আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

নামকরণ ও স্থান নির্ধারণের আগেই কেন নেত্রকোনায় মেডিকেল কলেজের যাত্রা?

এখলাসুর রহমান  

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে মেডিকেল কলেজের দাবিতে হাওরপাড়ে মানববন্ধন হচ্ছে। ফুঁসে উঠছে সর্বস্তরের জনতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক তোলপাড় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি। কিছুদিন আগে নেত্রকোনায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত হল। তার নামকরণ করা হলো শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগও হয়ে গেছে । হয়তো অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগও শীঘ্রই হয়ে যাবে। সরকারি অর্থায়নে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ও মেডিকেল কলেজটি অনুমোদিত হওয়ায় নেত্রকোনার নেত্রকোনা সদর উপজেলা, মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুরী, বারহাট্টা, আটপাড়া, কলমাকান্দা, সুনামগঞ্জ জেলার ধরমপাশা প্রভৃতির জনসাধারণ খুবই উল্লসিত। শিক্ষাবিষয়ক এই বৃহৎ প্রাপ্তিটি শিক্ষামন্ত্রীর আগ্রহে নয় হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে।

সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে নেত্রকোনা জেলা সদরে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় বলা হয় যে, পিছিয়ে পড়া নেত্রকোনাকে এগিয়ে নিতে এমন দুটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রদান করায় জেলাবাসী আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবে। এ উপলক্ষে মোক্তারপাড়া মুক্তমঞ্চ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে সারা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করবে। পরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হবে।

এ সময় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জানান, ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের ইপিআই ভবনে প্রাথমিকভাবে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা হবে। এদিকে এ বছরই শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য কার্যক্রমও শুরু হবে।

একদিকে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় চলছে মোহনগঞ্জে মেডিকেল কলেজ চাই আন্দোলন অন্যদিকে নেত্রকোনা জেলা সদরে মেডিকেল কলেজের প্রাথমিক কার্যক্রম পরিচালনার সূচনা। এক্ষেত্রে মোহনগঞ্জের মানুষের আন্দোলনের কী ভবিষ্যৎ হতে পারে? ময়মনসিংহ জেলা সম্প্রতি বিভাগে উন্নীত হয়েছে। সেক্ষেত্রে মোহনগঞ্জ উপজেলার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে জেলায় উত্তীর্ণ হওয়ার। এলাকাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ব্রিটিশরাই এখানে রেললাইন স্থাপন করেছিল। সিলেট বিভাগের মানুষের অধিকাংশের চলাচল এই মোহনগঞ্জের উপর দিয়ে। তারা হাটবাজার করতেও মোহনগঞ্জে আসে। সিলেট বিভাগের ধরমপাশা, তাহিরপুর, মধ্যনগর, জগন্নাথগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের মানুষ মোহনগঞ্জে এসে ট্রেনে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। এছাড়াও মোহনগঞ্জ হতে ট্রেনে বাসে বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় যাতায়াত করা সম্ভব। সিলেটের সাথে রয়েছে সরাসরি লঞ্চ, ট্রলার ও বাস যোগাযোগের ব্যবস্থা। আরও রয়েছে মোহনগঞ্জ টু চট্টগ্রামের সরাসরি বাস চলাচলের ব্যবস্থা। কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার উপজেলা সদর হতে দূরে ভাগলপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় যদি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হতে পারে তবে সম্ভাব্য জেলা মোহনগঞ্জে কেন নয়? মিটামইন উপজেলায় ক্যান্টনমেন্ট স্থাপিত হচ্ছে কোন যোগাযোগ সুবিধার জন্য?

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। নেত্রকোনা জেলা সদর হতে মাত্র ৪০ মিনিটেই ময়মনসিংহ যাওয়া যায়। প্রয়োজনে নেত্রকোনা হতে ময়মনসিংহ হতে ক্লাস করে নেত্রকোনায় ফিরে আসা যাবে। এক্ষেত্রে সিলেট বিভাগের লোকদের মোহনগঞ্জ এসে রাত্রিযাপন করে ট্রেনে অথবা বাসে মোহনগঞ্জ হতে ময়মনসিংহ যেতে হবে। তাই সঙ্গত কারণেই মোহনগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপন যৌক্তিক নয় কি? নেত্রকোনা জেলা সদরে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে আগামী দিনের সম্ভাব্য জেলা মোহ গঞ্জে কি হতে পারেনা মেডিকেল কলেজটি? অনুমোদিত কলেজটির নামকরণ কী হচ্ছে সেটাই এখনও নির্ধারিত হয়নি সেক্ষেত্রে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু! নামকরণ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কি কোন প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করতে পারে?সোশ্যাল মিডিয়া সয়লাব মোহন গঞ্জে মেডিকেল কলেজের দাবীতে।

সোশ্যাল মিডিয়া ও মিডিয়ায় প্রচার হলো:

সম্মানিত সুধী,
মুক্তিযোদ্ধা জনতা সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে আগামীকাল ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১ঘটিকায় স্থানীয় শহীদ মিনারের সামনে মোহনগঞ্জ মেডিকেল কলেজের দাবিতে মানববন্ধন করা হবে। উক্ত মানববন্ধনে আপনি ও আপনাদের সংগঠনের ব্যানার নিয়ে যোগদিন সফল করুন।

মোহনগঞ্জে মেডিকেল কলেজের দাবিতে জনগণ ফুঁসে উঠছে । দেবাশীষ চক্রবর্তী নামের এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে এক খোলা চিঠিতে লিখেছেন:
বরাবর
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
বিষয়: হাওরবাসীর বহুল প্রত্যাশিত নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ মোহনগঞ্জ উপজেলায় স্থাপন প্রসঙ্গে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, দেশের দরিদ্র ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনি নেত্রকোনা জেলায় যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন তার জন্য আমরা নেত্রকোনার জনগণ আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। নেত্রকোনা জেলা যে দশটি উপজেলা নিয়ে গঠিত তার মধ্যে সাতটি উপজেলাই হাওর বিধৌত অঞ্চল।

হে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার,
ভৌগলিক অবস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মোহনগঞ্জ উপজেলাকে হাওর বাংলার রাজধানী বলা হয়। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, মধ্যনগর, তাহিরপুর সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার জনগণ শিক্ষা, চিকিৎসা ও রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগের জন্য মোহনগঞ্জ উপজেলার মধ্যে দিয়েই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। এ কারণে ব্রিটিশ আমল থেকেই মোহনগঞ্জ হয়ে উঠেছে ভাটি বাংলার এক গুরুত্বপূর্ণ জনপদ, গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়কপথ, রেলপথ ও নদী বন্দর। তাই এই মেডিকেল কলেজটি মোহনগঞ্জ উপজেলাতে স্থাপন করলে শহরের চাপ কমবে এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ হবে।

হাওর পাড়ের সকলের কণ্ঠেই আজ এক আওয়াজ মোহনগঞ্জে মেডিকেল কলেজ চাই। সেই দাবিতে মোহনগঞ্জের স্থানীয় শহীদ মিনারে ১১ সেপ্টেম্বর বৃষ্টির মাঝে মানববন্ধন করলো বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ১৫ টি সংগঠন। আরও মানববন্ধন হলো করাচাপুরের হাওড়পাড়ের হাইস্কুলে। এর আগে জনতার উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে সাবেক ছেচরাখালী বাজার যার পরিবর্তিত নাম আদর্শনগর গ্রামের বাজারে। হাওড়পাড়ে দলমত নির্বিশেষে মানুষ একাট্টা হচ্ছে মোহনগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবিতে। এ দাবিকে উপেক্ষা করে নেত্রকোনা জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কিভাবে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন যে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালের ইপিআই ভবনে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হবে। জনগণের দাবি পূরণে জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন। নেত্রকোনা জেলায় রয়েছেন ৫ জন সংসদ সদস্য। অবিলম্বে জনপ্রতিনিধি, সকল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হোক। মেডিকেল কলেজের স্থান ও নামকরণ চূড়ান্ত করেই তবে কলেজটির কার্যক্রম শুরু করা হোক। কোন অবস্থাতেই জনগণের সেন্টিমেন্টকে উসকে দেয়া সঙ্গত নয়।

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ