আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

ক্ষমতার রাজনীতির ধর্ম ও নরভোজের নেশা

মাসকাওয়াথ আহসান  

সভ্য সমাজ বলতে আমরা সে সমাজকে বুঝি; যেখানে আইনের শাসন আছে, জননিরাপত্তা আছে; রাষ্ট্রের মাঝে জনগণের কল্যাণ সাধনের আগ্রহ আছে; সমাজ মননে সব মানুষকে সমান ভাবার সাম্যচিন্তার চর্চা আছে। সামাজিক গণতন্ত্রে আগ্রহী এ দেশগুলোতে মানুষের ধর্ম পালনের অধিকার আর আছে; আবার ধর্ম পালন না করা মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে। কারণ ধর্ম মানেই মানুষের সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার সরাসরি সম্পর্ক। এখানে সমাজ ও রাষ্ট্রের নাক গলানোর সুযোগ নেই। ধর্মও সমাজ-রাষ্ট্রে নাক গলাতে যায় না।

জার্মানি-ফ্রান্স-নেদারল্যান্ডস-সুইডেন-নরওয়ে-ফিনল্যান্ড-ক্যানাডা থেকে জাপান-অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা এই দেশগুলো কেন সভ্য দেশ সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে আমরা বেশ কিছু আগ্রহোদ্দীপক উত্তর পাই। এসব দেশে যথেষ্ট সংখ্যক ধার্মিক মানুষ রয়েছেন। তারা চার্চে যান; ধর্মীয় বিধান অনুসারে সিয়াম সাধনা করেন। কিন্তু সেই ধর্ম-চর্চা প্রদর্শনের জন্য সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় পুলিশি সেখানে নেই। খৃস্ট ধর্মের মানুষের রোজা বা উপোষ চর্চার জন্য ঐ দেশগুলোর খাবারের দোকান বন্ধ করে দিতে হয়না। কিংবা কালো কাপড় বা ছালা টাঙিয়ে খাবার লুকিয়ে খেতে হয় না। মাইকিং করে লোকজনকে ধমক বা ফতোয়াও দিতে হয় না খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকার। অথচ সৃষ্টিকর্তা তাদের কত সুখে রেখেছেন; সেখানে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা-ক্যাডার, পুলিশ-এলিট ফোর্স কত সভ্য। অসহনীয় ট্রাফিক জ্যাম নেই; সামাজিক বিকৃতি নেই; সম্পদ প্রদর্শনের গ্রাম্যতা নেই।

অথচ সৌদি-আরব থেকে পাকিস্তান-বাংলাদেশ এর মতো মুসলিম দেশগুলোতে কী নির্মম আদিমতা সমাজ ও রাষ্ট্রের অতি ধর্ম চর্চায়। রোজার মাসে সে কী কড়াকড়ি; ধর্ম পালনের কত জন্য কত জোরাজুরি; অথচ দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সেকী হুড়াহুড়ি। আবার সভ্য সমাজগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে কী অখাদ্য-অসভ্য এই দেশগুলোর বর্বর সমাজ ও রাষ্ট্রপ্রথা। সভ্য সমাজগুলোতে মদ ও মাদকের পরিমিত ব্যবহার রয়েছে। ১৮ বছর বয়স হবার পর তারুণ্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যপ্রদ মদ ও রিক্রিয়েশনাল ড্রাগস গ্রহণ করে; অসভ্য সমাজের বজ্র আঁটুনি-ফস্কা গেরোর কলতলায় লুকিয়ে ফেনসিডিল বা ইয়াবার মত গোবর খেয়ে স্বাস্থ্যহানি ঘটায় না। অসভ্য সমাজ ও দেশগুলোর তারুণ্যের জীবনের অপচয় দেখলে গভীর বেদনা জাগে।

যুগের পর যুগ কিছু আদিম চিন্তার নীতি নির্ধারকের ফাঁদে পড়ে কত সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটে এখানে। সভ্য সমাজগুলোতে তরুণদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকার প্রতিষ্ঠিত। অথচ অসভ্য সমাজগুলোতে না আছে শিক্ষার সুযোগ; না আছে কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থা। ফলে সভ্য সমাজের তরুণ যখন পড়াশুনা বা কাজের ক্লান্তি জুড়াতে স্বাস্থ্যপ্রদ বিয়ার পান করে; বা ডাক্তারদের অনুমোদিত রিক্রিয়েশনাল ড্রাগস নেয়; অসভ্য সমাজের তরুণ তখন দুর্বল শিক্ষকদের চাপিয়ে দেয়া শিক্ষার বোঝা পিঠে নিয়ে; দুর্বল নীতি নির্ধারকদের সৃষ্ট কর্মসংস্থানহীন বা স্বজনপ্রীতির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের কুরুক্ষেত্রে হতাশ হয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে ফেনসিডিল-ইয়াবা বা সীসা টেনে বেড়ায়। যে পান আনন্দের হবার কথা তা বেদনার বিষময় পরিণতির হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সভ্য দেশগুলোর নীতি নির্ধারকরা একটা আনন্দময় জীবন ধারার মাঝে বড় হন। ফলে তারুণ্যবান্ধব সমাজ বিনির্মাণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু অসভ্য সমাজে দুঃখের নদী সাঁতার দিয়ে দৈবচয়নে যারা নীতিনির্ধারক হয়; এদের তারুণ্য নানাকারণে বঞ্চনা ম্লান। ফলে এর-ওর গদিতে আগুন জ্বালিয়ে চর দখলের লড়াই করে যে ক্ষুধার্ত মানুষেরা রাজনীতিতে আসে; বা খেয়ে না খেয়ে বিসিএস গাইড মুখস্থ করে নীতি নির্ধারক হয়; এদের সোনালী শৈশব-কৈশোর-তারুণ্য না থাকায় আগামির তরুণের জন্য আনন্দময় তারুণ্য নির্মাণের সক্ষমতা থাকে না। আল্লাহ আল্লাহ করা আর অস্ত্রের ভয় দেখানো ছাড়া তারুণ্যকে গড়ার কোন পথ তাদের জানা নেই। নীতিনির্ধারকদের যাপিত জীবনের সাংস্কৃতিক দৈন্য তাই ফুটে ওঠে সমাজ ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থায়। সংশোধন নয়; হত্যাই এদের কাছে সব সমস্যার সমাধান।

এর চেয়ে অসভ্য সমাজ আর কোনটি যেখানে পবিত্র রোজার মাসে অসুস্থ-অন্যধর্মের মানুষের জন্য খাবার দোকান ভয় দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয় "গুনাহ" থেকে সমাজকে বাঁচাতে; আবার নীতিনির্ধারকরা সেহেরি করে ক্রসফায়ারে মৃত মানুষের মাংস দিয়ে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সে সোনালী ক্রসফায়ার উদযাপনে রোজদাররা বাহবা দেয়; ধর্ম ছাড়া আর কোন নেশা থাকতে পারে না। তারপরেও নেশা থেকে যায়; নীতিনির্ধারক হবার।

ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম শীর্ষ নেতার বিশাল গাড়ির পাশে সে নেশা রসগোল্লা আর নিমকির প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকে।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ