আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বয়স বাড়ার সময়কার উপলব্ধি

জাহিদ নেওয়াজ খান  

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দু'টি বিষয় টের পাচ্ছি:
১. বঙ্গবন্ধুকে আরো বেশি উপলব্ধি করার পাশাপাশি তাঁর প্রতি আরো বেশি শ্রদ্ধাবনত হচ্ছি।
২. আরো বেশি নতশির হচ্ছি মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের প্রতি যাঁদের বীরত্ব আর আত্মত্যাগে স্বাধীন বাংলাদেশ।

কাল রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে একাত্তরের আগস্টের শেষ তিনদিনের কথা খুব মনে হচ্ছিলো যখন কোনো একজনের বিশ্বাসঘাতকতায় আমাদের গেরিলা যোদ্ধাদের বেশ কয়েকজন ধরা পড়েছিলেন। তাঁদের সাতজন আর কখনও ফিরে আসেননি। নির্যাতনের সব উপায় প্রয়োগ করে তাঁদেরকে হত্যা করা হয়েছিলো। তাঁদের নখ উপড়ে ফেলা হয়। মটমট করে হাত-পায়ের হাড় ভেঙ্গে ফেলা হয় তাদের। প্লায়ার্স দিয়ে উপড়ে ফেলা হয় দাঁত।

দেশের জন্য কী পরিমাণ কষ্ট সহ্য করে শহীদ হয়েছেন তারা, সেটা ধারণা করতে পারলেও সেই শারীরিক ও মানসিক কষ্টটা আমরা কখনোই বুঝতে পারবো না।

মৃত্যুর আগে আলতাফ মাহমুদের চোখে নিশ্চয়ই শেষবারের মতো ভেসে উঠেছিলো কন্যা শাওনের মুখ।

চোখ তুলে নেওয়া হয়ে থাকলেও মনের চোখে নিশ্চয়ই মা জাহানারা ইমামকে দেখতে পাচ্ছিলেন রুমী।

নিশ্চয়ই বকর, আজাদ, জুয়েল, হাফিজ, বদিদের চোখে শেষবারের মতো ভেসে উঠছিলো প্রিয়জনদের মুখ।

তাঁদের মায়েরা, তাঁদের স্বজনরা তখন শোকের সাগরে ভাসছিলেন যে শোকে আজাদের মা জীবনের বাকি সময় আর ভাত মুখে নেননি কারণ রমনা থানায় শেষ দেখায় আজাদ ভাত খেতে চেয়েছিলেন; বাকি জীবন তিনি আর বিছানায় ঘুমাননি কারণ শেষ দেখায় ছেলেকে তিনি মেঝেতে দেখে এসেছিলেন। কিন্তু মায়ের মতোই যে দেশ, সেই দেশের জন্য আজাদকে মা শক্ত হয়ে থাকতে বলেছিলেন, বিশ্বের সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়া ছেলেকে দেশের জন্য 'কোরবানি' করে দিয়েছিলেন রুমীর আম্মা। সেই সোনা-সোনা ছেলেরা দেশকেও মায়ের মতোই ভালোবেসে শক্ত হয়ে থেকেছিলেন, দেশের জন্য কোরবান হয়ে গেছেন।

তাঁদের এ আত্মত্যাগ হৃদয়ের ভালোবাসার সঙ্গে মস্তিষ্কের সিদ্ধান্তেরও ফসল। তাঁরা সব জেনেবুঝে, পরিণতি কি হতে পারে, সেটা নিশ্চিত জেনেই তাঁরা স্টেনগান হাতে তুলে নিয়েছিলেন, শত্রুর মুখোমুখি হয়েছিলেন।

তবু, তাঁদের শেষ কয়েকদিনের নির্যাতনে কষ্টের কথা ভেবে বারবার শিউরে উঠেছি। এখনও যেমন মনে হচ্ছে, ঠিক এখনই কি নির্যাতনের নতুন কোনো অস্ত্র প্রয়োগ করা হচ্ছিলো! দাঁতে দাঁত কামড়ে থেকেও কি তাঁরা মা-মা করে ডাকছিলেন? কিংবা প্রিয়তম সন্তানকে?

ঘুম ভাঙ্গার পর আবারও তাঁদের কথা মনে হয়েছে। নিশ্চয়ই আরো অনেকের। তাঁদের মধ্যে শুরুতে যাঁর কথা বলেছি, সেই শেখ মুজিবের দুই কন্যাও আছেন।

লেখক আনিসুল হকের পোস্ট থেকে জানলাম, গতকাল তার সঙ্গে দুই বোনই কথা বলেছেন। বিষয় ছিলো 'মা'। 'মা' হচ্ছে সেই অসাধারণ উপন্যাস যে পবিত্র গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধ না দেখা আমাদের অনেকের সামনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ আর মায়েদের ত্যাগ এবং কষ্টকে নোনা জলের অক্ষরে তুলে ধরেছে। বইটি অনেককে উপহার দিয়েছেন দুইবোন।

'মা'র জন্য তাদের এই ভালোবাসায় বোঝা যায়, শহীদের মায়েদের সবার উপরে রেখেছেন শেখ মুজিবের মেয়ে। আর সেজন্যই না মুক্তিযুদ্ধের চার দশক পরে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।

মাঝেমধ্যে সাময়িক আপোষের ইঙ্গিত দেখা গেলেও, আমি নিশ্চিত মুক্তিযুদ্ধ এবং শহীদদের প্রশ্নে তিনি/ তারা আপোষ করবেন না; কারণ তারা যে শেখ মুজিবের কন্যা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং একাত্তর নিয়ে কথা বললে কেউ কেউ অতীত আশ্রয়ী বলেন। যে আশ্রয়ী বলেন না কেনো, মুক্তিযুদ্ধ এবং শহীদদের কথা বলে যাবোই। কারণ শুধু এই একটিবার বাঙালি তার বীরত্ব দেখিয়েছে যে বীরত্ব আসলে ছিলো মানবতা আর মানবিকতার সবচেয়ে কাব্যিক জয়গান।

জাহিদ নেওয়াজ খান, সম্পাদক, চ্যানেল আই অনলাইন ও বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল আই।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ