প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
দেবজ্যোতি দেবু | ০৩ জানুয়ারী, ২০১৯
নোয়াখালীতে অন্যতম নেক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। যে ঘটিয়েছে তার একটি রাজনৈতিক পরিচয় আছে। সে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মী। অনেকেই বলছেন তার এই রাজনৈতিক পরিচয়টাকে নাকি আওয়ামী সমর্থকেরা অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন। সত্যি বলতে কি, আমার বন্ধু তালিকায় যেসব কট্টর আওয়ামী লীগ সমর্থক আছেন তাদের কাউকেই এমন জঘন্য কাজ করতে এখন পর্যন্ত দেখিনি। বরং দেখেছি এই ধর্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করতে। এমনটাই হওয়া উচিত। অপরাধী যেই হোক তার রাজনৈতিক পরিচয় দেখে তাকে আড়াল করার অপচেষ্টা করা মানে নিজের দলেরই অসম্মান করা। প্রত্যেকেরই উচিত কোন রকম যদি/কিন্তু/তবে বাদ দিয়েই অপরাধ এবং অপরাধীর বিষয়ে সোচ্চার থাকা।
কেন তার রাজনৈতিক পরিচয়কে অস্বীকার করা উচিত নয়?
কারণ, তার এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠার পিছনে তার রাজনৈতিক পরিচয়টা বড় একটা ভূমিকা পালন করেছে। ক্ষমতাসীন দলের নাম নিজের নামের সাথে জড়িয়ে তার মনের মাঝে ক্ষমতার যে দম্ভ প্রবল ভাবে জেঁকে বসেছে সেই দাম্ভিকতাই তাকে নানান অপকর্ম করতে সাহস যোগাচ্ছে। সে জানে সে যত বড় অপরাধই করুক না কেন, তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে। তার কিছুই হবে না। আর তার এমন ধারণা অবাস্তব কিছু নয়। এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে আমাদের দেশে যার সুষ্ঠু বিচার আমরা পাইনি শুধুমাত্র ঐ রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে। তাই তার রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে তাকে বিচার করা উচিত হবেনা। এবং সেই রাজনৈতিক দলেরও উচিত হবেনা এমন জানোয়ারকে নিজের নামের ছায়ায় আশ্রয় দেয়া।
অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয়টা ঢালাও ভাবে প্রচার করে আমরাও কিন্তু তার অপরাধ প্রবণতাকে পরোক্ষভাবে আস্কারা দিচ্ছি। কিভাবে দিচ্ছি?
আমরা যখন তার অপরাধের চাইতে তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রচারণা বেশি করবো তখন তার রাজনৈতিক পরিচয়টাই বেশি হাইলাইট করা হবে। এতে করে তার গ্রেফতার এবং বিচার প্রক্রিয়াতেও প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণ মানুষও একটা সময় ভাবতে শুরু করে, 'ওতো সরকার দলের লোক। ওর কিছুই হবেনা।' তাই ইচ্ছা থাকলেও সে আর প্রতিবাদে রাস্তায় নামবে না। আর ঐ জানোয়ারটা তার ক্ষমতার দাম্ভিকতায় আরো বড় আকারের জানোয়ারে পরিণত হবে।
বিস্ময় নিয়ে খেয়াল করলাম বিএনপি-জামায়াতের গুজব সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত হয়েছেন হতভাগ্য নির্যাতিতা নারী। ইতিমধ্যেই তার মারা যাওয়ার গুজব ফেইসবুকে ভাইরাল করা হয়েছে। কিছু ছবি আপলোড করে সেটাকে ঐ নারী এবং তার পরিবারের ছবি বলে দাবি করা হচ্ছে। মারা যাওয়ার ঘটনাকে গুজব দাবি করার একমাত্র কারণ, আজ সন্ধ্যা অবধি মারা যাওয়ার সংবাদের কোন সত্যতা কোথাও পাইনি। না সংবাদ মাধ্যমে না পুলিশ প্রশাসনের কাছে।
আরও মজার বিষয় হচ্ছে, সেই গুজবটাকে অন্ধের মত প্রচার করার দায়িত্ব নিয়েছেন বামপন্থী অতি বিপ্লবী নেতারা। ছবির সত্যতা কিংবা নির্ভরযোগ্য সোর্স জানতে চাইলে তারা অমুক ভাই তমুক ভাইয়ের ফেইসবুক পোস্ট এনে হাজির করছেন। যার সত্যতা সেই অমুক ভাই তমুক ভাইও বলতে পারছেন না!
দুদিন আগে এক বন্ধু আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলো বাকশালী সরকার তাদের কুকর্ম ধামাচাপা দিতেই থ্রিজি ফোরজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। তাকে বিনয়ের সাথে প্রশ্ন করেছিলাম, যে দেশের মানুষ সত্যতার চেয়ে গুজবে বেশি বিশ্বাস করে, যে দেশে ফেইসবুকে কিছু আপলোড হওয়া মাত্রই যাচাই বাছাই না করে হাজারে বিজারে শেয়ার করা শুরু করে, সেই দেশের মানুষের আদৌ কি থ্রিজি ফোরজি হজম করার মত যোগ্যতা হয়েছে?
ঐ অভাগী বোনটির সাথে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে। যে বা যারা এই বর্বরতা করেছে তাদের শাস্তি দাবি করুন, পারলে ঐ নরপশুকে পুলিশের হাতে তুলে দিন। তবুও ঐ হতভাগীকে নিয়ে রাজনীতি শুরু করবেন না প্লিজ। তাকে নোংরা খেলা থেকে রেহাই দিন। সম্ভব হলে তার পাশে থাকুন না হয় দূরে যান। অযথা তার নামে নোংরামি করে তাকে আর অসম্মান করবেন না। পরিবারটা নিরাপত্তাহীনতায় আছে। তাদের পাশে থেকে সাহস দিন। অযথা তাদের আরও বেশি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলবেন না।
প্রতিটি কাজেরই একটা পরিমিত মাত্রা থাকা উচিত। সেই সাথে সেই পরিমিতি বোধটুকুও আমাদের সকলের থাকা উচিত। অতিরিক্ত নির্লজ্জতা, অত্যাচার যেমন ভাল না, তেমনই প্রতিবাদের নামে মাত্রাতিরিক্ত কটুকথাও ভাল না। এতে করে প্রতিবাদের ন্যায্যতা হারাতে পারে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য