আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

আদালতের এই রায় বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখলো

জুয়েল রাজ  

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জীবিত ৪৯ আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন বাংলাদেশের আদালত । বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এই রায় ঘোষণা করেন। এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলই কোন মামলার রায় নিয়ে একযোগে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

বিএনপি হতাশা প্রকাশ করেছে তারেক জিয়াকে জড়ানো নিয়ে এবং যাবজ্জীবন সাজার দণ্ডের প্রতিবাদে। আর আওয়ামী লীগ হতাশা প্রকাশ করেছে ফাঁসির আদেশ না হওয়ার কারণে। দিনশেষে দুই দলই হতাশ। এই হতাশার জায়গায় দুই দল অন্তত এক হতে পেরেছে!

তারেক জিয়া রায়ের আগের দিন সকালে দেশ ও দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভিডিও বার্তায়, মামলার রায় নিয়ে আগাম মন্তব্য করেছিলেন, এবং ধারণা করেছিলেন তার ফাঁসির রায় দেবে আদালত!

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট মামলার রায় প্রসঙ্গে বলেন, ২১ আগস্ট হামলা মামলার রায় ঘোষণা দেয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত। আদালত রায় দেয়ার তারিখ নির্ধারণ করলেও এর আগেই শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতামন্ত্রীরা মামলার রায় দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, রায়ের দিন হয়তো দেখা যাবে, বিচারক আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোষণা করা পূর্ব নির্ধারিত রায়টি পড়বেন।

বিচারকের রায় সম্পর্কে তারেক রহমানের এমন ধারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এমনটি ধারণা করার কারণ হলো, বেগম খালেদা জিয়ার মামলার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ মামলার বিচারেও দেখা গেছে অনেক আগে থেকেই সরকারের নেতাকর্মীরা মামলার রায় ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। আর নির্দিষ্ট বিচারক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘোষিত রায় যথানিয়মে পড়ে দিয়েছেন।

তারেক রহমান আরও বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতির রায় সরকারের পছন্দ না হওয়ায় তাকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় সরকারের মনোপুত: না হওয়ায় ওই নিম্ন আদালতের বিচারককেও দেশ ছাড়া করা হয়েছে। সুতরাং, ২১ আগস্ট হামলা মামলার রায়ও হয়তো আগের মতোই হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ফরমায়েশি রায়।

তারেক রহমানের সেই আগাম বক্তব্য এবং ধারণা পুরোটাই ভুল হয়েছে। তাহলে তারেক রহমান এখন কি করবেন? তিনি কি মামলা মোকাবেলা করবেন, নাকি এই হত্যাকাণ্ডের দায় মাথায় নিয়ে পলাতক থাকবেন।

দল হিসাবে প্রায় বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বিএনপি। আর এর মূল কারণ নেতৃত্ব। তৃণমূলে বিএনপির কর্মী সমর্থক অস্বীকার করার উপায় নাই। দেশে বিদেশে তাদের বিশাল কর্মী সমর্থক গোষ্ঠী আছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে, নানা মামলায় জর্জরিত হয়ে এবং বিশেষ করে নেতৃত্বের অভাবে বিপর্যস্ত বিএনপি। আর এর মূল কারণ তাদের নেতৃত্বহীনতা এবং আস্থার অভাব।

তারেক রহমান কেনো দেশে ফিরে যাচ্ছেন না? দেশে গিয়ে বিএনপির হাল ধরছেন না কেনো?

এই প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির কর্মী সমর্থক সবারই উত্তর ছিল, তিনি দেশে ফিরে গেলে, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় তাকে ফাঁসি দিয়ে দিবে সরকার। এটা তাদের বদ্ধমূল ধারণা। বিএনপির নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তি থেকে শুরু করে, বিএনপির বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও একই ধারণা বদ্ধমূল ছিল, আমি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে অনেকের সাথে কথা বলে একই উত্তর পেয়েছি।

কিন্তু গতকালের আদালতের রায়ে বিএনপির সেই ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। যেহেতু ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমানকে যাবজ্জীবনের রায় দিয়েছে দেশের আদালত।

একটি দল এবং দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। বিএনপি তাঁর নামের আগে দেশনায়ক উপাধি ব্যবহার করেন। তারেক রহমান আগামীর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবেও বিবেচনা করেন। এবং সেই বিবেচনা যে ভুল তাও কিন্তু ভুল নয়।
গণতান্ত্রিক অবস্থায়, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে আওয়ামী লীগ বিএনপির বাইরে সাধারণ মানুষ অন্য কোন দলকে নিয়ে চিন্তা করতে পারে না। যা ১৯৯১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। বেগম খালেদাজিয়ার পরে যেহেতু তারেক রহমানই নেতৃত্ব দিবেন। এই ঝুঁকিটা তো তাঁকে নিতেই হবে।

তারেক রহমানের উচিত হবে দেশে ফিরে গিয়ে মামলা মোকাবেলা করা।

দলীয় ভাবে বিএনপি ২১শে আগস্টের হামলা ও হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে না। সেই সময়ের সরকার প্রধান হিসাবে এই হত্যাকাণ্ডের দায় বেগম খালেদাজিয়ার উপরও বর্তায়। সবচেয়ে বড় যে কারণ বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এই গ্রেনেড হামলার সঠিক তদন্ত থেকে শুরু করে কোন কূল কিনারা সরকার বা প্রশাসন করতে পারে নাই। উপরন্তু জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে বর্বর একটি হত্যাকাণ্ডকে হাস্যকর করে তুলেছিল।

খোদ বিএনপির নেতারাই সে সময় তারেক রহমানের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন। সেই সময়ের সংবাদ মাধ্যমের দিকে তাকালে, মান্নান ভূঁইয়া, সাদেক হোসেন খোকা কিংবা তরিকুল ইসলামের বিভিন্ন বক্তব্য পেয়ে যাবেন।

বক্তব্য এবং অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় দলের নেতা কর্মীসহ খোদ তারেক রহমান ও ফাঁসীর রায় আশা করছিলেন। যাতে করে তাঁকে আর দেশে ফিরে যেতে না হয়। কারণ ব্রিটেনের সাথে যেহেতু, বাংলাদেশের বন্দি বিনিময়-চুক্তি নেই, তাই চাইলেই তারেক রহমানকে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী তারেক রহমান যেহেতু ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন, তার মানে বাংলাদেশে গেলে তাঁর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে সেটা প্রমাণ করেই তিনি ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। ব্রিটেন খুব সহজে তারেক জিয়াকে ফিরয়ে দেয়ার সম্ভাবনা নেই।

বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপি রাজনীতিতে এক প্রকার কোরবানি দিয়ে দিয়েছে বলা যায়। নির্বাচনে বাজির দান হিসাবে হয়তো বেগম খালেদাজিয়াকে নিয়ে খেলতে চাইবে। বয়সের ভারে ন্যূজ বেগম জিয়া কতোটুকু সেই খেলায় উতরাতে পারবেন সময়ই সেটা বলে দিবে।

আমার মতে, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো বিএনপিকে একটা সুযোগ দিয়েছে আদালতের রায়। যেহেতু ফাঁসীর রায় দেয়নি আদালত৷ তারেক রহমানের সেই সুযোগটা নেয়া দরকার।

তারেক রহমান দেশে ফিরে গিয়ে নেতৃত্বের হাল ধরলেই হয়তো বিএনপি আবারো ঘুরে দাঁড়াবে। তাই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হলে,তারেক রহমানের নিজেকেই উদ্যোগী হয়ে দেশে ফিরে যেতে হবে। বাংলাদেশ সরকার যদি কোন ভাবে ব্রিটেন থেকে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয় তবে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার আর কোন সুযোগ থাকবে না।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর এক ঐতিহাসিক বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষিত হলো। দেশের স্বার্থে, রাজনীতির স্বার্থে, বিচার হীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার মাইলফলক হিসাবেই এই মামলার রায় হওয়া জরুরী ছিল।

জুয়েল রাজ, সম্পাদক, ব্রিকলেন; যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি, দৈনিক কালেরকন্ঠ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ