প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এখলাসুর রহমান | ০১ ডিসেম্বর, ২০১৮
বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, আমান উল্লাহ আমান, ডা. জাহিদ হাসান সহ সাজাপ্রাপ্ত অনেক বিএনপি নেতা একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। নির্বাচন করতে পারছেন না সরকারের অতি উৎসাহী পক্ষাবলম্বনকারী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনি সম্প্রতি সরকারকে তুষ্ট করার জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছেন। তিনি অভিযোগে বলেন বিচারপতি এসকে সিনহা তাকে ডেকে নিয়ে উৎকোচ দাবী করেছেন। এবার তিনি নিজেই ফেঁসে গেলেন দুর্নীতির দায়ে।
অতি উৎসাহী তুষ্টতায় সরকারকে তুষ্ট করে এমপি হওয়ার স্বপ্নও দেখেছিলেন তিনি। এবার বুঝি তার আম ও ছালা দুটোই গেল। পত্রিকায় শিরোনাম হলো: আপিলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল: দণ্ডপ্রাপ্তরা নির্বাচন করতে পারবেন না
খালেদা জিয়া, নাজমুল হুদাসহ ২ বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্তরা এবার নির্বাচন করতে পারবেন না : দুদক আইনজীবী/২৮ নভেম্বর, ২০১৮/বুধবার আপিল বিভাগে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা ও দণ্ড (কনভিকশন অ্যান্ড সেন্টেন্স) স্থগিত চেয়ে বিএনপি নেতা ডা. জাহিদ হোসেনের করা আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ দেন। এতে মঙ্গলবার হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রইল। অর্থাৎ সংবিধান অনুসারে কোনো ব্যক্তির ২ বছর বা তার বেশি সাজা হলে এবং রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল বিচারাধীন থাকলেও দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আপিল বিভাগের আদেশের পর খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশই বহাল আছে। নির্বাচন কমিশন আদালতের এ আদেশ মানতে বাধ্য। ফলে বিএনপির ওই পাঁচ নেতা এবং খালেদা জিয়া, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাসহ যাদের ২ বছরের বেশি সাজা হয়েছে, তারা কেউ এবার নির্বাচন করতে পারবেন না।’
দুর্নীতির দায়ে বিচারিক আদালতের দেয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মশিউর রহমান ও মো. আবদুল ওহাব। শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিএনপির পাঁচ নেতার পৃথক পাঁচটি আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন।
ওই আদেশে আদালত বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ধারা অনুসারে দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই। দণ্ডিত ব্যক্তি সাজার বিরুদ্ধে আপিল করলে তার জরিমানা স্থগিত হতে পারে। তিনি জামিনে থাকতে পারেন। সাজাও স্থগিত হতে পারে। তবে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সাজা স্থগিত হলেও আপাতদৃষ্টিতে দণ্ডিতদের সাজাপ্রাপ্ত অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না।যতক্ষণ না পর্যন্ত তার দণ্ড ও সাজা যথাযথভাবে উপযুক্ত আপিল আদালতে বাতিল হচ্ছে বা তিনি দায় থেকে খালাস পাচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তার অবস্থান দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্ত। তাই সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য। এ আদেশের পরপরই মঙ্গলবার দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করেন এজেডএম জাহিদ হোসেন। সেটি বুধবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
আপিল বিভাগে এজেডএম জাহিদ হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন।শুনানিতে জাহিদ হোসেনের আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আবেদনকারী দীর্ঘদিন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের একজন প্রার্থী। এ কারণে নিম্ন আদালতের দেয়া সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে তিনি আবেদন করেছেন। কিন্তু হাইকোর্ট ওই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।যদিও এর আগে সুপ্রিমকোর্টের আদেশে সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সাজা স্থগিত হওয়ায় তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এমন নজির রয়েছে।
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে কিনা সেটা নিয়ে ভারতেও সম্প্রতি আলোচনা চলছে। আদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়ায় একাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেনা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার মামলায় সাবেক এই মন্ত্রীকে চার বছর কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬৭ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করা হলে তা জাতীয় স্বার্থ, অর্থনীতি ও দেশের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
উল্লেখ্য ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার মামলায় ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট নাজমুল হুদাকে ৭ বছর ও তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাইকোর্ট তাদের খালাস দেন।ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। আপিল বিভাগ ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় বিচার করার নির্দেশ দেন। পুনঃশুনানি শেষে গত বছরের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে নাজমুল হুদাকে চার বছর কারাদণ্ড ও সিগমা হুদাকে তার কারাভোগ কালকে সাজা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সবসময় আলোচিত সমালোচিত ও বিতর্কিত হতেই পছন্দ করেন যেন।
একসময় তিনি অতি আওয়ামী লীগ বিরোধী ছিলেন কিন্তু বর্তমানে হয়ে উঠছিলেন অতি উৎসাহী অতি আওয়ামী লীগ ভক্ত। নাম সর্বস্ব কিছু দল নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ৩১ দলীয় জোট। চেষ্টা করেছেন মহাজোটে মেশে কিছু আসনের ভাগী হতে। বিচারপতি এস কে সিনহাকে সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ভাল চোখে দেখছিলেন না তাই প্রধান মন্ত্রীর কাছে ভাল সাজতে তিনি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে উৎকোচ দাবীর মামলা করে বসলেন। এখন তিনি নিজেই ফেঁসে গেলেন। একেই বুঝি বলে পরের জন্য গর্ত খুঁড়ে নিজে গর্তে পড়ে যাওয়া। কে শত্রু,কে মিত্র সেটা অন্য বিষয়। তবে শত্রু ভাবলেই মিথ্যে অভিযোগ সাজানো আর বন্ধু ভাবলে অতি প্রশংসা এগুলো পরিত্যাজ্য হবে কবে?ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সহ সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে কি?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য