প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ০৪ জুলাই, ২০১৫
উদ্ভাবনী কী!
অতীতে পাবলিক টয়লেটের দেয়ালে ও পিন-আপ করা নীল পত্রিকায় যেসব অশ্লীল-কুশ্লীল শব্দ লেখা থাকতো; যেগুলো লোকসমাজে উচ্চারণ নিষিদ্ধ ছিলো; সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টে ও মন্তব্যে যাচ্ছে-তাই ব্যবহার করে ডিজিটালাইজড করাকেই উদ্ভাবনী বলে।
সিপি গ্যাং নামের একটি ভার্চুয়াল গালিচর্চাকারী সংগঠন বাংলাদেশের সমাজের সর্বত্র গালি প্রচলনে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। সাইবার নারী নিগ্রহে ও অন্যান্যদের গালাগাল-ভয়ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সিপি গ্যাং খুব পরিচিত এক খিস্তি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নকারী সরকার তার আইসিটি তহবিল থেকে সিপি গ্যাংকে 'উদ্ভাবনী'র জন্য পুরস্কৃত করেছে। গালাগালের বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পৃথিবীর ইতিহাসে খুব সম্ভব এই প্রথম।
উন্নয়নের দুধের বালতিতে 'মধ্যরাতের অশ্বে'র চোনা:
পাকিস্তান এবং ভারতে নওয়াজ-মোদী মৌলবাদী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ স্পষ্টতই একটি ঝুঁকিপূর্ণ গিরিখাঁজে হাঁটছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সফল নেতা যিনি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদের ছোবল থেকে রক্ষা করে চলেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের যে মৌলবাদী জামাত-বিএনপি বলয় তারা বসে নেই। জামাত তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেহেতু অনেক টাকা-পয়সার মালিক হয়েছে; তাতে করে তাদের পক্ষে নিজেকে বেচে দিতে উদ্যত কতিপয় 'আওয়ামী লীগ' পরিচয়ের লোককে কিনে নেয়া কঠিন কিছু নয়।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কোন কেরানীকে একটি এপার্টমেন্ট কিনে দেয়া জামাতের পক্ষে খুব কঠিন কিছু নয়। তাই পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচী সময়ের দাবী। নইলে পচা শামুকে পা কেটে একটি সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রা মুখ থুবড়ে পড়বে। উন্নয়নের দুধের বালতিতে 'মধ্যরাতের অশ্বে'র এক টুকরো চোনাই যথেষ্ট।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কাউকে যদি এযুগের একদল গণধিকৃত গিয়াসউদ্দীন আল মামুনের অন্তরঙ্গ সেলফি আলোক চিত্রে অহোরহো দেখা যায়; বোঝা যায় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ধস নামানোর মিশনে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে নতুন 'তারেক ভাইয়া' তৈরী হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজের ছেলে-মেয়েকে যেমন শিক্ষা আর সততার আদর্শে বড় করেছেন; তাতে তারা কখনো কোন নেতিবাচকতার সঙ্গে থাকবে না; এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।
কিন্তু এই যে চুক্তিভুক্ত কর্মচারী যে আওয়ামী লীগে 'তারেক ভাইয়া' সংস্কৃতির আমদানী করেছে একদল 'মামুন' নিয়ে; এসব ভাইরাস এখনি দমন না করলে ভারতের কংগ্রেসের মতো জনপ্রিয়তায় প্রবল ধস নামবে। ড মনমোহন সিং বা রাহুল গান্ধীর সততা যে ধস ঠেকাতে পারেনি। ঐ যে উন্নয়নের দুধের বালতিতে 'মধ্যরাতের অশ্বে'র চোনা পড়লে যা হয়।
ব্যস্ত আছে একটি তারেক সব চোরেরই অন্তরে:
বিএনপি-জামাতের তখন রমরমা ক্ষমতার গরম। তারেক রহমান এক বক্তৃতায় খুব গরম দিয়ে বললো, কেউ যদি আমাদের বিপক্ষে কথা বলে কাস্তে দিয়ে হাত কেটে নেবো। আসলে সে বলতে চেয়েছিলো, কেউ যদি আমার দশ পার্সেন্ট উপার্জনে বাধা দেয়; তার হাত কেটে নেবো। এই দশ পার্সেন্টের কথাটি সে দেশপ্রেমের ফাঁপা বুলির আড়ালে রেখে দিয়েছিলো। কেউ কী ঐ উত্তেজিত তারেক রহমানকে দেখে কল্পনা করতে পেরেছিলো ঐ দম্ভের বক্তৃতার কয়েক বছর পর তার নিজের মেরুদন্ডটি আক্ষরিক অর্থেই ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু এটা অনেক আগে ভেবে রেখে গেছেন বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন। 'প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। নিউটনের এই তৃতীয় সূত্রটিই অনিবার্য।
এদিকে বাঁশের কেল্লার আদিমতা
সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই:
আমি এবং রোজা থাকা এই বিষয়টি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিস্ময়কর মনে হওয়ায় আমার বন্ধুরা আমাকে ইফতারে দাওয়াত দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সনাতন ধর্মের বন্ধুরা জগন্নাথ হলে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে ইফতার করিয়েছে; ঢাকায় চাকরী জীবনে বৌদ্ধ বন্ধু তার বাসায় ডেকে আমাকে ইফতার করিয়েছে; অনাবাসের জীবনে গোটা পাঁচেক রোজার মাসে হিন্দু ও খৃস্টান বন্ধুরা উইকএন্ডে ইফতারের দাওয়াত করে খাইয়েছে। অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকলে ক্যান্টিন থেকে ইফতার এনে টেবিলের উপর রাখতে দেখেছি ভারতীয় হিন্দু বন্ধুকে। এমনকী এই রোজাতেও সামনে এক হিন্দু বন্ধুর রেষ্টুরেন্টে ইফতারের দাওয়াত আছে। দাওয়াত দিয়েছে একজন নাস্তিক বন্ধুও।
আমাদের ক’জন ক্রিকেটার একসঙ্গে বসে ইফতার করায় বাঁশের কেল্লার 'জামাতে' ইসলামে বিশ্বাসী কতিপয় উপমানব দেখলাম কেন হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বসে ইফতার করছে এই প্রশ্ন খুব ক্রিমিনাল প্যারাসাইটস (সিপি) ভাষায় উত্থাপন করেছে। বিস্ময়কর চিন্তার জগতের এই সংকীর্ণতা এবং ক্ষোভ প্রকাশের অশ্লীল ভাষারীতি।
বাঁশের কেল্লা ও সিপি গ্যাং-এর উপমানবদের আনফ্রেন্ড করা পরিবেশবান্ধব:
গত পাঁচ বছরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিবিড় পর্যবেক্ষণে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা গুণী গবেষকদের চূড়ান্ত গবেষণা ফলাফল আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। গবেষকরা মতপ্রকাশ করেছেন, বাঁশের কেল্লা এবং সিপি গ্যাং এই দুটি অপরাধী চক্রকে আনফ্রেন্ড বা ব্লক করে দিলেই অনলাইনের দূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ এই দুটি অপরাধী চক্র চিন্তার জগতে মধ্য যুগে পড়ে আছে; এদের সঙ্গে সমসাময়িক মননের মানুষের মেলামশা সুস্থ সামাজিক মনোজগতের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
এখন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে এই বাঁশের কেল্লা ও সিপি গ্যাং-এর উপমানবদের কীভাবে পুনর্বাসিত করা যায়; যারা নিরন্তর একটি আলোকিত সমাজে এসে চাপাতি চালাচ্ছে এবং লাল বাতি এলাকার ভাষা অভিধান অনুসরণ করে সাইবার উইমেন হ্যারাসমেন্ট করছে; অন্যদের গালাগাল সন্ত্রাসে আক্রান্ত করছে।
গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, রেগে গেলে বাঁশের কেল্লা ও সিপি গ্যাং একই রকম অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে। এটিকে সহোদর সাদৃশ্য হিসেবে অভিহিত করেছেন ভাষা বিজ্ঞানীরা। একজন মনোচিকিতসককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, কেন একজন মানুষ এতো কুতসিত ভাষায় কথা বলে? চিকিতসক বললেন, এটি জেনেটিক। কারণ শিশু গর্ভাবস্থা থেকেই শেখে। যাদের বাবা-মা কুতসিত ভাষায় ঝগড়া করে; তাদের অবচেতনে এই গালাগালের বিকৃতিটি অনিরাময়যোগ্য এক অসুস্থতা হয়ে দাঁড়ায়।
বাঁশের কেল্লা ধর্মের ঝান্ডা হাতে নিয়ে এসে কুতসিত শব্দ ব্যবহার করে ধর্মের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ করছে। এরা বিএনপি-জামাতের ঝান্ডাটি অন্যহাতে ধরে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে 'গু'জব প্রচারের অকাজটি করে।
সিপি গ্যাং আওয়ামী লীগের ঝান্ডা হাতে নিয়ে এসে অশ্লীল গালাগাল করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চারনেতা ও অন্যান্য যে সোনালী যুগের মানুষেরা আওয়ামী লীগের যে গর্বিত ঐতিহ্যটি রেখে গেছেন সেটির ক্ষতি সাধন করছে। আওয়ামী লীগের সিনিয়ার নেতারা এদের ভাষা দেখে বিস্মিত হচ্ছেন। মূলধারার মিডিয়ায় সিপি গ্যাং নামের অপরাধী চক্রের খবর প্রকাশের পর নীতি-নির্ধারণী মহলেও সচেতনতা জারী রয়েছে।
বাঁশের কেল্লা এবং সিপি গ্যাং এই সহোদর অপরাধী চক্রটির বিকৃতি বাংলাদেশ সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুস্থ সমাজে রাখা অনুচিত। আর ভূমি বাস্তবতা থেকে এদের সরাতে বাঁশের কেল্লার গালি মেশিন ম্যান গুলোকে কোন ভাবে সৌদী আরবে কাজে পাঠিয়ে দেবার পরামর্শ রেখেছেন গবেষকরা।
কারণ আরবের শেখেরা এদের চাবকে ছাল তুলে দেবে কোন বাঁশের কেল্লাগিরি দেখালে। আর সিপি গ্যাং-এর লাল-বাতি ম্যানগুলোকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাল বাতি এলাকায় খদ্দের ডাকার কাজে নিয়োগের পরামর্শ রেখেছেন গবেষকরা। কারণ এতো অভিনব ও কুতসিত গালাগাল বিশ্বলালবাতিবৃত্তে সমাদৃত হতে বাধ্য।
তবে এই উপমানবদের পুনর্বাসনের দায় সরকারের। সাধারণ মানুষ এদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দেয়াই সঙ্গত। বাঁশের কেল্লা ও সিপি গ্যাং-এর বিকৃত গালি রোগীদের আনফ্রেন্ড ও ব্লক করুন। আনন্দম।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য