প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ২২ অক্টোবর, ২০১৮
দেশজুড়ে নিজেকে চরিত্রবান দাবি করার মৌসুম শুরু হয়েছে। নির্বাচন এলেই ভাইয়া ও বুবুরা নিজেদের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র বলে দাবি করতে শুরু করেন। নির্বাচন চলে গেলে আর ‘চরিত্র’ শব্দটি অতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়না। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক আগের সময়টা হচ্ছে চরিত্রানুভূতির বসন্ত।
এসময় ভোটের প্রার্থী ভাইয়া ও বুবুরা প্রত্যেকেই এক একজন সচ্চরিত্র সাধু ও সাধ্বীর রূপ পরিগ্রহ করেন। প্রার্থীদের সমর্থকরা কান খাড়া রাখে; কোথাও তাদের প্রার্থীর দুশ্চরিত্র নিয়ে কোন কথা হচ্ছে কীনা তা জানতে; আর চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করতে।
নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রত্যেকের বুকের মধ্যে ভোটারদের জন্য ভালোবাসা উথলে উঠতে থাকে। কোন দিন কোন দিক থেকে কোন প্রার্থী এসে আচমকা জড়িয়ে ধরবে এই ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে ঘুরতে থাকে সাধারণ মানুষ। অথচ প্রত্যেক ভোটের পর বিজয়ী প্রার্থীর ভালোবাসা শুকিয়ে যায়। নির্বাচন যেন একটি বিবাহ; বিবাহের আগে যেমন বর বা কনে তার সম্ভাব্য কনে বা বরের সামনে প্রেমে আকুল হয়; ঠিক তেমনি এই ভোট প্রার্থীদের ভোটারদের প্রেমে আলুথালু হওয়া। আর নির্বাচনে বিজয় যেন সেই বিবাহের দিন। বিজয় মিছিল যেন মধুচন্দ্রিমা; রোমান্টিক ফুলসজ্জা-শয্যা।
কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে বিজয়ী বর বা কনের; তাদের এতো কাঙ্ক্ষিত ভোটার কনে বা বরের প্রতি যেন ভালোবাসা শুকিয়ে যায়। ইলেকশান অর ম্যারেজ ইজ দ্য এন্ড অফ লাভ।
ভোটে জেতা স্বামী বা স্ত্রী তার জীবন সঙ্গী ভোটার স্ত্রী বা স্বামীকে ভুলে গিয়ে ব্যবসা-ব্যস্ততার অজুহাতে আর সময় দিতে চায়না। রাজধানীতে জুটে যায় বিনোদক ও বিনোদিনী। ফলে এলাকায় বা বাড়িতে প্রায় আর আসতেই চায়না। কোনদিন অনেক রাতে বাড়ি ফিরলেও চোখ প্রায় বন্ধই থাকে।
ভোটার স্ত্রী বা স্বামী তাদের ভোটে জেতা স্বামী বা স্ত্রীর এ অবহেলায় গুমরে কাঁদে। কখনো বাড়ি বা এলাকায় ফিরলে দু'কথা শুনিয়ে দিতে গেলে ভোটে জেতা স্ত্রী বা স্বামী নিয়মিত মারধোর শুরু করে। যদি জিজ্ঞেস করা হয়, রাজধানীতে কী এমন মধু পেয়েছো; বাড়ি আসোনা কেন; অনেক সচ্চরিত্র ভেবে তোমাকে বিয়ে করেছিলাম (পড়ুন ভোট দিয়েছিলাম)!
ভোটে জেতা স্ত্রী বা স্বামী গলা খাঁকারি দেয়, এলাকার সুখের সংসারের জন্যই রাজধানীতে পড়ে থাকি! বাড়ির এতো এতো উন্নয়ন করলাম; ছাপরা থিকা দোতলা বানাইলাম; শায়েস্তা খানের রেটে ভাত খাওয়াইলাম; এতো সহজেই ভুইলা গেলিরে ডট ডট।
ভোটার স্বামী বা স্ত্রী হাউমাউ করে কাঁদে, এইসব কী ভাষায় কথা বলো! তুমি তো আগে এইরকম চরিত্রহীন ছিলানা।
অমনি ক্ষেপে ওঠে ভোটে জেতা স্ত্রী বা স্বামী, কী আমারে চরিত্রহীন কস! তোরে চিনিনা; তুই কোন ফ্যামিলি থাইকা আসছোস; তুই যে একবার প্রেমিক/প্রেমিকার লগে পলাইয়া গিয়া চারদিন কক্সবাজার ঘুইরা আসছিলি সেইডা মনে নাই। আমার গ্যাং-এর কাছে খবর আছে আবার তুই পুরান প্রেমিকা/প্রেমিকের লগে ফেসবুকের ইনবক্সে ফুসুর-ফাসুর শুরু করছস। কী অরে বিয়া করতে চাস নাকি (পড়ুন, ভোট দিতে চাস নাকি)!
ভোটার স্বামী বা স্ত্রী আকাশ থেকে পড়ে। এরকম কোন ভাবনা তার মাথায়ও আসেনি। তবুও রেগে গিয়ে বলে, তুমি কার লগে ঘুরো সে কী আমি জানিনা। কারে জমি উপহার দিছো-মোটা অংক দিছো সেকি আমি জানিনা!
ভোটে জেতা স্ত্রী বা স্বামী দ্বিগুণ রেগে গিয়ে বলে, তর প্রেমিকা/প্রেমিকও পছন্দের মানুষরে জমি উপহার দিয়েছে-মোটা অংক দিয়েছে; খালি আমি দিলেই দোষ। ম্যায় কারু তো সালা; ক্যারেক্টার ডিলা হ্যায়!
ভোটার স্বামী বা স্ত্রী বলে, বুঝছি; তোমরা দুইজনাই বেপাড়ায় ঘোরা চরিত্রহীন। পার্থক্যই যখন নাই; তখন আর এইখানে পইড়া পইড়া মাইর ক্যান খামু। দরকার পড়লে সারাজীবন একা থাকবো (পড়ুন,কোন চরিত্রহীনকেই ভোট দেবো না)।
ভোটে জেতা স্ত্রী বা স্বামীর মনে পড়ে আবার নতুন নির্বাচনের সময় এসে গেছে। সুতরাং আবার সচ্চরিত্রের অভিনয় শুরু করে। ভোটার স্বামী বা স্ত্রী'র মন ভুলাতে এটা-ওটা এনে দেয়। আগের মত হেসে হেসে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে।
ভোটার স্বামী বা স্ত্রী মুখ ঝামটা দেয়; সারাদিন মুখ ভার করে থাকে। ভোটে জেতা স্ত্রী বা স্বামী তার ভোটার স্বামী বা স্ত্রীকে সন্দেহ করতে শুরু করে। ভয় পায়, এবার সে যদি সাবেক প্রেমিকা বা প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যায় (পড়ুন, যদি ভোট দেয়)।
নিজের গ্যাং দিয়ে সাবেক প্রেমিকা বা প্রেমিককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করে।
তারপর ঠিক ভোটের আগে একদিন ঘুম থেকে জেগে দেখে ভোটার স্বামী/স্ত্রী নেই। তখন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ঘোষণা দেয়, অর প্রেমিকা/প্রেমিকদের ফিনিশ কইরা দেবো। এমন প্যাঁদানি দেবো; মা বলবে কিন্তু গো বলার শক্তি থাকবে না। খেলা হবে।
অথচ বুকের মধ্যে হাহাকারের মতো বাজতে থাকে বিরহ গান।
একদিন ঘুম ভেঙে দেখি
ভোটের সমুদ্র শুকিয়ে গেছে
বিজয়ের কল্পনা নিষ্প্রাণ মার্কা হয়ে
শুকনো বালুর বুকে পড়ে আছে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য