আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

আবরার হত্যায় আমাদের দায়

আরিফ জেবতিক  

আবরার ফাহাদ হত্যা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে সাধারণ ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ প্রচেষ্টা শুরু না হলে এরকম আরও আবরারের লাশ আমাদের বয়ে নিতে হবে।

ক্যাম্পাসগুলোতে একসময় শক্তির ব্যালেন্স ছিল, বিভিন্ন দলের সহাবস্থান থাকার কারণে সাধারণ ছাত্ররা একপক্ষের নির্যাতনের শিকার হলে অন্যপক্ষের সহায়তা পেত। কিন্তু এখন ক্যাম্পাস মানের সরকারি ছাত্র সংগঠনের একছত্র আধিপত্য। চাঁদাবাজি, গুণ্ডামির মাধ্যমে তারা সকল বদমাশকে এক ছায়াতলে এনে ভরণপোষণ দেয়।

আমি অবাক হয়ে দেখি, যে ছাত্র সমাজের সম্মিলিত প্রতিরোধ শক্তি এই দেশের সবচাইতে গর্বের ধন, সেই ছাত্র সমাজ এখন একান্তই এককেন্দ্রিক, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতায় ডুবে আছে। এই বিচ্ছিন্নতার ফলে এরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হলেও এর কোনও সমাধান হচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রের ক্যালকুলেটর চুরি করেছিল ছাত্রলীগের নেতারা। সেই ক্যালকুলেটর ফেরত চাইতে গেলে এহসান রফিক নামের সেই ছাত্রকে সারারাত মেরে, চোখ উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল তারা। এহসান রফিকের সেই ক্ষতবিক্ষত চোখ তার সহপাঠীদের বিক্ষুব্ধ করেনি।

ছাত্রলীগের ডিউটি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল অসুস্থ হাফিজুর মোল্লাকে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ছেলেটা মারা গিয়েছিল। তার লাশ তাঁর সহপাঠীদের বিক্ষুব্ধ করতে পারে নি।

এই বিশ্ববিদ্যালয় কৃষকপুত্র নুরুকে ভোট দিয়েছে, কিন্তু নুরুকে যে পথেঘাটে মন্দিরের ঘণ্টার মতো নিত্য বাজিয়ে চলে গুণ্ডারা, তখন তাদের ভিপির সম্মান নিয়ে এই ছাত্ররাই চুপ থাকে।

এসবের ফলে যা হয়েছে, এই নির্যাতন দিনকে দিন বাড়তেই থাকবে। সন্ত্রাসীদের মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে ত্রাস তৈরি করে রাখা। এরা সবসময়ই সংখ্যালঘু হয়, তাই ত্রাস তৈরি করে না রাখলে তাদের রাজত্ব টিকে থাকে না। একবার সাহস করে এদের চ্যালেঞ্জ করে বসলে লেজ গুটিয়ে পালাবার পথ পাবে না।

নব্বই দশকে অভি-নীরু বাহিনী এরশাদের সকল শক্তিকে পিছে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকেছিল, কিন্তু ছাত্রদের সম্মিলিত প্রতিরোধে ঘণ্টাখানেকও টিকতে পারে নি। এই যে আজকের বড় বড় গুণ্ডা দেখছেন এদের দৌড়ও এর চাইতে বেশি হবে না। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে সারাদেশের সব ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য আজকের দিনের মতোই বহাল ছিল। কিন্তু যে রাতে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলো তার পরদিন কোনও হলে একজন ছাত্রলীগ নেতাকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছাত্রদলকে ক্যাম্পাস দখল নিতে সারাদেশে একটা ঢিলও ছুড়তে হয়নি। এই হচ্ছে এসব সন্ত্রাসীদের হিম্মত, সরকারে থাকলে বাঘ, সরকারে না থাকলে বিলাই।

সুতরাং র‍্যাগিং, নির্যাতন, গণরুমের নির্যাতন এসবের বিরুদ্ধে প্রাণে বাঁচতে চাইলে সাধারণ ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের কোনও বিকল্প নেই। অন্য কেউ এসে তাদের উদ্ধার করে দেবে না। অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর সেই হিম্মত নেই, বেশির ভাগের সেই নৈতিক অধিকারও নেই। কোনও হলে একজন ছাত্র নির্যাতিত হলে বাকি ছাত্রদের উচিত একেবারে বাঁশি বাজিয়ে, হাতের কাছে যা পায় তা নিয়ে একযোগে প্রতিরোধে এগিয়ে আসা। তাহলেই এই গুণ্ডাতন্ত্রকে রুখে দেয়া সম্ভব।

যে মেরুদণ্ডহীন প্রক্টর-প্রভোস্টের দল এসব গুণ্ডাতন্ত্রকে পেছন থেকে মদদ দেয়, প্রথম ধাক্কায় এদেরকে শাস্তি দিতে হবে। এভাবে দুয়েক জায়গায় ঘটনা ঘটতে থাকলে সারাদেশের ক্যাম্পাস মাস্তানি কয়েকদিনের মধ্যেই উবে যাবে।

বিষয়টা হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যক্তি মানুষেরও দায় আছে অনেকটা।

এই ধরনের একমাত্র ঘটনা ঘটেছিল বেগম সুফিয়া কামাল হলে। ছাত্রলীগের মাস্তান নেত্রী ইফফাত জাহান এশাকে জুতার মালা পরিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছিল সাধারণ ছাত্রীরা। দুঃখের বিষয় সেই সময় এই সাধারণ ছাত্রীদের নৈতিক সাহস যোগানোর ক্ষেত্রে আমরা কার্পণ্য দেখিয়েছিলাম। যদি না করতাম তাহলে সুফিয়া কামাল হল যে পথ দেখিয়ে দিয়েছিল, সেই পথে চলার সাহস পেত সারাদেশের অন্যান্য হল আর ক্যাম্পাসগুলো। কিন্তু আমাদের লুথা ল্যাথার্জিক এক্টিভিজম সেই সময় সুফিয়া কামাল হলের সাধারণ ছাত্রীদের পেছনে শক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে নি।

এসবের ধারাবাহিকতাই এই আবরার হত্যা। আবরার হত্যার দায় তাই শুধুমাত্র ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীর নয়, পরোক্ষভাবে আবরার হত্যায় আমাদেরও দায় আছে।

যতই গলা বড় করে আমরা সেই দায় অস্বীকার করি, সাধারণ নির্যাতিত মানুষের সাথে কণ্ঠ না মেলানোর, কাঁধ না মেলানোর সেই দায় আমরা কেউই এড়াতে পারব না।

আরিফ জেবতিক, ব্লগার ও সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ