আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

চেতনায় শাহবাগ, প্রেরণায় শাহবাগ

রাজেশ পাল  

২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রজন্ম গর্জে উঠেছিলেন শাহবাগে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ধাক্কা দিয়েছিলো সেই গণজাগরণের ঢেউ।

আমাদের প্রজন্ম অঙ্গীকার করেছিলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে ঘরে ফিরে যাবেনা। স্বপ্ন দেখেছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত একটি ধর্মনিরপেক্ষ, শোষণ, বঞ্চনা মুক্ত, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী, অসাম্প্রদায়িক স্বদেশ বিনির্মাণের। সামিল হয়েছিলো দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে। করেছিলো, "শুয়োরের সাথে সহবাসের ফতোয়া অস্বীকার। রাজীব হায়দার, রায়হান দীপ, জগৎজ্যোতিদের আত্মবলিদানের মাধ্যমে কবর রচনা হয়েছিল রাজাকারতন্ত্রের।

আজ ছয় বছর পরে এসে আমরা কী দেখি? একাত্তরের রাজাকারদের বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের হয়েছে উপযুক্ত শাস্তি। কিন্তু বাকি স্বপ্নগুলো রয়ে গেছে অধরা। আজও নিষিদ্ধ হয়নি জামায়াতে ইসলামি নামের বিষবৃক্ষটির। যারা আজও সমানেই প্রচার করে চলেছে পাকিস্তানবাদের কম্যুনাল থিউরি। রাজাকারের ফাঁসি হলেও রাজাকারতন্ত্র টিকে আছে বহাল তবিয়তেই। রাজাকারের চেতনার বিনাশ না ঘটিয়ে শুধুমাত্র রাজাকারদের ফাঁসি তাই কতটা অর্থবহ ফলপ্রসূ হবে সেকথা অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ বটে।

তারপরও রাজাকারদের ফাঁসি হয়েছে, চারদশক ধরে বিচারের প্রত্যাশায় হাহাকার করে ফেরা একাত্তরের বীর শহীদদের আত্মা অবশেষে খুঁজে পেয়েছিলেন পরিতৃপ্তি। সেদিক দিয়ে অবশ্যই সফল একটি আন্দোলন ছিলো শাহবাগ মুভমেন্ট। পরবর্তীতে মাহমুদুর রহমানের "আমার দ্বেষ" (আমারদেশ) পত্রিকার অব্যাহত প্রোপাগান্ডা, ফলশ্রুতিতে হেফাজতের উত্থান এবং কতিপয় আয়োজকের বিতর্কিত আদর্শিক বিচ্যুতির ফলে যতই ম্লান করার অপচেষ্টা করা হউক না কেন, এদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের মতোই অনাগত কালের প্রজন্ম শ্রদ্ধাভরেই স্মরণ করে যাবে শাহবাগের অবদান।

কিন্তু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের, ৭২ এর সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন অধরা রয়ে গেছে আজো। উপরন্তু সমাজ জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি আশংকাজনকভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ধর্মান্ধতা।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গড়া ওঠা শাপলা চত্বরের পুরোধা শফি হুজুর আজ পরিণত হয়েছেন রাষ্ট্রের আধ্যাত্মিক গুরুতে। যাদের দাবির মুখে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়ে হিন্দু আর যুক্তিবাদী লেখকদের লেখাগুলো, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে অপসারিত হয় জাস্টিসিয়ার ভাস্কর্য, বইমেলা থেকে অলিখিতভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষিত হয় যুক্তিবাদী লেখকদের লেখাগুলো। সাময়িক প্রয়োজনের নিমিত্তে লং টাইম ফলাফলের বিবেচনা না করেই জন্ম দেয়া হয় আরেক ফ্রাঙ্কেস্টাইনের। বারবার সফলতার মুখ দেখতে পেয়ে যাদের স্পর্ধা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে মেয়েদের স্কুল কলেজে না পাঠানোর আবদার পর্যন্ত করে বসেছে মধ্যযুগের প্রতিনিধিরা।

উপরেই বলেছি, ধর্মান্ধতার ভয়াবহ বিস্তার সম্পর্কে। অনেকেই এই ক্ষেত্রে একতরফাভাবে মাদ্রাসার ছাত্রদের দোষারোপ করে থাকেন অবিবেচক ভাবেই। যা সম্পূর্ণ অনুচিত। কেননা হলি আর্টিজান ম্যাসাকারের মতো নৃশংস ঘটনাগুলোর সাথে বুয়েট বা নর্থসাউথে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে দিয়েছে জঙ্গিবাদের বিস্তার কিভাবে ছড়িয়ে গেছে সমাজের প্রিভিলেইজড শ্রেণির মানুষগুলোর মাঝেও। এরজন্য মূলত: দায়ী ধর্মান্ধতাই। কারণ এই ধর্মান্ধতা থেকেই একদিন ব্যক্তি মানসে সৃষ্টি হয় রিলিজিয়াস সুপেরিয়রেটি কমপ্লেক্স। যে সুপেরিয়রেটি কমপ্লেক্স থেকে উদ্ভূত বিশ্বাসের ভাইরাস কার্ফু জারি করে মগজে। আবির্ভাব হয় জঙ্গিবাদের। এই কারণেই একদিন শাহবাগে দাবি উঠেছিলো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার। দাবি উঠেছিল ৭২ এর সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার। যদিও সেই স্বপ্ন অনেকটাই হয়ে গেছে মলিন ধূসর।

হুমায়ূন আজাদ স্যার বলেছিলেন, "বাঙালি বিপ্লব করে। কিন্তু বিজয়ের পরেই ভুলে যায় সে কী জন্য বিপ্লব করেছিলো". শাহবাগে একদিন সব ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে গগনবিদারী স্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তোলার কুশীলবেরা অনেকেই আবারো বিভক্ত হয়ে গেছেন বিভিন্ন দলীয়, আদর্শিক ও ব্যক্তিগত সমীকরণের দল উপদলে। এককালের সহযোদ্ধাদেরই প্রতিপক্ষ বিবেচনায় দিনরাত লক্ষণের শক্তিসেল ছোড়ার প্রতিযোগিতায়ও মেতে উঠেছেন অনেকেই।

কিন্তু একাত্তরে মুক্তিসংগ্রাম আর ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের মতোই শাহবাগের গর্জন আজীবন ভাস্বর হয়ে রইবে আমাদের প্রজন্মের চেতনার মনস্পটে।

জয় বাংলা!

রাজেশ পাল, আইনজীবী, ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কর্মী

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ