প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ১৫ এপ্রিল, ২০১৬
ধর্ম-দর্শন নিঃসন্দেহে মানুষের প্রথম নৈতিকতা বোধের আকর। বিশৃঙ্খল সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং ন্যায়বিচারের ধারণা প্রবর্তনে ধর্মের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। প্রতিটি ধর্মেরই গোঁড়ার কথা ছিলো সত্য-সুন্দর-মঙ্গল। ধর্ম প্রবর্তকদের এই সত্য সুন্দর মঙ্গলের দর্শনটি আত্মস্থ করে মানব-কল্যাণে একে সদ্ব্যবহারের পরিবর্তে ধর্মের কর্তৃত্ব ব্যবহার করে স্বপ্রণোদিত ধর্মের ম্যানেজাররা যখন একে শাসন-শোষণের হাতিয়ার করে তুললো; সমস্যা তৈরি হলো সেখানে।
মানুষ ধর্মকে সাদরে গ্রহণ করেছিলো মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়; মানবতা চর্চার জন্য। কিন্তু এর পরিবর্তে যখন ধর্ম অপব্যবহৃত হতে শুরু করলো মানবতার বিরুদ্ধে; তখন স্বাভাবিকভাবেই কিছু মানুষ বিদ্রোহ করলো।
খ্রিস্ট ধর্ম প্রথমে আলোই এনেছিলো মানুষের জীবনে। কিন্তু যখনই চার্চ কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠলো, তখন ইউরোপে অন্ধকার নেমে এলো। ইউরোপের মুক্তিকামী মানুষেরা হত্যা-নির্যাতন-উচ্ছেদের শিকার হলো। অনেকে আশ্রয় নিলো তখনকার অপেক্ষাকৃত মুক্ত আরব দুনিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে। ইতিহাসের কী পুনরাবৃত্তিকর ঘটনাপ্রবাহ দৃশ্যমান; যখন ইসলাম ধর্মের মসজিদ সেই খ্রিস্ট ধর্মের চার্চের মতো কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠলো; আরব দুনিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের নিপীড়িত মানুষ তখন আশ্রয় নিচ্ছে সেই ইউরোপেই।
কারণ ইউরোপ নবজাগরণের মাধ্যমে চার্চকে এবং রাষ্ট্রকে পৃথক করলো। ধর্ম এলো ব্যক্তিগত জীবনে। রাষ্ট্রিক কাজে চার্চের বা ধর্মের নাক গলানোর অন্ধকার প্রবণতাটি দূর হলো। রেনেসাঁর আলোয় খ্রিস্ট ধর্ম অনুধাবন করলো ফ্রিডম অফ চয়েস বা ইচ্ছার স্বাধীনতাই মানুষের মৌলিকতম অধিকার। মানুষের খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসের অধিকার যেমন আছে; অবিশ্বাসেরও অধিকার তার আছে; এই বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের অধিকার ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো খুব যৌক্তিক কারণেই সমর্থন করে এবং এই ইচ্ছার স্বাধীনতাও নিশ্চিত করে। বর্তমান খ্রিস্ট ধর্মের নেতা পোপ মানুষের এই মৌলিক অধিকারকে বাস্তবতার নিরিখে উপলব্ধি করে বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করেন।
খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যীশু একজন রক্ত-মাংসের মানুষ। তাঁর সুকৃতি ম্লান হবার নয়। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সমালোচনা হয়, উপন্যাস লেখা হয়, ফিল্ম নির্মিত হয়, কার্টুন-ক্যারিকেচার-স্যাটায়ার প্রকাশিত হয়। এই নিয়ে ধার্মিক খ্রিস্টানদের কখনো লেখক-ফিল্ম মেকার-আঁকিয়ের মুণ্ডু চাইতে দেখা যায়না।
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদ(শান্তি বর্ষিত হোক) একজন রক্ত-মাংসের মানুষ। তাঁর সুকৃতি কখনোই ম্লান হবার নয়। বিদায় হজের ভাষণে উনি স্পষ্ট করে বলেছেন, আমি কোন মহাপুরুষ নই; একজন মানুষ।
কিন্তু কালের আবর্তে মুসলিম দুনিয়ায় কোন নবজাগরণ না ঘটায় নতুন এক অন্ধকার যুগের ল্যাবিরিন্থে ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কিছু কট্টরপন্থী মুসলমান। মুহাম্মদ(শান্তি বর্ষিত হোক) যে সাম্যভিত্তিক শান্তিপূর্ণ সমাজ চেয়েছিলেন, যে প্রজ্ঞার চর্চা প্রত্যাশা করেছিলেন, তাঁর সেসব চাওয়াকে অন্ধকারে ঢেকে দিয়ে তাঁকে নিয়েই অনুভূতির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কিছু স্বপ্রণোদিত ধর্মের ম্যানেজার। এদের পিঠের সওয়ার হয়েছে মুসলিম বিশ্বের কিছু খল-দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক। এদের উদ্দেশ্য কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ক্ষমতা-সম্পদ ও জীবন লুণ্ঠন। এদের হাতে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। নিজেদের এই হীন অপরাধ লুকাতে তারা মহানবীর ভাবমূর্তির পাহারাদারির কাজটি করছে; সেই চড়ুই-এর মতো যে আকাশের দিকে পা-দুখানা তুলে বলে, পা নামাচ্ছি না; আমি যে আকাশের ভেঙ্গে পড়া ঠেকিয়ে রেখেছি।
স্বপ্রণোদিত এই মাতব্বরির সফট টার্গেট গুটিকতক মানুষ যারা অবিশ্বাসী। অথচ প্রতিদিন মুসলিম নাম ধারী সন্ত্রাসীদের হাতে নিরীহ মানুষের মৃত্যুর চেয়ে বড় গুণাহতো হয়না। কিংবা ধর্মের পিঠে সওয়ার যেসব রাষ্ট্রপ্রধানের অঙ্গুলি হেলনে মানুষকে পাখীর মতো গুলি করে মারা হয়; গুম করে দেয়া হয়; এর চেয়ে বড় গুণাহতো হয়না। কয়েকজন অবিশ্বাসী ব্যক্তি মুহাম্মদ(শান্তি বর্ষিত হোক)-এর সমালোচনা করে তাঁর ভাবমূর্তির যতটুকু ক্ষতি করতে পারে; তারচেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি করছে ধর্ম-ব্যবসায়ী চাপাতি ও রাজনৈতিক রাক্ষসেরা।
বিচার যদি কারো হয় তবে মানবতা বিরোধী অপরাধ, ইসলাম ও মহানবীর ভাবমূর্তি বিনাশকারী এই ঘাতক লুণ্ঠক ধর্ম ব্যবসায়ী চাপাতি ও রাজনীতির কসাইদের বিচার প্রাধিকার পাবার কথা। মহানবীর সমালোচনা অবিশ্বাসীরা যেমন করে; ঠিক তেমনি প্রাজ্ঞ গবেষকেরা উনার সুকৃতি নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করে। এই বুদ্ধিবৃত্তিক ও লৈখিক বিতর্কের সংস্কৃতিতে কোন খুনাখুনি বা লুণ্ঠনের কারবার তো নেই।
যে বিকৃতি ধর্ম-ব্যবসায়ী চাপাতিচক্র ও লুণ্ঠক রাষ্ট্রিক ক্ষমতা চক্রের মধ্যে দৃশ্যমান; এর হেস্তনেস্তটা আগে করা প্রয়োজন। ইসলামের গর্ব বা মুহাম্মদ(সা:)-এর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সেটিই হওয়া উচিত মুসলমানদের প্রথম দায়িত্ব।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য