আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

বিএনপি-জামায়াত কি আওয়ামী লীগ সেজে প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে?

এখলাসুর রহমান  

দেশীয় বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশ আতঙ্ক চলমান থাকতেই এবার বিদেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবর বেরোলো। সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেল, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ছাত্রলীগের কমিটিতে এবার মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে সভাপতি নির্বাচিত করেছে ছাত্রলীগ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়ন শাখার আওতাধীন ১নং ওয়ার্ড মসজিদ ঘোনা ইউনিট কমিটির নতুন সভাপতি নির্বাচন করা হয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক মোহাম্মদ নুরকে। সংগঠনটির সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মোহাম্মদ ফয়সাল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলম ইমন স্বাক্ষরিত এক পত্রে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ নুরকে সভাপতি, মোবারক হোসেনকে সহসভাপতি, মানুকুজ্জামান মানিককে সাধারণ সম্পাদক, মো. ডালিমকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সোথাই মং মার্মাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ৫ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানায়, মোহাম্মদ নুর নাইক্ষ্যংছড়ির রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা হিসেবে থাকলেও কিছুদিন আগে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের মসজিদ ঘোনা এলাকার ১নং ওয়ার্ডে নতুন বসতি গড়েছেন। নুর মিয়ানমারের নাগরিক। কয়েকবছর আগে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেন। ইতোমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ। এমনকি দেশের প্রচলিত বাংলা ভাষায় কথা বলতে জানেন না নুর। অর্থের বিনিময়ে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।

সম্প্রতি সিলেটের সিটি নির্বাচনে 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' বলে নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে ধানের শীষে ভোট দিয়েছে দেশীয় বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশকারীরা। দেশব্যাপী রয়েছে অনুপ্রবেশকারীদের পদচারনা। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসব অনুপ্রবেশকারীরা কি বড় ধরনের কোন কূটচাল খেলতে পারে না?

আওয়ামী লীগে কি নেতা ও কর্মী সংকট চলছে যে জামায়াত-বিএনপি হতে লোক নিতে হবে? এদেশে আশ্রিত পরদেশী রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে লোক নিতে হবে? এই অনুপ্রবেশকারীদের দলে ভিড়িয়ে দলের কী মঙ্গল হয়েছে? আর দলে না ভিড়ালে কী অমঙ্গল হতো? এখন অনুপ্রবেশকারী বিতাড়ণের কথা উঠছে। অহেতুক সমস্যা সৃষ্টি করে কেন এই সমাধানের হম্বিতম্বি?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কত কী বিশেষণ দিলেন এসব অনুপ্রবেশকারীদের। হাইব্রিড, মৌসুমি পাখি, কাউয়া, ফার্মের মুরগি ইত্যাদি ইত্যাদি। এত দীর্ঘ সময় ধরে কেবল বিশেষণই দিয়ে গেছেন কিন্তু দূর করার কোন পদক্ষেপ নেননি। বরং অনুপ্রবেশের মাত্রা বাড়তে বাড়তে এখন বিদেশী অনুপ্রবেশকারীর আগমন ঘটলো। অভিযোগ উঠছে অর্থের বিনিময়ে তাকে সভাপতি করা হয়েছে। কথাটা সত্য হলে দায়টা কি রোহিঙ্গা মোহাম্মদ নূরের নাকি যারা তাকে সংগঠনে নিলো ও নেতা বানালো তাদের? আরও প্রশ্ন জাগে এই রোহিঙ্গা নূরের এত অর্থের উৎস কী? আশ্রিত হিসেবে এসে আশ্রয় দানকারীদের টাকা দিয়ে কেনা বিষয়টা খুবই চমকপ্রদ নয় কি? এতিম খানার এতিম যদি এতিমখানার মালিককে টাকা দিয়ে কিনে ফেলতে পারে সেই এতিম কি যে কোন সময় এতিমখানাটাও নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যেতে পারেনা? সেক্ষেত্রে এতিমের আয়ের উৎস কি হতে পারে? এই প্রশ্নটাই কি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়? রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কথা শোনা যায়। রোহিঙ্গা নূর এসব করেই টাকার মালিক হয়ে এখন নেতৃত্ব কিনলো কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

জামায়াত আর তার দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারছে না। তাই হয়তো ঢুকে গেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগে মিত্র সেজে শত্রুটা করার জন্য। অনেক বিএনপি নেতাও আন্দোলন সংগ্রামে সুবিধা করতে না পেরে মিশে গেছে সরকারি দলে। এই যোগদানকারীদের উদ্দেশ্য সরকারকে রক্ষা করা না ধ্বংস করা? সরকারি দল আওয়ামী লীগের এই সমস্যা সৃষ্টি করে কেন সমাধানের সময় নষ্ট? অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে যারা অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন কেন ঘটিয়েছেন তাদের যুক্তিটা কি তা শোনার জন্য তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া যেতো না? রোহিঙ্গা নূরকে যারা দলে এনেছেন অবিলম্বে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হোক। নূরের অনুপ্রবেশকে দিয়েই শুরু হোক অনুপ্রবেশ বিতাড়ণের কর্মসূচি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকাতেও আসল ছাত্রলীগ কর্তৃক অনুপ্রবেশকারী নকল ছাত্রলীগ নেতার উপর হামলা হয়েছে। এসব হামলায় অনুপ্রবেশ বন্ধ হবেনা বরং সংগঠনে আরও বিভক্তি বাড়বে। তারা যেহেতু সংগঠনে আসতে পেরেছে ও নেতা হতে পেরেছে একটা লবিং করেই এসেছে। এসব হামলায় তাদের গ্রুপবাজী আরও চাঙ্গা হবে। তাই এ সমস্যার উচ্ছেদ করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে। যারা যোগদানে ভূমিকা রেখেছে তাদের কাছ থেকে এ যোগদানের গঠনতান্ত্রিক ব্যাখ্যা ও বাস্তবতার যুক্তি শুনতে হবে।

আগামী মাসে গঠিত হতে চলেছে নির্বাচনকালীন সরকার। ঘনিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনুপ্রবেশকারী অধ্যুষিত কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনুরূপ ঘটনা ঘটবেনা এর কি নিশ্চয়তা আছে? আওয়ামী লীগ ও যুব-ছাত্রলীগ কেন এই সংশয়ের সৃষ্টি করল? সারাদেশে মোট কতজন অনুপ্রবেশকারী রয়েছে এই তথ্য কি দলীয় নীতি নির্ধারকদের কাছে রয়েছে? দেশীয় অনুপ্রবেশকারীর পর যে সংযোজন হলো বিদেশী অনুপ্রবেশকারী এই তথ্যও কি নীতিনির্ধারকদের মিডিয়ার মাধ্যমে না জেনে দলীয় ভিত্তিতে জানাটাই কি কাঙ্ক্ষিত ছিলোনা? হয়তো রোহিঙ্গা নূরের বিষয়টা প্রকাশ হল এমন অনুপ্রবেশকারী আরও হয়তো বহু আছে। অতি সত্ত্বর এসব অনুপ্রবেশকারীদের সঠিক তত্ত্ব নেয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন যারা যোগদান করিয়েছে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে অনুপ্রবেশকারী বিষয়ক তাদের বক্তব্য শোনা ও অতঃপর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ। না হয় হাইব্রিড, কাউয়া, মৌসুমি পাখি ও ফার্মের মুরগি ইত্যাদি কেবল বলতে থাকা আর বাড়তে থাকার মত অনুপ্রবেশকারীরাও কেবল বাড়তেই থাকবে।

সম্প্রতি এক দলীয় জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি জামায়াত আমাদের প্রতিপক্ষ নয়, প্রতিপক্ষ আমরা নিজে নিজেই সৃষ্টি করছি। কেউ কারো বিরুদ্ধে সমালোচনা না করে আগামী নির্বাচনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। দলে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করলে ব্যবস্থা নেবে দল।

অনুপ্রবেশকারীরা শীঘ্রই কি বিশাল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে না? আর এ প্রতিপক্ষের ব্যাপারে কেবলই কথামালা ছাড়া বাস্তব কোন পদক্ষেপ নেই। বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগ সেজেই হয়তো প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে গোপনে গোপনে।

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ