প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ডোরা প্রেন্টিস | ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
সিলিন্ডার বিস্ফোরণ!
কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি!
গেটে তালা!
পুড়ে যাওয়া কিছু স্বপ্ন?
আমাদের কিছু গল্প!
বেশ কিছুদিন আগে দক্ষিণ ঢাকার মেয়রকে আমরা দেখেছিলাম মার্কেটে ঘুরে ঘুরে হাত জোর করে কাকুতি মিনতি করতে যাতে কেমিক্যালের গোডাউনগুলো সরানো হয়। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! ব্যবসা লাভ-ক্ষতির খাতাটা পুড়িয়ে নিয়ে গেলো কত স্বপ্ন; ঝলসে গেলো কত জীবন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী পুরান ঢাকায় খাতাকলমে এমন গোডাউন আছে ৮০০ এর বেশি, অলিখিত কত আছে সেদিকে না হয় না-ই গেলাম আমরা।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রোজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আবার এক ইতিহাসের সাক্ষী হল যার দায় চাইলেও আমরা এড়াতে পারি না, পারব না।
নিমতলির ঘটনার পর আমাদের নিজেদের আরও সচেতন হবার দরকার ছিলো তা না হয়ে নিজেরাই যেন মৃত্যুকে আমন্ত্রণ দিয়ে নিয়ে এলাম। ভালো মন্দ লাভক্ষতির হিসেব কি বুঝলো রিফাত-রিয়ার সেই গর্ভের শিশুটা, তার অভিশাপ থেকে কি মুক্তি মিলবে আমাদের? কিংবা সেই মায়ের নিজের ছেলের পুড়ে যাওয়া একদলা মাংসের জন্যে যে আহাজারি কি আমাদের কর্ণকুহরে আঘাত করবে না বার বার…… স্বপ্নে এসে জাগিয়ে দিবে না সেই চার বন্ধুর মাথার খুলি?
কত আর কত সইবে এই সর্বংসহা জাতি?
পুরান ঢাকা এক মৃত্যুফাঁদ, এ যেন নরকেই বাস। জীবনযন্ত্রণায় সয়ে যাওয়া মানুষগুলো যেন বীভৎস মৃত্যু যন্ত্রণাও সয়ে যায়। অভ্যাস হয়ে যায়। আধুনিক ঢাকা নিয়ে আমাদের যত স্বপ্ন পরিকল্পনা পুরান ঢাকা নিয়ে ভাবার সময় কই? কয়দিন আগে সোহরাওয়াদী হাসপাতালের আগুনটাও যেন নাড়া দিলো না তেমন।
২০১০ সালের ঘটনার পর আমরা অনেক আশার বাণী শুনেছি কাল আবার আমরাই আবার পুড়ে যাওয়া মাংসের মধ্যে প্রিয়জনদের খুঁজেছি।
পুরান ঢাকার জন্য বরাদ্দ অসীম যানজটের রাস্তা, যা দিয়ে জীবন বাঁচানোর অ্যাম্বুলেন্স, দমকল কিংবা সাহায্যকারী মানুষ— কিছুই সময়মতো পৌঁছতে পারবে না। তাদের জন্য রয়েছে সরু গলি, শুকানো পুকুর; তাই দমকলের আধুনিক গাড়ি কোনো কাজেই আসবে না। কেনাকাটায় আমরা বড়ই সেয়ানা। অপ্রয়োজনীয় জিনিস আর বাহিনীতে ভরপুর থাকবে রাষ্ট্রটা। সবচেয়ে দামিটা, সবচেয়ে বেশি দামে কিনে আমরা সাজিয়ে রাখব খেলনার মতো।
তারপর এক দুর্ভাগ্যের প্রহরে যখন ঢাকার ঘনবসতি পুড়ে যাবে, তখন গাড়িগুলো, যন্ত্রগুলো আমাদের ভেংচি কাটবে। আমরা বিরাট বিরাট ভবন আর সেতু বানাব, কিন্তু নিরাপদ ও সভ্য নগর বানাতে কিছু তো করবই না, যতভাবে এই নগরের প্রাণ, প্রকৃতি ও নিরাপত্তা নষ্ট করা যায়, তাতে মদদ দেব। জীবন চলে না এখানে, চালাতে হয়, নাকি বলবো চলে যায়।
মৃত্যুই এখানে সবচেয়ে সুলভ, গতিশীল ও নিশ্চিত। জীবন এখানে সবচেয়ে সস্তা।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য