আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

কোরবানির দিন কোনও একটি দরিদ্র গ্রামে

ফজলুল বারী  

জনকণ্ঠের পাঠকদের টাকায় আমরা একবার বাংলাদেশের একটি দরিদ্র জনপদে কোরবানির ব্যবস্থা করেছিলাম! পুরো ঘটনাটি আবার সবার সঙ্গে শেয়ার করি। একবার এক কোরবানি ঈদের আগে শেরপুরের এক গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব আমাদের কাছে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে ইমাম সাহেব লেখেন, তার গ্রামের মানুষ খুব গরিব। বছরে একবারই কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তারা মাংস খান! কিন্তু সে ঈদের আগের ঈদে গ্রামে কোনও কোরবানি না হওয়ায় তারা সেবার মাংস খেতে পারেননি! কারণ গ্রামের কারও কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না।

ইমাম সাহেবের কথাগুলো আমাদের খুব স্পর্শ করে। চিঠির কথাগুলোকে নিয়ে আমরা একটি মানবিক রিপোর্ট তৈরি করি। সেটি জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় বক্স ট্রিটমেন্টে ছাপা হয়।

কিন্তু সেটি ছাপার পর সৃষ্টি হয় অন্য আরেক মানবিক পরিস্থিতির! নিউজটি ছাপার দিনই ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। অফিস বন্ধ। আমি থাকতাম নিউ ইস্কাটন রোডের জনকণ্ঠ অফিসের সামনের গলিতে। অফিস থেকে ফোনে আমাকে অফিসে যেতে অনুরোধ করা হয়। কারণ, কিছু লোকজন অফিসে এসে আমাকে খুঁজছে! অফিসে গিয়ে দেখি তিন পরিবারের লোকজন রিসেপশনে বসা। আমাকে তারা বলেন আপনার রিপোর্ট পড়ে আমরা আবেগতাড়িত হয়ে আমাদের কোরবানির গরুর টাকা নিয়ে এসেছি। এই টাকাগুলো সেই গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন প্লিজ। যে গ্রামে আগের ঈদে কোরবানি হয়নি! ওই অবস্থায় আমি যোগাযোগ করি জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান তথা সবার প্রিয় তোয়াব ভাইয়ের সঙ্গে। তাকে ঘটনা বলে এ ব্যাপারে নির্দেশনা চাই। তিনি টাকাগুলো রিসিভ করে তা জনকণ্ঠের শেরপুর প্রতিনিধির মাধ্যমে সে গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলেন। কিন্তু তখন এ নিয়ে আরেক সমস্যা দেখা দেয়! কারণ তখন তো আজকের মতো এমন টাকা পাঠানোর নানান ব্যবস্থাপনা ছিল না।

জনকণ্ঠের শেরপুর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি টাকাগুলো ফুলবাড়িয়ার বিআরটিসি বাস ডিপোতে 'অমুকের' কাছে পৌঁছে দিতে বলেন। এরপর বিআরটিসির বাসে টাকাগুলো যায় শেরপুরে। সে টাকাগুলো পেয়ে মনিরুল ইসলাম ছুটে যান সেই গ্রামে। সেই ইমাম সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাজার থেকে কেনেন তিনটি বড় গরু। ঈদের দিন এ নিয়ে সে গ্রামে ছোটাছুটি পড়ে যায়। ঈদের নামাজের পর সেই পরিবারগুলোর সদস্যদের নামে সেই ঈদগাহের পাশেই গরু তিনটি কোরবানি দেওয়া হয়। সেখানেই কাটা হয় মাংস। ঈদের জামায়াত শেষে অপেক্ষমাণ মানুষেরা যার-যার ভাগের মাংস নিয়ে বাড়ি যান। ঈদের ছুটির পর পুরো বিষয়টা নিয়ে জনকণ্ঠে আমরা একটি ফলোআপ রিপোর্ট করেছিলাম।

কোরবানির ঈদ, পশু কোরবানি নিয়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশ জুড়ে এক ধরনের যজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে! অনেকে যার-যার গ্রামে কোরবানি দিতে যাবেন। শহরে পাড়ায়-পাড়ায় চলবে কোরবানির পশু নিয়ে নানাকিছু! কোরবানির উদ্দেশ্যে কেনা পশু নিয়ে পাড়ায় মহল্লায় ঘুরবে একদল মৌসুমি সৌখিন শহুরে রাখাল! আজকাল আমাদের সমাজে সংসারে ধর্মীয় বিশ্বাসের কোরবানির চাইতে কোরবানিটা আমাদের সামাজিক জীবনে এটি অনেকের বিত্ত-বৈভবের এক ধরনের প্রদর্শনীও বটে! কার গরুর দাম কত টাকা, ভাই আপনি গরু না ছাগল এসব প্রশ্নের নানান কিসিমের পরিস্থিতিও চলবে কয়েকদিন।

দৃষ্টি আকর্ষণে অনেকে আজকাল উটও কোরবানি দেন! ভারতের রাজস্থানের উট সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে হয়ে যায় পবিত্র আরবের পবিত্র উট! ঢাকার মতো বড় শহরগুলোয় কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মাংস সংগ্রহের জন্যে বাইরে থেকে অনেক লোকজন আসেন। তাদের অনেকে এতবেশি মাংস পান যে ঈদের দিন শহরের নানা জায়গায় এসব মাংস বিক্রির হাট বসে! বিভিন্ন এলাকার হোটেল মালিকরা তুলনামূলক কম দামে এসব মাংস কিনে নিয়ে ফ্রিজ বোঝাই করে রাখেন! ঈদের পর এসব মাংসের তরকারিই অনেকদিন বিক্রি হয় এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা অনেকে এ সব মাংস খোলা জায়গায় রোদে শুকিয়ে শুটকির মতো করে নিয়ে যান!

দেশের সামর্থ্যবানদের আমরা কোরবানি নিয়ে ভিন্ন চিন্তার অনুরোধ করছি। আপনার কোরবানিটা এমন কোনও দূরবর্তী দরিদ্র গ্রামে গিয়ে দিন যেখানে অনেক মানুষের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। আপনার কোরবানিটা তেমন একটি গ্রামে দেওয়া গেলে এতে করে সে গ্রামের মানুষেরা অন্তত ঈদের দিন মাংস খেতে পারবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে যে আনন্দ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে, তা হবে অনেক মূল্যবান এক উপলব্ধি প্রাপ্তির। পাবেন তাদের প্রাণের দোয়া। এতে করে আপনার সম্পদ দরিদ্র মানুষের কাছে শেয়ারিং তথা ধর্মীয় মূল্যবোধের কাজটিও সঠিকভাবে করা যাবে।

এ ব্যাপারে কেউ উৎসাহী হলে আমরা আমাদের মাঠকর্মী সাংবাদিকদের মাধ্যমেও এর আয়োজনে সহযোগিতা দিতে পারবো। প্রয়োজনে আপনিও উপস্থিত থাকতে পারেন তেমন আয়োজনের গ্রামে। দেখবেন এতে করে ঈদের খুশির আনন্দ ছড়িয়ে যাবে সবখানে।

ট্রাই করে দেখবেন?

ফজলুল বারী, প্রবাসী সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ