাদেশে) হাজার হাজার মানুষকে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে সম-অধিকার সম্পন্ন পাকিস্তানী নাগরিক হওয়া সত্বেও গ্রেফতার করা হয়েছিলো। কাদেরকে এভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিলো? হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সম্প্রদায়ভুক্ত অগণিত জন্মসূত্রে পাকিস্তানী নাগরিককে। কেন? পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যেহেতু যুদ্ধ সেই হেতু পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা পাকিস্তানের ‘শত্রু’ এই বিবেচনায়। কারণ ঐ ১৭ দিন যুদ্ধের পাকিস্তান ও ভারত পরস্পর পরস্পরকে শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলো। সে অনুযায়ী ভারত যেহেতু পাকিস্তানের শত্রুরাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত সেই হেতু ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সমূহকে পাকিস্তানের নাগরিক হওয়া সত্বেও ‘ভারত পন্থী’ বিবেচনা করে ‘শত্রু’ হিসেবে গণ্য করে (যদিও তা ছিলো বে-আইনি) তাদের নেতৃস্থানীয় হাজার হাজার গণ্যমান্য ব্যক্তিকে বিনা বিচারে আটক করা হয়েছিলো। এই আটকের জন্যে তখন একটি আইনও করা হয়েছিলো। সে আইনের নাম ছিলো Defense of Pakistan Rules- সংক্ষেপে DPR. ১৭ দিনের মাথায় যুদ্ধটির অবসান সূচিত হলেও ঐ বন্দীদের কিন্তু তখনই (যুদ্ধ শেষের সাথে সাথেই) মুক্তি দেওয়া হয় নি। দীর্ঘ এক দেড় বা দু’বছর ব্যাপী আটক করে রাখা হয়েছিল এবং ঐতিহাসিক ছয় দফা, এগার দফা, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান প্রভৃতি গণ-আন্দোলনের নেতাদেরকে যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কমরেড মনি সিংহ, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, তাজউদ্দীন আহমেদ সহ হাজার হাজার জাতীয় নেতা ও কর্মীকে একই আইনে আটক করা হয়েছিলো বাঙালির জাতীয় মুক্তির দাবীকে দমন করার লক্ষ্যে। আমি ঐ দফায় মুক্তি পেয়েছিলাম একটানা আড়াই বছর আটক থাকার পর-তাও হাইকোর্টে রিট করে।

এই Defense of Pakistan Rules এর আওতাধীনে তখন গণবিরোধী আরও অনেক আইন জারী করেছিলো পাকিস্তান সরকার। তারই একটি আইন-জংলী, কুখ্যাত, বৈষম্যমূলক, সাম্প্রদায়িক এবং সর্বাধিক আলোচিত হলো ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ পূর্বেই বলেছি, ১৭ দিনের ঐ যুদ্ধকালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সমূহের নেতৃবৃন্দকে শত্রু বিবেচনা হাজারে হাজারে গ্রেফতার করা হয়েছিলো সম্পূর্ণ বিনাদোষে এবং তার জন্যে DPR নামে এক কুখ্যাত কালো আইনের জন্ম দেওয়া হয়েছিলো। তেমনই, ঐ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে-যাদের সংখ্যা ছিলো তখন অন্তত: আড়াই কোটি (শুধুমাত্র তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে) ভিটে-মাটি সহায় সম্বলহীন করে দেশত্যাগে বাধ্য করার জন্য প্রণীত হয়েছিলো ঐ “শত্রু সম্পত্তি আইন” নামক জঘন্য আইনটি। এর প্রয়োগও সুরু হয় সাথে সাথেই। আইনটির বিস্তারিত বয়ান করার মত Space এই নিবন্ধে নেই। তাই অতি সংক্ষেপে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হচ্ছে। এই শত্রু সম্পত্তি আইনটির বিধান অনুযায়ী পাকিস্তানের যে কোন ধর্মীয় সংখ্যালঘু যদি ভারতে গিয়ে অবস্থান করেন তবে তার সকল সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে এবং তা সরকারে ন্যস্ত হবে। সরকার তার ব্যবস্থাপনা করবেন এবং তা যে কাউকে লিজ দিতে পারবেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো: এক. এই আইন শুধুমাত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহের মালিকানাধীন সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য অর্থাৎ মুসলিম সম্প্রদায়ের (যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ) সদস্যদের কেউ ভারতে গিয়ে থাকলে তাঁদের সম্পত্তির ক্ষেত্রে এ আইন প্রযোজ্য হবে না; দুই. যে সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ ভারতে না গিয়ে অন্যান্য দেশে (যেমন ব্রিটেন, আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া সহ সমগ্র পৃথিবীর নানা দেশে) গেলে বা অবস্থান করলে তাতে ঐ সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হয় না। অবশ্য বাস্তবে হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যারা ভারত বহির্ভূত অন্যান্য দেশেও গিয়েছেন তাঁদের সম্পত্তিও শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এমন কি, দেশে বসবাস এবং ভোগদখলকারী সংখ্যালঘুদেরও একটি অংশের সম্পত্তিকে শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণা করে অন্যকে লিজ দেওয়া হয়েছে। তাই শত্রু সম্পত্তি আইনটির চরিত্রই হলো সাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমূলক, গণতন্ত্র ও সংবিধানের পরিপন্থী এবং বাস্তব উদ্দেশ্যের দিক থেকে তা হলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে যেন তেন প্রকারে উৎখাত করে তাদের সম্পত্তি দখল এবং এভাবে তাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করা। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশেই এ জাতীয় কোন আইনের অস্তিত্ব নেই।

পাকিস্তানে যখন এই আইনটি প্রণীত হয় তখন থেকেই এ আইনটি বাতিলের দাবীতে আন্দোলনও শুরু হয়। এ আন্দোলন তখন আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিসহ সকল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিই করতেন। পাকিস্তানের সামরিক সরকার তা মানে নি। বরং তার প্রয়োগ/অপপ্রয়োগ সবই চলেছে ব্যাপকভাবে। ফলে বহু সংখ্যক মানুষ ( সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভুক্ত) তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও দেশত্যাগে বাধ্য হন।

অবশেষে এলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয়মাস ব্যাপী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলো একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র হিসেবে। এই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হলো বহু ত্যাগের বিনিময়ে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সহ সকল ধর্মীয় সম্প্রদায় ভুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের মিলিত রক্তের স্রোতধারায়। এই মুক্তিযুদ্ধে সর্বপ্রযত্নে সাহায্য সহযোগিতা দিলো তৎকালীন ভারত সরকার এবং কোটি কোটি ভারতের মানুষ। ফলে ভারত হলো আমাদের অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে হাজার হাজার ভারতীয় সৈনিকও অংশ নিলো এবং প্রায় দশ হাজারের ভারতীয় সৈনিকও অংশ নিলো এবং প্রায় দশ হাজারের মত ভারতীয় সৈনিক শহীদ হলো। তাই এই ঐতিহাসিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে ভারত আর তো শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে রইলোই না-তার সাথে স্বাক্ষরিত হয়েছিলো ২৫ বছরের মিত্রতার চুক্তি-যে চুক্তি বাংলাদেশের কোন সরকারই বাতিল করেন নি। চুক্তিটির মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ায় এবং তার আর প্রয়োজনীয়তা না থাকায় তার নবায়ন হয় নি কিন্তু দু’দেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণই রয়ে গেছে কোন কোন মতলববাজ মহল কর্তৃক উগ্র ভারত বিরোধী কিছু কিছু প্রচারণা থাকা সত্বেও। কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমূহ কি এত কিছুর পরও ‘শত্রু’ হিসেবেই বিবেচিত হবেন? ‘৭২’ এর মূল সংবিধান তা বলে না বরং বলে ঠিক তার বিপরীত কথা। বহুবার সংশোধিত ঐ মূল সংবিধানের অনেক মৌলিক সংশোধনী দ্বারা সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা কেটে নেওয়া বা রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বিশেষ একটি ধর্মকে ঘোষণা করা হলেও সংশোধিত ঐ সংবিধানটিতে কোনভাবেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করার অবকাশ রাখে নি। এত কিছুর সত্বেও স্বাধীনতার পরেও ঐ শত্রু সম্পত্তি আইনটি বহাল রাখা হলো। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রথম সরকারের আমলে ঐ আইনটি এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে বাতিল এবং একই দিনে একই সাথে অপর একটি অধ্যাদেশ জারী করে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ঐ আইনটির গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত পুনর্বহাল করা হয়। তবে নতুন নামে। অর্পিত সম্পত্তি আইন এই নামে। এবং তার প্রয়োগও চলতে থাকে অব্যাহতভাবে এবং যথেষ্ট জোরে সোরে। এভাবে মদটা পুরোনোই থাকলো তবে বোতলটা হলো নতুন। অর্থাৎ ঐ শত্রু সম্পত্তি আইনটিই থাকলো ভিন্ন নামে “অর্পিত সম্পত্তি আইন” নামে। আর এর প্রয়োগ-অপপ্রয়োগের তো কথাই নেই।

‘৭৫’ এর ভয়াবহ কাল রাত্রির নৃশংস হত্যালীলার মাধ্যমে সংঘটিত পটপরিবর্তনের পরও আইনের যথেচ্ছা প্রয়োগ। অপপ্রয়োগ সবই চলতে থাকলো প্রচণ্ড গতিতে। দেশত্যাগে বাধ্য হতে থাকলেন (মুক্তিযুদ্ধের পর দু’বছর যেতে না যেতেই যা ব্যাপকভাবে শুরু হয়)। এই দেশত্যাগের প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত। এবং তার গতি এমনই তীব্র যে আজ আমাদের দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটির মধ্যে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা মোটমাট বড় জোর এক কোটি থেকে দুই কোটি । ১৯৪৭ এ পাকিস্তান সৃষ্টির সময় এই জনসংখ্যা ছিলো শতকরা ৩৩% ভাগ। সে হিসাবে আজ ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সংখ্যা হওয়ার কথা চার কোটি ৩৫ লাখ। এই হিসেবে অন্তত: আড়াই কোটি হিন্দু আরও এদেশে থাকার কথা। অথচ তা নেই। তবুও আমরা দাবী করি আমরা ধর্মনিরপেক্ষ। এত বৃহৎ সংখ্যার missing population (শুধুই ধর্ম বিশ্বাসের কারণে বা সাম্প্রদায়িক আইন-কানুন, রাজনীতি ও নির্যাতনের কারণে) পৃথিবীর আর কোন দেশের ৫০/৫৫ বছর ধরে চলতে পারে-এমন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আশির দশক থেকে আবারও নতুন করে এই জংলী আইনটি বাতিলের দাবী জোরে সোরে উত্থাপিত হতে থাকে। একই সাথে এই আইনের বর্বর প্রয়োগ/অপপ্রয়োগের ফলে বাধ্য হয়েই যে কোটি কোটি মানুষ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে এ কথাও ঐ আন্দোলনের পক্ষ থেকে এবং বিভিন্ন এন.জি.ও.র পক্ষ থেকেও উত্থাপন করা হয়েছে অব্যাহত ভাবে। ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদার মুক্তিযুদ্ধের বৃহত্তম দল আজ প্রায় পনের বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায়/তারা এ আইন বাতিলে Committed. এ ছাড়াও বি.এন.পি., জাতীয় পার্টি. গণফোরাম, কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি সহ সকল দলই (জামায়াত বাদে) এই আইন বাতিলে Committed. কিন্তু বিস্ময়কর হলো জাতীয় পার্টি বা বি.এন.পি. সরকার সমূহ তো তা করেই নি। আওয়ামী লীগও এতদিন ধরে তা করলো না।

অবশেষে ১৯৯৬ এর সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদে একটি বিল আনা হয়েছে যার শিরোনাম হলো “অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ বিল”। বিলের শিরোনামই বুঝিয়ে দেয় এটি অর্পিত সম্পত্তি বাতিলের বিল নয় এ বিলের মর্মবাণী হলো ঐ সম্পত্তিগুলো “অর্পিতই তবে তা ফেরত দেওয়ার আইন। সেই ফেরত কারা পাবেন এবং কোন ধরণের অর্পিত সম্পত্তি কাদেরকে ফেরত দেওয়া হবে-কিভাবে দেওয়া হবে তার বিস্তারিত বর্ণনা এতে আছে। দৈনিক সংবাদের একটি সংখ্যায় প্রকাশিত বিলের পূর্ণ বয়ান আমার হাতে। তা থকে যা জানা গেল এবং ২ এপ্রিলের “জনকণ্ঠে’র শেষ পৃষ্ঠায় “চলতি অধিবেশনে অর্পিত সম্পত্তি আইন পাস হলে স্থায়ী বাসিন্দাদের ‘অর্পিত সম্পত্তি’ ফেরত দেওয়া হবে” শীর্ষক সংবাদটিতে যা সমর্থিত হলো তার স্পষ্ট মর্মার্থ হচ্ছে:

এক. অর্পিত সম্পত্তি আইন এতে বাতিল হচ্ছে না।

দুই. এই আইনের মাধ্যমে এদেশের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা যে সকল সংখ্যালঘু তাঁরাই শুধু তাঁদের সম্পত্তি “অর্পিত সম্পত্তি” হয়ে থাকলে এবং তা সরকারের বৈধ নিয়ন্ত্রণে থেকে থাকলে তা ফেরত পাবেন। অথচ আইনটিতে স্পষ্ট করে বলা আছে এদেশের নাগরিকদের সম্পত্তি “অর্পিত সম্পত্তি” হয়ে থাকলে এবং তা সরকারে বৈধ নিয়ন্ত্রণে থেকে থাকলে তা ফেরত পাবেন। অথচ আইনটিতে স্পষ্ট করে বলা আছে এদেশের নাগরিকদের সম্পত্তি “অর্পিত সম্পত্তি” বলে ঘোষণা করা যাবে না। তা হলে কি দাঁগালো? যাঁদের সম্পত্তি অর্পিত (শত্রু) সম্পত্তি আইন হিসেবে ঘোষণা করা যাবে না প্রচলিত আইনে তাঁরা তাঁদের সম্পত্তি ফেরত পাবেন। কারণ এদেশর নাগরিকদের সম্পত্তি (এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের) ‘অর্পিত সম্পত্তি’ বলে ঘোষিত হয়ে থাকলে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা করেই তা উদ্ধার করা যায়। পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ বিষয়টি গভীরভাবে ভাববেন আশা করি।

তিন. বিলের নামকরণই তো আপত্তিজনক। নাম করণ করা হয়েছে “অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন”। সরকারকে প্রশ্ন করি কথিত সম্পত্তি কি কেউ সরকারকে অর্পণ করেছেন? এ আইন তো বে-আইনিভাবে পাকিস্তানের আইউব সরকার একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে জারী করেছিলো। আজ এই ধর্মনিরপেক্ষতার সরকার তাকে আইন করে বৈধতা দিলেন? স্পষ্ট নামকরণ হওয়া উচিত ছিলো Vested Property Act (Repeal) Bill- যেমন নামকরণ যথার্থভাবেই করা হয়েছে Indemnity Act (Repeal) Bill এবং আরও অসংখ্য আইন বাতিলের ক্ষেত্রে।

চার. এই বাতিল বিলের দ্বারা কেউই উপকৃত হবেন না বরং যে সামান্য সংখ্যক এদেশ বাসীর অনুল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পত্তি ফেরত দানের বিধান এতে রয়েছে তাতে তারা আরও harass mint এ শিকার হবেন। কারণ ঐ সম্পত্তি ফেরত পেতে হলে তাঁকে জেলা জজ পর্যায়ের বিচারক দিয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালের কাছে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র সহ। এই ট্রাইব্যুনাল সুস্পষ্ট বিচারের মাধ্যমে ঐ আবেদনের নিষ্পত্তি ঘটাবেন। আবার ঐ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল ট্রাইব্যুনালে আপীল করা যাবে যে আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে সুপ্রিম কোর্টেও কোন বিচারক বা অবসর প্রাপ্ত একই পর্যায়ের বিচারক। সুতরাং এই প্রত্যর্পণ আইনের মোকদ্দমা দানের বা তার আপীল একটি দীর্ঘ মেয়াদী ও জটিল প্রক্রিয়ায় পরিণত হবে এবং তা ব্যয়সাধ্যও হয়ে পড়বে।

পাঁচ. কোন কোন অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা যাবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলা আছে যে ঐ সকল সম্পত্তি তালিকাভুক্ত গেজেট নোটিফিকেশন দ্বারা সরকার জনগণকে অবগত করাবেন। ঐ গেজেটে সম্পত্তির বিশদ বিবরণ থাকবে। এক্ষেত্রে কোন সম্পত্তি তালিকাভুক্ত বা গেজেট নোটিফিকেশনভূক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন ভুলভ্রান্তি থাকলে বা একেবারেই বাদ পড়ে থাকলে সমস্যার অন্ত থাকবে না।

ছয়. স্পষ্ট করে আইনে বলা আছে যে প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির অর্থ হলো “অর্পিত সম্পত্তি আইনের অধীনে তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃক অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হইয়াছে এইরূপ সম্পত্তির মধ্যে যাহা এই আইন প্রণয়নের অব্যবহিত পূর্বে সরকারের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং যাহা প্রত্যর্পণযোগ্য জনহিতকর সম্পত্তি” অর্থাৎ দেবোত্তর সম্পত্তি, মঠ, শ্মশান, সমাধিক্ষেত্র বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি এবং যাহা এই আইন প্রবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে সরকারের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে ছিল।

সাত. এই আইন অনুযায়ী যারা এই সম্পত্তি ফেরত পেতে পারবেন তার মালিক, সত্ত্বাধিকারী স্বার্থাধিকারী হিসাবে আবেদন কারীকে প্রতিষ্ঠা করার কাজটিও কম জটিল হবে না।

আট. প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকায় যে সকল সম্পত্তির অন্তর্ভুক্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাতে আছে এইভাবে কোন সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি নহে মর্মে এই আইন প্রবর্তনের পূর্বে যথাযথ আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়া থাকিলে অথবা এই আইন প্রবর্তনের পূর্বে যে কোন সময় তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃক অর্পিত সম্পত্তির তালিকা হইতে অবমুক্ত করা হইয়াছে এরূপ সম্পত্তি বা সরকার কর্তৃক সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা অন্য কোন সংগঠন বা কোন ব্যক্তির নিকট স্থায়ীভাবে হস্তান্তরিত বা স্থায়ী ইজারা প্রদত্ত সম্পত্তি বা কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থার নিকট অর্পিত এমন সম্পত্তি যাহা শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এবং উহার আওতাধীন সম্পদ বা উহার কোন অংশ বিশেষ হস্তান্তরিত করিয়া থাকিলে সেই হস্তান্তরিত সম্পত্তি অথবা এমন অর্পিত সম্পত্তি যাহা কোন কোম্পানির শেয়ার বা অন্য কোন প্রকারের সিকিউরিটি বা জনস্বার্থে অধিগ্রহণ করা হইয়াছে এমন কোন অর্পিত সম্পত্তি।

নয়. ১৯৬৫ থেকে এ যাবত যারা নির্যাতিত হয়ে এই সম্পত্তি বাধ্য হয়ে ত্যাগ করে দেশান্তরী হয়েছেন তাঁরা এই সম্পত্তির মালিকানা স্থায়ীভাবে হারাবেন।

দশ. আইনের বিধান বলেই যে সকল লোক জাল দলিলমূলে ভুয়া ডিগ্রী বা রায় অর্জন করে বা জবরদখল করে মালিককে উঠিয়ে দিয়ে বিতাড়িত করে দেশান্তরী করেছেন বা জাল রেকর্ড তৈরি করে, জাল আমলনামা বা জাল দান বা বিক্রয়-কবলার মাধ্যমে এ সকল সম্পত্তি গ্রাস করেছেন এবং মালিককে দেশান্তরী হতে বাধ্য করেছেন অথবা অস্ত্রের ভয়, হুমকি, খুন, নারীধর্ষণ প্রভৃতি ঘটিয়ে ভীতিপ্রদর্শন মারফত মালিককে তাড়িয়ে দিয়ে ভুয়া যোগর্সাজলী রেকর্ড প্রণয়ন বা অন্য কোন মিথ্যা দলিল তৈরি করে ভোগদখল করছেন বা দুর্নীতির মাধ্যমে বা আদালতকে ভুল ধারণা দিয়ে নানা অপকীর্তির মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তির ভুয়া মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছেন যে সকল কীর্তিমানরা এই তথাকথিত প্রত্যর্পণ আইন তাদের প্রতি অন্ধ এবং তাদের কোন প্রকার শাস্তি দেওয়া বা সে সকল সম্পত্তি উদ্ধার করা বা তার মালিক/উত্তরাধিকারীদেরকে ফেরত দেওয়া হবে না।

এগার. ফলে শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ অর্পিত সম্পত্তির বৈধ মালিক বা তাদের উত্তরাধিকারীরা উপকৃত তো হবেনই না বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন স্থায়ীভাবে এই তথাকথিত বাতিল আইনের মাধ্যমে। যে টুকু সম্পত্তি ফেরত দেওয়া হবে তারও প্রক্রিয়া জটিল করা হয়েছে। শুধু তাই নয় দেশত্যাগী বা স্থায়ী বাসিন্দা নয় এই অজুহাতেই লাভবান করে দেওয়া হচ্ছে অন্যায়কারীদেরকে এই বাতিল আইনের মাধ্যমে।

একথা স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন মনে করি এই সাম্প্রদায়িক ও বর্বর আইনটির শিকার যে কোটি কোটি Missing Population তাদের সম্পত্তিই তো শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করার মাধ্যমে তাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। আজ কোন নৈতিক বা আইনগত যুক্তিতে অন্যায়ভাবে যারা দেশত্যাগী হতে বাধ্য হয়েছে তাদের মালিকানা আইন কবে হরণ করা হবে। দীর্ঘকাল যাবত এই আইন বাতিল দাবী করতে গিয়ে তো সরকারীদল, অন্যান্য বিরোধীদল, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ একথাই লক্ষ কোটি বার বলেছেন যে এই বর্বর আইন কোটি কোটি মানুষের দেশত্যাগের কারণ এবং শত নির্যাতনেরও কারণ। আজ এ সকল কথা ভুলে যাওয়ার কারণ কি? দেশে বসবাসকারীরা তো আইনত নীতিমালা অনুযায়ী এমনি পাবেন অন্যদেরকেও পেতে হবে আনুপাতিক।

আমেরিকায় বা অন্যত্র গেলে যেমন সম্পত্তির মালিকানা যায় না এ ক্ষেত্রেও তা হওয়া চলবে না। সম্প্রদায় বিশেষর সম্পত্তি হলে বা বিশেষ দেশে চলে গেলে তার সম্পত্তির মালিকানাও আইনের মাধ্যমে হরণ করা হবে তা আদৌ মানা যাবে না।

সুতরাং এক কথায় অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল ঘোষণা করা হোক। দু বছর সময় দেওয়া হোক ঐ সম্পত্তির বিদেশে অবস্থানকারী মালিকাদের তারা যদি ফিরে এসে বাংলাদেশে বসবাস করতে চায় তাদের মাতৃভূমিতে থাকে চান সে কথা সরকারকে জানতে এবং তাদের থাকার অধিকার ও নাগরিকত্ব প্রত্যর্পণ করা যাবে। যারা ফিরে আসতে অনিচ্ছুক তাঁরাও মালিকানা পাবেন তবে সেই সম্পত্তির বিক্রয় লব্ধ অর্থ এ দেশে বিনিয়োগের মর্ত জুড়ে দেওয়া হোক।

বস্তুত: এখন দেখা যাচ্ছে, কোন ভাবেই ঐ সম্পত্তি কাউকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। ২০০১ সালে আইনটি ২০১৯ এ কার্যকর করা হচ্ছে না। ১৯৬৫ সালে প্রণীত পাকিস্তানী এই আইনটি দিব্যি ২০১৯ এও সরকারিভাবে বহাল।

রণেশ মৈত্র, লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ