প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ০৬ মার্চ, ২০১৮
আপনি সংস্কৃতিমনা। স্বাভাবিক ভাবে ফাল্গুনের বাউলা বাতাস আপনাকে নাড়া দেয়। এর প্রমাণ আপনি বহুবার দিয়েছেন। কিন্তু ফাল্গুনের এই সময়ে আমাদের মতো আপনিও উৎকণ্ঠিত অধ্যাপক জাফর ইকবালকে নিয়ে। আপনি অকল্পনীয় দ্রুততায়, দায়িত্বে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আপনার জন্য ভালবাসা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটা বক্তব্যের কারণে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলের সভানেত্রী এবং শেখ হাসিনা হিসাবে। অনলাইন পোর্টালে পড়লাম খবরটা। এরা অনেক সময় মনগড়া কথা, বাড়িয়েও লিখে। প্রধান মন্ত্রী গোপনে বিশ লাখ মাকে মোবাইল দিয়েছেন বলে জানিয়েছ। তারসাথে বলেছেন- জানিয়ে দিলে “সবাই চাইতো”। আমিও শত ভাগ একমত এ বিষয়ে। আমার আশে পাশের সবাই একমত। বঙ্গবন্ধু কন্যা ভাবুনতো একবার আমরা কত নিচে নেমে গেছি!! আমরা কি এমন আত্মসম্মানহীন, নিচু, মানসিকতার ছিলাম? আমরা বাঙালিরা? আমরা কত ছোটলোক হয়ে গেছি। আহারে! আমরা এমন ছিলাম না। গত ৪০/৪২ বছর যাবত হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আমাদের এমন করা হয়েছে। আমরা যারা শিক্ষিত তারা আত্মসম্মানহীন । আমরা ধর্মভীরু অথচ কি অবলীলায় ধর্মের বিপরীত দিকে চলছি। সাদামাটা উদাহরণ দেই- অতি বড় ধার্মিকরেও অকাতরে ঘুষ খেতে দেখছি। আমার জানা মতে তিনি তাহাজ্জুদও পড়তেন। ঘুষকে তিনি পাওনা মনে করতেন। আওয়ামী লীগ নেত্রী, আপনি যাচাই করে দেখতে পারেন বেশীর ভাগ ঘুষখোরই ঘুষকে তার ন্যায্য পাওনা মনে করে। ন্যায্য পাওনা!! আমরা যারা ঘুষ দিতে বাধ্য হই আমরা ঘুষ দেওয়াকে ন্যায্য মনে করি। বাড়াবাড়ি না হলে, খারাপ ব্যাবহার না করলে কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়ে আমাদের ভাবনা নাই। এটা ন্যায্য।
আমরা এমন ছিলাম না, আমাদের এমন বানানো হয়েছে। প্রত্যেকটা ভূমীরই আলাদা দর্শন আছে। শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগের পরেও আমরা পুরাপুরি পচে যায়নি এই মাটির কারণে। কিন্তু আমরা পুরোপুরি বিভ্রান্ত। আমরা সাদা-কালো-লাল-নীল-হলুদ কোন রং আলাদা করে চিনতে পারি না। সবই আমাদের কাছে এক রঙ। কখনও কখনও নিজের অজান্তে নিজ মত রঙের নাম দেই। অন্যায় আর কর্ম নাই অন্যায় অনেক ক্ষেত্রে দর্শন এখন। যেমন দর্শন জঙ্গিবাদ। অস্ত্র দিয়ে, আইন দিয়ে দর্শন নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিন্তু বিলীন করা যায় না। দর্শনের বিপরীতে দরকার পাল্টা দর্শন বা মানসিক অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা। আমাদের উন্নয়ন পূর্ণাঙ্গ হবে যখন আর প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে না – জানিয়ে দিলে সবাই চাইতো।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। একাডেমিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে তারা আমাদের বায়োবট বানিয়ে ফেলেছে। আমরা আর মানুষ নাই। আমাদের দোষ দেওয়া যেতেই পারে কিন্তু সফটওয়্যার ইন্সটলের মাধ্যমে আমরা নিয়ন্ত্রিত। আমরা মানবিক শরীর নিয়ে সফটওয়্যারে চলা বায়োবট। বাঙালির গৌরব পদ্মা সেতু, ছবির মতো সুন্দর হাইওয়ে, রঙিন সুন্দর সরকারী স্কুল এসব দেখে সফটওয়্যার এ করা প্রোগ্রাম পরিবর্তন হয় না। হওয়া সম্ভব না। ঐ সফটওয়ারকে মুছে আমাদের বাঙালির সফটওয়ার ইন্সটল করতে হবে। আমি কয়দিন আগেও এক গ্রামের একটা বাচ্চাকে দেখেছি আরেকটা বাচ্চাকে হিন্দু বলে গালি দিতে। কি ভয়ংকর অবস্থা। দুইটার বয়সই ৭/৮ এর বেশি হবে না। এরাতো রাজনীতি বুঝে না। তাহলে? এদের জন্মের আগেই প্রচলন করে রেখেছে ঘৃণা, মৌলবাদ, লোভ। বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ঘর সবাইতো আমরা বায়োবট। কুশিক্ষায় শিক্ষিত করে, বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে আমাদের বায়োবট বানিয়েছে শত্রুরা। বঙ্গবন্ধুকে খুনের সফলতা পুরো পাওয়ার জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ।
চরাঞ্চলের এক রিকশাওয়ালার সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি সহজ ভাষায় জানালেন আগে “কোরবাইন্না” মাংস (কোরবানি) আর জেয়াফত ছাড়া গরুর মাংস খেতে পারতেন না। এখন ৪৭৫ টাকা কেজি হওয়ার পরও মাসে একবার হইলেও গরুর মাংস খেতে পারেন। রাস্তা ঘাট ভালো আগের চেয়ে। সরকারি চুরি টুরি কথা বললেন না। আমি বললাম তাইলে সরকার ভালোই করছে। নাকি? তিনি সাথে সাথেই উত্তর দিলেন উন্নয়ন করলে কি হবে দেশেতো গণতন্ত্র নাই। প্রচার কোথায় চলে গেছে! কি পরিমাণ প্রচার চালাচ্ছে দেশের শত্রুরা!!! চারদিকে আওয়ামী লীগের কোটি কোটি পোস্টার । কিন্তু রেজাল্ট শূন্য। অন্যদিকে বিএনপি-জামাত, বিদেশী শত্রুদের লিফলেটেও চোখে পড়ে না কিন্তু তারা কৌশলে নীরবে এখনও কতটা সক্রিয়, সফল তার উদাহরণ এই রিকশাওয়ালা।
কী অবিশ্বাস্য ভাবে আমাদের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করছে চিহ্নিত শত্রুরা। করবেই তো। কত বছর ধরে , কত দেশি বিদেশি মিলে, কত রঙের টাকা, রিয়াল, দিরহাম, ডলার খরচ করা হয়েছে আমাদের পিছে? কিন্তু বর্তমানে তার বিপরীতে আমরা……। অথচ সময় সর্বোচ্চ অনুকূলে। এখন কিছু ওয়াজের শুরুতে দেশ প্রেমের কথা বলা হয়, জঙ্গি বিরোধী কথাও বলা হয় কিন্তু তারপর পরই শুরু হয় আগে ইন্সটল করা বক্তব্য। এ হুজুরকে এই ভাবেই তৈরি করা হয়েছে। সে হয়ত নিজেও জানে না সে কি বলছে। হুজুরে হেলিকপ্টারে গিয়ে রোস্ট পোলাও খেয়ে নবীজী (সা:) কি ভাবে না খেয়ে, কত সংযমী ছিলেন, মানুষকে সে পথের ডাক দিয়ে সর্বোচ্চ দামী দামী খাবার খেয়ে হুজুরে আবার ফিরে যায়। মানুষও হুজুরের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে, পবিত্র ভাব নিয়ে বাড়ী ফিরে। এদের মনে প্রশ্ন জাগে না – বেহেশতের যে পথ হুজুর দেখাচ্ছে হুজুরে সম্পূর্ণ তার বিপরীত পথে নিজে চলছে কেন? সফটওয়্যারে এমন প্রশ্নের অপশন নাই। এক একজন হুজুরের কথা শুনলে মনে হয় তারা আন্তর্জাতিক মানের রাজনীতি বিশ্লেষক। এরপর ওয়াজে শুরু হয় নারী বিদ্বেষী কথাবার্তা। কি ভাবে নারীকে রাখতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পীকার নারী, বিরোধী দলীয় নেতাও নারী । তারা নারী শোষণের কথা বলে যেমনি সমাজে অনাচার পাকাপোক্ত করছে তেমনি কৌশলে মানুষের ভিতর ঢুকিয়ে দিচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন বিরোধিতা। এ ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষিত মানুষও পিছিয়ে নেই। যত জঙ্গি মারা গেল, ধরা পড়লো তাদের বড় অংশই উচ্চ শিক্ষিত। কেউ কেউ আবার ইংরেজি মাধ্যমেও শিক্ষিত। জঙ্গিবাদের সাথে প্রান্তিক মানুষের সংশ্লিষ্টতা কম। কয়েক জন কৃষক জঙ্গি ধরা পড়ছে? কয়জন রিকশাওয়ালা জঙ্গি ধরা পড়ছে/ নিহত হইছে? কিন্তু তারা ধর্মীয় কারণে নিজের বিরোধিতা করেও জামাত-বিএনপি জঙ্গিবাদকে কিছুটা সমর্থন করে। ধৃত জঙ্গিদের খবর টিভি, পত্রিকা পড়ে তো মনে হলো সবই শিক্ষিত শ্রেণী। সে সাধারণ শিক্ষার হোক, মাদ্রাসা শিক্ষার হোক অথবা ইংলিশ মিডিয়ামেরই হোক।
আমাদের প্রাথমিক লেভেল থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের দরকার। তার সাথে তরুণ, মধ্যবয়স্কদের ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য তড়িৎ প্রক্রিয়া দরকার। বাবা-মা যখন চোখের সামনে ন্যায্য মনে করে অসততা করে তখন সন্তান শুদ্ধ হওয়া সম্ভব না।
প্রয়োজনে মিথ্যা বলা ফরজ – মওদুদীর এই বাণীতে আমাদের হুজুরেরা, আলেমেরা পতিত। তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা কম দিয়ে ধর্মকে ব্যাবহার করে রাজনৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। শুধু মাত্র আওয়ামী বিরোধিতার জন্য, স্বাধীনতার বিরোধিতার জন্য তারা অকাতরে মিথ্যা বলে।
- শেখ মুজিব নাস্তিক। ইসলামের শত্রু।
- শেখ মুজিব ইসলামি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা। গোলাম আযম সৌদি সরকারের কাছে তদবির করে বাঙালিদের হজ বন্ধ করে দিছিল। শেখ মুজিব দেন দরবার করে সেই নিষেধ তুলছে। আচ্ছা জিয়া কেমন? জিয়া বাংলাদেশে মদ ও পতিতা পল্লীর লাইসেন্স দিছে।
- এগুলা বানোয়াট কথা ।
এখনও এমনই চলছে। ব্যবস্থা না নিলে পুরনো শকুনেরা আবারও আকাশের দখল নিতে পারে। আর বর্তমান উন্নয়নে আরাম আসলেও শান্তি আসবে না।
প্রধানমন্ত্রী আজ একজন তো কাল আরেকজন। কিন্তু জাতির জনকের রক্ত আপনার শরীরে। আপনি প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও বাঙালির কাছে “শেখ হাসিনা” হিসাবে থাকবেন অনন্তকাল দেশ প্রেমিক এবং দেশ বিরোধী উভয়ের কাছে। তাই দাবীটা আপনার কাছেই। আমাদের আত্মিক শিক্ষার দরকার। আমাদের আর্থিক উন্নয়ন হলেও আত্মিক উন্নতির কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
আপনি আইন করেছেন “বাবা-মার ভর পোষণ না করলে জেল”। অথচ আগে অপরিচিত কারো বাবা-মাকেও পরম যত্নে রেখেছে বাঙালি। অচেনাকে, দরিদ্র পরিবারকে ঘর করার জায়গা দিয়েছে। বাঙালি এমনই । আজ আমরা আগের চেয়ে অনেক ধনী কিন্তু নিজের বাবা-মারও যত্ন নেই না। বায়োবট জীবন থেকে আমাদের বাঁচিয়ে আমাদের পুরনো বাঙালিত্বের বাংলাদেশ তৈরি করে দিন। সেখানেই শান্তি। সেখানেই আমরা। বঙ্গবন্ধুও তাই চেয়ে ছিলেন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য