আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

তাদের পা কোন মাথার নিয়ন্ত্রণে?

জহিরুল হক বাপি  

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উড়লো। রকেটের নাম ফ্যালকন-৯। একটি সেতু, একটি স্যাটেলাইট, একটি স্থাপনা, রাস্তা, বনানী একটি জাতির সম্পদ। এগুলো কোন রাজনৈতিক দলের মালিকানায় না। দেশের সম্পদ। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তার সমর্থক, বিরোধী পক্ষসহ দেশের সব মানুষ এর ফল ভোগ করে। দেশের সম্পদ বাড়লে, দেশ সম্মানের অধিকারী হলে দল মত সবাই খুশি হয়।যে সরকার যত বেশি দেশ বান্ধব, জন বান্ধব, মেধাবী সেই সরকারের আমলে দেশের সম্পদ তত বেশি বৃদ্ধি পায় স্বাভাবিক ভাবে। দেশের মানুষ খুশী হয়। কিন্তু...

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে বিরোধিতা চলছে। কারো কারো ভাব দেখে মনে হচ্ছে পারলে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে স্যাটেলাইট নামিয়ে ফেলে। কেন? স্যাটেলাইটের সাথে শত্রুতাটা কোথায়? এটার মালিক শেখ হাসিনা? এটার মালিক আওয়ামী লীগ? অন্য কোন দল ক্ষমতায় এলে তখনও এ স্যাটেলাইট থাকবে দেশের সম্পদ হয়ে। তাহলে নিজ সম্পদ বৃদ্ধিতে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে এরা কারা?! এখানে একটা স্ববিরোধিতাও আছে। তারেক জিয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল। এক দল বলা শুরু করছে উপগ্রহ জিয়ার স্বপ্ন। যদিও বঙ্গবন্ধুই ভূ-উপগ্রহ স্থাপন করে গেছেন।

যাই হোক ঐ দল আবার বলছে বাংলাদেশের জন্য স্যাটেলাইট বিলাসিতা- বাজে খরচ ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের মনে একবারও প্রশ্ন জিয়া কেন ৮০ সালে এই বাজে খরচের স্বপ্ন দেখা শুরু করলো? তারেক জিয়ার বক্তব্য নিয়েও অনেক সাধারণ প্রশ্ন আছে। সেগুলাও তাদের চোখে পড়ে না। জার্মান স্যাটেলাইট নির্মাতা দেশ নয়। স্যাটেলাইট বানায় মাত্র দশটি দেশ। কিন্তু জিয়াউর রহমান ৮০ সালেই কি করে জার্মানিতে স্যাটেলাইট বিষয়ে মিটিং করে। তখন জার্মানি বলে কোন দেশ ছিল না। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি বলে আলাদা আলাদা দুইটি দেশ ছিল। আর স্যাটেলাইটের যে ছবির কথা তারেক জিয়া বলছে সত্যিই যদি এমন কিছু ঘটত তবে ঐ ছবি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় থাকতো, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয় হিসাবে। কিন্তু তা না করে জিয়াউর রহমান হেলাফেলায় ছবিটি ফেলে রেখেছে। কত বড় দায়িত্বজ্ঞানহীন!!

বিরোধিতা শুধু স্যাটেলাইট নিয়ে নয় সকল উন্নয়নে এদের জ্বলুনি পুড়ুনি। পারলে পেট্রোল বোমা মেরে পদ্মা সেতু উড়িয়ে দেয়। কেন এই মনোভাব? এরা সবাই রাজাকার? এরা সবাই পাকিপ্রেমি? এরা সবাই চিঙ্কু? আমার তা মনে হয় না। নিজ রাজনৈতিক দলের প্রতি এদের এমন অন্ধ মোহ যে পারলে আওয়ামী লীগের ক্ষতি করার জন্য নিজেরে নিজে শহীদ করে ফেলে। দেশে বিরোধিতা তো কোন বিষয়ই না। আওয়ামী লীগের পাখায় না হয়ে যদি বিএনপির পাখায় উড়তো তবে এরা আনন্দিত হতো। তাহলে সমস্যা কই? সমস্যা মগজে। জেনেটিকাল নয়, ইনজেক্ট। এরা বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় আনতে নিজেকে পর্যন্ত অস্বীকার করে চলছে। আরেক গ্রুপ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারলে রেড আর্মি ডেকে আনে। এরা কেন এমন। স্রেফ অপপ্রচার ও তার ভয়ংকর প্রসার।

দুইটা ঘটনা উল্লেখ করি:
একেবারে গ্রামের এক বৃদ্ধের সাথে কথা বলছিলাম। একেবারেই সাদামাটা গেরস্থ। তিনি কথায় কথায় জানালেন আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরোধী। আমি শুনলাম। তিনি কথা প্রসঙ্গে আরও বললেন আগে বিদ্যুৎ থাকতোই না। এখন দিনে ৩/৪ ঘণ্টা থাকে না। আশা করছেন শীঘ্রই এ সমস্যাও থাকবে না। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম মসজিদে বিদ্যুৎ থাকে? তিনি বললেন যখন থাকে না তখন কোথাও থাকে না। বিদ্যুৎ যাওয়ার ধরাবাঁধা সময় নাই। তবে নামাজের সময়টাতে কম যায়। বিশেষ করে মাগরিব আর ফজর। এশার নামাজের আধ ঘণ্টা আগে হয়তো কখনও কখনও যায়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম মসজিদের অবস্থা কী? বললেন ভালো। পাকা হচ্ছে। সরকারি কিসব সাহায্যের কথা বললেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম সরকার যদি ইসলামের শত্রুই হয় তবে তো নামাজের টাইমেই বেছে বেছে বিদ্যুৎ যেত। সরকার মসজিদে সাহায্যের বদলে ভেঙে দিত। তাই না?! মুরুব্বী আমার দিকে কিছুক্ষণ বেভুইল্লার মতো তাকিয়ে ছিলেন। আমি এ অবস্থায় আবার জিজ্ঞেস করলাম সরকার এ এলাকায় কয়টা মসজিদ ভাঙছে? তিনি বললেন অনেক মসজিদ পাকা হচ্ছে। মানুষজনও সাহায্য করছে। তিনি জানালেন তাদের মসজিদে তিনিও চার হাজার টাকা দিয়েছেন। তার ছেলে মিডল-ইস্ট থেকে পাঠিয়েছে। এ সূত্রে আরও আলাপ চলল। জানালেন ভালো আছেন। ৩/৪ বছর আগেও ভর পেট খেতে পারতেন না। এখন মোটামুটি চিকিৎসাও ভালো পাচ্ছেন, তবে পর্যাপ্ত না। তার বাড়ির রাস্তা যে তার জীবদ্দশায় পাকা হবে তিনি কখনও ভাবেনও নি। একেবারেই চর। তার বাড়িও দুই তিন বছরের মধ্যে পাকা করার আশা রাখেন। আজ মুরগী রেঁধেছেন। আমাকে খেতে যেতে বললেন তার সাথে, খুব আন্তরিকভাবে। আমি তাকে বললাম আপনার এ ভালো থাকাতো এই সরকারের আমলেই। তাইলে এই সরকারে আপনার সমস্যা কী? তিনি এবার উত্তর দিলেন – এ উন্নতি সময়ের সাথে। আমি তাকে আবার বললাম যদি সময়ের সাথেই হয় তাইলে আপনার কথা অনুযায়ী বিশ বছরের উন্নতি ৪ বছরে হয় কিভাবে? আপনি নিজেই তো বললেন আপনার বাড়ির রাস্তা আপনার জীবদ্দশায় দেখবেন এটা কল্পনাও করেন নাই? নাকি এখনও মনে করেন সরকার নাস্তিক, ইসলাম বিরোধী। তিনি উত্তর দিলেন ভাইরে আমরা এত বুঝি না। যে যা কয় শুনি। মসজিদের বিষয়টা আপনি ঠিক বলছেন মনে হয়। ভালো আছি স্বীকার না করলে আল্লাহ বেজার হবে।

এরপর তিনি সম্ভবত কথা খুঁজে পাচ্ছিলেন না অথবা ঐ যে আগে বলেছি নিজেকে অস্বীকার করার যুদ্ধ করছেন মনে মনে। আমি আবার বললাম ধরেন সময়ের কারণেই হইছে কিন্তু এ সরকারের আমলেই হইছে। এ সরকারের আমলে আপনি ভালো আছেন, মসজিদের জন্য চাইর হাজার টাকা দিতে পারছেন, এ সরকার আপনার জন্য লক্ষ্মী। লক্ষ্মীরে পায়ে ঠেলতে চান কেন? তিনি চুপ থাকেন। আমিও। লক্ষণীয় বিষয় এ মানুষটির মাথায় মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে “ সরকারের কৃতিত্ব নাই। "সময়ের ফল”। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কি বিপুল সফলতা বিএনপি-জামায়াতের।

সরকারি দলের রাজনৈতিক সংগঠনের কোটি কোটি পোস্টার। তারা এ পর্যন্ত কয় পিস আদম সন্তানকে সত্যিকারের দেশপ্রেম শিখাতে পেরেছে, কত জনকে মোটিভেট করতে পেরেছে রাজনৈতিক আচার ও দর্শন দিয়ে। উত্তর সারা বাংলাদেশ খুঁজে একজনও না। এখনও গ্রামে গ্রামে কোরান হাতে ছাত্রীসংস্থা-মহিলা সংস্থা বাড়ি বাড়ি ঘুরে।

মাহাথির মোহাম্মদকে নিয়ে অনেকের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। কারো কারো ভাব দেখে মনে হচ্ছে মাহাথির মোহাম্মদের ক্ষমতায়নের পিছে তার হাত আছে। কারো কারো ভাব দেখে মনে হচ্ছে পারলে মাহাথিরের দেশেই সেটেল করতো মাহাথির মোহাম্মাদের শাসনে থাকার জন্য। উন্নয়ন আর উন্নয়ন।

কিন্তু নিজের দেশের উন্নয়নে এদের চরম জ্বলুনি-পুড়ুনি শুরু হয়। পদ্মা সেতু হলে ইলিশ কমবে এরা ফতোয়া দেয়, মেট্রোরেল হলে ঢাবি বিজ্ঞান ল্যাবের কাজ যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে এরা আবিস্কার করে, রামপাল বিদ্যুৎ হলে সুন্দরবন উজাড়ের দোহাইয়ে তা ঠেকাতে চায়। অদ্ভুত এরা নাক বোচা গাড়োয়ানের ঘোড়ায় টানা রেল গাড়িতে চড়ে এরা কই যেতে চায়? গন্তব্য কি?!

সদ্য বাংলাদেশের স্যাটেলাইট নিয়ে তারা বিভিন্ন তত্ব ছাড়ছে। কলিজা পোড়া গন্ধে বাংলার আকাশ বাতাস পোড়াগন্ধ যুক্ত। এদের শত্রু আওয়ামী লীগ- এদের শত্রু শেখ হাসিনা।

এরা কি সবাই দেশের শত্রু? আমার তা মনে হয় না। এরা আসলে নিজের শত্রু। মানুষ কোন রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করে তার সার্বিক সুবিধা অসুবিধা প্রাপ্তি নিয়ে। কিন্তু তারা নিজের দলকে ক্ষমতায় আনতে দেশের বারোটা বাজিয়ে, নিজের ক্ষতি করতেই এক পায়ে খাড়া। তাদের পা কোন মাথার নিয়ন্ত্রণে?

জহিরুল হক বাপি, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ