প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাহমুদুল হক মুন্সী | ১২ জুলাই, ২০১৮
তিনবছর আগে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ায় আত্মহত্যা করেছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে গিয়েছিলেন, লিখে গিয়েছিলেন তাঁর অপমানের ক্ষোভের কথা।
হয়তো ভেবেছিলেন তোলপাড় উঠবে, সচিবকে ন্যুনতম বদলি করা হবে। কিন্তু সেই মুক্তিযোদ্ধা বোঝেননি, যে দেশের জন্য তিনি জীবন হাতে নিয়েছিলেন, দেশকে জন্ম দিয়েছিলেন, সেই দেশে তিনি জীবন দিলেও তাঁর আত্মসম্মান এর কেয়ার কেউ করবে না। কারোর কিছু আসবে যাবে না।
মুক্তিযুদ্ধে সাড়ে সাত কোটির মধ্যে সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ যুদ্ধ করেছিলেন। আরও অসংখ্য বাঙালি সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু সবাই না। যারা এদেশের জন্মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, তাদের বংশধরেরা আজ মুক্তিযোদ্ধাদের গলাধাক্কা দেয়, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিলে অপমান করে।
আমরা দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগকে পেয়েছিলাম, সমর্থন দিয়েছিলাম। সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিলাম। শুধু এতটুকু ভেবে যে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করবে, আওয়ামী লীগের সংবিধানে লিখিত মূলমন্ত্রগুলির বিকাশ ঘটাবে।
প্রকৃতভাবে যখন ক্ষমতা হাতে পেয়ে আমাদের মূল্যবোধকে পায়ে পাড়িয়ে আওয়ামী লীগ চলে, তখন হিসাব মেলাতে কষ্ট হয়ে যায়। রাস্তায় নেমে কাদেরকে সমর্থন করেছি সেটা ভাবলে দুঃখ হয় যখন অন্যান্য মৌলবাদী ও ডানপন্থী ধারা সাথে কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনা।
বার বার যে অজুহাতটা দেয়া হয়, সেটা ক্ষমতার রাজনীতি। ক্ষমতার আমরাই তো হাতে তুলে দিয়েছি, আমাদের আদর্শিক স্বার্থ রক্ষার জন্যই। কিন্তু মুখে বা দলীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা ও প্র্যাকটিসে "আমি নিজেও মোসলমান" বলে গুপ্তহত্যার সমর্থন দেয়া কিংবা ধর্মীয় জঙ্গি নেতার সাথে প্রকাশ্য ও গোপন আপোষে যাওয়া ঠিক উলটো পরিচয় বহন করে।
রাজনীতিকরা দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। জঙ্গি নেতাদের কাছে দল বন্ধক দিয়ে নিজের ক্ষমতা নিশ্চিত করা কিংবা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া কে প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে প্রতিহত করার চেয়ে নিজের আদর্শিক চর্চার প্রতিপালন ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করাটা বেশি জরুরী।
একটা রাজনৈতিক দল আদর্শিক চর্চার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে ও সাসটেইন করে। কর্মীদের মধ্যে যখন আদর্শিক চর্চার চেয়ে ক্ষমতার স্বাদ-লোভ ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় থাকার অভ্যাস চলে আসে, তখন রাজনৈতিকভাবে একটি দল নিজের পরিচয় হারায়। অন্যান্য দলের উদাহরণ দিয়ে লাভ নেই। তারা একই কাজ করে বলে আপনিও যদি তাই-ই করেন তাহলে নৈর্ব্যক্তিকভাবে "বেটার ইভিল" বেছে নেয়ার প্রক্রিয়ায় আমি বিশ্বাসী হতে পারি না।
এভাবে হয়তো অশিক্ষিত মানুষকে প্রভাবিত করা যায়, কিন্তু আমরা তো অশিক্ষিত নই। অন্ধও নই। যখন আমি দেখবো বিএনপি-জামায়াত তাদের রাজনৈতিক চর্চা তাদের আদর্শিক অবস্থানে থেকেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছে, তখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দাবিদারদের কাছে আমি সেই আদর্শিক চর্চা ও প্রয়োগ দাবি করবো। যখন আমি সেটা দেখবো না, আমি প্রকাশ্যে মুখ খুলবো ও দরকার হইলে রাস্তায় গিয়ে বিপক্ষে দাঁড়াবো। দাঁড়িয়েছিও। গৃহপালিত কুকুর হওয়ার চেয়ে আমি মেরুদণ্ডসম্বলিত মানুষ হতেই বেশি পছন্দ করবো।
সেই আদর্শিক অবস্থানের জন্য আমি আমার জীবন পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত, কিন্তু সেই চর্চা করতে কি রাজনীতিবিদেরা প্রস্তুত?
পরিস্থিতি ভিন্ন কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষগুলির আদর্শিক অবস্থানকে দুমড়ে মুচড়ে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দলীয় কর্মীদের পকেটভারী করে, ভিন্নমতকে খুন করে, জঙ্গি নেতাদের উৎসাহ দিয়ে, আইনি প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে বিনা বিচারে খুনের সংস্কৃতি গড়ে ও সাধারণের বাক স্বাধীনতা হরণ করে হয়তো ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়, ইতিহাসে ঘৃণিত হিসেবে দাগ রয়ে যায়।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য