প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
সাব্বির খান | ১৬ আগস্ট, ২০১৫
২০১৩ সালে ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এই রায়ের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে, যার প্রেক্ষিতে জামায়াত ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা হারায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর দলীয় যেই গঠনতন্ত্র, তা বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে প্রচন্ডভাবে সাংঘর্ষিক হওয়ায় নির্বাচন কমিশন থেকে জামায়াতকে তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং/অথবা পরিবর্তনের জন্য একাধিকবার নোটিশ দেয়। কিন্তু জামায়াতের গঠনতন্ত্রের যেসব ধারা-উপধারা এবং অনুচ্ছেদগুলো বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, সেগুলো পরিবর্তন বা সংশোধন করলে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতেরই অস্তিত্ব থাকে না বিধায় জামায়াত সংশোধন বা পরিবর্তন করা থেকে বিরত থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তকেই মেনে নেয়। অর্থাৎ মোদ্দাকথায়, জামায়াতের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার্থে জামায়াত তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন বা পরিবর্তনের আদেশ নাকচ করে নির্বাচন করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেয় এবং শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকে।
খালেদা জিয়া ১৫ আগষ্ট শনিবার রাত সাড়ে নয়টায় মোট পাঁচটি কেক কেটে তার জন্মদিনটি পালন করেছেন, যা বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসেছে এবং অনলাইনের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে খালেদাকে তুলোধুনো করছেন অনেকেই।
গত ২৩ বছর ধরে খালেদা জিয়া তার জন্মদিনটি ১৫ আগষ্টের প্রথম প্রহর রাত ১২:০১ মিনিটে বিশালাকৃতির কেক কাটার মাধ্যমে পালন করে এসেছেন। মহাসমারোহে এবং ধুমধাম করে খালেদা এবং বিএনপির বিভিন্ন শাখাগুলো গভীর রাতে কেক কেটে যে জন্মদিন পালনের রীতির প্রচলন করেছিলেন, তার যতটুকু ছিল জন্মদিন পালনের, তারচেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে হেয় এবং জাতির পিতাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা।
রাজনীতির এই সংস্কৃতি সারাবিশ্বে শুধুমাত্র একটি দেশ, বাংলাদেশেই দেখতে পাওয়া যায় যে, একটা দেশের জাতির পিতার মৃত্যুদিবসে একটা বিশেষ দল ধুমধাম হৈচৈ করে জন্মদিন পালন করে। এটা শুধু যে দৃষ্টিকটু তা নয় একই সাথে তা সভ্যতা বিবর্জিত।
২০১৫ সালের ১৫ আগষ্টে খালেদার জন্মদিন পালনে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে। তিনি ১৫ আগষ্টের প্রথম প্রহর রাত ১২:০১ মিনিটে জাতির পিতার প্রতি গত ২৩ বছরে এই প্রথম ন্যুনতম শ্রদ্ধা প্রদর্শনপূর্বক কোন ধরনের কেক কাটা থেকে বিরত থেকেছেন।
কিন্তু ১৫ তারিখ দিবাগত রাত ৯:৩০ মিনিটে তিনি পাঁচটি কেক কেটেছেন দেখে অনেকে হায় হায় করছেন, ধিক্কার দিচ্ছেন, ছি ছি করছেন। মনে মনে আমিও বলছি, 'খালেদা জিয়া, আপনি এইটুকু না করলেও পারতেন।' কিন্তু আমরা একটা কথা বার বার ভুলে যাই যে, খালেদার এই জন্মদিন পালন যতটা না আনুষ্ঠানিক, তারচেয়ে হাজার গুন বেশী রাজনৈতিক এবং তা বিরোধী রাজনৈতিক দলকে কটাক্ষ করে।
দীর্ঘ ২৩ বছরের পালনকৃত এই রাজনৈতিক জন্মদিন না পালনের অর্থ যে হয় উপরে উল্লেখিত জামায়াতের মত দলীয়ভাবে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বপনা স্বীকার করে নেয়া, তা আমরা না বুঝতে চাইলেও খালেদা বা তারেক ঠিকই বোঝেন। সুতরাং দীর্ঘ ২৩ বছরের অপ-রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল না হলেও, কিছুটা যে পরিবর্তন হয়েছে, তাও বা কম কি।
খালেদাকে ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নাই এখানে। তবে তারপরেও শুধু এটুকু বলা যায় যে, "খালেদা জিয়া যথেষ্ঠ পারঙ্গমতার সাথে জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকীর প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে প্রথম প্রহরে কেক কাটা থেকে বিরত থেকে জাতিকে এবং নিজেকে সম্মানিত করেছেন।
একই সাথে এটাও বুঝি যে, জামায়াত গঠনতন্ত্র পরিবর্তন বা সংশোধন না করে যেভাবে তাদের দল বাঁচিয়েছে, তেমনি খালেদাও ১৫ আগষ্ট দিবাগত রাত ৯:৩০ মিনিটে রাজনৈতিক (কথিত জন্মদিন) কেক কাটার মাধ্যমে বিএনপিকে ভূরাজনীতিতে অস্তিত্বগতভাবে শেষ রক্ষা করার প্রয়াস চালিয়েছেন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য