আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

সন্ত্রাসবাদ ও তারুণ্য : সমস্যা ও সমাধান

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ  

সন্ত্রাসবাদ আজ বিশ্বজুড়ে এক ভয়াবহ সমস্যা। বর্তমানে এই সমস্যার সাথে সবচাইতে বেশী সম্পৃক্ত করা হচ্ছে কোমলমতি তরুণদের। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কালের দেশী-বিদেশী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমূহ সংঘটনের সাথে তরুণ সমাজকে নিয়ে নানা রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে দেশ, জাতি ও সমাজ। বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাস বিরোধী পদক্ষেপের প্রচার এবং প্রসার রয়েছে বহু আগে থেকেই। আন্তর্জাতিক ভাবে তো বটেই, এমনকি অনেক দেশ তার নিজস্ব আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুসরণ করে সন্ত্রাসবাদকে মোকাবিলা করে আসছে বহু বছর যাবত।

সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ সমূহ
১৯৭০ সালে জাতিসংঘের ‘সাধারণ পরিষদ রেজুলেশন ২৬২৫’-এ প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় গোটা বিশ্ব। ১৯৮৫ সালের ৭-৮ই ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্ক সম্মেলনে সার্কভূক্ত দেশ সমূহ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে সন্ত্রাসবাদকে অন্যতম বাধা হিসাবে চিহ্নিত করে। ১৯৮৬ সালের ১৭ই নভেম্বর সার্কভূক্ত রাষ্ট্র সমূহ ‘বাঙালোর ঘোষণা’-তে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পক্ষভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা অনস্বীকার্য। এরপর ১৯৮৭ সালের সন্ত্রাসবাদ দমনে ‘সার্ক আঞ্চলিক কনভেনশন’-এ সার্কভূক্ত রাষ্ট্রসমূহ সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের জাতিসংঘের ‘সাধারণ পরিষদ রেজুলেশন ২৬২৫’ গ্রহণ করে।

১৯৯৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের ‘সাধারণ পরিষদ রেজুলেশন ৫৪/১০৯’ সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নকে দমন করার জন্য কঠোর অবস্থান ঘোষণা করে। একই রকমভাবে ২০০১ সালের ২রা সেপ্টেম্বর তারিখে জাতিসংঘের ‘নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন ১৩৭৩’ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে যা পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ৬ই জানুয়ারি সার্কভূক্ত রাষ্ট্রসমূহ ‘সার্ক আঞ্চলিক কনভেনশন’-এর অন্তর্ভুক্ত করে।

২০০৪ সালে বাংলাদেশে অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের উদ্দেশ্যে ‘র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন’ (র‍্যাব) নামে একটি বিশেষায়িত বাহিনী গঠন করা হয়। এই বাহিনী বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে কার্যকরী ভূমিকা রেখে আসছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ দমনে ‘কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ইনটেলিজেন্স ব্যুরো’ গঠন করে। একই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে ‘সন্ত্রাস বিরোধী অধ্যাদেশ’ প্রণয়ন করা হয়। বাংলাদেশে ২০০৯-এর জানুয়ারিতে গঠন করা হয় সন্ত্রাসবাদ রোধে বিশেষ বাহিনী - SWAT। সর্বোপরি, উপরের অধ্যাদেশটির পরিবর্তে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন’ প্রণয়ন করে। এই আইনটি এ পর্যন্ত মোট দুইবার সংশোধিত হয়।

বাংলাদেশের সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ মূলত: সন্ত্রাস-কে একটি সুনির্দিষ্ট অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিশ্চিত করেছে। এই আইনের অধীনে, সন্ত্রাসমূলক অপরাধের দ্রুত কার্যকর বিচার- এর লক্ষ্যে ‘সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠনের কথাও বলা হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে গত সাত বছরে এরূপ কোন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি।

২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার ‘জাতীয় সন্ত্রাসবাদ দমন শিক্ষানীতি’ গ্রহণ করে যার মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাতে কিছু পরিবর্তন আনার পাশাপাশি পাঠ্য পুস্তকে এ বিষয়ক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। এরপর ২০১১ সালে বাংলাদেশ ২ রাষ্ট্র ‘জাতীয় সন্ত্রাস বিরোধী কৌশল’ গ্রহণ করে এবং একই বছর বাংলাদেশ ‘প্যালেরমো কনভেনশন এগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইমস’ চুক্তিতে পক্ষভুক্ত হয়।

সবশেষে, বাংলাদেশ পুলিশ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সন্ত্রাসবাদ দমনে ‘কাউন্টার টেরোরিজম এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট’ গঠন করে, যা ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস হতে তার কার্যক্রম শুরু করে।

আইনের প্রয়োগ ও সামাজিক বাস্তবতা
সন্ত্রাসবাদ রোধে আইনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে আইনের প্রয়োগ যদি ঠিকমত না হয় বা আইনি প্রতিষ্ঠান সমূহ যদি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে না পারে তবে সন্ত্রাস দমন শুধু এক দুরের স্বপ্নই থেকে যায়। সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অঙ্গীকারের কোথাও কোন ঘাটতি আছে বলে আমি মনে করিনা। কিন্তু সামাজিক বাস্তবতায় আমরা বেশ কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। আর তাই কারণ অনুসন্ধানে এবং সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ সন্ত্রাসবাদ ও তারুণ্য বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

জরিপের বিবরণ
গত ২৭শে অক্টোবর হতে ৩রা নভেম্বর ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত মোট ৮ দিন ব্যাপী ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩০ জন শিক্ষার্থী মোট ১০০০ (এক হাজার) জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উপর এক জরিপ পরিচালনা করে। এই জরিপে মোট ৬৬৩ জন পুরুষ এবং ৩৩৭ জন নারী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সী ছিল ২২%, ১৯ বছর বয়সী ছিল ৯.৯%, ২০ বছর বয়সী ছিল ২৪.৩%, ২১ বছর বয়সী ছিল ২৫%, ২২ বছর বয়সী ছিল ১৯.৪%, ২৩ বছর বয়সী ছিল ৯.৭%, ২৪ বছর বয়সী ছিল ৩.৬% এবং ২৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সী ছিল ৫.৯% । সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬৮.৭% ছিল।

জরিপ পরিচালনাকারী দলের মতে, এই জরিপ পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের ৩০ সদস্যের শিক্ষার্থী দলের কোন রকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি, বরং জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই জরিপে অংশগ্রহণ করেছে। তবে প্রায় ১৫% জরিপ অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী নিজেদের নাম ও আইডি নাম্বার প্রকাশ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে।

আমি মনে করি, যেহেতু জরিপের বিষয়টি সংবেদনশীল, সেহেতু এ ধরনের শিক্ষার্থী-প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক। সন্ত্রাসবাদ ও তারুণ্য বিষয়ক জরিপটিতে জরিপ অংশগ্রহণকারীর নাম, লিঙ্গ, বয়স, অধ্যয়নরত বিভাগ এবং আইডি নাম্বার ছাড়াও জরিপ বিষয়ে মোট ২০টি প্রশ্ন ছিল। সন্ত্রাসবাদ ও তারুণ্য বিষয়ক সাধারণ বিষয়ে প্রশ্ন ছাড়াও নির্দিষ্টভাবে কিছু প্রশ্ন ছিল সন্ত্রাসবাদের কারণ এবং কিছু প্রশ্ন ছিল সন্ত্রাসবাদ সমস্যা উত্তরণের উপায় সমূহ চিহ্নিতকরণ বিষয়ে। জরিপের প্রশ্নমালা ও প্রশ্নভিত্তিক ফলাফল এখানে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে।

জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ
যে কোন জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করা হচ্ছে সবচাইতে দুরূহ কাজ। যেহেতু একটি জরিপ সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের ভিত্তিতে করা হয়, সেহেতু জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে নির্ধারিত বিষয়ে সামগ্রিক চিত্রটি পাওয়া দুস্কর। তদুপরি, ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্ধারিত বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে।

(ক) সন্ত্রাসবাদ ও তারুণ্য
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৮৯.৮% তরুণ শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসবাদকে কোনভাবেই সমর্থন করে না। এটি নিঃসন্দেহে একটি আশাব্যঞ্জক দিক। আজকের তরুণেরাই তো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। সুতরাং তারা যদি সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করে তবে সন্ত্রাস বিরোধী পদক্ষেপ কার্যকরী করার ব্যাপারে বাংলাদেশ বহুদূর পথ এগিয়ে যেতে পারবে।

তবে জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে এটাও দেখা যায় যে, প্রায় ১০.২% তরুণ শিক্ষার্থী সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে। তাদের এই সমর্থনের পিছনে কি কারণ রয়েছে তা আমাদের জরিপে উঠে আসেনি। প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রত্যাশিত উত্তর সন্ত্রাসবাদ সমর্থনের বিপক্ষে যাবে ধরে নিয়ে ছিলাম বলেই আমরা এ ধরণের কোন “কারণ অনুসন্ধানী” প্রশ্ন জরিপে অন্তর্ভুক্ত করিনি। এটা আমি এই জরিপের সীমাবদ্ধতা বলেই ধরে নিব।

এব্যাপারে আমরা শুধু এটুকু সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি তা হলো জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের অন্তত: ১০% সন্ত্রাসবাদকে কোন না কোন কারণে সমর্থন করে। ব্যাপারটি অপ্রত্যাশিত বা দুঃখজনক হলেও বাস্তবতার নিরিখে এই সত্যটি আমাদের মেনে নিতে হবে এবং সন্ত্রাসবাদ রোধে এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।

একটি বিষয়ে পরিস্কার ধারণা থাকা জরুরী। আর তা হলো, কেউ যদি সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে তাকেই আমরা সন্ত্রাসী বলে ধরে নিতে পারিনা। আমাদের সংবিধানের ৩৯(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তিরই চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু আইনের ভাষায় যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই ব্যক্তি তার চিন্তা-চেতনাকে বাস্তব রূপ দিচ্ছে তাকে আমরা ‘অপরাধী’ বলতে পারিনা। আমাদের জরিপের প্রশ্নের উত্তরে যারা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করেছে এমনও হতে পারে যে তারা সন্ত্রাসবাদকে সরকার-বিরোধী কোন পদক্ষেপ বা রাজনৈতিক বিরোধিতার হাতিয়ার বলে মনে করে। সন্ত্রাসবাদ নিরসনের উপায় হিসেবে তাদের এহেন মনোভাব এর পরিবর্তন অত্যাবশ্যক বলেই আমি মনে করি।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৮৪.২% জরিপকৃত শিক্ষার্থী মনে করে যে, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে তরুণদের মাঝে সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়বার প্রবণতা বেশী দেখা যাচ্ছে।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৩৭.৬% জরিপকৃত শিক্ষার্থী মনে করে যে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের, ১৪.১% মনে করে যে উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের, ৭.৬% মনে করে যে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের, ২১.২% মনে কওে যে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের এবং ২০.৪% মনে করে যে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সন্ত্রাসবাদে জড়ানোর প্রবণতা বেশী রয়েছে। আরও বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, কোন ধরণের পরিবারের সন্তানদের মাঝে সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়বার প্রবণতা বেশী এটি জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ৫১.৭% ই হলো উচ্চবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং ৪১.৬% হলো নিম্নবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে সন্ত্রাসবাদ নিরসনে বা রোধে উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত উভয় পরিবার-এর সন্তানদেরকেই সন্ত্রাসবাদে জড়ানোর হাত থেকে বাঁচানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বয়স ভিত্তিতে কাদের সন্ত্রাসবাদে বেশী জড়িত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়-এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখি যে, ১২-১৮ বয়সসীমায় ২৫%, ১৮-২৫ বয়সসীমায় ৫৪.৭%, ২৫-৩৫ বয়সসীমায় ১৩.৪% এবং ৩৫ এর ঊর্ধ্বে বয়সসীমায় মাত্র ৮.৪% রয়েছে। সুতরাং আমাদের জরিপ অনুযায়ী ২৫ বছরের নীচের বয়সের মানুষদের সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়বার প্রবণতা প্রায় ৭৯.৭% অর্থাৎ ৮০% সন্ত্রাসবাদী অপরাধী দের বয়স ২৫ বছরের নীচেই হয়ে থাকে। সন্ত্রাসবাদ দমন বা রোধে এই তথ্যটি অত্যন্ত কার্যকরী বলেই আমি মনে করি।

(খ) সন্ত্রাসবাদের কারণ
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদের সবচাইতে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পারিবারিক অসচেতনতা বা উদাসীনতা। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৩.৬% মনে করে যে, পারিবারিক অসচেতনতা বা উদাসীনতাই হচ্ছে সন্ত্রাসবাদে যুক্ত হওয়ার অন্যতম মূল কারণ। সুতরাং সন্ত্রাসবাদ রোধে প্রতিটি পরিবারকে এক একটি দুর্গের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। পরিবার যদি তার আপন লোকের ওপর সতর্ক নজরদারি রাখে তাহলে হয়তো একজন ব্যক্তির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদের সাথে রাজনীতির একটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। জরিপের ফলাফলে এটাই ফুটে উঠেছে যে, সন্ত্রাসবাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক উসকানি। আমাদের জরিপে দেখা যায় যে, প্রায় ৯০.৪% জরিপকৃত শিক্ষার্থী মনে করে রাজ‣নতিক উসকানি সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্ররোচিত ৪ করে থাকে। সুতরাং সন্ত্রাসবাদ নিরসনে রাজনৈতিক দল সমূহের সুদৃঢ় অবস্থান ও কঠোর অঙ্গীকার থাকতে হবে। তাই সন্ত্রাসবাদ রোধের পদক্ষেপে রাজনৈতিক দলসমূহকে সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত জরুরী।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, বেকারত্ব তরুণদের সন্ত্রাসবাদে জড়িত হওয়ার পেছনে তৃতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৮৯.১% মনে করে যে, কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা তরুণ সমাজকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ধাবিত করছে। বিশ্বব্যাংকের ২০১৪ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকার জনসংখ্যা প্রায় ৬৮ লক্ষ। আমাদের জরিপ অনুযায়ী এই বেকার জনসংখ্যা যে কোন কারণেই হোক সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত হচ্ছে। তাই বেকার সমস্যা সমাধান হোক সন্ত্রাসবাদ রোধের অন্যতম হাতিয়ার।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ধর্মীয় অজ্ঞতা সন্ত্রাসবাদের চতুর্থ কারণ রূপে চিহ্নিত হয়েছে। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মোট ৮৪.৬% মনে করে যে, সন্ত্রাসবাদের অন্যতম কারণ হচ্ছে ধর্মীয় অজ্ঞতা। এ কথা অনস্বীকার্য যে, বিশ্বব্যাপী ধর্মই হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের এক বড় হাতিয়ার। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় প্ররোচিত করে কোমলমতি তরুণদের বানানো হচ্ছে ভয়ংকর সন্ত্রাসী। সুতরাং সন্ত্রাসবাদ দমনে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা বা জ্ঞানের প্রচারণা চালানো অতীব জরুরী।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধির পঞ্চম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মোট ৮১.১% মনে করে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।

আধুনিক বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ অপরাধ বিস্তারে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। প্রথাগত আইনের নজরদারি ভেদ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অনেকটাই রাশবিহীন ঘোড়ার মত অপরাধ সংক্রমণে দোর্দণ্ড প্রতাপে এগিয়ে চলেছে। সুতরাং সন্ত্রাসবাদ দমনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহের ওপর কড়া আইনি ও সামাজিক নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সামাজিক হতাশা থেকেও সন্ত্রাসবাদের জন্ম হতে পারে। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৭৯.৯% মনে করে যে, সামাজিক হতাশা সন্ত্রাসবাদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সামাজিক হতাশা সৃষ্টির আবার নানা কারণ থাকে। তবে আমাদের জরিপে সেই বিষয়ে আরো গভীর কোন গবেষণা চালানো হয়নি। তাই এই মুহূর্তে আমরা শুধু এটুকু ধরে নিতে পারি যে, সামাজিক হতাশা, তা যে কোন ভাবেই সৃষ্টি হোক না কেন, সন্ত্রাসবাদের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ সামাজিক হতাশাবাদ থেকে অনেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়ে থাকে।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায় যে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র রয়েছে। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৭১% মনে করে যে, শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি সন্ত্রাসবাদকে উসকানি দিচ্ছে। এখানে শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে যে কোন শিক্ষা ব্যবস্থাকেই বোঝানো হয়েছে। বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম বা মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতি সকল শিক্ষা ব্যবস্থাতেই সন্ত্রাসবিরোধী মনোভাব তৈরির পরিবেশ, পাঠ্যক্রম, পাঠদান কর্মসূচী ইত্যাদি গ্রহণ করা আবশ্যক।

সন্ত্রাসবাদের অন্যতম কারণ আমরা ধরে নেই অর্থ। আমাদের প্রচলিত একটি ধারনা হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে হয়তো সমাজের একটি অনগ্রসর অংশকে সন্ত্রাসবাদে জড়িত করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের জরিপে উঠে এসেছে একটি চমকপ্রদ তথ্য। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের ৬৭.৫%-ই মনে করে যে, আজকের যুব-সমাজ সন্ত্রাসবাদে জড়িত হওয়ার মাধ্যমে কোনভাবেই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে না। এরূপ ফলাফল আমাদের শুধু চমকপ্রদ তথ্যই প্রদান করে না, একই সাথে সন্ত্রাসবাদের একটি ভয়াবহ সামাজিক চিত্র-ও তুলে ধরে। অর্থ বিত্তের মাধ্যমে যদি সন্ত্রাসী ‣তরী করা না হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে যে, সন্ত্রাসী তৈরিতে সন্ত্রাসী-দর্শন কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। আর তাই দরকার সন্ত্রাসী- দর্শনের শিকড়কে উপড়ে ফেলার।

(গ) সন্ত্রাসবাদের প্রভাব
সন্ত্রাসবাদ আজ বিশ্বজুড়ে এক ভয়াবহ ক্যানসার-এ পরিণত হয়েছে। বিশ্বের কোন দেশ, জাতি বা গোষ্ঠী আজ সন্ত্রাসবাদ এর করালগ্রাস হতে মুক্ত নয়। সন্ত্রাসবাদের কারণে আজকে বিশ্বের যে কোন ব্যক্তির অস্তিত্বই বিপন্ন। বাংলাদেশীরাও এই সন্ত্রাসবাদের আওতা হতে মুক্ত নয়।

সন্ত্রাসবাদের প্রভাব শুধু ব্যক্তি বা সমাজ জীবনেই নয়, একটি জাতি বা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক জীবনেও তার বিস্তার ঘটায়। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সন্ত্রাসবাদ এক বিরাট বাধা। আমাদের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের ৮৫.৫% মনে করে যে, ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদ আমাদের দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বা ফেলতে পারে।

সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রকে বিশ্বের কাছে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করেছে। এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সন্ত্রাসবাদের উত্থান, অবস্থান বা বিস্তার রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক মহলে নষ্ট করে।

আমাদের জরিপের ফলাফলেও কিন্তু এই বিষয়টি ফুটে উঠেছে। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭৩.১% মনে করে যে, ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদ বিশ্বের কাছে আমাদের দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করে তুলছে।

যে কোন রাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ নিরসনে সেই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একটি কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সন্ত্রাসবাদকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিকভাবে প্রতিহত করা যেমন জরুরী, ঠিক তেমনি আইনগতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা প্রতিহত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে এক বিশাল সফলতা লাভ করেছে সন্ত্রাসবাদকে অনেকখানি দমিয়ে রাখতে। এখনও তাদের সেই প্রচেষ্টা জারি রয়েছে। কিন্তু আমাদের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ৭৩.৭% জরিপকৃত শিক্ষার্থীরা বলেছে যে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকায় তারা সন্তুষ্ট নয়।

এখানে আমি বলতে চাই, ‘সন্তুষ্টি’ শব্দটি আপেক্ষিক। একেক জনের কাছে সন্তুষ্টি শব্দটির অর্থ একেক রকম। কেউ এক বেলা খাবার খেয়েও সন্তুষ্ট থাকতে পারে, আবার কেউ তিন বেলা খাবার খেয়ে সন্তুষ্ট নাও থাকতে পারে। তারপরও আমাদের মেনে নিতে হবে নানারকম প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে হয়। তবে হয়তো আমাদের প্রত্যাশা আরও অনেক বেশী আর সে কারণেই আমাদের অসন্তুষ্টির পাল্লা অনেক ভারী বেশী হয়ে দাঁড়ায়।

(ঘ) সন্ত্রাসবাদের সমাধান
সন্ত্রাসবাদের সমাধান খোঁজা মোটেও সহজ কাজ নয়। বিশ্বজুড়ে আজ সন্ত্রাসবাদের প্রতিরোধ ও প্রতিকার এর উপায় খোঁজা নিয়ে সকলে ব্যস্ত। আমরা আমাদের জরিপে সন্ত্রাসবাদ নিরোধে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে এই ব্যাপারে গবেষণা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের ফলাফলে যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা হয়তো দিক-নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এখানেই যে সকল সমাধানের পথ রয়েছে এমন দাবী আমি করছি না।

প্রথমেই বলে নিতে হবে যে, কোন ব্যক্তির বাহ্যিক দর্শনে তাকে সন্ত্রাসী বলে গণ্য করা যায়না। আমরা যদি মনে করি একটি বিশেষ পরিচয়ের ব্যক্তিবর্গ বা একটি বিশেষ আদলের বা পোশাক পরিহিত ব্যক্তিবর্গই আসলে সন্ত্রাসী হয়ে থাকে তাহলে আমরা ভুল করবো। সন্ত্রাসীদের কোন প্যাটার্ন, পরিচয়, আদল বা পোশাক থাকে না। আমাদের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৫.২% মনে করে যে, কোন ব্যক্তির বাহ্যিক দর্শনেই তাকে সন্ত্রাসী বলে গণ্য করা যায় না।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা সন্ত্রাসবাদ নিরোধে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৮০.৮% মনে করে তাই। এছাড়া জরিপ অনুযায়ী প্রায় ৮৭.৭% শিক্ষার্থী মনে করে যে, সন্ত্রাসবাদ দূরীকরণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারে।

পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা এবং নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব। পরিবার ও সমাজ যখন সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠে তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য সন্ত্রাসবাদকে নিরোধ করা সহজ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের ৫১.১% মনে করে যে, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা এবং নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ নিরোধ করা সম্ভব।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদ নিরোধে পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন।

জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৩% মনে করে যে, যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ নিরসন সম্ভব। আমি মনে করি, শুধু আইন প্রণয়নই নয় আইনের সঠিক বাস্তবায়নও সন্ত্রাসবাদ নিরোধে অত্যন্ত জরুরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মতে, ধর্মীয় মতবাদের অপব্যাখ্যা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে মোকাবেলা করা সম্ভব। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩১.৭% এর সপক্ষে মতামত দিয়েছে। ধর্মকে অপব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদের যে বীজ কোমলমতি তরুণদের মনে বপন করা হচ্ছে তা প্রতিহত করতে হলে এই ধরণের পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী বলেই আমি মনে করি।

যদিও আগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকায় প্রায় ৭৩.৭% শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট নয়, তথাপি তারা মনে করে যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশী শক্তিশালী করা প্রয়োজন। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০.৪% মনে করে যে, সন্ত্রাসবাদ নিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা জরুরী। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সন্ত্রাসবাদ নিত্য নতুন প্রযুক্তির আধারে সংগঠিত হচ্ছে। অতএব, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও তার সাথে তাল মিলিয়ে চলবার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

জরিপে আমরা দেখেছি বেশ কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী মনে করে যে, সামাজিক হতাশা কখনও কখনও সন্ত্রাসবাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সন্ত্রাসবাদের দিকে যেন তরুণ প্রজন্ম ধাবিত না হতে পারে তার জন্য তরুণ সম্প্রদায়ের হতাশা নিরসনের পথ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের জরিপ এর ফলাফলে দেখা যায় যে জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের প্রায় ২২.৬% মনে করে যে তরুণদের জন্য সুস্থ চিত্তবিনোদনের ও নানা প্রকার খেলাধুলার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ নিরোধ করা সম্ভব।

বিশ্বায়নের এই যুগে কোন রাষ্ট্রের পক্ষে সন্ত্রাসকে এককভাবে দমন করা সম্ভব নয়। দেশে দেশে সম্প্রীতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে প্রতিহত করা সহজ হয়ে উঠে। আর তাই আমরা আমাদের জরিপের ফলাফলে দেখি যে, জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের ২২.৫% মনে করে যে, সন্ত্রাস দমনে আন্তঃদেশীয় টাস্কফোর্স গঠন ও বন্দি বিনিময় চুক্তি প্রণয়ন করা অতীব জরুরী। কোন রাষ্ট্র যদি সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, তাহলে বিশ্ব হতে সন্ত্রাসবাদ কে নির্মূল করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

আমাদের জরিপের ফলাফলে দেখা যায় যে, সন্ত্রাসবাদ দমনের ব্যাপারে বিচার ব্যবস্থার ওপর তরুণ শিক্ষার্থীদের নির্ভরতা বা আস্থা তুলনামূলকভাবে কম। এটা হতে পারে এই কারণে যে, তারা দেখে সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনার পর তারা কোন না কোন ভাবে আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে বেড়িয়ে যায়। আবার সন্ত্রাসীদের বিচার এর মুখোমুখি করা হলে তাদের বিপক্ষে সাক্ষী দেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায়না। অতএব, আমাদের জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১০.৬% মনে করে যে সন্ত্রাসবাদ নিরোধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা জরুরী।

উপসংহার
একুশ শতকের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ সন্ত্রাসবাদ দমন। এটি কোন একজন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংগঠন বা রাষ্ট্রের পক্ষে একা করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যখন অপরাধী-দর্শনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়, তখন শুধু কয়েকজন সন্ত্রাস অপরাধীকে যোগ্য শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং সার্বজনীন যে․থ প্রচেষ্টা। আমাদের জরিপের ফলাফলে দেখা যায় যে, সন্ত্রাসবাদ নিরসনে আমাদের সকলকে একত্র হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জরিপকৃত শিক্ষার্থীদের ৯৩.৫%-ই মনে করে যে, সমাজের সকল অংশের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা সম্ভব।
[প্রবন্ধটি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল, যা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারপারসন হিসেবে অধ্যাপক ড. তুরিন আফরোজ ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন]

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, আইনজীবী ও আইনের অধ্যাপক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ