প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আলমগীর শাহরিয়ার | ০৪ নভেম্বর, ২০১৭
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বিজয় একাত্তর' নামের হলটি যখন নির্মাণাধীন তখন অনেকের মত দাবি জানিয়েছিলাম বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নামে নির্মাণাধীন হলটি হোক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা তারও উপরমহল জনরব উঠা এ দাবিতে কর্ণপাত করেন নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পৃক্ত বুদ্ধিজীবীরা হররোজ নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু তাদের নীরবতা ছিল বিস্ময়কর। এরপরও আরও ভবন নির্মাণ হয়েছে কিন্তু তাজউদ্দীন সেখানে উপেক্ষিত।
পূর্ববঙ্গের জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা-দীক্ষায়, জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ইতিহাসে আজ অনন্য গৌরবে সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এ দেশে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কিছু মানুষের রয়েছে অসামান্য ত্যাগ ও তিতিক্ষা। স্বাধীন দেশ তাদের নানাভাবেই স্মরণ করেছে অসীম কৃতজ্ঞতায়। তাদের নামে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, কলেজ, বিমান বন্দর, স্টেডিয়াম, রণতরী, কৃত্রিম উপগ্রহ, আরো কত কি।
এ সত্য আজ সর্বজনবিদিত যে স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্তভাবে একটি জাতিগোষ্ঠীকে যে মানুষটি চরমভাবে উদ্দীপ্ত করেছিলেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর বঙ্গবন্ধুর বন্দীদশায় একাত্তরের ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ উত্থাল সময়ে দক্ষ মাঝির ন্যায় যিনি জাতির হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন-স্বাধীনতার নৌকো মুক্তির বন্দরে পৌছে দিয়েছিলেন তিনি তাজউদ্দীন আহমদ। ছয় দশকের পুরনো দল আওয়ামীলীগের শ্রেষ্ঠ অর্জন যদি হয় পূর্ববঙ্গের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব; তবে বঙ্গবন্ধুর পর এ অর্জনে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব নি:সন্দেহে তাজউদ্দীনের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র তাজউদ্দীন ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হেভিওয়েট প্রার্থী মান্নানকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে জানান দিয়েছিলেন রাজনীতির ময়দানে তাঁর আবির্ভাব উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। তাঁর মতো দেশপ্রেমিক, অসীম সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়কের বিনাশ নেই। বরং কালের কল্লোলে অসত্য বর্ণচোরা তোষামোদকে মিইয়ে সত্যনিষ্ঠ ইতিহাসের প্রয়োজনে আরো আলোকপ্রভ হয়ে উঠেন। এবং উঠবেন। দেশকে মুক্তকরার উদগ্র বাসনা নিয়ে যিনি পরিবার পরিজনকে অনিরাপদ ফেলে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে একটি ছোট্ট চিরকুটে শুধু লিখে গিয়েছিলেন, "যাবার সময় বলে আসতে পারিনি। ক্ষমা করে দিও। তুমি ছেলে মেয়ে নিয়ে সাড়ে সাত কোটি মানুষের সাথে মিশে যেও। কবে দেখা হবে জানিনা...মুক্তির পর।"
তিনি তার কথা রেখেছিলেন। মুক্তির বন্দরে স্বাধীনতার নৌকাকে নোঙর করিয়েছিলেন। এদেশকে মুক্তির জন্য এই মানুষটি কি অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন ৭১-এর মুজিবনগর সরকারের ইতিহাস পড়লে জানা যায়।
যে দেশ, দল, নেতার জন্য জীবন দিয়ে গেলেন সে সংগঠনের ঢাক-ঢোলে তাজউদ্দীন নেই। শাসকশ্রেণীর নামকরনের হিড়িকে তিনি অনুপস্থিত। এ বড়ো লজ্জার! অবশ্য এতে বিলাপের কিছু নেই। কারন সত্যাশ্রয়ী ইতিহাস অনিসন্ধিৎসু বাঙালির হৃদয়ে তার উপস্থিতি প্রবল।
অপ্রিয় হলেও সত্য স্বাধীনতা সংগ্রামের এ মহান নায়ক রাষ্ট্রের প্রচারযন্ত্রে বরাবরই উপেক্ষিত। জীবদ্দশায় তিনি নিজেও সবসময় নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করতেন। যারা সত্যকে উপেক্ষা করেন তাদের জানা উচিত ইতিহাস বড়ো নির্মম। মিথ্যার বেসাতি ইতিহাসের নির্মম কালের কল্লোলে বেশিদিন ফেরি করা যায় না। কালের অমোঘ নিয়মে প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠা পায়। তাজউদ্দিন হচ্ছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সে অমোঘ সত্য। যাকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস হয় না। তাই তাজউদ্দীন আহমদের নামে রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপুর্ণ কিছুর নামকরণ ইতিহাসে রক্তের ঋণ পরিশোধের প্রয়াস মাত্র।
অসম্পূর্ণ ইতিহাস চর্চা ও গেলানোর দায় সংশ্লিষ্টরা অস্বীকার করে পার পেতে পারেন না। কেননা একজন অসামান্য রাষ্ট্রনায়ক তাজউদ্দিন আহমদকে অধ্যয়ন ও উপলব্ধির মধ্য দিয়েই সুশাসন, সমৃদ্ধ আর্থ-সামাজিক ভীত ও সংকটময় রাজনীতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। তথাকথিত রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের দোর্দন্ড প্রতাপ ও অপরাজনীতির ঘোর অমানিশায় তাঁর জীবন অধ্যয়ন হোক নতুন প্রজন্মের কাছে উজ্বল আলোকবর্তিকাসম।
জেল হত্যা দিবসে শহীদ জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য