আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে!

মাসকাওয়াথ আহসান  

বাংলাদেশে আইএস নেই; বাংলাদেশ সরকারের এই দাবি অবাস্তব। দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারতে আইএস সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি তারা জানান দিয়েছে। এই তিনটি দেশের কোন দেশের সরকারই দাবি করেনি যে সেখানে আইএস নেই। বাংলাদেশ বেহুলার বাসর ঘরের মতো চারপাশে সর্প-নিরোধক দেয়ালে ঘেরা নেই। ইরাক থেকে উত্থিত আইএস আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারতে শাখা খুলে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে থমকে গেছে ক্ষমতাসীন সরকারের বীরত্বে; এই আজগুবি গল্পটি যারা বলেন তারা নিঃসন্দেহে মনোবিভ্রমের রোগী।

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রত্যেকেই আইএস-এর উত্থানে আতংকিত। প্রত্যেকেই এই অশুভ শক্তিকে রুখে দিতে সচেষ্ট।

আফগান যুদ্ধকে ঘিরে যে আফগান মুজাহেদিনরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো; তারা আফগানিস্তানে শরিয়াভিত্তিক তালিবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিলাষ পূরণ না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু হয়ে পড়ে। এরপর আর কখনোই এই সন্ত্রাসবাদী ফ্রাংকেনস্টাইনেরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোন কথা শোনেনি। রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে দেশ দুটির সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে সাহায্য করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজনেস সিন্ডিকেট যারা অস্ত্র ব্যবসার প্রয়োজনে যুদ্ধ সৃষ্টি করে; তারা রাষ্ট্রিক প্রতিনিধি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষণ পাওয়া মুজাহেদিনরাই আল-কায়েদাসহ নানা সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়েছে; তাই পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্র এই সন্ত্রাসীদের দায় এড়াতে পারেনা। তাই এই সন্ত্রাসবাদের আবর্জনা পরিষ্কার করা যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব।

আফগান মুজাহেদিনদের ডাকে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে এসেছিলো; এখনো কাবুল সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতির অনুরোধ রাখায়; বাধ্য হয়ে তারা সেখানে রয়েছে।

পাকিস্তানে গত দুবছর ধরে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে যে অভিযান চলছে; সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোন ভূমি সম্পৃক্ততা নেই। অর্থাৎ পাকিস্তানের মাটিতে মার্কিন মেরিনের বুটের শব্দ নেই। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-চীন তিনটি দেশের সামরিক সরঞ্জাম সহযোগিতা পাচ্ছে। ভারতের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। প্রয়োজনে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সহযোগিতা পাবে ভারত। কিন্তু ভারতের মাটিতে মার্কিন মেরিনের বুটের শব্দ কখনোই শোনা যাবে না।

বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের উপস্থিতি স্বীকার ও মোকাবেলায় কেন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ভয় পাচ্ছে! ইরাক-সিরিয়ার বাস্তবতাকে চট করে দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলাও খুব যৌক্তিক নয়।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুজুর ব্যবহার বহুল প্রচলিত; কারণ নদীমাতৃক এই দেশের মিস্টিক মানুষেরা রহস্যের গল্প পছন্দ করে; শিশুরা পছন্দ করে ভুতের গল্প। যে দেশে শিশুকে ঘুম পাড়ানো হয় ভুতের ভয় দেখিয়ে; সেখানে নাগরিককে ঘুম পাড়াতে বিভিন্ন সরকার নানারকম জুজু ব্যবহার করে।

যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজ নিজ দেশে নানা ধর্ম-বর্ণ-অবিশ্বাসী-সমকামী নির্বিশেষে নাগরিকদের মানবিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। তাই যে বিষয়গুলোকে বাংলাদেশে বসে "এইটা এমন কোন ব্যাপার না" বা "বিচ্ছিন্ন ঘটনা" বলে 'সলিম বুঝ' দেয়া হয়; সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ ভুক্ত দেশগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কোমরে আঁচল বেঁধে নিজের মহল্লায় বেরিয়ে যেভাবে পাড়া মাথায় তোলেন বাংলাদেশের কতিপয় ঝগড়াটে-সমাজ; তারা যদি মনে করেন পররাষ্ট্রনীতি ঐভাবেই চলবে; সেটা হবে অত্যন্ত পশ্চাৎপদ চিন্তা। একটি ব্যাঙ একটি হাতির পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে ক্রোধে ফুলিয়ে যতই হাতির আকার ধারণের চেষ্টা করে ততই তার ফেটে যাবার আশংকা বাড়ে। মনে রাখা দরকার বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউভুক্ত দেশগুলোতে অভিবাসী। পশ্চিমা বিশ্বের কেউ বাংলাদেশে অভিবাসী হয়না। বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর ওপর বাণিজ্য নির্ভরতা রয়েছে; তাদের বাংলাদেশের ওপর কোন নির্ভরতা নেই।

দক্ষিণ এশিয়ার যে লোকগুলো সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে শরিয়াহ আইন প্রচলন করতে চায়; তারা আঞ্চলিক সন্ত্রাসী হলেও এ সন্ত্রাস আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের অপ-দর্শন প্রসূত। কাজেই জামায়াতুল মুজাহেদিন, হিজবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ যে নামেই আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের ডাকা হোক; এরা একসময় আলকায়েদার দর্শনে উত্তেজিত ছিলো; এখন আইএস দর্শনে উজ্জীবিত; খুনাখুনিতে উদ্যত। যুক্তরাষ্ট্রের জুজুর কারণে যতবার বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলবে, বাংলাদেশে আইএস নেই; ততবার বিমলানন্দে চাপাতিতে শান দেবে "ধর্মের নামে" খুন করে বেড়ানো এই পেশাদার খুনিরা।

বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ আঞ্চলিক; আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই; বা বাংলাভাই মিডিয়ার সৃষ্টি বলে যে খবর কার্পেটের তলায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো; তা লুক্কায়িত মরা ইঁদুরের দুর্গন্ধ ছড়িয়েছিলো। আওয়ামী শাসনামলে একই ঘটনা ঘটছে। ফলে বাতাসে লাশের গন্ধ বাংলাদেশের পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। অস্বীকার রোগের ঢাকের বাড়িতে চাপা পড়ে যাচ্ছে স্বজন হারানো মানুষের কান্না।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ