আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

নির্বাচনী ইশতেহার এবং বড় বড় দলের মৌলবাদ তোষণ!

শিতাংশু গুহ  

নির্বাচনের ইশতেহার না ইশতেহারের নির্বাচন? নির্বাচনের ১২/১৩দিন আগে বড়বড় দলগুলো এদের ইশতেহার প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে এবার রাষ্ট্রধর্ম তুলে দেয়ার অঙ্গীকার নেই? দরকারও নেই? কারণ, দেশ এখন মদিনা সনদে চলছে। বিএনপি’র ইশতেহারে তারেক জিয়াকে একজন ‘সৎ’ নেতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। হয়তো এ কারণে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি’র নির্বাচনী ইশতেহার বছরের সেরা কৌতুক।

ঐক্যফ্রন্ট যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। বিএনপি তা করেনি। এই প্রথম একই প্রতীকে দু’টি ইশতেহার প্রকাশিত হয়েছে? ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে মিল আছে, অমিল প্রচুর। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ‘ধানের শীষ’ নিয়ে বেশ ক’জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী নির্বাচন করছেন, এদের বিচার কি সম্ভব? নিন্দুকেরা বলছেন, নৌকায়ও যুদ্ধাপরাধী আছেন। অর্থাৎ নৌকা ও ধানের শীষে যুদ্ধাপরাধী নির্বাচন করছেন, তাহলে কি যুদ্ধাপরাধ তেমন কোন অপরাধ নয়?

ইশতেহারে কেউ সুশাসনের অঙ্গীকার করেন নি। তারমানে শাসন ব্যবস্থায় উন্নতি হবেনা? বিএনপি পুনরায় ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’ ফিরিয়ে আনার কথা বলেছে। ঐক্যফ্রন্ট বলেছে, দুই টার্মের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না? বিএনপি তাই বলেছে। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ‘নিরাপদ সড়ক’-র অঙ্গীকার থাকায় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বিএনপি বলেছে, ক্ষমতায় গেলে তারা কারো প্রতি প্রতিশোধ নেবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি বা আমার সহকর্মীরা ভুলভ্রান্তি করে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন’। চমৎকার। আওয়ামী লীগের একুশ অঙ্গীকার অনেকটা আগের মতোই। আওয়ামী লীগ পৃথক সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেনি। ঐক্যফ্রন্ট বলেছে। আওয়ামী লীগ ‘মাইনরিটি কমিশন’ গঠনের অঙ্গীকার করেছে। বিএনপি এবার সংখ্যালঘু বিষয়ে মহাজোট থেকে একটু বেশি সোচ্চার? এতে কিছুটা লাভ হবে?

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই? প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে, মাহবুব তালুকদার সত্য বলেননি, সামগ্রিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। কে সত্য বলছেন, ইসি না সিইসি? জাতি গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে যতই চিল্লাক না কেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পাকাপাকি ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সেই আশায় গুড়ে বালি।

আশা ছিলো, একটি সময়ের পর সংসদে ট্রেজারি ও বিরোধী উভয় বেঞ্চে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ থাকবে। এবারকার নির্বাচনেও তা হচ্ছেনা? কারণ, দুই প্রধান জোট, মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্ট অথবা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা বিকল্পধারায় রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী আছে। দুই প্রধান দল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মৌলবাদীদের ওপর নির্ভরশীল।

নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে যুদ্ধাপরাধীরা নির্বাচন করছে। তারপরও আশা, সংসদে যারাই বসবেন, তাঁরা মৌলবাদের সঙ্গ ছাড়ুন। মহাজোট, ঐক্যফ্রন্ট, আওয়ামী লীগ, বিএনপি মৌলবাদ তোষণ বন্ধ করুন। বিএনপি’র সাথে আছে জামাত। আওয়ামী লীগের সাথে আছে হেফাজত ও ওলামা লীগ। জামাত খারাপ, কিন্তু হেফাজত-ওলামা ভালো হয় কি করে?

একটু পার্থক্য অবশ্য আছে, জামাত হচ্ছে ইসলামিষ্ট পার্টি আর হেফাজত-ওলামা ইসলামিক গ্রুপ। ইসলামিষ্টরা ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চায়। ইসলামিক গ্রুপগুলো ‘ইসলাম’ চায়, তবে অন্যের কাঁধে বন্ধুক রেখে। এজন্যে মহাজোট এবার হেফাজতকে দুইটি আসন দিয়েই পোষ মানাতে পেরেছে। কিন্তু জামাতকে বিশ দলীয় জোটের পঁচিশটি সিট দিতে হয়েছে। জামাত এর আগে ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে। হেফাজত-ওলামা এবার মহাজোটের লেজ ধরে হয়তো ক্ষমতার স্বাদ পেতে যাচ্ছে।

জামাত যেমন বিএনপি’র হাত ধরে ক্ষমতায় যেতে চায়; হেফাজত-ওলামা তেমনি মহাজোটের হাত ধরে এগুতে চায়। ভবিষ্যতে সময়-সুযোগ এলে জামাত-হেফাজত-ওলামা আওয়ামী লীগ-বিএনপি-কে ঠেলা মেরে নিজেরাই না ক্ষমতা দখল করে নেয়? শতহলেও জামাত-হেফাজত-ওলামা একই মায়ের সন্তান। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি হচ্ছে, এদের ওপরে ওঠার মই? এক্ষুনি এটি অবাস্তব মনে হচ্ছে? হ্যাঁ, আপাতত: এরা টিকে থাকতে চাচ্ছে, তবে ভবিষ্যতের রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে।

দেশে ৪৮ বছরের মাথায়ও আমরা স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। এর দায় রাজনৈতিকদের। রাজনীতিকরাই স্বাধীনতা বিরোধীদের টিকিয়ে রেখেছে। বলা যায়, আলগে রেখেছে। এখনো তোষামোদ করছে। দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষছে। অথচ দেশে শুধু একটি পক্ষই থাকা উচিত, সেটি স্বাধীনতার পক্ষ। এই কাজটি আওয়ামী লীগ করতে পারতো, করেনি, তাই এখন খেসারত হিসাবে মৌলবাদের সেবা করছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের সামনে আবারো ‘মুসলিম’ শব্দটি যুক্ত হবে? প্রশ্ন হচ্ছে, তখনো কি এটি বঙ্গবন্ধু’র আওয়ামী লীগ থাকবে?

শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ