আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

জনমত জরিপ কি সত্যি?

আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল  

জনমত জরিপ কি সত্যি? বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ নিয়ে বিএনপি জামায়াত কি বলবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেকেও নিশ্চিত নয় আসলেই আ'লীগের ৬৬% জনপ্রিয়তা আছে কি-না!

সোশ্যাল মিডিয়ায় যাদের বিচরণ তাদের কাছে বিএনপি জামায়াতের অপপ্রচার খুব বেশি চোখে পড়ে। মাঠেঘাটে সমালোচনাও আছে। তাই বিভিন্ন বিদেশী সংস্থার নিরপেক্ষ জনমত জরিপ দেখে আওয়ামী লীগের অনেক কট্টর সমর্থকের চোখেও কিছুটা অবিশ্বাস দেখি। দলের ৬৬% জনপ্রিয়তা অভাবনীয় মনে করেন অনেকে।

অবিশ্বাসের এই মনস্তাত্ত্বিক কারণ উল্লেখ করছি।

জামায়াত শিবিরের সার্বক্ষণিক সক্রিয় থাকা অনলাইন একটিভিস্টের সংখ্যা কমপক্ষে ২০ হাজার। এদের সকলের দুই বা ততোধিক ফেক আইডি রয়েছে। শিবিরের সিক্রেট গ্রুপের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা চোখ বন্ধ করে নির্দিষ্ট পোস্টে লাইক ও শেয়ার দেয়, অনলাইন পোলে ভোট দেয় এবং বিভিন্ন পেইজ ও পত্রিকার নিউজে মন্তব্য করে।

বিএনপির গত নয় বছরে মাঠ পর্যায়ে তেমন কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছিল না। তাই বিএনপির নেতাকর্মীরা ২০১২ সাল থেকেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে অনলাইনে মনোনিবেশ করে। অনলাইনের পাশাপাশি এই কর্মীবাহিনী রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন না করলেও নিরপেক্ষতার ভান ধরে, ক্ষেত্র বিশেষে 'আগে আওয়ামী লীগ করতাম' বা 'বাবা আওয়ামী লীগ করে' ইত্যাদি পরিচিতি দিয়ে মাঠপর্যায়েও অপপ্রচার চালায়। এছাড়া নিষিদ্ধ ছাত্রী সংস্থার পাশাপাশি জামায়াতের মহিলা শাখার সদস্যরা বিভিন্ন স্কুলে ছাত্র/ছাত্রীর মা-বোন-খালা পরিচয় দিয়ে অভিভাবকদের মাঝে অপপ্রচার চালায়।

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির খুব বেশি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম নেই। লাইক বা শেয়ারে তাদের কার্পণ্য থাকে। মাঠেঘাটে সমালোচনা শুনলেও নীরব থাকে। দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের অনেকেই জনগণের বদলে নির্দিষ্ট সার্কেলে সীমাবদ্ধ। এছাড়া সার্বিকভাবে কারও প্রতি অন্ধ আনুগত্য নেই বলে দলীয় কারো অপকর্মের সাফাই দেয় না। বরং অনেক কট্টর সমর্থকও বিভিন্ন আলাপচারিতায় সমালোচনায় মুখর থাকেন।

আওয়ামী লীগের উন্নয়নের তেমন প্রচার না দেখলেও সাধারণ মানুষ অপপ্রচারগুলো দেখে। দেখে হাজার হাজার লাইক ও শেয়ার। ফলে সংবাদমাধ্যমেও ভাইরালের স্বীকৃতি পায়।
নির্দিষ্ট সংখ্যক সদা তৎপর কর্মীবাহিনীর তৎপরতা ও তাণ্ডবের ফলে শুধু সাধারণ জনগণ নয়, অনেক কট্টর সমর্থকের মাঝেও বিএনপি জামায়াত সন্দেহ সৃষ্টি করতে পেরেছে যে সরকারের জনপ্রিয়তায় হানি ঘটেছে।

কোটা সংস্কার গ্রুপের উদাহরণ দেয়া যায়, তারা নিরপেক্ষতার ভান ধরলেও তাদের সকল কর্মকাণ্ডই মূলত সরকারের বিরোধিতামূলক। যুদ্ধাপরাধ, খালেদা-তারেকের দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং ২১শে আগস্টের মত বহু বিষয়ে তারা নীরব। শিবির যেমন ৭১ না দেখার বাহানা দেয়, তারাও বিএনপির শাসনামল না দেখার কথা বলে। যা দেখেছে অর্থাৎ পেট্রোল বোমা হামলা বা মানুষ পোড়ানোর মত ঘটনার সঙ্গে জামায়াত শিবিরের তাণ্ডবের প্রতিবাদে সংগঠিত লগিবৈঠার প্রতিরোধের তুলনা করে। ইচ্ছামত লোক এড করে তৈরি করা গ্রুপে বিএনপি ও শিবিরের লাইক-ব্যাংকের বদৌলতে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার রিচ পেয়ে তাদের ধারণা হয়েছে সকল ছাত্রছাত্রীরা তাদের পক্ষে। তরুণ সমাজ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে - এমন ভ্রান্ত ধারণারও শিকার তারা। আর এতে কর্মীবিহীন গণজাগরণ মঞ্চের মত মাত্রা যোগ করেছে কিছু পোর্টাল। অথচ তারা সারাদেশ থেকে সকলে একত্রিত হলেও যে ছাত্রলীগের একটি ইউনিটের সমান হতে পারবে না, এই বাস্তবতা বোঝে না, বা বুঝলেও বুঝতে দেয় না।

মূলত জনসমর্থন সবসময় প্রকাশ বা প্রচারের বিষয় নয়। এটি প্রচার করে দলীয় নেতাকর্মীরা। প্রচারণার গুরুত্ব অবশ্যই আছে তবে সরকারী দল হওয়ার ডিফল্ট কিছু সুবিধা আছে। আমরা দেখেছি ১৯৯১ সালে সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে বেশিরভাগ শ্রেণী-পেশার মানুষ যখন এরশাদের বিরুদ্ধে, তখন পতনের পরও জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসন পেয়েছিল, যা এখন পাবে না। বিরোধীরাও সরকারের উন্নয়নের স্বীকৃতি দেয় কারণ এ উন্নয়ন দৃশ্যমান। বিদ্যুৎ সুবিধার ভোক্তা জনগণ। বয়স্ক ভাতা থেকে শুরু করে বৃত্তি, কৃষি ঋণ, আশ্রয়ণ, একটি বাড়ি একটি খামার, তথ্য প্রযুক্তি, বিনামূল্যে বই ইত্যাদি অগণিত সুযোগ সুবিধার সরাসরি উপভোক্তা সংশ্লিষ্টের গোটা পরিবার তথা জনগণ।

জনগণের মধ্যে এমন ধারণাও রয়েছে যে, আ'লীগ না এলে এ ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। সাধারণত বিদায়ী সরকারের দলে অন্য দলের নেতাকর্মীরা যোগদান করে না। কিন্তু এবার সারাদেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছে এবং আ'লীগে যোগদান করেছে। জনগণ খুব ভালোই জানে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় এলে অরাজকতা হবে। তাই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে শেখ হাসিনা আশা আকাঙ্ক্ষা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতীক, আস্থার আশ্রয়স্থল। এর সাথে যখন আ'লীগের ভোট ব্যাংক ৩৩%-৩৫% যুক্ত হয় তখন আ'লীগের ৬৬% জনপ্রিয়তা মোটেই অস্বাভাবিক নয়।

জনপ্রিয়তা থাকলেই যে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় তা বোধহয় ঠিক নয়। বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার অংকে শেখ হাসিনা সবসময়ই শীর্ষে ছিলেন। সকল জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের মোট প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বেশি ছিল। কিন্তু ৮৬, ৯১ বা ২০০১ এ ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হয় নি। ৩০% ভোট পেয়ে দুই শতাধিক আসনে জয়ী হওয়া কঠিন কোনো বিষয় নয়।

বিভিন্ন জরিপের ফলাফল অবশ্যই ফ্লোটিং ভোটে বা সমর্থকদের উৎসাহিত করতে প্রভাব ফেলে, কিন্তু এ ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী না হয়ে মাঠের সমীকরণ ও অপপ্রচার সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।

আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল, সাবেক ছাত্রনেতা ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ