প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শওগাত আলী সাগর | ০৪ আগস্ট, ২০১৫
একটা সময় নাকি ছিলো- শাসকরা ছদ্মবেশ ধারন করে প্রজার দুঃখ কষ্ট নিজ চোখে দেখার জন্য রাতের অন্ধকারে লোকালয়ে হেঁটে বেড়াতেন। এইসব কথা সত্য নাকি ইতিহাসের গালগল্প তা প্রমাণ করা কঠিন। তবু আমরা এইগুলো বিশ্বাস করি। কিন্তু এখন আর সেই শাসক নেই, সেই যুগও নেই। এখন শাসকদের নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর থাকতে হয়, সেই বলয়ের ভেতর আমজনতার প্রবেশাধিকার কল্পনাতীত।
শাসকরাও এই বলয়ের বাইরে পা রাখেন না। আসলে শাসকরা নিজেদের আমজনতা থেকে নিরাপদ দুরত্বে রাখতেই নানা নিয়ম-কানুন প্রবর্তন করেছেন। সেই নিয়মের বেড়াজাল অতিক্রম করে নাগরিকের কথা, মানুষের মনের কথা শাসকদের কান পর্যন্ত পৌঁছা দুরুহই হয়ে উঠেছে।
তবু নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট আবুল কালাম আজাদ দেশের শাসকদের কানে তাঁর নিজের কিছু পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। ‘ন্যায় বিচার চাই’- একটি কাগজে এই কথা লিখে রোববার সকালে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন আজাদ। গণভবনের পশ্চিম পাশের ফটকের উত্তর পাশে শ’ খানেক গজ দূরে তিন ঘণ্টা অবস্থানের পর তিনি ফিরে যান। আজাদ বলেন, পুলিশ তাকে সরে যেতে বলেছিল বলে তিনি চলে আসেন।(সূত্র: বিডিনিউজ)।
আজাদ হয়তো ভেবেছিলো- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে কেউ এসে তাঁর সমস্যার কথা শুনবে। তার সমস্যার কথা সোজা পৌঁছে যাবে প্রধানমন্ত্রীর কানে। তারপর তো সমাধান সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু শাসকদের ব্যাকারণ যে অতোটা সোজাসাপ্টা নয়, সেটা সম্ভবত পঞ্চমীঘাটের আজাদ বুঝে উঠতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পাইক-পেয়াদা, আমলা- কর্তা সবাই একজন শাসকের চাকরি করেন। তাদের স্বভাব বৈশিষ্টে শাসকদের চরিত্রেরই প্রতিফলন ঘটে। ক্ষেত্র বিশেষে পাইক পেয়াদারা শাসকদের চেয়েও কয়েক ডিগ্রী বেশি হয়ে যান। ফলে কোথাকার কোন আজাদ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে- সেটা দেখার ফুসরত কোথায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের? সাংবাদিকরা আজাদের দাঁড়িয়ে থাকার খবর দিয়েছেন জাতিকে। কিন্তু আজাদ কি বার্তা দিতে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে, সেই জমি দখলকারীরা কারা, কি তাদের ক্ষমতার উৎস- এইসব তথ্য কি সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছেন? তারা কি অনুসন্ধান করে এ নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন? কে জানে?
আজাদ কিন্তু বিপ্লবী বা বিদ্রোহী নন, প্রতিবাদীও নন। শান্তিপূর্ণভাবে একটি বার্তা শুধু তিনি পৌঁছাতে চেয়েছিলেন।পুলিশ বলা মাত্রই তিনি সেখান থেকে চলে গেছেন। তিনি ‘ন্যায় বিচার’ চাইতে এসেছিলেন, সেটি না নিয়েই, এমনকি ন্যায় বিচার পাওয়ার কোনো ধরনের আশ্বাস না নিয়েই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে থেকে চলে গেছেন।
আজাদ ন্যায় বিচার না পেলেও তিনি নতুন করে ‘অবিচারের’ মুখোমুখি হয়েছেন। রাতেই র্যাব চড়াও হয়েছে তার বাড়ীতে। আজাদের অভিযোগ অনুসারে, র্যাব তাকে পিটিয়েছে, তার চাচা এবং চাচাতো ভাইকে গ্রেফতার করেছে। র্যাব বলেছে, তারা ইয়াবা উদ্ধারে ওই বাড়ীতে তল্লাশি চালিয়েছে।
বাহ! কি চমৎকার কথা! আজাদ যেদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে ন্যায় বিচারের জন্য দাঁড়ালো- র্যাব ওইদিনই আজাদের বাড়ীতে ইয়াবার সন্ধান পেলো? তার আগে নয় কেন? পরেই বা নয় কেন? আজাদের দাবি, স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি গ্রামের দরিদ্র কিছু মানুষের ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমি বালু দিয়ে ভরাট করে দখলের চেষ্টা করছেন। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে জমির মালিকরা আক্রমণ ও হুমকির শিকার তারা। র্যাব-১১ এর অধিনায়ক আনোয়ার লতিফ বিডিনিউজকে বলেছেন, “আমরা জমি-জমার কোনো সমস্যা সমাধান করতে যাইনি, তা আমাদের কাজও নয়। আমরা ইয়াবাসহ আসামিকে ধরতে গিয়েছিলাম।” কোনো নাগরিক হুমকির শিকার হলে র্যাব সেটা দেখবেইনা কেন?
সোনারগাঁওয়ের সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিটি কে- তার পরিচয় আমরা এখনো জানি না। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় র্যাব এর পুরনো ইতিহাসের কারণেই র্যাব কারো হয়ে এই অভিযান চালিয়েছে বলে মানুষ বিশ্বাস করতে পারে।
আজাদের ঘটনাটাকে আমি একটু অন্যভাবে দেখি। রাষ্ট্রের নাগরিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, শাসকদের কাছে তাদের মনের কথা, বেদনার কথা, নিপীড়িত হওয়ার কথা পৌঁছানোর যে কোনো পথ নেই- তা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার এটি একটি উদাহরণ অবশ্যই। কারো যদি নিদেনপক্ষে গোষ্ঠীগত কোনো শক্তি না থাকে, একক কোনো নাগরিকের পাশে এই রাষ্ট্র, এই রাষ্ট্রের শাসকরা যে দাঁড়ায় না- তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ আজাদের এই ঘটনা।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য