আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

প্রশ্নফাঁস: নৈতিকতার জনহত্যা

মাসকাওয়াথ আহসান  

অনেক খোঁজখবর নিয়ে পৃথিবীতে আর একটি দেশ খুঁজে পাওয়া গেলো না যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। তার মানে বিশ্বব্যাপী নৈতিকতার যত রকম বিপর্যয়ই ঘটে থাকুক না কেন; অন্তত একটি শিশুর পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়া যে সম্ভব না; এই জায়গায় স্থির রয়েছে গোটা পৃথিবী। অর্থাৎ কোন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার যত কম বা বেশি হোক; গড় উপার্জন যত কম বা বেশি হোক না কেন শিশুদের পরীক্ষায় নৈতিকতা বজায় রাখার লক্ষ্যে সবাই চিন্তা ও চর্চার একই জায়গায় রয়েছে।

শুধু এই সভ্যতার মৌল উপাদান নৈতিকতার ন্যুনতম মান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। পঞ্চম শ্রেণির একজন ছাত্রের পক্ষে নিজে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন জোগাড় করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে অভিভাবক। সবাই নয়। কিন্তু এমন সংখ্যক অভিভাবক রয়েছেন যাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন ফাঁসের জোগান সৃষ্টি হয়েছে। যে সমাজে অভিভাবক চান তার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া শিশুটি ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষার হলে যাবার আগেই পরীক্ষায় কী আসবে জেনে প্রস্তুতি নিয়ে ভালো ফলাফল করুক। এই যে নৈতিকতার ধস; তা বাংলাদেশ সমাজের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জের জায়গা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সৎ নেতাদের একজন হিসেবে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। শেখ হাসিনা এই ব্যক্তিগত সততায় সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন কী; যেখানে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমাজ ও শিক্ষা এইভাবে নৈতিকতার ধস সাধন করলো। উনি উনার সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলেছেন; কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি অভিভাবক সন্তানকে সুশিক্ষিত করার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার মানের প্রশ্নে যাচ্ছি না। কেবল পঞ্চম, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র যেভাবে ফাঁস হয়েছে গত আটবছরে; সেখানে গভীর অনুতাপ কাজ করার কথা শেখ হাসিনার মাঝে। কারণ প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা বিধান সমাজ ও রাষ্ট্রের নৈতিক বিপর্যয় ঠেকানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা ও নৈতিকতা বিপর্যয়ের দায় কি কোনভাবেই এড়াতে পারবেন?

বাংলাদেশে যারা দেশপ্রেম ও ধর্ম বিষয়ে নিয়মিত পেশি ও নসিহত প্রদর্শন করেন; এদের সন্তানেরা পড়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও মাদ্রাসায়। ফলে সাধারণ শিক্ষার বিপর্যয় তাদের স্পর্শ করে না। তাই সারাদিন জাতীয়তাবাদ আর ধর্মের আফিম খেয়ে বেশ রঙ ঢঙ্গে জীবন কেটে যাচ্ছে তাদের। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ শিশু যে বাংলা মাধ্যমে পড়ছে; তাদের অভিভাবকেরা বিপদাপন্ন। তারা বাচ্চাকে মাদ্রাসা বা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পাঠানোর জন্য মানসিক বা আর্থিকভাবে রাজি নন।

যেসব লোক টেলিভিশনে বা ফেসবুকে কেঁপে কেঁপে একুশের চেতনা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ফতোয়া দেন; তাদের ছেলে-মেয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে; যেসব লোক কেঁপে কেঁপে ইসলামের চেতনা ও হারাম-হালালের চেতনার ফতোয়া দেন; তাদের ছেলেমেয়ে মাদ্রাসায় আবার ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। ফলে তাদের দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন। বাংলা মাধ্যমের সাধারণ শিক্ষার অভিভাবকদের প্রতি সমানুভূতি প্রদর্শনের প্রয়োজন নেই তাদের।

অথচ নীতি নির্ধারকদের কাছাকাছি বসবাস করে এই দেশপ্রেম সমাজ ও ধর্মসমাজ। ফলে তাদের সমস্যা "একটি রেস্টুরেন্টে রোবটকে ওড়না কেন পরানো হলো" মতান্তরে "হিজাব পরানো হলো না কেন" এরকম ফাঁপা বিষয়। দেশপ্রেম সমাজ মনে করে, তাদের ছেলেমেয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে দেশটাকে ঠাম্মার জমিদারি ভেবে চালাবে। সুতরাং কিছুই না জেনে পাশ করারা প্রজা হবে তাদের। আর ধর্ম সমাজ স্বপ্ন দেখে তারা শরিয়াহ আইন এনে বাংলা মাধ্যমের প্রজাদের শাসন করবে।

দেশপ্রেম সমাজ বনাম ধর্ম সমাজের ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রতিদিন অপ্রাসঙ্গিক; পরাবাস্তব; ভাবের জগতের কথা-বার্তা নিয়ে কত উত্তপ্ত বাদানুবাদ কত গালাগালের খই। সেই খানে অনন্যোপায় বাংলা মাধ্যম সমাজ; যাদের চর্চায় বেঁচে আছে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি; যাদের স্বপ্নের একমাত্র বসতভিটা বাংলাদেশ; পশ্চিমে বা মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমানোর বিকল্প নেই; বাংলাদেশ যাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; তাদের শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এসে কুৎসিত বাস্তবতার মুখোমুখি হলো; এ যে নৈতিকতার জনহত্যা; তা নিয়ে উপায়হীন অভিভাবকেরা বেদনায় লীন।

উন্নয়নের রাসউৎসবে একটি সম্ভাবনাময় ও সম্পন্ন জাতির নৈতিকতা হত্যার খবরটি আর কোন আলোড়ন তোলে না।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ