আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বাঁশের বাস্তিল কেল্লার পতন অনিবার্য

মাসকাওয়াথ আহসান  

পলিটিকস শব্দটিকে কে কবে খেয়াল-খুশী অনুযায়ী "রাজনীতি" নামে ভুল অনুবাদ করেছিলো; সেই ভুলের মাশুল দিয়ে চলেছে জনগণ। পলিটিকস শব্দের বাংলা হতে পারে জননীতি। কারণ জনগণের জন্য রাষ্ট্র; জনগণের সেবার জন্য এইসব গণতন্ত্র, সরকার, মন্ত্রীসভা, জনপ্রতিনিধি। রাজনীতি শব্দটি তামাদি হয়ে গেছে যেদিন উপমহাদেশের জনমানুষ রাজতন্ত্রকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করেছে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে "রাজনীতি"-র কোন স্থান নেই। এ হবে জননীতি।

এই মুহূর্তে যারা বাংলাদেশে কথিত রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন তাদেরকে "রাজ" শব্দটিকে মস্তিষ্ক থেকে বিদায় করে দিতে হবে। জনগণের জন্য জননীতিতে অভ্যস্ত হতে হবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে হবে। একটা আত্মঘাতী রাজকীয় ভাবভঙ্গী তাদের তৈরি হয়েছে জনমানুষের নীরব ক্ষোভকে অনুধাবন না করে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পলিটিকসের ভবিষ্যৎ নিয়ে পর্যবেক্ষণ জানাতে গিয়ে বেদনার সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন, মানুষ এখন পলিটিশিয়ান বলতে খারাপ লোক বুঝে থাকে। অতীতে আব্রাহাম লিংকন বা জন এফ কেনেডির মত অভিজ্ঞ জনপ্রতিনিধিরা পলিটিশানদের অনেকভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, জনগণের জন্য পলিটিশিয়ান, পলিটিশিয়ানের জন্য জনগণ নয়।

ক্যামেরন মনে করেন, অভিজ্ঞ জননেতাদের সাবধান বাণী হয়তো প্রযুক্তির অনগ্রসরতার কারণে রাজরোগে আক্রান্ত পলিটিশিয়ানদের কাছে পৌঁছেনি। কিন্তু যুগ বদলেছে; তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে গোটা পৃথিবীতে পৌঁছে গেছে অভিজ্ঞ জননেতাদের পলিটিকসের নিয়তি সম্পর্কে স্পষ্ট উচ্চারণগুলো।

ক্যামেরন মনে করেন, তথ্য প্রযুক্তি ও জনযোগাযোগ; বিদ্যমান কথিত রাজনীতির মনোপলির বিরুদ্ধে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হাজির করেছে। সুতরাং নিজেদের এই "খারাপ মানুষের" আত্মপরিচয়কে ঘুচাতে জনগণের সামষ্টিক প্রতিরোধকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। নইলে সমূহ বিপদ আছে তাদের ভাগ্যে।

ডেভিড ক্যামেরন এই বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবার আগেই ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছিলেন। পানামা লিকসের মতো অসংখ্য অপরাধ উন্মোচন ঘটবে, ঘটতেই থাকবে; এটা উনি আগেই ধারণা করতে পেরেছিলেন।
পলিটিকস মানে বিদ্যমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় জননীতিই বুঝতে হবে। পলিটিকস পলিটিশিয়ানদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা বাগানবাড়ীর সেবাদাসী নয়। পলিটিকসে জনগণের গলাটাই বড় হবে; পলিটিকসের চোরের মায়ের বড় গলা বা হুংকারের দিনগুলো ফুরিয়ে আসছে।

বাংলাদেশের কথিত রাজনীতির ক্ষমতামুখী দাম্ভিক খেলোয়াড় ও তাদের অনুসারী দলদাসগুলোর এই যে ভেংচি কেটে বলার অভ্যাস, যাগো ভোট পাওনের ক্ষমতা নাই; তাগো মুখে বড় বড় কথা শুইনা হাসি পায়। এই যে ময়লা দাঁত বের করে হাসাহাসি করা উপমানবগুলো; এদের সেই একদা উদ্ধত গাদ্দাফীর প্রতিবাদী জনগণের পিটুনিতে করুণ মৃত্যু দৃশ্যটি বারবার দেখা উচিত নিজেদের পরিণতি বুঝতে।

ডেভিড ক্যামেরন ভবিষ্যতের পলিটিকস বলতে বুঝিয়েছেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা; যেখানে সরকারী খরচের প্রতিটি টাকার হিসেব বুঝে নেবার অধিকার নাগরিকের এবং সরকারের প্রতিটি কার্যক্রম অনলাইনে জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।

আজকের যুগের পলিটিশিয়ানরা ব্যস্ত ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষমতা ধরে রাখতে; লুণ্ঠনের থিকথিকে রিরংসায় লুটোপুটি খেতে। আর জনগণ থাকে মানুষের জননীতির ভাবনা নিয়ে। প্রতিটি ব্যাংক লুণ্ঠন, ঋণ খেলাপ, বিদেশে টাকা পাচার, ঘুষ-দুর্নীতি, হত্যা, গুম , ধর্ষণ, সংখ্যায় কম সম্প্রদায়ের মৃত্যু জনমানুষের উচ্ছেদ, ভূমি দখল তাদের বিচলিত ও বিক্ষুব্ধ করে। এই বিক্ষোভের প্রকাশ জনগণের প্রাধিকার।

বিক্ষোভের জন্য জনগণকে নিশ্চয়ই "রাজরোগী"-দের অনুমতি নিতে হবে না। দেশটা তো জনগণের; কোন রাজরোগীর বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় যে সে লেঠেল লাগিয়ে দিয়ে কথিত উন্নয়নের পদ্য লিখবে। তামাদি হয়ে যাওয়া ভিলেজ পলিটিকস দিয়ে আর বেশীদিন হালে পানি পাওয়া যাবে না।

আর রাজকর্মচারীরা যে এই একবিংশ শতকে এসেও নিজেদের প্রশাসক বলেন; ভাবেন; আচার আচরণে "স্যার ডাকের আকুতি" প্রস্ফুটিত করেন; তাদের বুঝতে হবে তারা প্রশাসক নন, ব্যবস্থাপক; এবং তাদের অন্নদাতা জনগণ। সুতরাং কাদের কাছ থেকে "মহোদয়" সম্ভাষণ শুনতে চান তারা!

অতীতে হয়তো এইসব কথিত প্রশাসক তাদের পূর্ব-পুরুষকে ঔপনিবেশিক কথিত প্রশাসকদের দম্ভের সামনে মাথা নত করতে দেখে আজ দাম্ভিকতার এই অপসংস্কৃতিকে লালন করার বিকৃত স্বপ্নে বিভোর । এই চিন্তার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক মতো না করতে পারলে ভবিষ্যতে ভালো ব্যবস্থাপক হবার কোন সুযোগই নেই তাদের।

জনগণের ক্ষমতায়ন সমসাময়িক পলিটিকসের গোড়ার কথা। রাজতন্ত্র জনমানুষের যে অধিকার কেড়ে নিয়ে নিজভূমে পরবাসী করে রেখেছিলো; তাকে বিদায় জানানোর পরেও গণতন্ত্রের ঘোমটা মাথায় চড়িয়ে রাজনীতির রাজরোগে জনমানুষের মাতৃভূমির ওপর অধিকার অধরা রেখেছে খল-রাজনীতিকেরা; একবিংশ শতক সেই হারানো অধিকার ফিরে পাবার কাল।

কোন বিজন গ্রামে বাঁশের মাচার ওপরে বসে মাতবরি করার উদগ্র কামনা-বাসনা নিয়ে চিন্তার জগতে ডেট এক্সপায়ার্ড পলিটিশিয়ানরা যদি ভেবে থাকেন; জনগণের ভূমি-অরণ্য-জল-হাওয়া-জীবন সবকিছুর মালিকানা পেয়ে গেছেন তারা; তাদেরকে চোখের ঠুলি খুলে বা ছানি কেটে আশেপাশে তাকাতে হবে। তারা দেখবেন, ধেয়ে আসছে ন্যায়বিচারের অধিকার আদায়ের জনমিছিল বাঁশের বাস্তিল কেল্লার দিকে। তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়বে রাজরোগের প্রাসাদ। মুক্ত হবে মানুষ। মানুষের মুক্তিই যে চূড়ান্ত অভিলক্ষ্য।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ