আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

বিএনপির শেষ ভরসা সম্মেলন ও কাউন্সিলররা

এখলাসুর রহমান  

ভুল রাজনীতি, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, প্রতিপক্ষের প্রবল ও কৌশলী পদক্ষেপে নিত্য হেরে যাচ্ছে বিএনপি৷ তৃণমূলের হাজার হাজার নেতাকর্মী দলত্যাগ করে চলেছে৷ দলটি স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের পাশে বসিয়ে নিজেদের মদতদানকারী হিসেবে তুলে ধরেছে দেশবাসীর সামনে৷ জামায়াত নেতাদের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন দলটির অন্যতম নেতা আব্দুর রাজ্জাক৷ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।দলের আমীর মকবুল আহমদকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে তাঁর পদত্যাগের কারণ হিসেবে মূলত তুলে ধরেছেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দলটির ভূমিকাকেই।তিনি বলেছেন যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেছেন যাতে একাত্তরের ভূমিকার কারণে দলটি জাতির কাছ ক্ষমা চায়।বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।

চিঠিতে তিনি এও বলেছেন যে ওই ইস্যুতে তিনি জামাতকে বিলুপ্ত করে দেয়ারও প্রস্তাব করেছিলেন দলীয় ফোরামে।এছাড়া পদত্যাগপত্রে তিনি আরও উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আওতায় ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক দল গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি, কিন্তু সে দাবি অনুযায়ী জামাত নিজেকে এখন পর্যন্ত সংস্কার করতে পারেনি।জামাত সঙ্গে বিএনপির কি কোন ফায়দা হল? খালেদা জিয়ার কারাভোগের ১ বছর পেরিয়ে গেল এ দিনটিতেও দেশব্যাপী কোন কর্মসূচী দিতে পারলোনা৷ এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরেও চলছে নানা ক্ষোভ,বিক্ষোভ৷ এজন্য কেউ জামাত সঙ্গকে দায়ী করছেন৷ কেউ মীর্জা ফখরুলকে দায়ী করছেন৷ কেউ নির্বাসিত তারেক রহমানের অযাচিত হস্তক্ষেপকে দায়ী করছেন৷ ক্ষমতার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের দিক দিয়ে শতভাগ ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে দলটি৷ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে সে সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে আবার সে সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন সহ সকল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে৷ তখন তারা যে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধ ডেকেছিল সে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা ছাড়াই আপনা আপনিই থেমে গেছে৷ দলীয় নির্দেশনায় তা প্রত্যাহার হয়নি৷ এটা কি চরম রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়?

নির্বাসিত তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানানোও কি তাদের ভুল ছিলনা? ঘরে বসে কথা বলা ছাড়া কী কাজ করছেন তিনি দলের জন্য? যিনি দেশে আসতে পারবেন না দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারবেন না কেন তাকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানাতে হল?ক্ষমতায় থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি৷ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রধান মন্ত্রী তনয় হিসেবে প্রবল ক্ষমতাধর রাজপুত্রের মত হয়ে উঠছিলেন৷ বিদেশে অবস্থান করে তিনি জঙ্গিবাদ ও আন্তর্জাতিক মাফিয়াদের সাথে যোগাযোগ করে দলটিকে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দেন৷ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একক দল হয়ে উঠছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ৷ যেমন সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কিন্তু এতে বিএনপি না থাকায় নির্বাচনটি হয়ে উঠছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন৷ শুরু হয়ে যাচ্ছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে যাওয়ার ঘটনা৷ নির্বাচন হলেও তা কেবল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ গণতন্ত্রের জন্য বিরোধী দল অপরিহার্য৷ কিন্তু বিএনপি লাগাতার ভুলের কারণে বিরোধী দল হয়ে উঠতে পারলোনা৷ যে জামাত সঙ্গের কারণে বিএনপির এই হাল সেই জামাতের নেতাই আজ জামাত বিলুপ্তির দাবীতে জামাত ত্যাগ করল৷আরেকজন বহিস্কৃত হল৷ জামাত ও জঙ্গিবাদ সংশ্রব ত্যাগ করলে এদেশীয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি ও আন্তর্জাতিক সমর্থন হতে বঞ্চিত হতোনা দলটি৷ গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির টিকে থাকা প্রয়োজন ছিল৷

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একক দল হয়ে উঠছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ৷ অথচ গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী বিরোধী দল৷ বাংলাদেশ হারাতে চলেছে যথার্থ বিরোধী দলের অবস্থান৷ পার্লামেন্ট হয়ে উঠছে একই জোটের সাংসদদের নিয়ে৷ সুতরাং তারা যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম৷ এতে সংসদীয় স্বৈরতন্ত্রের খুবই আশংকা নয় কি?বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিরোধী দল হয়ে উঠতে একমাত্র সক্ষম বিএনপি৷ অন্য দলগুলোর সেরকম সাংগঠনিক শক্তি অর্জন হয়ে ওঠেনি৷ এ দলটি ছাড়া অন্য কোন দলের একক ভাবে সরকার গঠনের নজীর নেই৷ নজীর নেই সরকার দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেয়ার৷ নজীর নেই বিরোধী দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেয়ার৷ কিন্তু দলটির এই দুরবস্থায় গণতন্ত্র আজ মহাসংকটে পড়তে চলেছে৷ বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে দেশবিদেশে বিরাজ করছে শংকা৷ বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছে,অংশ নিয়েও ভুল করেছে,ভুল করেছে জামাত সঙ্গ ত্যাগ না করে৷ভুল করেছে জামাতকে দলীয় প্রতীক তুলে দিয়ে৷ ভুল করেছে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানিয়ে৷ উত্তরাধিকারের পারিবারিকীকরণ রক্ষা করেও যদি তারেক রহমানের পত্নী জোবাইদা রহমানকেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানাতো তবুও হয়তো এই করুণ দশা হতোনা৷ প্রথমে এরকম গুঞ্জন শুরু হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে ঘটলোনা হয়তো তারেক রহমানের অসম্মতির কারনেই৷ আসছে বিএনপির দলীয় সম্মেলন৷ কি ঘটতে চলেছে এই সম্মেলনে?শোনা যাচ্ছে ফখরুল বিরোধীরা সংগঠিত হতে যাচ্ছে তাকে মহাসচিব পদ হতে বাদ দিতে৷ ফখরুল পক্ষাবলম্বনকারীরাও সংগঠিত হতে যাচ্ছে৷

কী ফল নিয়ে আসবে এই সম্মেলন? এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবে কে?চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে পদাধিকার বলে তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরই সে দায়িত্ব পালন করার কথা৷ কিন্তু তিনি কি এ সম্মেলনে যোগ দিতে আসতে পারবেন?নাকি মনোনয়ন সভার মতো ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন?যে মানুষটা দলীয় সম্মেলনে আসতে পারবেনা এমন একজনকে কোন যুক্তিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানানো হল?কাউন্সিলররাও কি তাকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাখবে?নাকি ভারপ্রাপ্ত হতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে?নাকি দুজনকেই বাদ দিয়ে নতুন চেয়ারম্যান অথবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে?আসন্ন সম্মেলনে বিএনপি এক মারাত্মক অভ্যন্তরীণ সংকটে পড়তে চলেছে না কি?কাউন্সিলররা কি পারবে বিএনপিকে জামাত সঙ্গ ত্যাগ করাতে?যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বাদ দিয়ে দলটিকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ধারায় নিয়ে আসতে?তারা পারবে কি শারীরিকভাবে অনুপস্থিত একজন দণ্ডিত নির্বাসিত ব্যক্তিকে সরিয়ে শারীরিক ভাবে উপস্থিত কারো নিকট নেতৃত্ব তুলে দিতে?এতদিন ধরে চলা বিএনপির নেতৃত্ব শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে৷

এখন একমাত্র বিএনপির কাউন্সিলর যারা হবে তারাই একমাত্র পারে দলটিকে সুস্থধারায় ফেরাতে অথবা না ফেরাতে৷ বিএনপির উচিত ব্যর্থ আন্দোলনের নামে গলাবাজি বাদ দিয়ে একটি সফল সম্মেলন অনুষ্ঠান৷ উচিত সম্মেলনকে উপলক্ষ করে দেশব্যাপী গণসংযোগ ও জেলায় উপজেলায় কর্মীসভার আয়োজন৷ এতে করে হয়তো দলটি চাঙা হতে পারে৷ এছাড়া দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা কাটানোর অন্য কোন রাস্তা নেই৷ না হয় এখন যেমন জামাত পুনর্গঠনের দাবী উঠছে তৃণমূল হতে৷ দলীয় সংস্কারের দাবীতে ঘটছে বহিস্কারের ঘটনা৷ বিএনপিতেও অনুরূপ ঘটনা ঘটতে পারেনা কি নিশ্চয়? সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে দলটির ঢাকা মহানগরীর নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জুকে। ফেসবুকের ব্যক্তিগত টাইমলাইনে দেয়া এক স্ট্যাটাসে শিবিরের এই সাবেক সভাপতি নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মঞ্জু তার দীর্ঘ স্ট্যাটাসে দলে তার ভূমিকা, বহিস্কারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। এতে পরিস্কার ভাবে তার বহিস্কারের কারণ উল্লেখিত হয়েছে তার দলীয় সংস্কারের দাবী তোলা৷ব্যর্থতার ভারে নুয়ে পড়া বিএনপিতেও অনুরূপ ঘটবে নিশ্চয়৷ দলটির নেতৃত্ব পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এখন এর শেষ ভরসা কেবলই সম্মেলন৷ কাউন্সিলররা পারবে কি চরমভাবে নুয়ে পড়া দলটিকে টেনে সোজা করতে?

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ