আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

বেতন-ভাতা না পেলে মিডিয়া বন্ধে কি রাজি হবেন সাংবাদিকেরা?

ফজলুল বারী  

সাংবাদিকদের নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে সকলপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নবম ওয়েজবোর্ডের বেতন-ভাতা সাংবাদিকদের যৌক্তিক দাবি। কারণ বাংলাদেশে এখন দুর্মূল্যের বাজার। সবার আয় যেমন বেড়েছে, জীবনও ব্যয়বহুল। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের আশ্বাস একটি অবাস্তব আশ্বাস। ওবায়দুল কাদের এক সময় দৈনিক বাংলার বাণীতে চাকরি করতেন। পত্রিকাটি কী কারণে বন্ধ হয়ে গেছে তা তিনি জানেন। যে পত্রিকা চলছিলো না, সেটির বাজার কাটতি ছিলোনা সেটি জোর করে চালানো যাচ্ছিলো না। বাংলার বাণী হাউস থেকে দ্য বাংলাদেশ টাইমস, সাপ্তাহিক সিনেমা নামের আরও দুটি পত্রিকা বেরুতো। একই কারণে সে দুটিও বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলার বাণী হাউসের কর্ণধার শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই। ধান্দাবাজি করে তিনি পত্রিকাগুলো চালানোর চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এরজন্যে তাকে আমি শ্রদ্ধা করি।

কাজেই সরকার যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে থাকেন তাহলে যেখানে যে পত্রিকা বা মিডিয়ার বাজার কাটতি নেই, পাঠক যেটি কেনেনা বা দেখেনা, যেখানে কেউ স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে বিজ্ঞাপন দেয়না, সেটিকেও বাংলার বাণীর মতো বন্ধ হবে অথবা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ সাংবাদিকদের ঠকিয়ে পত্রিকা-মিডিয়া বের করাও একটি দুর্নীতি। এখন বাংলাদেশে ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের শর্তে বিভিন্ন পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। দেশের নানাকিছুর মতো এই প্রক্রিয়াটিও দুর্নীতিগ্রস্ত। এরমাধ্যমে ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়িত হয়েছে এমন একটি সনদপত্রের ভিত্তিতে সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট পত্রিকায়। এই সনদপত্র কারা কীভাবে দিচ্ছেন সেটিও ওয়াকিবহালরা জানেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রাপ্ত সনদপত্রের কারণে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ওই পত্রিকাগুলো সরকারি বিজ্ঞাপন পেয়ে চললেও এর সবক'টিতে ওয়েজবোর্ডে বেতন দেওয়া হচ্ছেনা। অথবা পত্রিকাগুলোর সে সামর্থ্যও নেই। কারণ পত্রিকাগুলোর যে বাজার কাটতি নেই। পাঠক যে সেগুলো কিনে পড়েননা। আবার বাজার কাটতির পত্রিকাগুলো সরকারি বিজ্ঞাপন ছাড়াই ভালো আছে। এগুলোর কোন কোনটি সাংবাদিকদের এখনই অষ্টম ওয়েজবোর্ডের চেয়ে বেশি বেতন দিচ্ছে।

সে কারণে পুরো বিষয়টিতে স্বচ্ছতার স্বার্থে এমন একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন ছাড়া এখানে কেউ কোন পত্রিকা প্রকাশ বা মিডিয়া চালাতে পারবে না। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় একজন জুনিয়র রিপোর্টারকে সপ্তাহে সাড়ে সাতশ' ডলারের নীচে বেতন দেওয়া যায়না। সপ্তাহে ওই পরিমাণ বেতন ছাড়া কেউ কোন পত্রিকা বা মিডিয়ায় কাজও করেন না। কারণ এসব দেশে সবাই এমন কাজ কেউ করেন না যার আয়ে তারা নিজেরা বা পরিবার নিয়ে চলতে পারেনা।

জীবনের প্রয়োজন আর গতির কাছে আলগা-আবেগ এখন অচল। কাজেই মর্যাদাপূর্ণ পেশা জীবনের স্বার্থে দেশের সাংবাদিকরাও কি এ রকম একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন? যে নবম ওয়েজবোর্ড অনুসারে বেতন না দিলে তারা সে রকম কোন পত্রিকা বা মিডিয়ায় কাজ করবেন না। বা নবম ওয়েজবোর্ডবিহীন কোন পত্রিকা বা মিডিয়া এখানে চলতে দেবেন না। নিজস্ব ন্যূনতম মজুরির গ্যারান্টি ছাড়া গার্মেন্টস শ্রমিকরাও এখানে কাজ করেন না। সাংবাদিকরা করবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে হবে।

জনবহুল এবং ঘটনাবহুল বাংলাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এখন সাংবাদিকতা একটি ফুলটাইম পেশা। কাজেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে সব সাংবাদিককে। তারা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারলে যারা নবম ওয়েজবোর্ডে বেতন দেবেনা দিতে পারবেনা তারা তাদের প্রতারণামূলক দোকানগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে বাধ্য হবে।

দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে চাকুরি হারানোর আশংকায় অথবা বকেয়া বেতন পাওয়ার আশায়-অপেক্ষায় বাংলাদেশের সিংহভাগ সাংবাদিক ন্যায্য মজুরি অথবা নিয়মিত বেতন না পাওয়া সত্ত্বেও এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধা দেন। উল্টো সংবাদপত্র-মিডিয়া তথা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ তোলেন। নিয়মিত বেতন না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের অনেকে অমানবিক জীবনযাপন করেন। বকেয়া বাড়িভাড়ার কারণে বাড়িওয়ালার ভয়ে লুকিয়ে বাড়িতে ঢোকেন-বের হন। বেতন দিতে না পারায় তাদের অনেকের ছেলেমেয়েদের স্কুলের পড়া বন্ধ হয়। অথবা এসব সামাল দিতে গিয়ে তাদের অনেকে দুর্নীতিতে জড়ান। এতে করে দুর্নীতিবাজ সাংবাদিকদের কারণে সমাজে ত্যাগী সাংবাদিকদের ত্যাগ-তিতিক্ষাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

বাংলাদেশে কোনদিন তার পত্রিকা-মিডিয়া থেকে বেতন পাননি এমন সাংবাদিকের সংখ্যাও কম নয়। তবু যে পত্রিকা মিডিয়া তাদের বেতন দেয়না-দিতে পারেনা সেগুলো তারা বন্ধ করে দিতে চান না! অসচ্ছল, বাজার কাটতিবিহীন অলাভজনক পত্রিকা-মিডিয়া মালিকরা এর সুযোগ নেন।

অথচ বাজার অর্থনীতির শর্ত হচ্ছে বাজারে যার চাহিদা থাকবে সেই টিকে থাকবে অন্যগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। বাজার অর্থনীতির দুর্নীতিমুক্ত অথবা কম দুর্নীতির দেশগুলোয় আর দশটা প্রতিষ্ঠানের মতো বাজার কাটতিবিহীন অলাভজনক পত্রিকা-মিডিয়াও নিজে নিজে বন্ধ হয়। সরকারকে তা বলে বন্ধ করতে হয়না। সরকার শুধু আইনের প্রয়োগ দেখে। আর বাংলাদেশের বাজার অর্থনীতির দেশের বেশিরভাগ সাংবাদিক বা মিডিয়া কর্মীর এ সংক্রান্ত চিন্তাটা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চিন্তার! সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে রাষ্ট্র যেমন ভর্তুকি দিয়ে আর দশটি প্রতিষ্ঠানের মতো নিজস্ব সীমিত সংখ্যক পত্রিকা-মিডিয়া চালায় আর কী। এমন চিন্তার বাকশালের চারটি পত্রিকা আবার বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক গালির নাম।

বাংলাদেশের অনেক বাঘা দুর্নীতিবাজ, কর ফাঁকিতে চ্যাম্পিয়ন ব্যক্তিরা নিজেদের বর্ম হিসাবে যার যার একেকটি পত্রিকা-টিভি মিডিয়া অথবা অনলাইন মিডিয়া গড়ে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির অভিযানে এসব দুর্নীতিবাজ মিডিয়া মালিকদের হাত দিতে না পারেন তাহলে তাঁর অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ অথবা ব্যর্থ হবে।

ফজলুল বারী, প্রবাসী সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ