আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

রেজা কিবরিয়া: গালি ও বেদনা

আরিফ জেবতিক  

শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার পর কিবরিয়া সাহেবের স্ত্রী আসমা কিবরিয়া এবং তাঁদের পরিবার 'শান্তির জন্য নীলিমা' নামে এক ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন। তাঁরা প্রতি সপ্তাহে নীল কাপড় পরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থেকে শান্তি চাইতেন দেশে আর কিবরিয়া সাহেবের হত্যার বিচার চাইতেন। দিন গেছে, মাস গেছে, বছর গেছে- বিএনপি সরকার গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গেছে তারপর এসেছে কিবরিয়া সাহেবের নিজের দল আওয়ামী লীগ।

সম্ভবত ২০১১ সালে শাহ এএমএস কিবরিয়ার মৃত্যু দিবসকে সামনে রেখে আমরা কিবরিয়া সাহেবের স্ত্রী আসমা কিবরিয়ার একটি দীর্ঘ সাক্ষাতকার নিই। যতটুকু ছাপা যায়, তার চেয়ে বেশি অপ্রকাশিত রাখতে হয় বেদনা মাখা কথা। আসমা কিবরিয়ারও তখন অনেক বয়স, কিন্তু কী প্রত্যয় তাঁর কথায়, কী দীপ্তি তাঁর চোখেমুখে। কিবরিয়া হত্যার বিচারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ আর ক্ষুব্ধ।

পৃথিবীর সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় না, অনেক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন সম্ভব হয় না। আজকে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের তদন্তেও যদি সেরকম হতো, তবু একটা সান্ত্বনা থাকত। কিন্তু যখন শাপলা চত্বরের মিথ্যা গুজব রটিয়ে বিএনপি সিলেট সিটি করপোরেশন, হবিগঞ্জ পৌরসভা এরকম গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকারগুলোতে বিপুল ভোট জয়ী হলো, তখনই কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নতুন মোড় পেল। এবার তদন্তে উঠে এলো যে এইসব মেয়ররা কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল- অতএব এদেরকে এরেস্ট করে এদের মেয়রগিরি কেড়ে নাও।

এরা কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল কি না মামলার রায়ে প্রমাণিত হবে, কিন্তু এরা জড়িত ছিল এটা জনমনের বিশ্বাস না। কিবরিয়া হত্যার সময় আরিফুল হক চৌধুরী ছিলেন প্রায় নো-বডি। তিনি ছিলেন আরেক জেলার সিটি করপোরেশনের একজন কমিশনার মাত্র, যার কাজ ছিল সাইফুর রহমান সিলেট গেলে তাঁর সাথে সাথে ঘুরে কিছু উন্নয়নের বাজেট বরাদ্দ নেয়া। আরিফুল হক চৌধুরী হবিগঞ্জ জেলাতে গিয়ে একজন সাবেক অর্থমন্ত্রীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করার মতো বড় মাপের কিছু ছিলেন না, এটা করে তার কোনো রাজনৈতিক লাভও নাই-এটাই যে সিলেটে বিশ্বাস তা সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলেই টের পাওয়া গেছে।

তো, এই যে কিবরিয়া হত্যার বিচার হলো না, সে দুঃখ মানা যায়; কিন্তু এই যে লোকটার হত্যার বিচারকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হলো, এটা কোন সন্তান মানবে? বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, আপনি হলে মানতেন? আসমা কিবরিয়া ফুটপাতে- রাজপথে শান্তির জন্য নীলিমার আহ্বান জানাতে জানাতে স্বামী হত্যার বিচার না দেখেই চিরশান্তির দেশে চলে গেলেন কিছুদিন আগে।

রেজা কিবরিয়াকে গালি দিবেন না প্লিজ। তাঁকে গালি দেয়ার যোগ্যতা আপনার আমার নেই। যদি এমপি হওয়ার লোভ থাকত, তাহলে রেজা কিবরিয়ার জন্য সহজ পথ ছিল। নমিনেশন চাইলে আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাওয়া তার জন্য কঠিন ছিল না, রেজা কিবরিয়া শিক্ষাদীক্ষা ও অন্যান্য যোগ্যতায় এই আসনের সবচাইতে আকর্ষণীয় প্রার্থী, সিম্প্যাথি ভোট তাঁর ভালোই আছে, হবিগঞ্জের এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি- সব মিলিয়ে নৌকা মার্কার ইলেকশন করলে তাঁর জন্য এমপি হওয়ার পথ সহজ হতো। ধানের শীষ নিয়ে এই আসনে তাঁর নির্বাচন অনেক কঠিন হবে।

কিন্তু রেজা কিবরিয়া কি আসলে এমপি হওয়ার জন্যই এই নির্বাচন করছেন? নাকি পিতার হত্যার বিচার না পেতে পেতে ক্ষুব্ধ সন্তানের এ এক প্রতিবাদ মাত্র?

কিবরিয়া হত্যার পর রেজা কিবরিয়া তাঁর বাবার নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছিলেন। সেখানে একটি টাইমার লাগানো আছে যা প্রতি সেকেন্ডে আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে কিবরিয়া হত্যার পর কতদিন চলে গেছে। এই লেখাটি যখন লিখছি, তখন http://kibria.org/ ওয়েবসাইটে দেখাচ্ছে, কিবরিয়া মারা যাওয়ার পর ৫০৪৩ দিন ১৩ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৭ সেকেন্ড চলে গেছে। কী পল অনুপল দণ্ডে দণ্ডে এই হিসাব রাখা, কী অপার অপেক্ষা একটি খুনের বিচারের...।

রেজা কিবরিয়াকে গালি দেয়ার যোগ্যতা তো আপনার নেইই, হয়তো তাঁর বেদনা- ক্ষোভ অনুভবের ক্ষমতাও আপনার নেই...।

আরিফ জেবতিক, ব্লগার ও সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ