প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শওগাত আলী সাগর | ০২ নভেম্বর, ২০১৯
কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কিশোর আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা যে যাই প্রতিক্রিয়া দেখাই না কেন, তার বাবা মাকে সান্ত্বনা জানানোর কোনো ভাষা এখনো সম্ভবত তৈরি হয়নি। সারা জীবনে তারা এই দু:সহ স্মৃতি থেকে মুক্তিও পাবেন না। তবু আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত এই মৃত্যুর ঘটনায় গভীরভাবে শোক জানাই।
২.
রেসিডেন্সিয়াল স্কুল একটি ‘ডিসিপলিন্ড স্কুল’ হিসেবেই পরিচিত। ওই স্কুলের ক্যাম্পাসে প্রথম আলো পরিবারের বড় ধরনের একটি আয়োজনের ব্যাপারে আয়োজকদের বাড়তি সতর্কতা থাকাটাই কাঙ্ক্ষিত। তারপরও আবরার নামের এক কিশোরকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
আবরারের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো প্রশ্নই সামনে আসে। ঠিক কিভাবে সে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে এলো, এতো বড় একটা আয়োজন যেখানে- সেখানে বিদ্যুতের তারে ত্রুটি কিভাবে থাকলো- এগুলো দেখার ব্যাপার আছে। ‘যদি বিদ্যুতের তার মাঠে ছড়িয়ে থেকে তাকে কিংবা পড়ে থাকে’ তা হলে তার দায়টা প্রথমত ওই অনুষ্ঠানে যারা বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছেন- তাদের।
পশ্চিমের দেশগুলোতে এই ধরনের কাজ যারা করেন- তাদের সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে লাইসেন্স নিতে হয়, বড় অংকের ইনস্যুরেন্স থাকতে হয়, যাতে তাদের কাজের কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়। বাংলাদেশে এই ধরনের ব্যবস্থা আছে কি না- আমার জানা নাই। তবে বিদ্যুতের তারের কোনো ধরনের ব্যাপার থাকলে ওই অনুষ্ঠানে যারা বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিলেন, দায়িত্বহীনতার জন্য প্রথম তাদের ব্যবস্থার আওতায় আনা দরকার।
৩.
সেগুফতা শারমীন তার পোষ্টে প্রশ্ন করেছেন- "ঠিক কিভাবে কোন স্থানে আবরার বিদ্যুতায়িত হলো তার কোন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ কিন্তু এখনো কোথাও চোখে পড়েনি। সাধারণত এরকম ঘটনায় একজন বিদ্যুতায়িত হলে বাঁচাতে গিয়ে বা কোন না কোনভাবে আরও অনেকেই আহত হয়। মোট কথা ইলেকট্রিক শক নীরবে একজনের উপর দিয়ে যাওয়ার মতো কোন বিষয় না।
একটা বাচ্চাই আহত হলো, কেউ টেরই পেল না। নীরবে হাসপাতালে নিয়ে চলে গেল। কোথাও কোন হইচই হলো না! এটা কিভাবে সম্ভব?”- এই প্রশ্নটা আমারও।
৪.
আবরার মৃত্যুর প্রতিবাদে রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে, তাদের বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানাই। রেসিডেন্সিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেছেন। কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা উপসংহারে আসার আগে ওই তদন্ত কমিটির রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করার কথাই বলবো আমি। সরকার চাইলে- সরকারি কোনো সংস্থাও তদন্ত করতে পারে।
ব্লগার, লেখক মোহাম্মদ গোলাম নবী লিখেছেন, কিশোর আলোর অনুষ্ঠান নিয়ে বিভিন্ন ভার্সন দেখছি। আশা করি মেধাবী সাংবাদিকরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এই সুযোগ হাতছাড়া করবে না'। তার সঙ্গেও আমি একমত। ঢাকায় এতো টেলিভিশন, এতো পত্রিকা, এতো সাংবাদিক- তারাও এ নিয়ে অনুসন্ধান করতে পারে। সত্যি বলতে কি- কোনো পত্রিকায়ই এ পর্যন্ত আবরারের মৃত্যু নিয়ে পরিপূর্ণ কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায় নি।
৫.
একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলি, আবরারের দুঃখজনক মৃত্যুর জন্য খ্যাতিমান লেখক আনিসুল হককে ‘খুনি’ বানিয়ে দেয়া কিংবা সম্পাদক মতিউর রহমানকে গালি দেয়াটা সম্পূর্ণভাবে অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। প্রথম আলো কিংবা আনিসুল হক আবরারকে খুন করেনি, কিংবা খুন করার নির্দেশ দেয়নি। আবরারের মৃত্যু ঘটেছে দুর্ঘটনায়, সেই দুর্ঘটনায় আয়োজক প্রতিষ্ঠানের ‘সুপারভাইজরি ডিউটিজ’ পুরোপুরি পালন হয়েছে কি না- তা নিয়ে অবশ্যই আমরা প্রশ্ন তুলবো। না হয়ে থাকলে তাদের দায়িত্বহীনতারও বিচার চাইবো।
প্রথম আলোর মতো একটি বড় প্রতিষ্ঠানের যে কোনো আয়োজনে 'ত্রুটিমুক্ত প্রস্তুতি' যে কেউই দেখতে চাইবেন। কিন্তু আনিসুল হক কিংবা প্রথম আলো- আবরারের খুনি- এই ধরনের প্রচারণা বন্ধ হওয়া দরকার। অন্তত অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য একটি তদন্তের মাধ্যমে আবরারের মৃত্যুর কারণ সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত। আবরারের মর্মান্তিক মৃত্যু যদি সত্যিই আপনাকে স্পর্শ করে তাকে তা হলে আনিসুল হককে গালি না দিয়ে প্রকৃত ত্রুটিটার দিকে আঙুল তোলা দরকার।
হ্যাঁ, আবরারকে স্কুল সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে না নিয়ে দূরবর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতালে কেন নিয়ে যাওয়া হলো- সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই আয়োজক প্রতিষ্ঠান দেবেন। সেটি কি 'সরকারি হাসপাতালের বরাবরের অবহেলাজনিত' ভীতি? বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় অধিকতর মনোযোগ এবং এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেহেতু চেনাজানা- সেখানে ভালো চিকিৎসা হবে- এই ধারনা থেকে বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়া- সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা আয়োজকরাই দেবেন। যে দুজন চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন- তাদের পরামর্শ কী ছিলো, তারা কী অবস্থায় আবরারকে হাসপাতালে পাঠাতে বলেছিলেন- সেগুলোও তো দেখার ব্যাপার আছে।
৬.
বাংলাদেশের মিডিয়া খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বলে মিডিয়ার বন্ধুরাই হরহামেশা বলে থাকেন। কোনো এক ব্যাংকারের অভিযোগের সূত্র ধরে সম্পাদকদের চরিত্রহননের রুচিহীন তৎপরতাও দেখছি ফেসবুকে। সেই তৎপরতায় 'সাংবাদিকতার চাকুরী' করেন- এমন লোকেরাই বেশি তৎপর।
আবরারের দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনা নিয়েও যেন আমরা একই পথে না হাঁটি।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য