আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

আওয়ামী লীগ-হেফাজতের সম্পর্কের লাভ-ক্ষতি

আরিফ জেবতিক  

জিয়াউর রহমান নাকি বলেছিলেন, 'আই উইল মেক দ্য পলিটিক্স ডিফিকাল্ট।' আর গত কয়দিন ধরে আমার মনে হচ্ছে এখনকার পলিটিক্স ডিফিকাল্ট না, একেবারে 'মেক দ্য পলিটিক্স ইম্পসিবল' হয়ে যাচ্ছে!

চিন্তা করে দেখুন, এই সেই হেফাজত যারা ৫ বছর আগে একই ভাবে স্কুল কলেজ বন্ধ রাখিয়ে ঢাকা এসে শতাব্দীর অন্যতম বড় তাণ্ডব চালিয়ে গিয়েছিল, তারাই এখন দলে দলে এসে শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে। রাজনীতিতে ক্যারট এন্ড স্টিকের এরকম তুখোড় ব্যবহার এদেশে এত লার্জ স্কেলে আর কখনো হয়েছে বলে আমার স্মরণ পড়ছে না। যে হেফাজত আড়াই হাজার লোক মরেছে বলে মিথ্যাচার করেছিল, তারাই শেখ হাসিনাকে 'কওমি জননী' উপাধি দিয়ে বগল বাজাতে বাজাতে বাড়ি ফিরছে। আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনার চরমতম রাজনৈতিক শত্রুও এই কাণ্ড দেখে গালে হাত দিয়ে বসে আছে।

দীর্ঘমেয়াদে এই কাণ্ডের কোনো সরাসরি সুফল আওয়ামী লীগ পাবে না, আবার এই কাণ্ড থেকে দল হিসেবে তাদের কোনো ক্ষতিও হবে না। তবে এর অন্যান্য প্রতিক্রিয়া কী কী হতে পারে, সেটি বিবেচনা করা যাক।

লাভের বিষয়টি হতে পারে যে এখন কওমি মাদ্রাসার কারিকুলাম যেহেতু মাস্টার্স সমমানের হয়েছে, এর মানে কওমিরা এখন শিক্ষার দুনিয়াদারি ব্যবহারের বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে বলেই বুঝা যায়। সেক্ষেত্রে হয়তো তাদের কারিকুলাম রিভিউ করার একটি সামাজিক আলাপ হতে পারে এবং ধীরে ধীরে কিছু দুনিয়াদারি বিদ্যাও কওমিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। মূল কথা হেফাজতিরা দেশের মূল জনস্রোতে অর্থনৈতিক কন্ট্রিবিউশনে ঐ দূর আগামীতে দুই চার পয়সা যোগ দিলেও দিতে পারে।

দ্বিতীয় লাভটা উভয় তরফে হয়েছে। হেফাজতিদের ট্রিগার পয়েন্টটা পরিস্কার হয়ে গেছে। এদেরকে হালকা লাঠির বাড়ি আর লাঠি লজেন্স, এই দুইটার উপরে রাখলে তারা পলিটিক্সে তেমন বড় কোনো ঝামেলা তৈরি করবে না। আর হেফাজতিরাও জানে যে তারাও একটু গাল টাল ফুলিয়ে কিছু বিষয় আবদার করলে সেটা তারা পেয়ে যাবে। সো, এখানে উভয় পক্ষের উইন উইন সিচুয়েশন।

আশংকার বিষয় হচ্ছে হেফাজতিরা যদি এখন নিজেদেরকে 'আওয়ামী লীগের নিজেদের লোক' ভেবে আবদারের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন একটা বিপদ হবে। যেমন কাদিয়ানিদেরকে অমুসিলম ঘোষণার দাবি তারা এখনই বাজারে ছাড়ছে। দেশে কয় ঘর কাদিয়ানি আছে আমার জানা নেই, এদেরকে সরকারি ভাবে মুসলমান ডাকলে কি খ্রিষ্টান কি নাস্তিক ডাকলে জাতির কী লাভ বা ক্ষতি সেটাও আমার ধারনায় নেই। মানে এগুলোর কোনো দুনিয়াদারি বিষয় না। কিন্তু নুইসেন্স তৈরির জন্য এগুলো ভালো ইস্যু। দৃশ্যমান দুর্বল প্রতিপক্ষ থাকলে মোল্লারা লাঠিসোটা নিয়ে নামতে জোশ পায়। সেটা তসলিমা নাসরিন কি কাদিয়ানি-এরকম সাইজে ছোট এবং সরকারের সাথে কোনো প্রেমট্রেম নাই এরকম প্রতিপক্ষ হইলে ভালো। সো, মোল্লারা আবার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে যদি কাদিয়ানি কাটো স্লোগান নিয়ে মাঠে নামে, তখন দেয়ার মতো এনাফ রেলের জমি না থাকলে বিপদ হবে।

সবচাইতে বড় ঘটনা এইখানে কী হইছে সেটা এবার বলি।

এই ঘটনার মাধ্যমে দেশে হেফাজতিদের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে তলানিতে নেমে গেছে। এই পলিটিক্সটা শেখ হাসিনা তুখোড় খেলেছেন, আমি দেখেই মজা পাইছি। তেঁতুল হুজুরের রেপুটেশন এখন তেঁতুলের চাইতেও কম হয়ে গেছে। আমাদের তৃণমূল সমাজে, মানে যেখানে আমার আপনার মতো মধ্যবিত্ত জ্ঞানী কুতুবরা নেই, সেখানে এই হেফাজতিদের একটা বিশ্বাসযোগ্যতার সম্মান ছিল যে এরা দুনিয়াদারির লোভে না বরং আখেরাতের লোভে আন্দোলন করে। এ কারণে তাদের 'শাপলা চত্বরে আড়াই হাজার শহীদ' এর গল্পটি গ্রামেগঞ্জে ব্যাপক বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছিল।

কিন্তু এই হুলস্থুল মাখামাখি আমাদের পলিটিক্যাল পেরিফেরিতে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে এভরি ম্যান হ্যাজ এ প্রাইস। ইফ ইয়্যু পে দ্য রাইট প্রাইস ইয়্যু ক্যান হ্যাভ গলফ বয় এরশাদ অর তেঁতুল হুজুর।

আগামীতে হেফাজতের পক্ষে পাবলিক সেন্টিমেন্ট দখল করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হবে। যে কোনো ইস্যুতে তারা তালবে এলেম গরীব এতিম ছেলেপেলেদের রাস্তায় নামাতে পারবে বটে, কিন্তু রাস্তার পাশের ফুটপাতে দাঁড়ানো লোকটা তাদেরকে আর সহজে বিশ্বাস করবে না।

আওয়ামী লীগের কোনো লাভ ক্ষতি নাই। তাদেরকে আগে যারা গালি দিতো, তারা গালি দেবে আর আগে যারা ভালো পেত, তারা এখনও একই পরিমাণ ভালো পেতে থাকবে।

আরিফ জেবতিক, ব্লগার ও সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ