আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

‘আপা’ পূর্বের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি

সাকিল আহমদ অরণ্য  

বাঙালি জাতির জনক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ যখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়িতে ঠিক তখন তাঁরই ঘনিষ্ঠ সহচরদের মন্ত্রী হওয়ার ঘটনাই খন্দকার মোশতাককে সরকার গঠনে সহায়তা করেছিল এবং সরকারের ভীত শক্ত করেছিল। ৮১ দিনের মোশতাক নেতৃত্বাধীন সরকারে যোগ দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার ২১ সদস্য। স্বয়ং মোশতাক ছিল বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন।



কেবল তাই নয়, মোশতাক বাকশালের ১৫ সদস্যের পলিটব্যুরোর চার নম্বর সদস্য ছিল। এই মোশতাককে ১ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (৭ মার্চ ১৯৭৩) নির্বাচিত করতে আপনার পিতা কী সহযোগিতা করেছিলেন সেটা সকলেরই জানা। কুখ্যাত মোশতাকের মন্ত্রীসভা বহাল থাকা অবস্থায় ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। নিশ্চয় মনে আছে, যারা মন্ত্রী না হয়ে হত্যার প্রতিবাদ করে কারাগারকে বেছে নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদসহ বেশ কয়েকজন বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের মাঝামাঝি সময়ে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীও রাষ্ট্রপতি মোশতাকের প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা হয়েছিলেন মন্ত্রীর সমমর্যাদায়। মোশতাকের উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন মোহাম্মদউল্লাহ। বঙ্গবন্ধু সরকারের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহর স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে প্রবর্তন হয়েছিল বাকশালব্যবস্থা। বাকশালব্যবস্থার অধীনে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলে মোহাম্মদউল্লাহ মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন।

কুখ্যাত মোশতাক ক্ষমতায় এসে সামরিক শাসন কায়েম করলেও জাতীয় সংসদ বহাল রেখেছিলেন। ১৯৭৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে সাংসদদের সভায় যোগ দিতে অধিকাংশ এমপিরা এসেছিলেন। তাদের প্রায় সকলেই নিজের ইচ্ছায় এসেছিল। অবশ্য কয়েকজনকে হুমকি দিয়ে আসতে বাধ্য করেছিল মোশতাকের গুণ্ডারা। এই জাতীয় সংসদ এর স্পিকার ছিলেন আবদুল মালেক উকিল। স্পিকার হওয়ার আগে তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি স্পিকার হিসেবে বিদেশে স্পিকারদের একটি সম্মেলনেও যোগ দেন।

বঙ্গবন্ধু সরকারের আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর মোশতাকেরও আইনমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তিনিই ছিলেন কুখ্যাত ইনডেমনিটি নামক বিলটির রচয়িতা। মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তিনি মোশতাক সরকারের জন্য সামরিক বাহিনীর সমর্থন আদায়ে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন।

মোশতাক সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিল বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর, পরিকল্পনামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী, অর্থমন্ত্রী ড. আজিজুর রহমান মল্লিক, শিক্ষামন্ত্রী ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবদুল মান্নান, কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রী আবদুল মোমিন, এলজিআরডি মন্ত্রী ফণিভূষণ মজুমদার, নৌপরিবহনমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, গণপূর্ত ও গৃহায়নমন্ত্রী সোহরাব হোসেন।

প্রতিমন্ত্রীরা হয়েছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, ভূমি ও বিমান প্রতিমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, রেল ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, শিল্প প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম চৌধুরী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্ষিতিশ চন্দ্র মণ্ডল, পশু ও মৎস্য প্রতিমন্ত্রী রিয়াজউদ্দিন আহমদ ভোলা মিয়া, যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আলতাফ হোসেন ও মোমিনউদ্দিন আহমদ (বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় ছিলেন না)।

খন্দকার মোশতাক সরকারের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের পথ উন্মুক্ত করে দেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মহিউদ্দীন আহমদ বিশেষ দূত হয়ে। বঙ্গবভন বিশেষ দূত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৫ আগস্ট সংঘটিত হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ৮ আগস্ট দেশে ফিরে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

এদের অনেকেই পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে এসেছিল। কেউ কেউ জিয়াউর রহমান ও এরশাদের মন্ত্রীসভায়ও যোগ দিয়েছিল। সে সময় যদি তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করত এবং আরেকটা লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত তাহলে আজকে হয়ত বাংলাদেশের অবস্থা এরকম হত না। কিন্তু যে নেতার ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি স্বাধীন দেশের সৃষ্টি করা হল সেই দেশেই তাঁরই প্রিয় মানুষেরা তার জন্য সাহস করে আরেকটি যুদ্ধ করতে পারল না।

‘আপা’ আপনার মন্ত্রীসভায় যারা আছেন তারা আপনার জন্য হয়ত মানুষ মারতে পারে। কিন্তু ৭২ এর সংবিধানের মূলনীতির আলোকে বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য, আপনার দলের জন্য, আপনার জন্য মরতে পারবে ক’জন?

সাকিল আহমদ অরণ্য, সাংবাদিক, ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ