আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

কওমিতে সরকারি নির্দেশনার চিঠি, সব উপজেলায় কেন নয়?

এখলাসুর রহমান  

প্রথমবারের মত চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সকল কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পাঠ, অ্যাসেম্বলি করা সহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠের এক নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে। গত সোমবার (০৪ নভেম্বর) উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাবিবুল হাসান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি সরকারি নির্দেশনামা উপজেলার ৭টি কওমি মাদ্রাসায় পাঠানো হয়।

নির্দেশনামায় উল্লেখ রয়েছে। ১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন (বন্ধ ব্যতীত) জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ২) জাতীয় সংগীত পরিবেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৩. প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের অ্যাসেম্বলির ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ৪. শ্রেণি কক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

নির্দেশনামায় প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে এসব নির্দেশনাবলি যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তাও কার্যালয়কে জানাতে অনুরোধ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘কওমি মাদ্রাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল)-এর সনদকে আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল ২০১৮ জাতীয় সংসদে পাস হয়। কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরেই এ স্বীকৃতির আইন হয়।

নির্দেশনার বিষয়ে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান বলেন, আমরা মন্ত্রণালয় সূত্রে আইন অনুযায়ীই এ নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের কাছে নির্দেশনার স্মারক নাম্বারও রয়েছে।

কওমি মাদ্রাসাকে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, তাছাড়া দেশের আর কোথাও এমন নির্দেশনা দেয়া না হলেও পটিয়াতে কেন এমন নির্দেশনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই হয়তো এখনো বুঝতে পারছে না চিঠি কীভাবে দেবেন। আমরা দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে হয়তো সবাই এ প্রক্রিয়ায় আসবে।

হেফাজতে ইসলাম একসময় গণজাগরণ মঞ্চের বিপরীতে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করেছিল। হেফাজতে ইসলামের চাপেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রয়েছে। স্কুলের পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করিয়েছে তারা। হেফাজত হাই কোর্টের সামনে হতে গ্রিকদেবীর ভাস্কর্য সরাতেও বাধ্য করেছে সরকারকে।

গত ১১ এপ্রিল দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান মর্যাদার ঘোষণা দেয় সরকার। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। তারই সূত্র ধরে ১৯ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত আইন সংসদে পাস হয়। এ স্বীকৃতির জন্য শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শোকরানা মাহফিলে হেফাজত ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দিয়েছেন। তার এই স্বীকৃতিতে লাখো কওমি ওলামা ধন্য হয়েছে। এই অসামান্য অবদান ইতিহাসের সোনালী পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’র আয়োজনে শোকরিয়া মাহফিলে তিনি আরও বলেন, সনদকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

কিন্তু এই এগিয়ে যাওয়া কিভাবে হবে? বাংলাদেশের কয়টা কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়? এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে কয়টি কওমি মাদ্রাসা এসব কর্মকাণ্ড শুরু করেছে? কওমির নীতিনির্ধারকরাও কি এ ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দিয়েছেন? যে আল্লামা শফী একসময় সরকারকে ফেলে দিতে চেয়েছিল এই স্বীকৃতিতে তাঁর সুর পাল্টে গেল। এখন তিনি বলছেন, আমাকে হাসিনা, শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভুল গাইড করা হয়েছে, হাসিনা খাঁটি মুসলমান। হাসিনা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তাহাজ্জুদ পড়েন। তিনি নাস্তিক নন, তিনি আস্তিক’। তিনি আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া করেন: আল্লাহ! আওয়ামী লীগকে তুমি মোহাব্বত করো, তোমার ফেরেশতারা যেন মোহাব্বত করে। আওয়ামী লীগের (ক্ষমতাকে বাড়িয়ে) দেশের খেদমত করার তৌফিক দাও, আওয়ামী লীগকে নবীর শাফাআত নসীব করিও, তাদের খেদমতকে কবুল করো' তবে আল্লামা শফীকে সেদিন কারা ভুল বুঝিয়েছিল? আর এতবড় একজন আলেম হয়ে তিনিও বা কেন ভুল বুঝেছিলেন? না জেনে না বুঝে কি কাউকে নাস্তিক ভেবে একেবারে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা ঠিক?
শাপলা চত্বরে সেদিনের রক্তপাতের দায় কার? আল্লামা শফী আজ যার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দোয়া করছেন সেদিন তাকে ক্ষমতা হতে ফেলে দিতে সকলকে শাপলা চত্বরে জড়ো হওয়ার আহবান জানিয়েছিল। তবে কি এই ভুল আহবানেরই সেদিনের মৃত্যুর দায় নয়? সেদিন তাকে ভুল গাইড করা হয়েছিল বলে কি দায় এড়াতে পারেন তিনি? দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান মর্যাদা দিলেতো শিক্ষার গুণগত মানেরও সমতা আনতে হবে।

প্রসঙ্গক্রমে একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়: কওমি শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ কট্টরপন্থার। তাদের কারিকুলাম বা সিলেবাস এমনভাবে গড়া যে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে বিজ্ঞান এবং আধুনিকতার শিক্ষা পায় না। যুগের পর যুগ এভাবেই চলে আসছে। সরকারের এই স্বীকৃতির পর ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুনভাবে তাদের কারিকুলাম গড়ে তোলা হবে বলে আমরা আশা করি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন: ‘লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী এই মাধ্যমে পড়ে, তারা কোথায় যাবে? দাওরায়ে হাদিসের স্বীকৃতির কারণে এখন কওমি শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে চাকরি পাবে। বিভিন্ন কাজে যুক্ত হতে পারবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মানবিক বিষয়ের সঙ্গে আমরাও একমত। তবে দেশে-বিদেশে চাকরির বাজারের জন্যও তাদেরকে দক্ষ করে তুলতে হবে। এজন্য তাদের কারিকুলাম সংশোধন করে আধুনিক এবং কর্মক্ষেত্রের উপযোগী করার পদক্ষেপ সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।


কেউ কেউ আবার অতি উৎসাহে আল্লামা শফীকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের দাবি জানাচ্ছেন। হেফাজতকে তুষ্ট করে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে নিজেদের পক্ষে রাখার কৌশল যেনো একদিন বিড়ম্বনার কারণ না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিগত দিনে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি উত্থাপনেই তাদের সমাজ সভ্যতার পেছনমুখী বৈশিষ্ট্যের দিক ফুটে উঠেছে। এ দাবিতে আবার সোচ্চার হলে সরকার কি পারবে তা মেনে নিতে?

পটিয়া উপজেলা প্রশাসনের মত কওমি মাদ্রাসা বিষয়ে দেশব্যাপী কেন কোন তৎপরতা নেই? দেশের প্রতিটি কওমি মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, এসেম্বলি চালু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা চালু হোক। সেই সাথে যুগের সাথে তালমিলিয়ে সরকারের উচিত কওমি শিক্ষার জন্য নতুন কারিকুলাম রচনা করা। চাকরি পেতে হলে কেবল স্বীকৃতি গদগদ নয় নিজেদের সময় উপযোগী মতো গড়ে উঠতে হবে আগে। সে উদ্যোগটাও সরকারকেই নিতে হবে। যেখানে যেখানে কওমি মাদ্রাসা আছে সেখানে সেখানে উপজেলা প্রশাসন তৎপর হোক এই প্রত্যাশা সকল শুভ বুদ্ধি সম্পন্নদের।

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ