আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ফাগুন: সজীব হয়ে চলছে মহাশ্মশান!

মাসকাওয়াথ আহসান  

জামালপুর সদর উপজেলায় রেললাইনের পাশ থেকে মঙ্গলবার রাতে ইহসান রেজা (ফাগুন) নামের ২২ বছর বয়েসি তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ঢাকায় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ইহসান রেজা শেরপুর পৌর শহরের চকবাজার এলাকার সাংবাদিক কাকন রেজার ছেলে। কাকন রেজা সাপ্তাহিক শেরপুর পত্রিকার সম্পাদক। ইহসান ঢাকার তেজগাঁও কলেজের স্নাতক (অনার্স) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার নান্দিনা বন্ধপাড়া এলাকার রেললাইনের পাশে গতকাল রাতে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে পুলিশ লাশটি থানায় নিয়ে যায়। এরপর বুধবার সকালে অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরে পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে মর্গে গিয়ে ইহসানের লাশ শনাক্ত করে। (প্রথম আলো)

ফাগুন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলাম লেখক কাকন রেজার বড় ছেলে।

পুলিশ ধারণা করছে, ফাগুনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে রেললাইনের পাশে ফেলে গেছে। ফাগুনের মাথায় বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন ছিল।

কাকন রেজা বলেন, 'আমার ছেলের কোনো শত্রু ছিল না। কিন্তু কে বা কারা তাকে এভাবে হত্যা করল বুঝতে পারছি না।'

কাকন রেজা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফাগুন ঢাকার মহাখালী থেকে শেরপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। এরপর বেশ কয়েকবার তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগও হয়। সর্বশেষ রাত সাড়ে ৮টায় যোগাযোগের সময় ফাগুন তার বাবাকে জানিয়েছিলেন তিনি ময়মনসিংহের কাছাকাছি অবস্থান করছেন। এরপর ফাগুনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে মোবাইলে কল ঢুকলেও পরে সুইচ অফ পাওয়া যায়।

রাতে বাসায় না ফিরলে শেষ রাতে ও বুধবার সকালে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। পরে সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন কাকন রেজা।

ময়মনসিংহ পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝির বরাত দিয়ে বুধবার দুপুরে কাকন রেজা বলেন, ‘ফাগুনের মোবাইল ফোনের অবস্থান শনাক্ত করে দেখা গেছে, তার সর্বশেষ অবস্থান ছিল ময়মনসিংহের একটি গ্রামে। কিন্তু ওই জায়গায় যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’ (প্রিয় ডট কম)

ফাগুনের হত্যাকাণ্ডের চার দিন পেরিয়ে গেলো। একজন সম্ভাবনাময় তরুণের হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশাসন কিংবা পুলিশে আলোড়ন নেই। জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো আর বাংলা ডট রিপোর্ট ও প্রিয় ডটকম ওয়েব পোর্টাল ছাড়া আর কোথাও কোন খবর নেই; সাংবাদিকের কার্ড দড়ি দিয়ে বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক পাল সাংবাদিক; অথচ একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডে সাংবাদিক সমাজে নড়া-চড়া নেই। সাংবাদিকের সন্তান হত্যায় অন্যান্য সাংবাদিক বাবা-মায়ের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। নিজের সন্তানের লাশ রেললাইনের ধারে পড়ে থাকার আগে পর্যন্ত হুঁশ নেই কারো।

নিহত তরুণ সাংবাদিক ফাগুন যাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, সেই সিনিয়র সাংবাদিকেরা প্রত্যেকে বলছেন, ফাগুনের মাঝে নির্ভুল সাংবাদিকতার নিরাপোষ আগুন ছিলো; ছিলো শিষ্টাচার আর ছিলো একটি সভ্য সমাজ ও জনপদের স্বপ্রশ্ন।

ফাগুনের বাবা সাংবাদিক ও কলামিস্ট কাকন রেজা একজন সৎ ও নিরাপোষ সাংবাদিক। সাংবাদিকতার সৌজন্যের সংস্কৃতির শেষ কয়েকটি চিহ্নের একজন তিনি। কাকন রেজা বলেন, 'আমার ছেলের কোনো শত্রু ছিল না। কিন্তু কে বা কারা তাকে এভাবে হত্যা করল বুঝতে পারছি না।'

কাকন রেজা নিজেকেও এমন অজাতশত্রু বলে মনে করেন তিনি। কারণ যে মানুষ সৌজন্য নিয়ে আচরণ করেন সবার সঙ্গে; যিনি ঘৃণা-চর্চা নয় ভালোবাসা ও সম্প্রীতির মানুষ তিনি কী করে ভাবতে পারবেন তার কিংবা তার সন্তান ফাগুনেরও এমন শত্রু থাকতে পারে; যে হত্যার মত নৃশংস কাজ করতে পারে। কবে কবে কীভাবে চেনা সমাজ ও দেশ এমন অচেনা হয়ে গেলো তা অনুধাবন করা কঠিন তার পক্ষে। এমন অনিশ্চয়তার অনিরাপদ দেশকেই মৃত্যু উপত্যকা বলে। এ হচ্ছে এমন এক জনপদ যেখানে যে কেউ যে কোন মুহূর্তে খুন হয়ে যেতে পারে; খুনিকে দুর্বৃত্ত লিখে ক্ষান্ত দিয়ে মিডিয়া ভুলে যেতে পারে ফাগুনকে।

আর প্রশাসক, পুলিশ তারা এতো বড় বড় কাজে ব্যস্ত যে, মানুষের নিরাপত্তা দেবার গৌণ কাজটি করার ফুসরত কোথায়। সব কাজের একটাই ঠিকানা 'প্রধানমন্ত্রী' যদি ঠেলা দেন; তবেই একটু নড়ে চড়ে হত্যা তদন্ত; সম্ভব হলে এক চুমুক সোনার পাথর বাটি 'ন্যায়বিচার'। কিন্তু আগামিকাল আরেকজন ফাগুন নিহত হবে না এমন নিশ্চয়তা নেই; আমাদের সামনে যে তরুণ-কিশোরেরা ঘুরছে; তারা একটি হিংস্র জুরাসিক পার্কে সার্বক্ষণিক মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পথ হাঁটছে। এইভাবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র সজীব করে চলেছে মহাশ্মশান।

এই রক্তপিপাসু সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা খুনিদের অভয়ারণ্য। ফাগুনের খুনি যেমন উন্নয়নের রক্ত পান করে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে, এই রাষ্ট্রব্যবস্থাটাই এমন; এখানে ফাগুনের মতো সভ্য শিষ্ট প্রতিভাবান তরুণ প্রয়োজন নেই। এখানে এই মাংসের কারবার চালিয়ে যাবার উপযুক্ত ঠগি আর খুনিদের প্রয়োজন।

'ফাগুনে'র মতো সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের আলোর আগুন নিভিয়ে দিয়ে এখানে ছাই ফেলতে ভাঙা কুলা নিয়ে সুরে সুরে উন্নয়নের পরিসংখ্যান মন্ত্র উচ্চারণ করে কোন আদিম রাক্ষস; যেন লকলকে জিহ্বা বের করে নতুন শিকারের অপেক্ষায়।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ